২০১৮ সালে ৭৬ বছর বয়সে মারা যান স্টিফেন হকিং। খ্যাতনামা এই ব্রিটিশ অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট বা জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা বাড়াতে অনেক সাহায্য করেছেন। তবে পদার্থবিজ্ঞানের জটিল সব গবেষণা ছাড়াও অদ্ভুত এক পার্টির আয়োজন করার জন্যেও তিনি ভবিষ্যতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রতিভাবান এই বিজ্ঞানী ২০০৯ সালের ২৮ জুন একটি পার্টির আয়োজন করেন। নিয়ম ছিল শুধুমাত্র যাদের কাছে আমন্ত্রণ পত্র থাকবে, তারাই সেই পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। পার্টির অতিথিদের জন্য বেলুন, শ্যাম্পেন ও খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। তবে এই পার্টির একটা বিষয় অদ্ভুত ছিল। তিনি সকলকে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন পার্টি শেষ হওয়ার পরে।
হকিংয়ের আমন্ত্রণপত্রে লেখা ছিল, “টাইম ট্রাভেলারদের এই পার্টিতে আপনি সাদরে আমন্ত্রিত।”
পার্টিটি কখন ও কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তার তারিখ, সময় ও জিপিএস অবস্থান আমন্ত্রণপত্রে জানিয়ে দিয়েছিলেন হকিং।
কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই পার্টি
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্টিটি অনুষ্ঠিত হয়। যাদেরকে তখনও আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি, তারা এই টাইম ট্রাভেলার পার্টিতে অংশগ্রহণ করতে আসবেন বলে হকিং ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দুঃখজনকভাবে, তার পার্টিতে শেষ পর্যন্ত কেউই আসেননি।
আরো পড়ুন: কেন ১৮৫৬ সালে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ২ ফুট বাড়িয়ে বলা হয়েছিল
“আমার কাছে পরীক্ষা নির্ভর প্রমাণ আছে যে, টাইম ট্রাভেল সম্ভব নয়”, বলেছিলেন স্টিফেন হকিং।
তবুও হকিং তার পরীক্ষা সম্পর্কে একেবারে আশাহত ছিলেন না। যদি ভবিষ্যতের কোনো অতিথি আমন্ত্রণ গ্রহণ করে পার্টিতে আসেন, সেজন্য হকিং তার দরজা খোলা রেখেছিলেন। “আমি আশা করছি, এর অনুলিপি, কোনো না কোনো রূপে, হাজার বছর ধরে টিকে থাকবে। হয়ত একদিন ভবিষ্যতে বসবাসকারী কেউ এই তথ্যটি খুঁজে পাবে এবং একটি ওয়ার্মহোল টাইম মেশিন ব্যবহার করে আমার পার্টিতে আসবে। এতে প্রমাণ হবে যে টাইম ট্রাভেল একসময় সম্ভব হয়েছে।”
টাইম ট্রাভেলারদের এই পার্টি দেওয়া হকিং এর জন্য অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। তিনি কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাকহোল, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং সাধারণ আপেক্ষিকতার মত বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে অনেক গবেষণা ও আবিষ্কার করেছেন। এসব গবেষণার জন্য একাডেমিক জগতে তার বেশ সুনাম তৈরি হয়।
তার সর্বাধিক বিক্রিত প্রবন্ধের বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম’ তাকে পদার্থবিজ্ঞানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে।
মোটর-নিউরন রোগের প্রভাবে হকিংয়ের জনপ্রিয়তা পরবর্তীতে আরো বেড়ে যায়। রোগের কারণে তিনি অল্প বয়সে মারা যাবেন, এমন একটি গুরুতর আশঙ্কা ছিল। অথচ হকিং শেষ পর্যন্ত ৭০ বছরেরও বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন।
প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও তিনি তার ধারণা ও চিন্তাভাবনা নিয়মিত প্রকাশ করতেন। ২০১৪ সালে তার জীবন কাহিনী অবলম্বনে ‘দ্য থিওরি অফ এভরিথিং’ নামের একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। সেখানে এডি রেডমেইন হকিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং অস্কার জেতেন।
স্টিফেন হকিংয়ের টাইম ট্রাভেলার পার্টিতে কেউ হাজির হয়নি কেন?
এর কারণ হতে পারে, টাইম ট্রাভেল এর পদ্ধতি আবিষ্কারের এখনও অনেক দীর্ঘ সময় বাকি। তাই হকিংয়ের আমন্ত্রণের বিষয়ে ভবিষ্যতের কেউ জানতেই পারেনি। অথবা হয়ত টাইম ট্রাভেলাররা হকিংয়ের আমন্ত্রণের বিষয়ে জানত, কিন্তু তারা আসতে চাননি।
হয়ত টাইম ট্রাভেলিংয়ের কোনো নিয়ম মেনে চলতে গিয়ে আসেননি তারা। অথবা হয়ত হকিংয়ের পার্টিটি তাদের কাছে যথেষ্ট মজার মনে হয়নি। কিন্তু আসলে কেউ তার পার্টিতে কেন আসেননি, সেটা হয়ত আমরা কখনোই জানতে পারব না। তবে পরবর্তিতে হকিং শেষবারের মত আরো একবার আরেকটি পরীক্ষা করেন।
আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ চার্লি চ্যাপলিন ও ১২ মিনিট করতালি
২০১৮ সালে হকিংয়ের মৃত্যুর পর একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যোগদানের জন্য অনলাইন ব্যালটের মাধ্যমে যে কারো আবেদন করার সুযোগ ছিল। তবে আবেদনকারীরা দ্রুতই লক্ষ্য করেন যে, অতীতে জন্ম নেওয়া মানুষেরা ছাড়াও ভবিষ্যতে ২০৩৮ সাল পর্যন্ত যারা জন্মগ্রহণ করবেন, তারাও ব্যালট পূরণ করতে পারবেন।
৫০টিরও বেশি দেশ থেকে ১২,০০০ মানুষ সেই স্মরণসভায় যোগদানের জন্যে আবেদন করেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানি, তাদের কেউই হকিং এর মৃত্যুর পরের স্মরণসভার অংশগ্রহণ করেনি।
সূত্র. ইউরোনিউজ, অনুবাদ: জুবায়েদ দ্বীপ