বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭,২০০ মাইল উপরে একটি অদৃশ্য ঢাল পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে।
এই ঢাল বা আবরণটি তীব্র গতির ‘কিলার ইলেক্ট্রন’ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করছে। সায়েন্স ফিকশন ছবি স্টার ট্রেক-এর মত এই ঢালটি বিপদজনক ইলেক্ট্রন থেকে মহাকাশচারী এবং স্যাটেলাইটগুলিকে রক্ষা করে।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এই অদৃশ্য ঢালটি ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের মধ্যে অবস্থিত। এই ঢালটি হলো পৃথিবীকে ঘিরে ডোনাট আকৃতির দুটি রিং এর মত, এরা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০,০০০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই ঢালের ভিতরের অংশে প্রচুর শক্তিশালী প্রোটনে পরিপূর্ণ, আর বাইরের অংশ প্রচণ্ড শক্তিশালী ইলেক্ট্রনে পরিপূর্ণ।
কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা নাসার ভ্যান অ্যালেন বেল্টে অবস্থানরত মহাকাশযানের সংগৃহীত দুই বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করার পরে এই ঢাল বা আবরণটি আবিষ্কৃত হয়েছে। মহাকাশযানটি প্রচণ্ড শক্তিশালী ইলেক্ট্রনের আচরণ বোঝার জন্য এই রিংগুলির চারদিকে প্রদক্ষিণ করছিল।
প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায়, বাইরের অংশের ভিতরের দিকের প্রান্তে একেবারে পরিষ্কার একটি সীমানা পর্যন্ত আসার পরে শক্তিশালী আল্ট্রারিলেটিভিস্টিক চার্জড ইলেক্ট্রনগুলি বাইরের দিকে বিকর্ষিত হচ্ছিল। এই ইলেক্ট্রনগুলি পৃথিবীর চারদিকে প্রায় আলোর কাছাকাছি বেগে ঘুরতে থাকে, প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৬০,০০০ কিলোমিটার বেগে।
ধারণা করা হয় এই ইলেক্ট্রনগুলি ধীরে ধীরে উপরের স্তরে প্রবেশ করে বাতাসের অণুর সাথে সংঘর্ষে ধ্বংস হওয়ার আগে খুব মসৃণভাবে রূপান্তরিত হতে পারে। অবাক করা ব্যাপার হল, এগুলি খুব শক্তভাবে বাধার সম্মুখীন হয়।
এই প্রতিবেদনের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড্যানিয়েল বেকার বলেন, ইলেক্ট্রনগুলি যেন মহাশূন্যে কাচের দেয়ালে মধ্যে বাধা পাচ্ছে। আমরা দেখছি যে অনেকটা স্টার ট্রেকে অ্যালিয়েনদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা অস্ত্রের মত একট অদৃশ্য আবরণ এই ইলেক্ট্রনগুলিকে বাধা দিচ্ছে। এটি মারাত্মকভাবে একটি ধাঁধার মত ঘটনা।
এই বিভ্রান্তিকর ফোর্স ফিল্ডকে চিহ্নিত করার জন্য গবেষকরা বাধা তৈরি করতে পারে এমন কয়েকটি ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারা মনে করছেন যে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র কোনোভাবে এই ইলেক্ট্রনগুলিকে সরিয়ে রাখছে। অথবা মানুষের ব্যবহৃত ডিভাইসগুলির রেডিও সিগন্যাল কোনো একভাবে এই ইলেক্ট্রনগুলিকে বিকর্ষণ করছে। কিন্তু যা দেখা গেছে তার সাথে এই ব্যাখ্যাগুলি ঠিকভাবে খাপ খায় না।
তাছাড়া তারা বলেছেন প্লাজমাসফিয়ার নামে একধরনের ইলেক্ট্রিক্যালি চার্জড ঠাণ্ডা গ্যাসের মেঘ এই ঘটনায় কোনো ভূমিকা পালন করে থাকতে পারে। এই বৃহদাকৃতির মেঘ ভূপৃষ্ঠের ৬০০ মাইল উপর থেকে শুরু হয়ে উপরের দিকে হাজার হাজার মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এটি ভ্যান অ্যালেন বেল্টে তীব্র শক্তির ইলেক্ট্রনের এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই মেঘের কম ফ্রিকোয়েন্সির ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ বা তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ এই ইলেক্ট্রনগুলিকে সীমানার বাইরে রাখতে পারে। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন না যে, এই ঘটনা এ পর্যন্তই শেষ। তারা ভবিষ্যতে এই ধাঁধার অন্যান্য অংশ খুঁজে পাওয়ার আশা রাখছেন।বেকার বলেছেন, আমি মনে করি এই অঞ্চলটিকে নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেই রহস্যের চাবিকাঠি পাওয়া সম্ভব। ভ্যান অ্যালেন বেল্টে শক্তিশালী যন্ত্রপাতি কাজে লাগিয়ে আমরা এটা করতে পারি।