বাসি এবং ছাতা পড়া পাউরুটিতে আসলে ‘পরিষ্কার’ বা ভালো অংশ বলে কিছু থাকে না। টেক ইনসাইডারের একটি ইউটিউব ভিডিওতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। যদিও পাউরুটি ফেলে দেয়াকে একটি অপচয়ী কাজ বলে মনে হতে পারে, তথাপি বিজ্ঞান বলছে, ছাতা পড়লে সেই পাউরুটি আর খাওয়া উচিৎ না। কিন্তু কেন?

কারণ ছাতা একধরনের ছত্রাক। মাশরুমের মতো সব ধরনের ছত্রাকেরই থাকে হাইফি নামে একাধিক শেকড় যা ভেতর দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং খালি চোখে দেখা যায় না। তার মানে ছাতা পড়া রুটির নষ্ট অংশটুকু ছিঁড়ে ফেলে দিলেও পরিষ্কার অংশটুকুতে এর অদৃশ্য শেকড় রয়েই যায়।

একইভাবে পাউরুটির প্যাকেট থেকে ছাতা পড়া পিসগুলি বাদ দিয়ে পরিষ্কার পিসগুলি খাওয়াও বিপজ্জনক। মাশরুমের মতো ছত্রাক বাতাসে প্রচুর পরিমাণে বীজগুটি ছাড়ে, যা পুরো প্যাকেটেই ছড়িয়ে পড়ে।

কিছু ছত্রাক আছে মাশরুমের মতোই খাওয়ার উপযোগী। তবে অনেক ছত্রাক আবার বেশ বিষাক্ত। ছত্রাক খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক ছত্রাক আবার জীবন রক্ষাকারী অ্যান্টিবায়োটিকের মতো। কিন্তু অনেকগুলিই আবার বিপজ্জনক। রাইঝোপাস স্টলোনাইফার নামের যে ছত্রাক পাউরুটিতে জন্মায় তা পেটে গেলে মারাত্মক ইনফেকশন হতে পারে।

 

পাউরুটিতে যে ছাতা পড়ে তাও এক ধরনের ছত্রাক
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি অধিদপ্তরের মতে (ইউএসডিএ) যদি অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে পর্যবেক্ষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে, ছাতাগুলিকেও দেখতে মাশরুমের মতোই লাগে। যদিও খুব পাতলা। তাদেরও একটি লম্বা ডাঁটা আছে যেখানে বীজগুটিও আছে। আর সেই ডাঁটাটিই পাউরুটির উপর সবুজাভ নীল রঙ আকারে দেখা যায়।

আরো পড়ুন: মাইকেল পোলান এর ‘ইন ডিফেন্স অফ ফুড’ থেকে

যাইহোক, তাদের শেকড় এতটাই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না। তাদের আকার প্রায় আণুবীক্ষণিক। আর এ কারণেই ছাতা পড়া অংশ ফেলে দিয়ে পরিষ্কার অংশ খেলেও ঝুঁকি থেকেই যায়। কেননা একদিকে ছাতা পড়লেও পুরো রুটিতেই তার অদৃশ্য শেকড় ছড়িয়ে যায়। এছাড়া ছাতা পড়া পাউরুটিতে ব্যাকটেরিয়াও জন্মায়।

আর তাছাড়া ছত্রাকের থাকে বীজগুটি, তা এক পিস থেকে আরেক পিসে লাফিয়ে পুরো পাউরুটিতে ছড়িয়ে যেতে পারে, যেভাবে ফুলের বীজ পুরো বাগানজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

 

ছাতা পড়া পনির কেমন? তা কি খেতে নিরাপদ?

বাসি এবং ছাতা পড়া পাউরুটি খাওয়া নিরাপদ নয়। কিন্তু ছাতা পড়া পনির খাওয়া কি নিরাপদ?  ট্রিহাগার-এর তথ্য মতে, ইউএসডিএ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কিছু গাইড লাইন তৈরি করেছে, যেগুলি ছাতা পড়া পনির এবং ফল-মূল ও সবজির বেলায় প্রযোজ্য:

  • ছাতা পড়া খাবার নাক দিয়ে শুঁকবেন না। এতে শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ছাতা পড়া খাবার প্রথমে কাগজের ব্যাগের ভেতরে নিয়ে বা প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে পেঁচিয়ে ঢাকনা দেয়া ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসুন। শিশুরা যেন নাগাল না পায় তা নিশ্চিত করতে দূরে ফেলে দিয়ে আসুন।
  • ছাতা পড়া খাবার যে জায়গায় ছিল তা পরিষ্কার করে ফেলুন। নয়তো আক্রান্ত খাবার থেকে ছত্রাক চারদিকে ছড়িয়ে পড়েবে। বিশেষ করে ফলমূল ও সবজির গায়েও ছাতা পড়ে যেতে পারে।
  • ছাতা পড়া খাবার কীভাবে হ্যান্ডেল করবেন তার জন্য ইউএসডিএ-র ওয়েবসাইটে গিয়ে এই তালিকায় দেখে নিন—“Moldy Food: When to Use, When to Discard” (website).

ওই তালিকায় থাকা বেশিরভাগ খাবার ফেলে দিতে হবে যদি তাদের ওপর ছাতা পড়ে। তালিকায় রয়েছে, লাঞ্চন মিট, নরম এবং স্লাইস করা পনির এবং নরম ফলমূল। এছাড়া ছাতা পড়া পিনাট বাটার, জেলি, দই, ক্যাসরোল এবং পাস্তা কখনোই খাওয়া যাবে না। তবে তারা এমন কিছু খাবারও শনাক্ত করেছে যেগুলি ছাতা পড়ার পরও পরিষ্কার করে খাওয়া যাবে।

আরো পড়ুন: পটাসিয়াম—কম বা বেশি নয়, দরকার সঠিক পরিমাণ

গর্গনজোলা এবং রোকেফর্ট পনির তৈরিই করা হয় ছাতা সহ, যা খাওয়ার জন্য নিরাপদ। আপনি যদি আপনার শক্ত পনিরের মধ্যে ছাতা পড়তে দেখেন তাহলে এর চারদিকে এবং নিচের দিকে ১ ইঞ্চি করে কেটে ফেলুন এবং তাজা উপাদান দিয়ে মুড়িয়ে খেয়ে ফেলুন।

অনুবাদ: মাহবুবুল আলম তারেক