গতবছরে প্রকাশিত ‘হোয়েন উইল এআই এক্সিড হিউম্যান পারফর্মেন্স? এভিডেন্স ফ্রম এআই এক্সপার্টস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কার্যরত গবেষকেরা দাবি করেছেন, আগামি ৪৫ বছরের মধ্যে মানুষের সমমানের যান্ত্রিক বুদ্ধিমত্তা বা হিউম্যান লেভেল মেশিন ইন্টেলিজেন্স (এইচটিএমআই) তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%।

আর আগামি ৯ বছরে এটি ঘটার সম্ভাবনা ১০%। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে সিরি বা কর্টানা’র মত ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টের সাথে কথোপকথনে জড়িয়েছেন তারা হয়ত দাবি করবেন যে এইচটিএমআই ইতিমধ্যে চলে এসেছে।


ক্যারোলিন ব্লেইস
এমআইটি স্কুল অব ইনজিনিয়ারিং


এমআইটি’র সেন্টার ফর ব্রেইনস, মাইন্ডস অ্যান্ড মেশিনের গবেষক এলিজা কোসয় উল্লেখ করেছেন যে মেশিন ইতিমধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে।

দাবা, বোর্ড গেম গো, এবং কিছু আটারি ভিডিও গেমের মতো অনেক কৌশলগত খেলায় তারা আমাদের পরাজিত করতে পারে। মেশিন এমনকি অস্ত্রোপচার করতে পারে এবং বিমান চালাতে পারে।

সম্প্রতি, মেশিন গাড়ি এবং ট্রাক চালানো শুরু করেছে—যদিও তাদের মধ্যে কিছু ড্রাইভারের এড পাস করা নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারে। এরপরেও কোসয় বিশ্বাস করেন, “পর্যাপ্ত ডেটা এবং সঠিক মেশিন লার্নিং অ্যালগরিদমের সাহায্যে মেশিন মানুষের জীবনকে আরও উপভোগ্য করে তুলতে পারে।”

কোসয়-এর উদ্দেশ্য হল মানুষ কীভাবে শিখে তা আরো ভাল ভাবে বোঝা যাতে এটি মেশিনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়। তিনি ইনটুইটিভ ফিজিক্স অধ্যায়ন এবং ওয়ান-শট লার্নিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে এটি করেন।

মেশিন-বনাম-মানব বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে আরেকটি সতর্কতার বিষয় হল এতে অনুভূতি অন্তর্ভুক্ত করা।

ইনটুইটিভ ফিজিক্স বা সজ্ঞাত পদার্থবিদ্যা বলতে বোঝায় কীভাবে মানুষ তাদের চারপাশের ভৌত পরিবেশের নির্দিষ্ট ও গতিশীল পরিবর্তন সম্বন্ধে পূর্বধারণা লাভ করে, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানায়। যেমন, একটি পতনশীল গাছের গতিপথ উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া এবং আঘাত এড়ানোর জন্য কোন দিকে সরে যেতে হবে তা বুঝতে পারার ক্ষমতা।

ওয়ান-শট লার্নিং হল মাত্র কয়েকটি উদাহরণ থেকে অবজেক্ট ক্যাটাগরি শেখার ক্ষমতা। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মেশিনগুলির এখনও এই সক্ষমতার অভাব রয়েছে। কোসয় ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে আপেল এবং কমলার মধ্যে পার্থক্য জানার জন্যেও আজকের সেরা অ্যালগরিদমগুলিকে হাজার হাজার ডেটা সেটের সংস্পর্শে আসতে হয়। অথচ, মানবশিশুরা কয়েকবার পর্যবেক্ষণের পরেই এই পার্থক্য ধরতে পারে।

কোসয় বলেন, শিশুরা কীভাবে এত তাড়াতাড়ি শিখতে সক্ষম হয় সে বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খুব কৌতূহলী। এছাড়াও, তিনি জানতে চান কীভাবে দ্রুততর মেশিন লার্নিং-এর জন্যে জন্য আমরা এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করতে পারি যার জন্য খুব বেশি ডেটার প্রয়োজন হয় না।

মেশিন-বনাম-মানব বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে আরেকটি সতর্কতার বিষয় হল এতে অনুভূতি অন্তর্ভুক্ত করা। ১৯৯৭ সালে, যখন আইবিএম কম্পিউটার ডিপ ব্লু রাশিয়ান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দাবা খেলোয়াড় গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করেছিল, কাসপারভ এতটাই হতাশ হয়েছিলেন যে তিনি আর কখনও আগের মত করে খেলতে পারেন নি। অবশ্যই, ডিপ ব্লু কাসপারভকে “আউটস্মার্ট” করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু এর প্রোগ্রামিং-এর মধ্যে কী ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগপূর্ণ বুদ্ধিমত্তা ছিল যা ভাল খেলোয়ারসুলভ পেশাদারিত্ব দেখাতে সক্ষম যাতে কাসপারভের আত্মবিশ্বাস চূর্ণ না হয়? অন্যভাবে বলতে গেলে, যখন আপনার কর্মক্ষেত্রে খারাপ দিন যায়, তখন আপনি কি সত্যিই সহানুভূতির জন্যে সিরির উপর নির্ভর করতে পারেন? কোসয় মনে করেন, “মানুষের সহানুভূতি এবং উদারতা বুদ্ধিমত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ক্ষেত্রে, এআই কখনও আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কিনা এই বিষয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।”

এবং অবশ্যই বিষয়টির সাথে আরো অনেক কিছু জড়িত আছে। সৃজনশীলতা এবং বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সম্পর্ক কী? জার্মানির বিজ্ঞানীরা ভ্যান গগ এবং পিকাসোর স্টাইলে ছবি আঁকার জন্য কম্পিউটারকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন এবং কম্পিউটারের আঁকা ছবিগুলি খুব একটা খারাপ নয়। কিন্তু, একটি মেশিনকে সৃজনশীলতাকে অনুকরণ করতে শেখানো কি প্রকৃত সৃজনশীলতা?

কম্পিউটেশনাল ক্ষমতার কথা আলোচনা করতে গেলে বলতে হবে যে, মেশিন এক্ষেত্রে ভালই করছে। এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই যে তারা মানুষের জীবনকে আরও আনন্দদায়ক এবং সহজ করে তুলবে। কিন্তু কোনো যন্ত্র কি ভবিষ্যতে এমন একটি নাটক লিখতে পারবে যা টনি অ্যাওয়ার্ড জিতবে? কিংবা হঠাৎ করে বৃষ্টির নামলে কি নাচতে শুরু করবে? এটা স্পষ্ট যে মানুষের মস্তিষ্ক একটি দুর্দান্ত জিনিস যা বেঁচে থাকার সহজ আনন্দ উপভোগ করতে সক্ষম।

মজার ব্যাপার হল, ভাল কিংবা মন্দ যাই হোক না কেন, এটি এমন মেশিন তৈরিতেও সক্ষম যেগুলি প্রতিদিন স্মার্ট এবং আরও বেশি জীবন্ত হয়ে উঠছে।

অনুবাদ: দীপ্র আসিফুল হাই