বন্ধুত্বের ২০০ ঘণ্টা — প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সম্পর্কের পুনর্জন্ম

প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বন্ধুত্ব করা বা পুরোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা এখন এক বিশাল সামাজিক চ্যালেঞ্জ। কাজের চাপ, পারিবারিক দায়িত্ব আর সময়ের অভাবে অনেকেই ধীরে ধীরে নিজেদের সামাজিক পরিসর হারিয়ে ফেলছেন।

গত তিন দশকে মানুষের বন্ধুত্বের ধরন ও পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বদলে গেছে। ১৯৯০-এর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে মাত্র ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ জানাতেন যে তাদের কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু নেই, এখন সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশে।

একই সময়ে ৬ বা তার বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধুর অধিকারী পুরুষদের হার ৫৫ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ২৭ শতাংশে। শুধু বন্ধুর সংখ্যা নয়, সময়ের ব্যবধানেও পরিবর্তন এসেছে—২০০৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে সরাসরি দেখা বা সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার সময় দিনে গড়ে ১ ঘণ্টা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২০ মিনিটে। অর্থাৎ, প্রতি মাসে প্রায় ২০ ঘণ্টা কম সময় ব্যয় করা হচ্ছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রক্ষায়।


সাম্প্রতিক ডেস্ক


হার্ভার্ডের হ্যাপিনেস প্রোগ্রামের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে আমেরিকানদের বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সপ্তাহে গড়ে ৬.৫ ঘণ্টা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ ঘণ্টায়। একই প্রবণতা দেখা যায় ১৯৯০ থেকে ২০২১ সালের পরিসংখ্যানে—যেখানে একসময়ে প্রতি ৩ জন আমেরিকানের ১ জনের ১০ বা তার বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, এখন সেই হার নেমে এসেছে মাত্র ১৩ শতাংশে।

এই পরিসংখ্যানগুলি ইঙ্গিত করে যে আধুনিক জীবনের ব্যস্ততা, একাকীত্ব এবং ডিজিটাল নির্ভরতার যুগে বন্ধুত্ব ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। মানুষের জীবনে “বন্ধুহীনতা” এখন আর ব্যতিক্রম নয়, বরং নীরব এক মহামারী।

বন্ধুত্বের বিজ্ঞান
মনোবিজ্ঞানে বন্ধুত্ব গঠনের কয়েকটি মূল নিয়ম আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নিকটতার প্রভাব—অর্থাৎ যাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত দেখা করি বা কাছাকাছি থাকি, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি। একই সঙ্গে দরকার নিয়মিত যোগাযোগ আর অভিন্ন আগ্রহ বা প্রেক্ষাপট—যেমন একই শখ, লক্ষ্য বা কাজের পরিবেশ।

গবেষণা বলছে, একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে প্রায় ২০০ ঘণ্টা একসাথে সময় কাটানো লাগে। এই তথ্যটি এসেছে কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বিষয়ক অধ্যাপক ড. জেফরি এ. হল-এর গবেষণা থেকে। তিনি ২০১৮ সালে Journal of Social and Personal Relationships-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখান, সম্পর্কের গভীরতা ও সময় বিনিয়োগের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণায় অংশ নেন কলেজ জীবনে নতুন বন্ধু করা শিক্ষার্থী ও নতুন শহরে কাজ শুরু করা প্রাপ্তবয়স্করা। তাদের দৈনন্দিন মিথস্ক্রিয়া—ক্লাস, আড্ডা, একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, হাঁটা, পড়াশোনা, অনলাইন চ্যাট—এসব পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়:

  • প্রায় ৫০ ঘণ্টা লাগে কাউকে “পরিচিত” থেকে “বন্ধু” মনে করতে
  • ৯০–১২০ ঘণ্টা লাগে “ভাল বন্ধু” পর্যায়ে যেতে
  • ২০০ ঘণ্টার বেশি পরে সম্পর্ক “ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বে” পরিণত হয়

ড. হলের মতে, বন্ধুত্বের মূল ‘উপাদান’ হল সময় + শেয়ার করা অভিজ্ঞতা + খোলামেলা আলাপ। কেবল পাশাপাশি থাকার মাধ্যমে নয়—হাসি, আবেগ ভাগাভাগি, মন খুলে কথা বলা, এই মুহূর্তগুলিই সম্পর্ককে দৃঢ় করে। তাই অফিসে একসঙ্গে বসা বা শুধু ফরমাল যোগাযোগ বন্ধুত্ব গড়ে তোলে না; বরং আড্ডা, গল্প, যৌথ কর্মকাণ্ড এবং মানসিকভাবে উপস্থিত থাকা—এসবের মাধ্যমে বিশ্বাস ও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

ড. হল একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্যও তুলে ধরেন—বন্ধুত্ব “ঘটা” জিনিস নয়, এটি ইচ্ছা ও সময়ের বিনিয়োগে তৈরি হয়। তিনি বলেন, “You can’t make a friend overnight; you invest in one over time.”

অর্থাৎ, ২০০ ঘণ্টা কেবল পরিসংখ্যান নয়—এর মাধ্যমে বোঝানো হয় যে বন্ধুত্ব মানে ছোট ছোট মুহূর্তের জমানো স্মৃতি, ধারাবাহিক উপস্থিতি এবং সম্পর্কটাকে গুরুত্ব দেওয়ার মনোভাব।

বন্ধুহীনতা
কর্মজীবনের চাপ এবং জীবনের অন্যান্য বড় পরিবর্তনের কারণে আমাদের ঘনিষ্ঠ সামাজিক বন্ধনগুলি সংকুচিত হতে থাকে।

নারী, পুরুষ ও বন্ধুত্বের ধরন
প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বন্ধুত্বে লিঙ্গভেদও স্পষ্ট। নারীদের বন্ধুত্ব সাধারণত আবেগ ও অনুভূতির আদান-প্রদানে গভীর হয়, অন্যদিকে পুরুষদের বন্ধুত্ব হয় কাজ, অভিজ্ঞতা বা শেয়ার করা ঘটনার উপর ভিত্তি করে।

অসমলিঙ্গ বন্ধুত্ব আবার আলাদা জটিলতা তৈরি করে—একদিকে এটি ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি এনে সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে, অন্যদিকে কখনও কখনও অব্যক্ত আকর্ষণ সম্পর্ককে বিভ্রান্ত করতে পারে। তাই এখানে সম্মান ও সীমারেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

লিঙ্গ ছাড়াও যৌনতা, জাতি, বা শারীরিক অক্ষমতা বন্ধুত্বের ধরনকে প্রভাবিত করে। সমাজ যাদের আড়াল করে রাখে—তারা প্রায়ই বন্ধুত্ব গড়তে ভয় পান, কারণ স্টিগমা বা বিচ্ছিন্নতার আশঙ্কা থাকে। আবার শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বন্ধুত্বের সুযোগ কমে যায়, কারণ অনেক জায়গাই এখনও অ্যাক্সেসিবল নয়।

বাংলাদেশের মত সমাজে পরিবার ও সম্প্রদায়ের প্রভাব এত বেশি যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব কখনও সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। গ্রামে প্রতিবেশী ও পাড়াভিত্তিক বন্ধুত্ব সহজেই গড়ে ওঠে, কিন্তু শহরে অপরিচিতদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে অনেকেই সংকোচ বোধ করেন। বিদেশে অভিবাসী বাংলাদেশীরাও একইভাবে নতুন বন্ধুত্ব গড়তে হিমশিম খান—ভাষা ও সংস্কৃতিগত বাধার কারণে।

বয়স বাড়লে কেন বন্ধুত্ব কঠিন হয়
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্ব করা কঠিন হয়ে পড়ে—এটা আমাদের জীবনের এক সাধারণ বাস্তবতা। কেন এমন হয়? আসলে, জীবনের পথে আমাদের দায়িত্বগুলি ক্রমাগত বাড়তে থাকে। কাজ, পরিবার, সন্তান মানুষ করা, ঘর-সংসারের দায়িত্ব এবং বিল মেটানোর চিন্তা—সব মিলিয়ে নতুন কারও জন্য সময় বের করাটা প্রায় অসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়।

গবেষণাতেও দেখা গেছে যে, প্রাপ্তবয়স্কদের বন্ধুত্ব তৈরি করা এবং তা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে অনেক বাধা আসে। যেমন, একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কর্মজীবনের চাপ এবং জীবনের অন্যান্য বড় পরিবর্তনের কারণে আমাদের ঘনিষ্ঠ সামাজিক বন্ধনগুলি সংকুচিত হতে থাকে। অর্থাৎ, আমরা পুরোনো বন্ধুদের কাছ থেকে দূরে সরে যাই এবং নতুন বন্ধু বানানোর সুযোগ কমতে থাকে।

লকডাউনের পর মস্তিষ্কে লক
কোভিড-১৯ শুধু শরীরে নয়, আঘাত করেছে মানুষের সামাজিক সত্তাতেও। হঠাৎ থেমে যাওয়া সম্পর্ক আর হারিয়ে যাওয়া মুখগুলি আমাদের মনে এক নতুন প্রকারের নিঃসঙ্গতা জন্ম দিয়েছে—যার শিকড় মস্তিষ্কের ভেতর পর্যন্ত গেঁথে গেছে।

মহামারীজনিত একাকীত্বের পেছনে কারণগুলি কেবল সামাজিক দূরত্ব বা লকডাউনে সীমাবদ্ধ নয়; এর মূল শিকড় আরও গভীরে—মানব মস্তিষ্ক, সামাজিক আস্থা ও যৌথ অভিজ্ঞতার ভাঙনের মধ্যে লুকিয়ে আছে।

মানুষ প্রকৃতিগতভাবে সামাজিক প্রাণী, আর আমাদের মস্তিষ্কে এক বিশেষ অংশ রয়েছে—social brain network—যা অন্য মানুষের মুখ, কণ্ঠ ও উপস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় সক্রিয় হয়। লকডাউনের সময় এই সামাজিক উদ্দীপনা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্কে “সামাজিক ক্ষুধা” (social craving) তৈরি হয়। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক সংযোগের অভাব মানুষের শরীরে এমন এক ধরনের চাপ তৈরি করে, যা ক্ষুধা বা তৃষ্ণার মতই শক্তিশালী। সেই চাহিদা পূরণ না হলে স্ট্রেস হরমোন বাড়ে, মনোবল কমে যায়, আর মানুষ আরও গভীর একাকীত্বে ডুবে যায়।

মনোবিজ্ঞানের Belongingness Theory অনুযায়ী, মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক প্রয়োজন হল অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা। কিন্তু কোভিড-১৯ সেই স্বাভাবিক সামাজিক কাঠামো ভেঙে দেয়—বন্ধু, অফিস, স্কুল, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সবই হঠাৎ থেমে যায়। এই হঠাৎ বিচ্ছিন্নতা অনেকের মনে “social grounding collapse” ঘটায়—অর্থাৎ বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কের মাটি সরে যায়। মানুষ একে অপরকে আর নিরাপদ মনে করতে পারে না; বরং সম্ভাব্য হুমকি হিসাবে দেখতে শুরু করে। হার্ভার্ডের Social Capital Project দেখিয়েছে, এই ভয়ের কারণে সামাজিক আস্থা বা trust erosion বেড়ে যায়, ফলে সম্পর্কের মধ্যে সন্দেহ ও দূরত্ব জন্ম নেয়।

অন্যদিকে, প্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগ যেমন ভিডিও কল বা সোশ্যাল মিডিয়া, মানুষকে তথ্যের কাছে রেখেছে ঠিকই, কিন্তু আবেগের কাছে আনতে পারেনি। Oxford Internet Institute-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ভার্চুয়াল যোগাযোগে ঘনিষ্ঠতার রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া—ডোপামিন ও অক্সিটোসিন—বাস্তব মিথস্ক্রিয়ার তুলনায় অনেক কম। তাই মানুষ কথা বললেও, মন থেকে সংযুক্ত হতে পারেনি।

সবশেষে, মহামারী ছিল এক ধরনের সমষ্টিগত ট্রমা (collective trauma)—যেখানে মৃত্যু, অনিশ্চয়তা ও ভয় একসঙ্গে আঘাত হানে। এই সম্মিলিত শোক মানুষের যৌথ অর্থবোধ বা “shared meaning” ভেঙে দেয়। যখন ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, মানুষ নিজের খোলসের ভেতর ঢুকে যায়—এটাই একাকীত্বকে আরও গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী করে।

তাই গবেষকরা বলেন, মহামারী আমাদের শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিক ও সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে—এটি ছিল এক অদৃশ্য সামাজিক মন্দা, যার প্রতিধ্বনি এখনও আমাদের জীবনে বাজছে।

বন্ধুর অভাব কেন? পরিবেশের পরিবর্তন
স্কুল বা কলেজের দিনগুলির কথা ভাবুন। সেখানে ক্লাস, ক্যানটিন বা ইউনিভার্সিটির আড্ডায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবার সাথে দেখা হত এবং যোগাযোগ তৈরি হত। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে সেই সামাজিক পরিবেশের অভাব দেখা দেয়।

অন্যদিকে, অনেকেই কাজের জন্য এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে যান, ফলে পুরোনো বন্ধুত্ব দুর্বল হয়ে পড়ে। নতুন জায়গায় বন্ধুত্ব গড়তে গিয়ে অনেকে আবার পিছিয়ে আসেন। কারণ, আমাদের সমাজে একাকীত্বের কথা বলা বা কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়াকে অনেকে দুর্বলতা বলে মনে করেন।

এই সমস্ত কারণ একসঙ্গে মিলে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বন্ধুত্ব গঠন ও রক্ষার ক্ষেত্রে এক বিশাল চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অথচ গবেষণা এটাও বলছে যে, ভাল বন্ধুত্ব আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য খুবই জরুরি।

অনলাইন যুগের বন্ধুত্ব
আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় বন্ধুত্বের নতুন দরজা খুলেছে—ফেসবুক গ্রুপ, রেডিট কমিউনিটি, কিংবা বিভিন্ন “ফ্রেন্ডশিপ” অ্যাপ মানুষকে কাছাকাছি এনেছে। একই আগ্রহের মানুষকে খুঁজে পাওয়া সহজ হয়েছে, কিন্তু অনলাইন বন্ধুত্ব প্রায়ই অগভীর থেকে যায়। লাইক আর কমেন্ট থাকলেও সেখানে বাস্তব সংযোগের উষ্ণতা থাকে না।

তাই অনলাইন বন্ধুত্বকে অফলাইন দেখা-সাক্ষাতে রূপান্তর না করলে এটি একাকীত্ব দূর করতে পারে না। একসঙ্গে কফি খাওয়া, হাঁটতে যাওয়া বা কোনো প্রজেক্টে কাজ করা—এসবই সম্পর্কের সত্যিকারের প্রাণ ফিরিয়ে আনে।

বন্ধুত্ব পুনর্গঠনের পথ
সব বাধা সত্ত্বেও প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে বন্ধুত্ব পুনর্গঠন সম্ভব—শুধু দরকার সচেতনতা ও ইচ্ছাশক্তি। সামাজিক আমন্ত্রণে ইতিবাচক মনোভাব রাখুন—সব সময় না হলেও কখনও “হ্যাঁ” বলুন। গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার নির্দিষ্ট সময় রাখুন, যেন সম্পর্ক রুটিনের মধ্যেও জীবন্ত থাকে। এমন ক্লাব, কোর্স বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিন, যেখানে আপনার মত আগ্রহ ও মূল্যবোধের মানুষ আছে। নিজের একাকীত্ব বা সম্পর্কের প্রয়োজন স্বীকার করা দুর্বলতা নয়—এটি বরং আত্মজ্ঞান ও সাহসের লক্ষণ।

সব বন্ধুত্বই ভাল নয়
বন্ধুত্ব সবসময় মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। একতরফা সম্পর্ক, অহংকার, অবমূল্যায়ন বা মানসিক চাপ দেয় এমন বন্ধুত্ব আমাদের ক্ষতি করে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, “বন্ধুত্ব ছেড়ে দেওয়াও এক ধরনের স্ব-যত্ন।” সীমানা নির্ধারণ করুন, প্রয়োজনে দূরত্ব বজায় রাখুন—এটি পরিপক্কতার চিহ্ন।

প্রকৃত বন্ধুত্ব: জীবনের শক্ত আশ্রয়
সুস্থ বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি হল পারস্পরিকতা, সম্মান, ও যত্ন। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে দুই দিক থেকেই আগ্রহ ও সময় দিতে হয়। যখন বন্ধুরা একে অপরকে সমান মর্যাদায় দেখে এবং উন্নতির পথে অনুপ্রাণিত করে, তখন সেই সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় টিকে যায়।

বন্ধুত্ব এমন এক বিনিয়োগ, যা জীবনের ক্লান্তি, একাকীত্ব আর মানসিক চাপের বিপরীতে আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় দেয়। তাই কাজ, দায়িত্ব আর বাস্তবতার মাঝেও বন্ধুত্বকে সময় দিন—আপনার জীবনের আনন্দ, ভারসাম্য ও অর্থবোধ বহুগুণে বেড়ে যাবে।