[আমেরিকার  লেখক গ্যারি নিলসেন লেখালেখি শুরুর আগে ৩৫ বছর সৌদি আরবে রিয়েল এস্টেট এবং কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। রহস্য, সায়েন্স ফিকশন, থ্রিলার, ফ্যান্টাসি ধরনের গল্প ও উপন্যাস লেখেন তিনি। তার প্রথম উপন্যাস ফ্ল্যাশব্যাকসায়েন্স ফিকশন থ্রিলার।  বইটি এ বছর  (২০১৫)বের হওয়ার কথা।  দ্বিতীয় উপন্যাস টেইলস অব এলফেহিম ফ্যান্টাসি ধরনের উপন্যাস। এটি আরো পরে বের হবে।

‘World Building: An exercise in creativity…’ লেখাটিতে তিনি তার লেখার পদ্ধতি, পিছনের চিন্তা, তথ্যসংগ্রহ, কী নিয়ম মেনে চলেন এসব নিয়ে লিখেছেন। এই লেখার মাধ্যমে বোঝা যাবে গ্যারি নিলসেন কীভাবে তার লেখা তৈরি বা নির্মাণ করেন, এবং তার এই তৈরি করার প্রক্রিয়াটি কোনো গল্প বা কাহিনীর মতই আকর্ষণীয়।]

যেসব ক্ষেত্রে আমি আলাদা একটি জগৎ বা উপন্যাসের জন্য একটি দুনিয়ার ভিতরে আরেকটি দুনিয়া তৈরি করতে কাজ করেছি, সম্ভবত তখন আমি লেখালেখির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি আনন্দ পেয়েছি।
একটু ফিরে তাকাই, একটি গল্পে একজন ইতিহাসবিদ অতীতে একজন হত্যাকারীকে থামাতে চায়, সেক্ষেত্রে আমার দরকার ছিল একটি সন্তোষজনক উপায়ে টাইম ট্রাভেল ব্যাপারটিকে নিয়ে আসা। আপনি যখন সায়েন্স ফিকশন লেখেন, আপনি যদি বিশ্বাসযোগ্য বিজ্ঞানের ওপর আপনার গল্পের কাঠামোর ভিত্তি তৈরি না করেন, তাহলে শুরু করার আগেই আপনি আপনার পাঠক হারাবেন এবং এই ভুল করার জন্য অনেকগুলি কারণ খুঁজে পাবেন।

আমার জন্য চ্যালেন্জ ছিল শিক্ষা এবং পেশাগতভাবে অ্যাকাউন্ট্যান্ট হয়ে আর্টিফিশিয়াল ওয়র্মহোল তৈরির সাথে সম্পর্কিত ফিজিক্সের অনেকগুলি থিওরি শেখা। ফিজিক্স তাদের অস্তিত্বের ব্যাপারে ধারণা করে, কিন্তু আপনি কীভাবে বিশ্বাসযোগ্য কিছু তৈরি করবেন?

এখানেই এখন জিনিয়াসের কাঁধে ভর দিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগটা চলে আসে। অল্প ব্রেইনপাওয়ারের নারী-পুরুষকে আমি কখনোই নেব না, এই ব্যাপারটিই বুঝিয়ে দেয় কীভাবে এটা হয়। আমি আমার গল্পের ফ্রেমওয়ার্কে মেথডোলজি বা পদ্ধতিভিত্তিক উপায় অবলম্বন করি, কিছু নিয়ম তৈরি করি যেগুলির দ্বারা গল্পের প্লট বেঁচে থাকে, এবং যে জিনিসটি কাজ করে তা হল, শুধু অল্প কয়েকজন মানুষ জানত আমার এমন একটি গোপন দুনিয়া ছিল, এবং আমার চরিত্রগুলি নিয়ে আসার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক একটা প্ল্যাটফর্ম ছিল। এর ফলে, বিজ্ঞান (সায়েন্স ফিকশনে যা প্রয়োজন) নিজেই এর চরিত্রের একটা ব্যাপার হয়ে গেছে। ওয়র্মহোলের ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে, চরিত্রগুলি তৈরি করতেও সেরকমই ঘটেছে। এই চর্চা করার যে আনন্দ টিকে আছে তা হল—এক মাস ধরে মস্তিষ্ককে এই ধারণায় অভ্যস্ত করার জন্য কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ওপর লেখাগুলি বার বার পড়ার ফলে আমার এখন অসংখ্য সিক্যুয়েল লেখার ফাউন্ডেশন তৈরি হয়েছে।

আমার দ্বিতীয় উপন্যাস আলফেহিম, একটি ছেলের কাহিনি যে আসলে একজন এলফ (‘লেগোলাসের’ চেয়ে বেশি কিছু চিন্তা করুন এবং সান্তার জন্য কাজ করে এমন নয়)। এই উপন্যাসটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা একটি চ্যালেন্জ। হ্যারি পটার অথবা টোয়ালাইটের মতই সম্পূর্ণ সমান্তরাল একটি নিজস্ব পৃথিবীর অস্তিত্ব তৈরি করার প্রয়োজন ছিল আমার।

আমি লাইব্রেরিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়েছি, আমার মনের মধ্যে থাকা ছবির সাথে মেলানোর জন্য আমি মিথোলজির বিভিন্ন জিনিস পড়েছি। একজন স্থপতি যেমন বিভিন্ন ধরনের বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালের মধ্য থেকে তার নিজের স্থাপনা তৈরি করার জন্য পছন্দ অনুযায়ী ম্যাটেরিয়াল বেছে নেয়, আমি লৌকিক উপগাথার বিভিন্ন উপাদান পেয়েছিলাম এবং সেগুলি আমার মাথায় তৈরি হতে থাকা চরিত্রদের জীবন্ত করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

প্রতিবার বিভিন্ন টুকরা টুকরা দারুণ জিনিস আবিষ্কারের পর নতুন প্রশ্ন তৈরি হত যেগুলি জেগে উঠতে থাকা নতুন একটা দুনিয়া গঠনে কাজ করেছে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেখানে নিয়মগুলি, যে প্যারাম্যাটারগুলি আপনার দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করবে সেগুলি তৈরি করা অবশ্য পালনীয়, একবার আপনি লেখা শুরু করলে সবকিছুই সেই সীমানা বা নিয়মের মধ্যেই থাকবে।

আপনি যদি এই নিয়মগুলি না মানেন, আপনি আপনার পাঠককে রাগিয়ে তুলবেন এবং বোকার মত আপনি এড়িয়ে চলতে হয় এমন কিছু নিয়ে আসবেন। এই চর্চায় আমি রূপকথা এবং এলফিন গল্পের উৎসের (সেলটিক এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান) কাছে থেকে, টলকেইন, মধ্যযুগীয় জাহাজ তৈরি পদ্ধতি, মধ্যযুগীয় কাপড়-চোপড়ের ধরন, দুর্গের গঠন, প্রাচীন সেলটিক নাম ও তাদের ভাষা ও তাদের অর্থ ও উচ্চারণ, আইরিশ ইতিহাস, আমেরিকান ইতিহাস থেকে ধার করেছি, আমি নিউ হ্যাম্পশায়ারের হোয়াইট মাউন্টেইনের ভিতর দিয়ে গেছি কিন্তু এই বইটি লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একই ধরনের অন্য কোনো বই কখনোই পড়ি নি।

প্রায়ই উপদেশ দেওয়া হয়ে থাকে, আপনি যে ধরনের লিখতে চান সেই ধরনের প্রচুর বই পড়ুন, আমি এর বিপরীত করেছি, আমি এটি এড়িয়ে চলেছি। এই ফিল্ডে যেহেতু অনেক লেখক আছে, রূপকথার দুনিয়া কেমন হবে সে বিষয়ে অন্য লেখকদের ধারণা একেবারে বাদ দিয়ে আমি একটা আলাদা দুনিয়া ও মিথোলজি গড়তে চেয়েছি।

একটা দুনিয়া তৈরি করতে হলে যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে: আপনার দুনিয়ার জন্য নিয়ম তৈরি করুন এবং সেগুলিতে অটল থাকুন, কোনো যথার্থ কারণ থাকলেই শুধু সেই নিয়মের বাইরে আসুন, যতটা সম্ভব অবিশ্বাস্য সাসপেন্সের আশার মধ্যে সেই গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলুন, আপনার কল্পনাকে বাধাহীনভাবে ছেড়ে দিতে ভয় পাবেন না এবং ফর হেভেন’স সেক—আনন্দ নিয়ে লিখুন।

২২/৮/২০১৫

অনুবাদ: মৃদুল শাওন

সূত্র: garyswritingblog.com