পরিবেশ রক্ষায় ক্যালিফোর্নিয়া এই পর্যন্ত অনেক নীতিই গ্রহণ আর বাস্তবায়ন করেছে।

২০১৪ সালে তাদের কেন্দ্রীয় সরকার ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ আইন প্রয়োগের জন্যে রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল। সেই আইন বাস্তবায়ন করে ক্যালিফোর্নিয়া তার প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর চাইতে অনেক এগিয়ে ছিল। ‘ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট’ আইন অনুযায়ী প্রাইভেট কোম্পানিগুলি পরিবেশ রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের মানদণ্ডের অনুসারে তাদের দূষণের মাত্রা কমিয়ে রাখবে। আইন পাশ হওয়ার বছরেই ক্যালিফোর্নিয়া মোট ১৫৯৭টি প্রতিষ্ঠানকে এই আইনের আওতায় নিয়ে আসে।

পরিবেশ আর প্রকৃতি রক্ষায় কেবল ২০১৫ সালেই ক্যালিফোর্নিয়া প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করে। ২০১৭ আর ২০১৮ সালে রাজ্যের সবচেয়ে জনবহুল শহর লস এঞ্জেলেসের বাসিন্দারা পরিবেশ রক্ষার জন্য তাদের রাস্তা সাদা রঙ করেছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র এরিক গারসেত্তি তখন বলেন, পর পর দুই বছর ধরে রাস্তায় সাদা রঙ করতে পারলে ২০১৯ সালের মধ্যে শহরের তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি কমে আসবে।

লস অ্যাঞ্জেলেস হলো ব্যস্ত আর উষ্ণ একটা দ্বীপ-শহর। এই ধরনের শহর তৈরির সময় শস্যক্ষেত আর মাটির জমি বিলীন হয়ে যায়। তাই শহরের ব্যস্ত জায়গাগুলির তাপমাত্রা অন্যান্য জায়গার চেয়ে বাড়তে থাকে। আবার কালো পিচের রাস্তাগুলি সূর্য থেকে পাওয়া ৮০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত তাপ ধরে রাখতে পারে। সেই জায়গার জমিগুলি আর্দ্র মাটি আর গাছপালার ছায়া না পাওয়ায় আস্তে আস্তে উষ্ণ আর শুষ্ক হতে থাকে।

যেকোনো রাজ্যের অন্যান্য এলাকার চেয়ে বড় শহরগুলি অনেক উষ্ণ থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্ষেত্রে এই তাপমাত্রার পার্থক্য ২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট কিংবা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হয়ে যায়। রাস্তায় উজ্জ্বল সাদা রঙ করার ফলে লস অ্যাঞ্জেলেসের মানুষরা ঘরের বাইরে আগের চেয়ে প্রফুল্ল থাকবেন। কিন্তু এর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সাদা রঙ শহরটার তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে। লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তাগুলোতে ‘কুল-সিল’ নামে একটা সাদা আর আর্দ্র পিচজাতীয় পদার্থ লাগানো হচ্ছে। এতে করে রাস্তায় পড়া সূর্যের আলো অনেকটাই প্রতিফলিত হয়।

কুল-সিল লাগানো রাস্তাগুলি অন্যান্য কালো পিচের রাস্তার চাইতে গড়ে ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ঠাণ্ডা থাকে। স্যান ফার্নান্দো ভ্যালির রাস্তায় পরীক্ষামূলকভাবে যখন এই পদ্ধতিতে সাদা রঙ করা হয়েছিল, তখন আশাতীত ফল পাওয়া গেছে। কালো পিচের রাস্তার চেয়ে ভ্যালির কুল-সিল লাগানো রাস্তা প্রায় ২৩ ডিগ্রি বেশি ঠাণ্ডা ছিল। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করার ফলে কিছু আর্থসামাজিক উপকারিতাও পাওয়া যায়। যাদের এয়ার কন্ডিশন লাগানোর সামর্থ্য নেই, এমন অনেকেই এর দ্বারা উপকৃত হবেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষদের পাশাপাশি এই প্রকল্প পৃথিবীর জলবায়ুর পক্ষেও অনেক উপকারী। পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকাতে এই প্রকল্প অবদান রাখতে পারবে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদী খরচের তালিকাও অনেক বড়। এই পদার্থ দিয়ে সাদা রঙ করতে প্রতি মাইলে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ হয়। অথচ রাস্তায় লাগানো এই প্রলেপ গড়ে ৭ বছরের বেশি টিকে না।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার প্রতিষ্ঠান গার্ড-টপ রাস্তায় লাগানোর জন্য এই পদার্থ উৎপাদন করে। যদিও প্রাথমিকভাবে গার্ড-টপ অনেক বড় বাজেটের কাজ পেয়েছিল। ওয়াশিংটন পোস্টের ২০১৭ সালের একটি আর্টিকেল অনুযায়ী মার্কিন সেনাবাহিনী তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড যুদ্ধবিমানগুলি লুকাতে কুল-সিল লাগিয়েছিল। যাতে করে ইনফ্রারেড ক্যামেরা সংবলিত গোয়েন্দা বিমান সেগুলি খুঁজে না পায়। সাম্প্রতিক সময়ে অনেক জায়গায় পার্কিং লট আর বাচ্চাদের প্লেগ্রাউন্ডে এর ব্যবহার হয়েছে। তবে ২০১৭ সালেই শহরের রাস্তায় প্রথম এর ব্যবহার করা হয়।

গার্ড-টপ তাদের স্লোগান হিসেবে অভিনব কিছু শব্দ বেছে নিয়েছে, “পরিবেশের ক্ষতি না করেই সড়কের সৌন্দর্য আর আয়ু বাড়ান।” কোম্পানির সেলস ডিরেক্টর জেফ লুজার বলেন, আমাদের স্লোগানের কথাগুলি উপলব্ধি করার ফলেই নানান জায়গায় এর ব্যবহার বাড়ছে। তিনি মনে করেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের সব রাস্তায় কুল-সিল লাগানো হলে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটন খাত অনেক লাভবান হবে। সাথে সাথে পরিবেশের বিপর্যয় ঠেকানোও সম্ভব হবে। তার মতে, এভাবে আগানো গেলে শীঘ্রই লস অ্যাঞ্জেলেস দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সবচেয়ে ঠাণ্ডা শহরে পরিণত হবে।