বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে ৩০ এর পরে বাচ্চা নেওয়া নারীদের সন্তানদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যারা ৩৫ এর পরে বাচ্চা নেয় তাদের সন্তানদের লিউকেমিয়া, বিশেষ করে অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া এবং নন-হজকিন লিম্ফোমা ধরা পড়ার ঝুঁকি থাকে।

যারা ৩০ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মধ্যে সন্তান নেন, তাদের হজকিন-লিম্ফোমা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন বয়স্ক মানুষদের শরীরে ক্রোমোসোমের মিউটেশন বেড়ে যাওয়ার কারণে হয়ত এটা ঘটে।

সাম্প্রতিক কালে দম্পতিরা সাধারণত যে বয়সে সন্তান নিয়ে থাকেন সেটা বিবেচনা করলে নতুন এই আবিষ্কারটি বেশ উদ্বেগজনক।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জুলিয়া হেক বলেছেন, আমরা জানতাম যে বাবা-মায়ের সন্তানদের ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি হিসেবে কাজ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়স্ক বাবা-মা বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একেবারে অল্প বয়স্ক (টিনেজ) বাবা-মায়ের সন্তানদের ক্যান্সার হওয়ার রেট অনেক বেশি। আমাদের জনসংখ্যা ভিত্তিক গবেষণায় আমরা এই সম্পর্ক খুঁজে বের করতে চেয়েছি।

গবেষণাগুলিতে দেখা গেছে, গত ৭০ বছরে এই প্রথম ৪০ বছর বয়সে সন্তান নেওয়া নারীদের সংখ্যা ২০ বছর বয়সে সন্তান নেওয়া নারীদের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ৮০’র দশকের শুরু থেকে নারীদের উর্বরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। সন্তান নেওয়ার চেয়ে ক্যারিয়ারের দিকে বেশি ফোকাস করার ট্রেন্ডকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

গবেষণায় পাওয়া মূল বিষয়গুলি

ইউনিভার্সিটি অব ডেনমার্ক ও ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলস এর একটি দল ৫,৮৫৬ জন ড্যানিশ শিশুদের ক্যান্সার হওয়ার ঘটনা পরীক্ষা করে দেখেছেন। এসব শিশুদের ১৬ বছর বয়সের আগেই ক্যান্সার ধরা পড়েছিল।

বাবা-মায়ের বয়স অনুযায়ী সন্তানদের ক্যান্সার হওয়াকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছিল। ডা. হেক জানিয়েছেন যে ফলাফল পাওয়া গেছে তাতে তিনি বিস্মিত নন।

তিনি বলেছেন, ড্যানিশ শিশুদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার জন্য বাবা-মায়ের বেশি বয়স একটা ঝুঁকি হিসেবে কাজ করেছে। এর সাধারণ ব্যাখ্যা হচ্ছে বয়সের সাথে সাথে বাবা-মায়ের ক্রোমোসোমের মিউটেশন হার বেড়ে যায়।

বয়সের সাথে সাথে বাড়তে থাকা এই মিউটেশন পুরুষদের শুক্রাণু ও নারীদের ডিম্বানুতেও ঘটে।

ডা. হেক আরো বলেছেন, আমরা ইতোমধ্যেই জানি যে বেশি বয়সে বাচ্চা হলে সন্তানদের ডাউন’স সিন্ড্রোম দেখা দেওয়ার মারাত্মক ঝুঁকি থাকে। যে বিষয়টি নিয়ে কম গবেষণা করা হয় তা হল বেশি বয়সী বাবা-মায়ের সন্তানদের সিঙ্গেল জিন মিউটেশনের কারণে ত্রুটিপূর্ণ সন্তান হওয়ার ঝুঁকি থাকে, এবং সন্তানের নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার হওয়ার ঝুকিও থাকে।

 

বেশি বয়সী নারীদের ঝুঁকি বেশি

গবেষণাটিতে দেখা গেছে শিশুদের ক্যান্সারের সাথে বাবার বয়সের সম্পর্কের চেয়ে মায়ের বয়সের সম্পর্ক বেশি জোরালো।

বেশি বয়সী বাবাদের সন্তানের লিউকেমিয়া ও নন-হজকিন লিম্ফোমার ঝুকি অবশ্য সামান্য বেশি।

ডা. হেক পরামর্শ দিয়েছেন বাবা-মায়েরা বয়সের বিবেচনা বাদ দিয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য তা নিরাপদ হতে পারে। যেমন, অ্যালকোহল খুব কম পরিমাণে গ্রহণ, ধূমপান না করা এবং রাসায়নিক পদার্থ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা।

 

বয়স্ক মায়েদের দশগুণ বেশি নিবিড় পরিচর্যা প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে নারীরা বেশি বয়সে বাচ্চা নিলে সন্তান জন্মদানের সময় মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। যে সকল নারী ৪৪ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সে সন্তান জন্ম দেন তারা ২০-২৯ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দেওয়া নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি মৃত্যু অথবা সিরিয়াস সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন।

যেসব নারীরা ২০-২৫ বছর বয়সে সন্তান জন্ম দেন তাদের চেয়ে ৩০ এর পরে সন্তান জন্ম দেওয়া দশগুণ বেশি নারীদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

প্রচুর গবেষণায় পাওয়া গেছে , বেশি বয়সী মায়েদের সন্তানদের অটিজম বা ডাউন’স সিন্ড্রোম হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তবে বেশি বয়সী মায়েদের নিজেদের স্বাস্থ্যেরও যে ঝুঁকি থাকে সে বিষয়ে কম গবেষণা হয়ে থাকে।

কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ম্যাটারনাল মেডিসিনের সহকারী অধ্যাপক ডা. সারকা লিসনকোভা বলেছেন, নারীরা সাধারণত তাদের বাচ্চাদের নিয়ে চিন্তিত থাকে এবং নিজেদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাবের ব্যাপারে অত চিন্তা করে না। সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে মায়েদের মারাত্মক সংকটপূর্ণ অবস্থার সম্ভাবনা কম, তবে ৪০-এ বা তার পরে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি খুব দ্রুত বেড়ে যায়। এই ঝুঁকির ব্যাপারে নারীদেরকে সতর্ক করা প্রয়োজন।