অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নেতৃত্বের ১৪টি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন জেফ বেজোস। আর সেসব মূলনীতিই বিশ্বব্যাপী তাকে আজকের এই বিশাল ব্যবসায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে। অ্যামাজনের এই ১৪ মূলনীতি আপনাকে এবং আপনার ব্যবসাকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য এনে দিতে পারে।

কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন মূল্যবোধ আপনাকে অনুপ্রাণিত করে? সেসবের মধ্যে কি সততার প্রতিশ্রুতি রয়েছে? বা উদ্ভাবনের আকাঙ্ক্ষা?
আপনি যে কোম্পানির অংশ তার কী খবর? এই ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানগুলি কি নির্দিষ্ট কোনো মূল্যবোধ বা মূলনীতি মেনে চলে? সেই মূল্যবোধগুলি কি সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে?

অ্যামাজনের চোখ ধাঁধানো সাফল্যের পেছনে কিছু মূল্যবোধ আছে। এসবের ভিত্তিতেই অ্যামাজন কাজ করে। এর মধ্যে কোম্পানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যার সমাধান, যে কোনো কাজের প্রস্তুতির সময় এবং এমনকি নিয়োগ দেওয়ার সময়ও উল্লেখ করা হয়। অ্যামাজনের নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের কর্মীরাই সপ্তাহের প্রতিটি দিন এই নীতিমালা মেনে চলেন।

আসুন জেনে নেই, অ্যামাজনের চোখ ধাঁধানো সাফল্যের নেপথ্যের এই ১৪টি মূল্যবোধ কী কী।

১. কাস্টমারের প্রতি দায়বদ্ধতা

অ্যামাজনের বিজনেস লিডাররা সব কিছুর ওপরে স্থান দেন কাস্টোমারের প্রতি দায়বদ্ধতাকে। তারা কাস্টোমারের আস্থা অর্জন এবং তা ধরে রাখার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর নজর রাখার পাশাপাশি তারা কাস্টোমারের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকেন।

২. মালিকানা

লিডাররাই মালিক। তারা দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করেন। স্বল্পমেয়াদে লাভবান হওয়ার জন্য তারা দীর্ঘমেয়াদের মূল্যবোধ বিসর্জন দেন না। তারা নিজেদের দলকে ছাপিয়ে পুরো কোম্পানির ভালোর জন্য কাজ করেন। তারা কখোনোই বলেন না যে, “এটা আমার কাজ না।”

৩. উদ্ভাবন এবং সরলীকরণ

লিডাররা নিজেদের টিমের কাছ থেকে সবসময়ই নতুনত্ব এবং উদ্ভাবন চান। কোনো কাজকে আরো সহজ করে তোলার উপায় খুঁজে বের করেন। তারা সবসময় চোখ-কান খোলা রাখেন এবং সবখানেই নতুন ধারণা খুঁজে বেড়ান। যে কোনো উৎস থেকেই নতুন ধারণা পেলে গ্রহণ করেন। আর নতুন জিনিস করতে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে যে তা গৃহীত নাও হতে পারে সে বিষয়েও মানসিক প্রস্তুতি থাকে তাদের।

৪. প্রায়ই সঠিক

লিডাররা বেশিরভাগ সময়ই সঠিক থাকেন। তারা নানা দৃষ্টিকোণ থেকে যেকোনো কিছুর বিচার করেন এবং শুধু বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেন না বরং নিজেদের বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণিত করার জন্য কাজ করেন।

৫. নতুন জিনিস শেখা এবং জানার আগ্রহ

লিডাররা কখনো নতুন জিনিস শেখা বন্ধ করেন না এবং সবসময়ই নিজেদের জ্ঞান বাড়াতে থাকেন। তারা সবসময়ই নতুন নতুন সম্ভাবনার ব্যাপারে উৎফুল্ল্ থাকেন এবং সেগুলো উদঘাটন করেন।

৬. সেরা মেধাবীদেরকে নিয়োগ করা এবং নেতৃত্ব গড়ে তোলা

লিডাররা প্রতিটি নিয়োগ এবং প্রমোশন এর সময় কোম্পানির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলেন। তারা খুব সহজেই মেধাবী চিনতে পারেন এবং তাদের পরিকল্পিতভাবে প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে পারেন। সত্যিকার নেতারাই আরো নেতা তৈরি করেন এবং অন্যদেরকে গড়ে তোলার বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেন। তারা জনগণের পক্ষ হয়ে ক্যারিয়ার চয়েজের মতো বিষয়ে উন্নয়নের জন্য ম্যাকানিজম গড়ে তোলে।

৭. সর্বোচ্চ মান বজায় রাখার ব্যাপারে অনড়

অ্যামাজনের লিডাররা বিরামহীনভাবে কাজের উচ্চ মান ধরে রাখেন। অনেকে হয়তো এই বিষয়টিকে অযৌক্তিকও ভাবতে পারেন। লিডাররা সবসময়ই তাদের কাজের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন এবং নিজেদের দলকে সর্বোচ্চ মানের পণ্য, সেবা এবং প্রক্রিয়া সরবরাহ করতে তাগিদ দেন। লিডাররা তাদের কাজে কোনো ত্রুটি রেখে সেটা নিচের দিকে চালান করেন না এবং সমস্যার সমাধান করেই তবে ছাড়েন।

৮. বড় চিন্তা করা

লিডাররা সবসময় বড় চিন্তা করেন এবং সাহসী পদক্ষেপ নেন, যা থেকে ভালো রেজাল্ট আসে। তারা ভিন্নভাবে চিন্তা করেন এবং কাস্টমারদেরকে আরো ভালো সেবা দেয়ার জন্য চারপাশে নজর দিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন।

৯. কাজের প্রতি একাগ্রতা

ব্যবসায় গতি খুবই জরুরি বিষয়। অনেক সিদ্ধান্ত এবং পদক্ষেপ তড়িৎ গতিতেই নিতে হয়। হিসেবি ঝুঁকি গ্রহণে উৎসাহিত করে অ্যামাজন।

১০. মিতব্যয়িতা

কম খরচে বেশি কাজ সম্পন্ন করা হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতা উর্বর মস্তিষ্ক, স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং উদ্ভাবনের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।

১১. আস্থা অর্জন

অ্যামাজনের লিডাররা মনোযোগ দিয়ে শোনেন, কথা বলেন খোলামেলা এবং অন্যদেরকে সম্মান করেন। তারা সবসময়ই আত্মসমালোচনা করেন। এমনকি যখন তা তাদের নিজেদের জন্য বেকায়দামূলক বা বিব্রতকর হয় তখনো তারা তা থেকে বিরত থাকেন না। তারা নিজেদেরকে এবং নিজেদের টিমকে কাজের মধ্য দিয়েই সেরা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।

১২. গভীরে ডুব

লিডাররা সব পর্যায়ে কাজ করেন। বিস্তারিত খোঁজ-খবর রাখেন। প্রায়ই অডিট করেন। আর যখনই কোনো ধরনের অসামঞ্জস্য দেখেন, তারা সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন। কোনো কিছুই তাদের অগোচরে থাকে না।

১৩. মেরুদণ্ড সোজা রাখা; “না” বলতে পারা এবং কমিটমেন্ট

কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একমত হতে না পারলে লিডাররা সম্মানের সঙ্গে তার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানাতে বাধ্য থাকে। এমনকি সেটা যদি তাদের জন্য বেকায়দা পরিস্থিতি তৈরি করে এবং তাদের শক্তি নিঃশেষ করে দেয় তবুও তারা চ্যলেঞ্জ থেকে পিছু হটেন না। লিডাররা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ হয়ে থাকেন। তারা সামাজিক সংহতি বজায় রাখার স্বার্থেও কখনো আপোস করেন না।

১৪. ফলদায়ক হত্তয়া

লিডাররা তাদের ব্যবসার প্রধান ইনপুটগুলির প্রতি মনোযোগী হয়ে থাকেন। সঠিক গুণগত মানসহ, সময় মতো সেগুলি সরবরাহ করেন। বাধা-বিপত্তি থাকলেও তারা সামনে আগান, কখনোই থেমে যান না।