সবচেয়ে বড় অর্জনের কথা মনে করুন, যা অর্জন করেছেন তা নিয়ে কি আপনি আনন্দিত? নাকি নিজেকে আপনার প্রতারক মনে হয়? নিজেকে নিয়ে এমন সন্দেহে থাকলে, আপনি ইমপোস্টার সিনড্রোম (Impostor Syndrome) এ ভুগছেন।

ইমপোস্টার সিনড্রোম সচরাচর হাই অ্যাচিভার বা অনেক কিছু অর্জন করেছেন এমন লোকদের হয়ে থাকে। আপনারও যদি নিজেকে নিয়ে এমন সন্দেহ থাকে, সম্ভাবনা আছে নিজেকে যা ভাবেন, তারচেয়ে আপনি অনেক বেশি সক্ষম। কেউ প্রতারক হলে এধরনের জিনিস নিয়ে চিন্তা করবে না।

এই লেখাটিতে আমরা ইমপোস্টার সিনড্রোম কী তা বোঝার চেষ্টা করব। এটি কী, এটি কীভাবে আপনার সম্ভাবনাকে সীমিত করতে পারে এবং এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে কোন কোন কৌশলগুলি ব্যবহার করতে পারেন।

এই কৌশলগুলি ব্যবহার করে আপনার ভেতরকার সমালোচককে পরাজিত করুন।

ইমপোস্টার সিনড্রোম কী

ইমপোস্টার সিনড্রোম এক অপ্রতিরোধ্য অনুভূতি যেটা আপনাকে বলে, আপনি কোনো সাফল্যের যোগ্য নন। এটা ইমপোস্টারিজম, ইমপোস্টার ফেনোমেনন বা ফ্রড সিনড্রোম নামেও পরিচিত। আপনি ধরেই নেন আপনাকে যতটা বুদ্ধিমান, সৃজনশীল বা প্রতিভাবান দেখায় আপনি আসলে ততটা নন। সন্দেহ করেন আপনার কৃতিত্বগুলি ভাগ্য, ভাল সময় বা শুধু ‘সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায়’ থাকার কারণে সম্ভব হয়েছে।

আপনি হয়তো প্রায়ই আপনার সক্ষমতা নিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেন, বা কোনো একটি বিষয়ে আপনার অধিকার কতটুকু তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। এমনকি অনুভব করতে পারেন আপনার একটা পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। আপনার সবচেয়ে বড় ভয়, একদিন আপনি প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত হবেন।

ইমপোস্টার সিনড্রোম আত্ম-সন্দেহের অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির সাথে যুক্ত থাকতে পারে, যেমন সাফল্যের ভয়, ব্যর্থতার ভয়, বা আত্ম-বিনাশী কার্যকলাপ। তবে এটি কেবল দুর্বল আত্মবিশ্বাস বা অত্যধিক বিনয়ের বিষয় নয়। এটি এক্সপোজার, বিচ্ছিন্নতা এবং প্রত্যাখ্যানের একটি স্থায়ী আতংকের সাথেও জড়িত।

ইমপোস্টার সিনড্রোম প্রায়ই সাফল্যের মুহূর্তে আঘাত করে। যেমন, একটা নতুন কাজ শুরু করা, পুরস্কার বা পদোন্নতি পাওয়া, দায়িত্ব গ্রহণ করা যেমন অন্যদের শেখানো, নিজের ব্যবসা শুরু করা, বা প্রথমবারের মতো বাবা-মা হওয়া।

এই অনুভূতির কারণে আপনার মনে হতে পারে,  আপনাকে আরো পরিশ্রম করতে হবে। যাতে আপনি এই প্রকাশ হয়ে যাওয়া এড়াতে পারেন। এটা আরো সাফল্য ও স্বীকৃতিতেও আঘাত হানতে পারে―এবং তখন আপনার নিজেকে আরো বড় প্রতারক মনে হবে।

নিজের দক্ষতা সম্পর্কে দুর্বল ধারণা থাকার কারণে আপনার ক্ষতিও হতে পারে। সেই সময়টিতেই আপনি আপনার লক্ষ্য সংশোধন করেন এবং কম উচ্চাভিলাষী হন। এভাবেই ইমপোস্টার সিনড্রোম আপনাকে আপনার সত্যিকারের সম্ভাবনা পূরণ করতে বাধা দেয়।

(নোট: ডানিং-ক্রুগার ইফেক্ট অনুসারে, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা প্রায়ই সেই ক্ষমতা সম্পর্কে কম সচেতন থাকেন। এর মানে এই নয় যে তাদের সবার ইমপোস্টার সিনড্রোম আছে, যেটার সাথে কিনা ‘ধরা পড়ে যাওয়ার’ ভয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত।)

আরো পড়ুন: দক্ষতার ফাঁদ থেকে মুক্তি ও মনের শান্তি খুঁজে পাওয়া

ইমপোস্টার সিনড্রোম, লিঙ্গ ও জাতি

দীর্ঘদিন ধরেই মনে করা হচ্ছে, ইমপোস্টার সিনড্রোমের প্রভাব পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ওপর বেশি। বিশেষ করে পুরুষ-শাসিত পরিবেশে। পলিন রোজ ক্ল্যান্স এবং সুজান আইমস তাদের যুগান্তকারী প্রবন্ধ ‘দ্য ইমপোস্টার ফেনোমেনন’-এ হাই-অ্যাচিভিং নারীদের মধ্যে ইমপোস্টার সিনড্রোমের প্রকোপের ওপর আলোকপাত করেছেন।

যদিও সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে এটা উভয় লিঙ্গকেই সমানভাবে প্রভাবিত করে। এই সমীক্ষায় আরো বলা হয়েছে, ইমপোস্টার সিনড্রোমের লক্ষণগুলি বিশেষ করে জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে বেশি দেখা যায়। এছাড়াও যাদের মধ্যে বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের লক্ষণ আছে তাদেরকেও প্রায়ই নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে।

ইমপোস্টার সিনড্রোমের প্রধান কিছু লক্ষণ:
নিজেকে অদক্ষ মনে করা

ইমপোস্টার সিনড্রোম আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত অভাব হিসাবে নিজেকে প্রকাশ করে। সাফল্যের সময়ই হয়ত আপনি ভাবেন, “আমি এর যোগ্য না।” বেশিরভাগ মানুষই তাদের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভোগেন, কিন্তু ইমপোস্টার সিনড্রোমের ক্ষেত্রে এই অনুভূতিটি স্থায়ী এবং তীব্র হয়।

পারফেকশনিস্ট প্রবণতা প্রদর্শন করা

ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভোগেন এমন অনেক মানুষই পারফেকশনিস্ট। এটি তখনই হয় যখন আপনি নিজের জন্য অযৌক্তিকভাবে প্রয়োজনের চাইতেও বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করেন এবং তারপরে যখন ব্যর্থ হন, লজ্জা বা হতাশা অনুভব করেন। পারফেকশনিজমের অর্থ হল আপনি আপনার কৃতিত্ব নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট হতে পারবেন না এবং শুধুমাত্র ভুল ও ব্যর্থতার দিকে মনোনিবেশ করবেন।

এমনকি সর্বোচ্চ অর্জনকারীরাও এই চিন্তাধারার শিকার হয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ড হেপ্টাথলন চ্যাম্পিয়ন ক্যাটারিনা জনসন-থম্পসন স্বীকার করেন, তিনি নিজেকে নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী সন্দেহে ভুগতেন। এমনকি একটা অভিজাত স্তরে পারফর্ম করার সময়ও এমন ঘটত।

একইভাবে, প্রাক্তন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে ব্যক্তিজীবনে অনেক অর্জন সত্ত্বেও তিনি ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন এবং কীভাবে এটা কাটিয়ে ওঠা অ-শ্বেতাঙ্গ নারীদের জন্য বিশেষভাবে কঠিন হতে পারে।

দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া

ইমপোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত কিছু মানুষ পারফেকশনিস্ট প্রবণতা দেখান, আবার অন্যেরা ঠিক এর বিপরীত পথে যান। আপনি ব্যর্থতাকে এতটাই ভয় পেতে পারেন যে আপনি আসলে নতুন দায়িত্ব নেওয়া, নতুন চাকরিতে যোগ দেয়া, এমনকি পদোন্নতি গ্রহণ করাও এড়িয়ে যেতে পারেন।

আপনি অন্য কারো সাথে আগে যাচাই না করে মিটিংয়ে কথা বলতে বা কোন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন, কারণ আপনি এসব ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার ভয়ে থাকেন। এটি আপনার কাজকে বিলম্বিত করতে পারে। অথবা, আপনাকে যে কাজগুলি অবশ্যই সম্পন্ন করতে হবে তা আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন, কারণ আপনি খারাপ প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারেন।

(নোট: “দ্য ইমপোস্টার কিউর”-এ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ড. জেসামি হিবার্ড পারফেকশনিজম এবং অ্যাভয়ডেন্সকে ‘ইমপোস্টার টুইনস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং ইমপোস্টার সিন্ড্রোমের এই ধরনের ও অন্যান্য উপসর্গ কাটিয়ে ওঠার জন্য বেশ কয়েকটি কৌশল ও টিপস দিয়েছেন।)

সমালোচনার মুখোমুখি হওয়া এবং ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়

ইমপোস্টার সিন্ড্রোমের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ‘ধরা পড়ে যাওয়া’-র স্থায়ী ভয়। নিজেকে অযোগ্য মনে করাটাই একমাত্র ভয় না। এই ভয়ের সাথে যুক্ত হয় সহকর্মী এবং পরিচালকদের কাছে অযোগ্যতার কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়।

এই ভয় আপনাকে অযৌক্তিকতার চরমে নিয়ে যেতে পারে। আপনি হয়তো দেখবেন যে এই ‘এক্সপোজার’ আটকানোর জন্য আপনি নিজেকে সীমার বাইরে ঠেলে দিচ্ছেন। একই সাথে আপনার প্রচেষ্টা যে ভাল ছিল তা স্বীকার করতেও অস্বীকার করছেন। এর ফলে প্রচেষ্টা, অসন্তোষ এবং ভয়ের একটি দুষ্টচক্র তৈরি হতে পারে, যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

নিজের সাফল্যকে অস্বীকার করা

আপনি আপনার কৃতিত্বকে অনেক ছোট করে দেখেন। প্রায়ই, আপনি নিজেকে নিয়ে মনে মনে নেতিবাচক আলাপে জড়িয়ে পড়েন, মনে হয় আপনি আপনার সাফল্যের যোগ্য নন।

আপনি আপনার সাফল্যকে ‘সহজ’ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার প্রবণতা দেখান। সেগুলিতে যথেষ্ট সময় ও প্রচেষ্টা ব্যয় করার পরেও। উদাহরণস্বরূপ, আপনাকে যদি একটা প্রেজেন্টেশন দিতে বলা হয়, আপনি ভাবেন, “কোন কাজটা আমাকে এই কথা বলার অধিকার দিল? কেন লোকে আমার কথা শুনবে?”

এমনকি যখন আপনি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পান তখনও তা তা খারিজ করার উপায় খুঁজে বের করতে চেষ্টা করেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ভাবতে পারেন, “আমি সৌভাগ্যবান, অনেক সাহায্যও পেয়েছি।” আপনি এটাও বিশ্বাস করতে পারেন যে, একই কাজ যদি আবার করতে হয় তাহলে সফল হওয়ার জন্য হয়ত আপনার এই ভাগ্য, প্রতিভা বা দক্ষতা তখন থাকবে না।

(নোট: আপনি আপনার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করছেন মানেই আপনি ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভুগছেন, এমন নয়। কখনো কখনো, একটা নির্দিষ্ট কাজ করার জন্য যে দক্ষতা প্রয়োজন তা আপনার নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে, সৎ হওয়া এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।)

আরো পড়ুন: ঘুম: ভোরের পাখি নাকি রাতের পেঁচা, কে বেশি সুখী?

আমার টিম কি ইমপোস্টার সিনড্রোমে ভুগছে?

ইমপোস্টার সিনড্রোম শুধুমাত্র যারা এটা অনুভব করে তাদের ক্ষতি করে না। তারা যে টিম এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত সেগুলিরও ক্ষতি করে। সুতরাং, আপনি যদি নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকেন, আপনার উচিৎ হবে দলের এমন সদস্যদের প্রতি নজর রাখা যারা অদক্ষতার অনুভূতির সাথে লড়াই করছে।

তারা প্রমোশন প্রত্যাখ্যান করতে পারে বা চ্যালেঞ্জিং নতুন ভূমিকা বা হাই-এক্সপোজার প্রকল্পগুলি এড়িয়ে যেতে পারে। তারা সম্ভবত প্রশংসা শুনতে অস্বস্তি বোধ করবে, এবং ভাল কাজ বা সাফল্যের জন্যে ভাগ্যকে কৃত্বিত্ব দেয়। অথবা বলে যে সঠিক লোকদের সাথে জানাশোনা ছিল বলেই তারা সফল হয়েছে।

আরেকটি চিহ্ন হলো নিজেদেরকে অন্যদের সাথে নেতিবাচকভাবে তুলনা করা এবং নিজেকে নিয়ে অসন্তোষজনক কথাবার্তা বলা। যেমন, “আমি আসলে জানি না যে আমি কী নিয়ে কথা বলছি…।” তারা এমনকি প্রকাশ্যেই ব্যর্থতা বা অযোগ্যতার ভয় প্রকাশ করতে পারে।

ইমপোস্টার সিনড্রোম কাটিয়ে ওঠার উপায়

আপনার ইমপোস্টার সিনড্রোম আছে তা স্বীকার করাই হলো এটা কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে কঠিন ধাপ। অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন, ইমপোস্টার সিনড্রোম কাটিয়ে উঠতে অহংকারী ও অনেক বেশি আত্মসচেতন হয়ে উঠতে হবে। কিন্তু এটা সঠিক উপায় না।

যদি মনে করেন আপনার ইমপোস্টার সিনড্রোম আছে, তাহলে নিচের ৬টি কৌশল আপনাকে সাহায্য করতে পারে:

১. নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করুন

প্রথম পদক্ষেপ হলো আপনি কী অনুভব করছেন এবং কেন অনুভব করছেন তা স্বীকার করা।

জার্নাল লেখার মাধ্যমে শুরু করুন। যখনই নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হবে বা সক্ষমতার অভাব অনুভূত হবে, লিখে ফেলবেন এবং কেন আপনি এমন অনুভব করছেন তা স্পষ্টভাবে নির্ধারণের চেষ্টা করবেন। চিন্তা লিখে ফেলার পর হয়ত আপনি দেখতে পারবেন, সেগুলি আসলে কতটা ক্ষতিকারক। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আপনি এখন এই চিন্তাগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারবেন!

মনে রাখুন, অনুভূতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সেগুলি কেবল মাত্র অনুভূতি, এবং তা সবসময় বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না। নিজেকে অযোগ্য বোধ করার অর্থ এই নয়, আপনি আসলেই অযোগ্য।

আপনার জার্নালে আপনি লিখতে পারেন, “আমি বোর্ডে একটা প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। সবাই আমার প্রশংসা করেছে, বলেছে আমি খুব ভাল করেছি। কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি, তারা আসলে মুগ্ধ হয় নি।” আপনি যা লিখেছেন এবং বোর্ডের সদস্যরা আসলে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সে বিষয়ে যদি চিন্তা করেন, আপনি হয়ত দেখতে পাবেন তাদের প্রতিক্রিয়া আন্তরিক ছিল এবং আপনার এই সন্দেহ ভিত্তিহীন।

নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি মোকাবেলা করার জন্য ‘কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং’ ব্যবহার করুন। কিছু ইতিবাচক বিবৃতি লিখুন যা আপনার নেতিবাচক মনোভাবকে প্রশমিত করবে। আপনি বলতে পারেন, “আমি আত্মবিশ্বাসী, দক্ষ ও প্রফেশনাল” বা “আমি সফল হবো কারণ আমি জানি আমি কী করছি।”

ক্ল্যান্স এবং আইমস আরেকটি কৌশলও প্রস্তাব করেছেন। যাদেরকে আপনি ঠকিয়েছেন বলে মনে করেন তাদেরকে কল্পনা করুন, এবং তাদের কাছে ব্যাখ্যা করুন আপনি কীভাবে তাদের বোকা বানিয়েছেন। তারা কী প্রতিক্রিয়া জানাবে? সম্ভবত তারা আপনাকে বলবে, আপনি তাদের মুগ্ধ করেছেন বলে তারা আপনাকে ভাল গ্রেড, পদোন্নতি বা পুরস্কার দেয়নি। তারা এমনকি বিরক্ত হতে পারে এই ভেবে যে আপনি তাদের পেশাদার সিদ্ধান্ত নিয়ে সন্দেহ করছেন।

২. অন্যদের সাথে কথা বলুন

বিশ্বস্ত লোকেদের সাথে যোগাযোগ করুন এবং কথা বলুন। আপনার কতজন বন্ধু এবং সহকর্মী আপনার মতো একই অনুভূতিতে আক্রান্ত তা দেখে অবাক হতে পারেন। আপনি যাদের সম্মান করেন তাদের কথা শুনুন এবং আপনার ভয় যে ভিত্তিহীন তা প্রমাণ করার সুযোগ তাদের দিন।

ভ্যালেরি ইয়ং তার বই ‘দ্য সিক্রেট থটস অফ সাকসেসফুল উইমেন’ এ লিখেছেন, তিনি অবাক হয়েছিলেন যখন আবিষ্কার করেছেন, তার সহকর্মী ও পরামর্শদাতাদেরও নিজেদের নিয়ে সন্দেহ করার প্রবণতা আছে। ইয়ং-এর মতে, তারা সবাই বুদ্ধিমান, স্পষ্টভাষী ও দক্ষ। এই ধরনের মানুষেরাও যে ভাবতে পারেন তারা অন্যদের সাথে প্রতারণা করছেন তা ইয়ংয়ের আগের ধারণাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল।

৩. দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য পরিকল্পনা করুন

ইমপোস্টার সিনড্রোম মোকাবিলা করতে দীর্ঘমেয়াদী প্রচেষ্টা লাগবে। কখনও কখনও আপনার, বিশেষ করে অনেক চাপের মধ্যে থাকলে এটা মোকাবেলা করার জন্য কৌশলী হতে হবে। যখন নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা আপনাকে গ্রাস করবে, এর থেকে নিজেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় রেখে এর মোকাবিলা করার চেষ্টা করুন।

নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করুন। “কেন আমি এমন করলাম?” এর বদলে ভাবার চেষ্টা করুন, “কেন তারা এটা করেছে?” এটি আপনাকে পরিস্থিতি ও আপনার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতি সম্পর্কে আরও নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে সহায়তা করবে।

আরো বেশি করে ঝুঁকি নেয়ার মাধ্যমে “আমি যথেষ্ট ভালো নই ধরনের অনুভূতি মোকাবিলা করুন। এটা প্রথমে বিপরীতমুখী মনে হতে পারে। কিন্তু হিসাব করে করে ঝুঁকি গ্রহণ করার মাধ্যমে এবং সফলতা অর্জন করতে করতে আপনি আপনার ভেতরকার সমালোচকের বিরুদ্ধে একটা মোক্ষম জবাব তৈরি করতে পারেন।

৪. নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে জানুন

নিজের শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুন। আপনি কোন বিষয়ে সেরা তা আবিষ্কার করতে ও কীভাবে নিজের দুর্বলতা কমিয়ে আনতে পারেন সে সম্পর্কে চিন্তা করতে একটা ব্যক্তিগত এসডাব্লিউওটি (SWOT) পরীক্ষা করুন৷

একবার আপনি আপনার শক্তি এবং দুর্বলতা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারলে, নির্দিষ্ট কোন কাজ, প্রকল্প বা ভূমিকার জন্য আপনি যোগ্য নন এই চিন্তায় উদ্বিগ্ন হয়ে আর সময় ব্যয় করতে হবে না।  যারা আপনাকে অনুপ্রাণিত করে, আপনার নেতিবাচক অভ্যন্তরীণ সমালোচককে মোকাবেলা করতে আপনাকে সাহায্য করে, এবং আপনি যাদের বিশ্বাস করতে পারেন তাদের নিয়ে সাপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করুন।

৫. পারফেকশনিজম কাটিয়ে উঠুন

নিয়মিত বিরতি নেয়া, গভীরভাবে শ্বাস নেয়ার মতো রিল্যাক্সিং টেকনিক ব্যবহার করে এবং বেশি বেশি শরীরচর্চার মাধ্যমে পারফেকশনিস্ট অভ্যাসগুলি কাটিয়ে উঠুন।

কীভাবে নিজের জন্য বাস্তবসম্মত, চ্যালেঞ্জিং ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য সেট করতে হয় তা শিখুন। একই সময়ে মনে রাখুন, ভুল জীবনের একটি অংশমাত্র। আপনি যদি একটা লক্ষ্যে পৌঁছাতে নাও পারেন বা সময়মতো কিছু না পান তাতে বিশাল কিছু হবে না।

আসলে, ভুলগুলি প্রমাণ করে যে আপনি ঝুঁকি নিতে এবং নতুন জিনিস চেষ্টা করতে ভয় পান না। ভুলগুলিকে লজ্জিত হওয়ার মতো জিনিস হিসেবে দেখার বদলে, সেগুলিকে শেখার অভিজ্ঞতা হিসাবে বিবেচনা করুন যা আপনাকে পরের বার আরো ভালো পারফর্ম করতে সহায়তা করবে।

৬. সাফল্যের কৃতিত্ব গ্রহণ করুন

ইমপোস্টার সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের পক্ষে প্রশংসা গ্রহণ করা কঠিন হয়। যখন সবকিছু ঠিকঠাক হয়, তারা তাদের সাফল্যের জন্য বাহ্যিক কারণকে চিহ্নিত করে। যেমন অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়াকে বা সৌভাগ্যকে। কিন্তু যখন সবকিছু ভুল পথে যায়, তখন তারা সমস্ত দোষ নিজেদের কাঁধে নিয়ে নেয়।

নিয়ন্ত্রণের একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ অবস্থান বিকাশ করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি বিশ্বাস করেন আপনার জীবন আপনার নিজের কাজ, পছন্দ এবং সিদ্ধান্তের দ্বারা গঠিত তাহলে আপনি আপনার অর্জনের পাশাপাশি আপনার ভুলের জন্যও দায় নিতে পারবেন। সুতরাং, পরেরবার যখন একটি লক্ষ্য পূরণ করবেন বা গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শেষ করবেন, স্বীকার করুন যে এটা আপনার দক্ষতা এবং প্রতিভার ফলেই সম্ভব হয়েছে।

নিজের সাফল্য উদযাপন করতে এবং উপভোগ করতে ভুলবেন না!

আপনি যেসব ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এবং প্রশংসা পেয়ে থাকেন তা বিবেচনা করুন। পরের বার যখন নিজের সেই নেতিবাচক কণ্ঠস্বরটি শুনবেন, এই প্রশংসাগুলির দিকে ফিরে তাকান। এগুলি আপনার নিজের প্রতি করা সমালোচনা থেকে আপনাকে রক্ষা করতে এবং আত্মবিশ্বাসের একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনুপ্রেরণা দিতে সহায়তা করবে।

কি-পয়েন্টস:

ইমপোস্টার সিনড্রোম হলো চিন্তার একটি স্ব-পরিপূর্ণ প্যাটার্ন যেখানে আপনি নিজেকে প্রতারক বলে মনে করেন। আপনি আপনার বুদ্ধিমত্তা ও প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ করেন। মনে করেন যারা আপনার যোগ্যতা নিয়ে সংশয় রাখে না বলে দাবি করে তারা কেবল ভদ্রতা করছে, বা কোনোভাবে আপনি তাদেরকে বোকা বানিয়েছেন।

ইমপোস্টার সিনড্রোমের লক্ষণগুলির মধ্যে আছে:

  • নিজেকে অযোগ্য মনে করা, নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে সন্দিহান থাকা
  • পারফেকশনিস্ট প্রবণতা প্রদর্শন করা
  • দায়িত্ব এড়ানো
  • সমালোচনা ও আত্মপ্রকাশের ভয়
  • নিজের সাফল্যকে অস্বীকার করা

ইমপোস্টার সিনড্রোম আছে তা স্বীকার করাই হলো এটি কাটিয়ে ওঠার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপ। এটি কাটিয়ে উঠতে আপনি ব্যবহার করতে পারেন এমন কয়েকটি কৌশল হল:

  • নিজের অনুভূতিকে স্বীকার করা
  • অন্যদের সাথে কথা বলা
  • দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখানোর পরিকল্পনা তৈরি করা
  • নিজের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে বুঝতে শেখা
  • পারফেকশনিজম কাটিয়ে ওঠা
  • নিজের সাফল্যের কৃতিত্ব গ্রহণ করা

মাইন্ডটুল ডটকম থেকে অনুবাদ: দীপ্র আসিফুল হাই