“দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ওএসএস-এর জন্য কাজ করা কোরিয়ান, জাপানি ও চীনা আমেরিকানদের সম্পর্কে আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি, এমন তথ্য যারা পেতে চান তাদের জন্য এই বইটি অমূল্য সম্পদ বলে প্রমাণিত হবে।“

জাপানি সেনাবাহিনী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে ও জাপানি সৈন্য ও নাগরিকদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য প্রচারণা (ব্ল্যাক প্রপাগান্ডা) চালাতে কীভাবে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি, বিশেষত ওএসএস (সিআইএর পূর্বসূরী) এশিয়ান আমেরিকানদেরকে ব্যবহার করেছিল, সে ব্যাপারে এক গভীর পর্যবেক্ষণ হাজির করেছেন ব্রায়ান মাসারু হায়াশি।

এই বইটি কোনো থ্রিলার নয়। যেখানে বিভিন্ন গুপ্তচর মিশনের গল্প ষড়যন্ত্রের আখ্যানে বোনা থাকে। বরং এটি একটি নিখুঁত পাণ্ডিত্যসুলভ গবেষণা। লেখক তার এই বইয়ের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রথমেই বলেন:

“ওএসএস নিয়ে অধ্যায়নের জন্য সংস্থাটি সম্পর্কে ইউরোপ কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে মূল্যবান সংশোধনী এনেছে এই বই। বইটিতে ওএসএস এর এশিয়ান আমেরিকান এজেন্ট ও গোয়েন্দা সংস্থার জন্য তাদের কাজের ওপর এমনভাবে আলোকপাত করা হয়েছে, যা ১৯৯৬ সালের আগে সম্ভব ছিল না। সে বছরই প্রথম মার্কিন কংগ্রেস ওএসএস-এর প্রাক্তন সদস্যদের মুখ না খোলার আইনী বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি দেয়।

এশিয়ান আমেরিকান গুপ্তচর: মিত্র শক্তির বিজয়ে যেভাবে সাহায্য করেছিল তারা
২০২১ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত হয় ‘Asian American Spies: How Asian Americans Helped Win the Allied Victory’ বইটি। লেখক ব্রায়ান মাসারু হায়াশি।

এশিয়ান আমেরিকান গবেষণার জন্য বইটিতে ৩টি এশিয়ান আমেরিকান সম্প্রদায়ের ইতিহাস নিয়ে বিরল এক তুলনামূলক অন্তর্দৃষ্টি হাজির করা হয়েছে।

এই সম্প্রদায়গুলির নিজেদের মধ্যকার ও পারস্পরিক সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক উত্তেজনাগুলি কীভাবে একটি গতিশীল মিশ্রণ তৈরি করেছিল, যেখান থেকে ওএসএস এর জন্য এজেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছিল, সে ব্যাপারেও গভীর বিশ্লেষণ উপস্থাপন করা হয়েছে।

যুদ্ধের পরে কিছু এশিয়ান আমেরিকান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তৎপরতায় কীভাবে একটি বড়—তবে পর্দার অন্তরালের—ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিল, তাও এই বইয়ে দেখানো হয়েছে। পরিশেষে, জাতি ও আনুগত্য সম্পর্কিত অধ্যয়নের জন্য, এই বইয়ে দেখানো হয়েছে, ওএসএস জাতিবিদ্বেষ বা বর্ণবিদ্বেষ থেকে অনেকটাই মুক্ত ছিল।”

আরো পড়ুন: রুশ অভিজাতরা যেভাবে রাসপুতিনকে হত্যা করেছিল

বইটির কেন্দ্রীয় থিমের একটি হল এটা প্রমাণ করার চেষ্টা, ওএসএস এশিয়ান আমেরিকানদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করত না। অন্তত জাপানি আমেরিকানদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করত না; জাপান যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও। ওএসএস এর প্রধান উইলিয়াম ডোনোভান অবশ্য অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। যেমন ইউক্রেনীয় আমেরিকানদের কথা উল্লেখ করা যায়।

এশিয়ান আমেরিকান গুপ্তচর: মিত্র শক্তির বিজয়ে যেভাবে সাহায্য করেছিল তারা
ব্রায়ান মাসারু হায়াশি

লেখক ব্রায়ান মাসারু হায়াশি ওহায়ো’র কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। জন্ম ১৯৫৫ সালে। ১৯৯৫ সালে তার প্রথম বই ‘For the Sake of Our Japanese Brethren: Assimilation, Nationalism, and Protestantism Among the Japanese of Los Angeles, 1895-1942’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তার আরো দুটি রাজনৈতিক বই আছে।

হায়াশি জাপানি আমেরিকানদের প্রতি ডোনোভানের বিশ্বাসের বিষয়টি “প্রমাণ” করার চেষ্টা করেন এভাবে:

“ডোনোভান গণ অপসারণ ও বন্দিকরণ প্রস্তাবের ত্রুটিতে মনোযোগ দিতে জোর দিয়েছিলেন। যেই প্রস্তাবে যুদ্ধের আগে এই বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া ৩টি ফেডারেল সরকার সংস্থার অনুসন্ধানকে উপেক্ষা করা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অপেক্ষাকৃত শান্ত পশ্চিম উপকূলকে উত্তেজিত করা হয়েছে এবং আশেপাশের সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে যেখানে জাপানি আমেরিকানরা বসবাস করত; প্রতিরক্ষা, বিশেষত বিমান উৎপাদন ব্যাহত করা হয়েছে; এবং চোর ও অগ্নিসংযোগকারীদের হাত থেকে জাপানি আমেরিকানদের সম্পদ রক্ষায় যথেষ্ট যত্নবান না হয়ে তাদেরকে জাপানের প্রতি সমর্থনের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে ডোনোভান জন স্টাইনবেকের প্রস্তাব বাস্তবায়নে পরামর্শ দিয়েছিলেন। যে প্রস্তাবে গ্রুপের মধ্যে সম্ভাব্য সমস্যা সৃষ্টিকারীদের ওপর নজর রাখতে আমেরিকাপন্থী জাপানি আমেরিকানদের ব্যবহার করার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল।”

ওএসএস এশিয়ান আমেরিকানদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করত না। অন্তত জাপানি আমেরিকানদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করতো না; জাপান যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও।

এই অনুচ্ছেদটি বইয়ের ভাষা সম্পর্কেও একটা ভাল ধারণা দেয়। ব্যক্তি গুপ্তচরদের সম্পর্কে কথা বলা সত্ত্বেও এতে কোনো নাটকীয়তা নেই।

বইটিতে সতর্কতার সাথে সংগৃহীত তথ্যমালা খুবই সুসংগঠিতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ওএসএস-এর জন্য কাজ করা কোরিয়ান, জাপানি এবং চীনা আমেরিকানদের সম্পর্কে আগে কখনো প্রকাশিত হয়নি, এমন তথ্য যারা পেতে চান তাদের জন্য এই বই একটি দৈবধন বলে প্রমাণিত হবে।

আরো পড়ুন: কেন ১৮৫৬ সালে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা ২ ফুট বাড়িয়ে বলা হয়েছিল 

যারা ষড়যন্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তির নাটকীয়তা প্রত্যাশা করেন তাদের উচিৎ এর পরিবর্তে জন লে ক্যারের কোনো উপন্যাস পড়া। ১৯৯৬ সালের পর থেকে গোপনীয়তা শিথিল করার সুযোগ নিয়ে হায়াশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সকল প্রকার গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত এশিয়ান আমেরিকানদের একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংকলন করেছেন। তার লেখা বেশ কার্যকরী কিন্তু কোনো নাটকীয়তা নেই। এখানে কোনো চমকপ্রদ গল্প নেই। এখানে উপস্থাপিত তথ্যভাণ্ডার ব্যবহার করে অন্য কোনো লেখক সেই কাজ করবেন হয়ত।

ম্যারিসা মোস এর লেখা থেকে অনুবাদ: মাহবুবুল আলম তারেক