‘অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া’ সম্মানপ্রাপ্ত অস্ট্রেলিয়-মার্কিন বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও দীর্ঘায়ু বিশষেজ্ঞ ডেভিড অ্যান্ড্রু সিনক্লেয়ার। তিনি খ্যাতি অর্জন করেছেন এপিজেনেটিক্স ও মানুষের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে তার গবেষণার জন্য।
সিনক্লেয়ার হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের জেনেটিক্স বিভাগের প্রফেসর। একই প্রতিষ্ঠানের ‘পল এফ গ্লেন সেন্টার ফর বায়োলজি অফ এইজিং রিসার্চ’ এর সহকারী পরিচালক তিনি। ১৯৬৯ সালের ২৬ জুন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে জন্ম।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ‘সেল’ নামক জার্নালে সিনক্লেয়ারের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ পায়। এই গবেষণাপত্র নিয়ে তিনি ও তার সহকর্মী গবেষকরা ১৩ বছর ধরে কাজ করেছেন। গবেষণাটি ছিল মূলত বয়স বাড়ার তত্ত্ব নিয়ে, সিনক্লেয়ার যার নাম দিয়েছেন ‘থিওরি অফ এইজিং’। এই থিওরি বা তত্ত্ব অনুসারে, স্তন্যপায়ীদের বয়স বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে এপিজেনেটিক তথ্য নষ্ট হয়ে যাওয়া।
উল্লেখ্য, জীববিজ্ঞানে ‘এপিজেনেটিকস’-এর অধীনে জিনের কার্যক্রমের এমন সব রূপান্তর নিয়ে গবেষণা করা হয়, যেগুলি ডিএনএ সিকোয়েন্স পরিবর্তনের কারণে ঘটে না। এ বিষয়ে সিনক্লেয়ার তার বই “লাইফস্প্যান”-এ দেখিয়েছেন কীভাবে ‘ইয়ামানাকা ফ্যাক্টর’ (Yamanaka Factor) ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং ইঁদুরকে পুনর্যৌবন দেয়া যায়।
সহজ কথায়, ‘ইয়ামানাকা ফ্যাক্টর’ হল আরএনএ প্রতিলিপির (যাকে ‘প্রোটিন ট্রান্সক্রিপশনও বলা হয়’) সঙ্গে যুক্ত এক ধরনের প্রবণতা। নির্দিষ্ট এক ধরনের মাতৃকোষ (যাকে ‘স্টেম সেল’ও বলা হয়) সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই প্রবণতা। শরীরের যেকোনো ধরনের কোষে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে এ ধরনের স্টেম সেলের।
‘জিকিউ’ নামের একটি আমেরিকান আন্তর্জাতিক মাসিক ম্যাগাজিন, এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সাক্ষাৎকারে তিনি নিজের অ্যালকোহল, চিনি ও মাংস বর্জন করার কথা এবং পলিফেনল গ্রহণ করার কথা শেয়ার করেছেন।
পলিফেনল এক ধরনের যৌগ। যা বেশ কয়েক ধরনের ফল, তেল, সবজি, খাদ্যশস্য, মটর বা মসুর জাতীয় কিছু বীজ, চকোলেট, কয়েক ধরনের বেভারেজ বা পানীয় এবং মশলার মধ্যে পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে পলিফেনল সমৃদ্ধ খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আমাদের দেহ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ব্রিটানি লগিনস
জিকিউ ম্যাগাজিন, ২৩ জুন, ২০২৩
অনুবাদ: আমিন আল রাজী
কাগজে কলমে ৫৩ বছর হয়ে গেলেও ডেভিড সিনক্লেয়ার মনে করেন তার শরীরের বয়স অন্তত দশ বছর কম। শরীরের বয়স বলতে সিনক্লেয়ার কোষীয় পর্যায়ে শরীরের অবস্থার কথা বুঝিয়েছেন, যা মোটের ওপর আমাদের আয়ু নির্ধারণ করে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ জেনেটিক্স’ এর প্রফেসর ও হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের ‘পল এফ গ্লেন সেন্টার ফর বায়োলজি অফ এইজিং রিসার্চ’ এর সহকারী পরিচালক হিসেবে সিনক্লেয়ার তার পেশাগত জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বার্ধক্য ও দীর্ঘায়ুর মত বিষয়ের ওপর গবেষণা করে।
তার সকল গবেষণা কাজের চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে ‘ট্যালি হেলথ’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম (https://tallyhealth.com)। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ঘরে বসে মুখের লালা পরীক্ষা করে যে কেউ তার জৈবিক বয়স নির্ণয় করতে পারে।
তারপর গ্রাহকের শরীরের চাহিদা অনুযায়ী তাকে কিছু মাল্টিভিটামিন গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারে ট্যালি হেলথ। যা তার বয়স বৃদ্ধির হারকে কমিয়ে দিবে। এছাড়াও তাকে ডায়েট ও ব্যায়াম বিষয়ক কিছু পরামর্শও দেয়া হবে।
এসব কিছু নিয়ে আলোচনা ছাড়াও সিনক্লেয়ার এই সাক্ষাৎকারে তার নিজের ডায়েট বা খাদ্যাভাস নিয়ে বিস্তারিত বলেন। আর নিয়মতান্ত্রিক এই খাদ্যাভাস শরীরকে ভাল রাখার জন্য বিশেষ কার্যকর বলেও মনে করেন তিনি।
অ্যাথলেট, সেলেব্রিটি ও অন্যান্য হাই পারফর্মারদের বাস্তব জীবনের খাদ্যাভাস, ব্যায়ামের রুটিন এবং ভাল থাকার জন্য অন্যান্য অভ্যাস নিয়ে জিকিউ বা অন্য ম্যাগাজিন বা প্ল্যাটফর্মে নানান সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। মনে রাখতে হবে, তাদের জন্য যেটা কাজ করছে, আপনার জন্যও সেটা কাজ করবে, এমন কোনো কথা নেই।
জিকিউ: আপনার সম্পর্কে যারা জানে না, তাদের জন্য আপনার বয়স নিয়ে একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। সময়ের হিসাবে আপনার বয়স কত এবং জৈবিকভাবে আপনার বয়স কত?
ডেভিড সিনক্লেয়ার: আমার বয়স এই জুনে ৫৪ হবে। তবে আমার জৈবিক বয়স গত দশ বছর ধরে কমছে। অর্থাৎ, আমার জৈবিক বয়স আমার আসল বয়সের চেয়ে দশ বছর কম।
আচ্ছা, আমিও মাত্র এই টেস্ট (ট্যালি হেলথ) করে দেখেছি। মনে হচ্ছে আমার এখানে আর কোনো কাজ নেই। কারণ আমার আসল বয়স ৩২, আর আমার জৈবিক বয়স আসল বয়সের চেয়ে মাত্র দুই মাস কম।
(সম্ভবত ঠাট্টাচ্ছলে) না, এটা সত্যি না!
আসলে, আমি তরুণ বয়সে খুব একটা স্বাস্থ্য-সচেতন ছিলাম না। এর মানে কি আমি আমার আয়ু কমিয়ে ফেলেছি?
আপনি আসলে অন্য মানুষদের মতই। আর আমিও, অন্য সবার মতই ছিলাম। কারণ ত্রিশ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতাম না। আমার মনে হয় এই সময় অনেকে ভেবে থাকেন, অসুস্থতা ও বার্ধক্য তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।
কিন্ত এখন আমরা জানি আমাদের এপিজেনেটিক ঘড়ি জন্মের পর থেকেই চলতে শুরু করে এবং ২০-৩০ বয়সে এসে আমরা কী করছি, সেটাও আমাদের দীর্ঘায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে।
অর্থাৎ জীবনে স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাটা খুব আগে শুরু করছেন কিনা, এমন কোনো কথা নেই। তবে ভাল সংবাদ হচ্ছে, স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করতে দেরি হয়ে গেছে, এমন ভাবারও সুযোগ নেই। যেকোনো বয়সেই আপনি নিজের জৈবিক বা বয়সের ঘড়ির গতি কমাতে পারেন।
আমরা তো বয়স বাড়ানোর বিষয়টা উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়ার কিছু সম্ভাব্য উপায়ও খুঁজে পেয়েছি। আমার বয়স ত্রিশ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যে আমি নিজের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা নিয়ে কাজ করা শুরু করি।
কাজ করা শুরু করেন বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
আমি সকালের নাস্তা বাদ দিয়ে দেই, চিনি বর্জন করি এবং রেসভেরাট্রল নেয়া শুরু করি। (উল্লেখ্য, রেসভেরাট্রল এক ধরনের পলিফেনল, যা আঙ্গুর, ব্লুবেরি, রাস্পবেরি, তুঁত ও চিনাবাদামের মত খাদ্যে থাকে)।
সকালের নাস্তা বাদ দেয়া বলতে আপনি কি ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ (সবিরাম উপবাস) বোঝাচ্ছেন?
হ্যাঁ। আমার মনে হয় তিনবেলা খাবার, সাথে আবার নাস্তা, এত খাবার আমাদের শরীরের জন্য বেশি হয়ে যায়। এগুলি আমাদের শরীরের জন্য বাহুল্য, যা আমাদের শরীরের দীর্ঘায়ু সম্পর্কিত জিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়।
তাই আপনার উচিৎ প্রতিদিন কিছু সময় উপবাসের অভ্যাস করা। এই অভ্যাস শুরু করা উচিৎ আপনার বয়স যখন বিশের কোঠায়, তখন থেকেই। যদি এর চেয়ে কম বয়সী হন, তাহল আমরা চাই না আপনি না খেয়ে অপুষ্টিতে ভোগেন। এটা আমাদের উদ্দেশ্য না।
কিন্ত আপনাকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব পুষ্টি ও ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে। আমি যে নিয়ম মেনে চলি, সে অনুসারে দিনের ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টার মধ্যে বড় কোনো খাবার গ্রহণ করি না। আমি যেটা করি, হয় অনেক পরে লাঞ্চ করি অথবা সন্ধ্যায় বেশি করে ডিনার করি।
আপনার কি মনে হয় যারা এতদিন খুব অনিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করে আসছে, তারাও এমন করতে পারবে? এভাবে কি তারাও নিজেদের জৈবিক বয়স কমাতে পারবে?
হ্যাঁ, আমি তাই মনে করি। কিন্ত বেশিরভাগ মানুষ তাদের জীবনে নাটকীয় কোনো পরিবর্তন আনতে চায় না। আমি মনে করি, তারা এটা করলে সুফল দেখতে পেত। এমনকি শুরুতে আমি যেমন ছিলাম, সেই তুলনায় তারা যদি আমার চেয়েও সচেতন হয়, তাহলে আরো বেশি ভাল।
আপনি সারাদিনে আসলে কী খান?
আসলে আমার সব দিন এক রকম হয় না। তবে যদি গড়পড়তা দিনের কথা বলি, তাহলে যেদিন বাসায় থাকি, সে দিনের কথা বলতে হয়। (অবশ্য আমি বাসা থেকে বাইরে আছি আড়াই মাস হয়ে গেছে।)
চেষ্টা করি রাতে অন্তত ছয় ঘণ্টা ঘুমাতে। কোনো কোনো সময় এতে সফল হই। তবে আমার মনে হয় এ বিষয়ে আমাকে আরো কাজ করতে হবে। চেষ্টা করি সকাল সাতটা বা আটটার দিকে উঠে যেতে।
আমি এমন বিছানায় ঘুমাই যেটা শরীরের তাপমাত্রার সাথে নিজেই মানিয়ে চলে। রাতে যখন গভীর ঘুমে যাই, তখন বিছানা আমার শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয়, এরপর আবার সকালের দিকে শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও এই বিছানা রাতের বেলা আমার হার্টের গতি পর্যবেক্ষণ করে রাখে। এতে আমি বুঝতে পারি আমার ঘুম কেমন হয়েছে। আমার আঙ্গুলে একটা আংটিও থাকে, যেখান থেকে আমি এই তথ্যগুলি পাই।
এটা কি অউরা (Oura) রিং?
তারা আমাকে তাদের পণ্যের প্রচারণার জন্য টাকা দিচ্ছে না। তবে আমার মনে হয় এমন আংটি একটাই আছে যেটা আপনি পরতে পারেন।
(উল্লেখ্য, ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান ‘অউরা হেলথ’ এর পণ্য ‘অউরা রিং’ হল এক ধরনের স্মার্ট রিং। হাতে পড়ার এই আংটি মূলত এক ধরনের ওয়্যারেবল ডিভাইস, যা ইউজারের ঘুম এবং শারীরিক কার্যকলাপ ট্র্যাক করে।)
আমার জীবনের ও ব্যবসার পার্টনার হচ্ছেন সেরেনা পুন। তিনিই আমার সকালের রুটিন ঠিক করে দিয়েছেন। সেরেনা পুষ্টিবিদ এবং শেফ। যার বদৌলতে আমার খাদ্যাভাস পুরো বদলে গেছে। তার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমার লাইফস্টাইল অন্যরকম ছিল। তখন আমি পুষ্টিকর মনে করে অনেক খাবার খেতাম। কিন্ত আসলে, আমার এখনকার জীবনের তুলনায় সেসব খাবার অত স্বাস্থ্যকর ছিল না।
আমার পার্টনার সেরেনা প্রথমে আমার মুখের স্বাস্থ্য বা ওরাল হেলথে বিষয়ে নজর দেন। আমি দিন শুরু করি নারকেলের তেল দিয়ে কুলি করে। এতে আমার মুখের ভেতরের মাইক্রোবায়োম (উপকারী অণুজীব) ভাল থাকে। এরপর আমি গরম পানিতে লেবু দিয়ে খাই এবং নন টক্সিক টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজি।
এরপর রান্নাঘরে গিয়ে কিছুটা দই খাই আর এর সাথে নেই পলিফেনল। আর যেই পলিফেনল এর কথা আমি প্রায়ই বলি, সেটা হচ্ছে রেসভেরাট্রল। (সিনক্লেয়ার এক্ষেত্রে পলিফেনল বা রেসভেরাট্রল সমৃদ্ধ খাবার খান নাকি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ওষুধ গ্রহণ করেন, তা স্পষ্ট নয়)।
আমি মাত্র কয়েক চামচ দই খাই, এটাকে কোনোমতে সকালের নাস্তা হিসেবে ধরা যায় না। কিন্ত এভাবেই আমি আমার পলিফেনল গ্রহণ করে আসছি, যাতে (আমার পাকস্থলীতে গিয়ে) পলিফেনল দ্রুত মিশে যেতে পারে। গত ১৫ বছর ধরে আমি এই কাজ করে আসছি।
এরপর আমি গ্রিন মাচা চা খাই। (মাচা হল বিশেষভাবে জন্মানো এবং প্রক্রিয়াজাত করা গ্রিন টি পাতার মিহি গুঁড়া)। এতেও ‘ইজিসিজি ক্যাটেচিন’ এর মত প্রচুর উপকারী পলিফেনল ও ক্যান্সার প্রতিরোধক আছে। তাই আমি দিনে এই চা অন্তত একবার বা সম্ভব হলে দুবার খাওয়ার চেষ্টা করি।
(উল্লেখ্য, ইজিসিজি এর পূর্ণরূপ ‘এপিগ্যালোকেটচিন গ্যালেট’। ইজিসিজি এক ধরনের উদ্ভিদ যৌগ, যাকে ক্যাটেচিনও বলা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, ইজিসিজির মত ক্যাটেচিন মানুষের দেহের কোষকে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা পালন করতে পারে।)
এরপর আমি আমার স্ট্যান্ডিং ডেস্কে কাজ করি। আমার হার্ভার্ড অফিসেও দাঁড়িয়ে কাজ করার জন্য স্ট্যান্ডিং ডেস্ক আছে, আমার ঘরেও এমন একটা ডেস্ক আছে। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি সারাদিনে না বসে থাকতে। আমি পুরোটা দিনই নিয়ম করে পানি ও গরম চা খাই, ডিনার খাওয়ার আগ পর্যন্ত।
সেরেনা আপনার মধ্যে কোন পরিবর্তনগুলি নিয়ে এসেছে?
আমি এখন উদ্ভিদ নির্ভর ডায়েট গ্রহণ করি। উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত খাবার আর বাদাম জাতীয় খাবার ছাড়া অন্য খাবার আমি খুব কমই খাই, এমনকি দুধও। আমি দুধ, অ্যালকোহল দুটোই বাদ দিয়েছি। খুব কম সময়েই আমি এগুলি খাই।
আরো পড়ুন: উদ্ভিজ্জ আমিষ: মাছ-মাংস বাদে প্রোটিন পেতে পারেন অন্য যেসব খাবার থেকে
হয়তো কোনো সেলিব্রেশন করার সময় অথবা বিশেষ কোন উপলক্ষ্যে পান করি আমি। এই অভ্যাস আমার রক্তের বায়োমার্কার এবং এপিজেনেটিক বয়সের ক্ষেত্রে বিশাল পার্থক্য তৈরি করেছে। মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে শুধু উন্নত ডায়েট মেনে চলার মাধ্যমে আমি আমার জৈবিক বয়স কমিয়ে আনতে পেরেছি।
এর আগে আমার খাবারে রেড ওয়াইন এবং পনির জাতীয় খাবার বেশি থাকত। যদিও এসব খাবার আমার স্বাস্থ্যের জন্য তেমন সহায়ক ছিল না। নতুন একটা তথ্য থেকে জানা গেছে প্রতিদিন কেবল এক গ্লাস অ্যালকোহলও মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি করে।
এটা তো ভয়ংকর বিষয়…
হ্যাঁ, তাই। যদিও নতুন ডায়েট মেনে চলা শুরু করার পর থেকে আমার স্মৃতিশক্তি আবার ঠিক হয়ে গেছে। আগে আমি ফোন নাম্বার এবং কী-কোড খুব সহজেই ভুলে যেতাম। এখন সহজেই পারি।
আমি যেন আমার ২০ বছরের মস্তিষ্ক ফিরে পেয়েছি। আগে ভাবতাম (স্মৃতিশক্তি চলে যাওয়াটা) বুঝি বয়স বাড়ার সমস্যা, কিন্ত না। এটা আসলে আমার লাইফস্টাইল (এর সমস্যা) ছিল।
আমার ইচ্ছা ‘ট্যালি’ প্ল্যাটফর্ম স্বাস্থ্য ও ভাল থাকা বিষয়ে মানুষের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে তৈরি হয়ে উঠুক। যাতে ব্যক্তির চাহিদামত এখান থেকে পরামর্শ পাওয়া যায়। আমার তো মনে হয় ভবিষ্যতে আপনি যখন রেস্টুরেন্টে যাবেন, ট্যালি বুঝতে পারবে আপনি কোন রেস্টুরেন্টে আছেন।
আপনার বায়োমার্কার ব্যবহার করে সে বলে দিতে পারবে আপনার কোন অ্যাপেটাইজার বা কোন খাবার অর্ডার করা উচিত। এমনকি, হয়ত এ ধরনের পরামর্শও দিতে পারবে যে, আপনার মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দেয়া উচিৎ, কারণ আগামীকাল আপনাকে ব্যায়ামে যেতে হবে। আমরা যদিও ওইপর্যায়ে পৌঁছাতে পারিনি এখনো।
আপনার শরীরের বয়স যদি আসল বয়সের চেয়ে ১০ বছর কম হয়, তবে ডাক্তার আপনাকে হয়ত জরুরী কোনো পদক্ষেপ নিতে বলবেন না। কিন্ত আপনার শরীরের বয়স যদি আসল বয়সের চেয়ে ১০ বছর বেশি হয়, তবে আপনার ডাক্তার সম্ভবত আপনাকে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলবে।
আমি মনে করি, মানুষের নিজের জৈবিক বয়স জানা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ যেভাবে আমরা বয়স হিসাব করি, তা থেকে আপনি নিজের শরীর সম্পর্কে সবকিছু জানতে পারবেন না।
আর আপনার দুপুরের খাবার?
আমি সাধারণত লাঞ্চ খুব কমই করি। সামান্য কিছু সালাদ হলে, সেটা ঠিক আছে। তবে সেটাও সপ্তাহে এক বা দুই দিন। আমি চেষ্টা করি রাতের খাবারের আগ পর্যন্ত বেশি খাবার না খেতে।
রাতের খাবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে খেয়ে ফেলি। নিরামিষ জাতীয় খাবার খাই, সাথে থাকে বাদাম। সাধারণত ভাত খাই, সাথে কাঠবাদাম, কুসকুস অথবা কাসাভা ভর্তা থাকে। আগে যেমন আমি মাংস খেতে পছন্দ করতাম, এখন আমি যা খাই সেটাই আমার ভাল লাগে।
(উল্লেখ্য, কাসাভা বা শিমুল আলু হল এক ধরনের আলু। এবং কুসকুস হল সুজি দিয়ে তৈরি এক ধরনের খাবার।)
দিনে নাস্তার বিষয়ে বলতে পারি, যদি আমার হালকা ক্ষুধা লাগে বা আমার মস্তিষ্কের কিছুটা শক্তির প্রয়োজন হয়, আমি বাদাম খাই অথবা এমন কড়া ডার্ক চকলেট খাই, যাতে ৮০ শতাংশ চকলেট থাকে।
সেলেনিয়াম পেতে আমি প্রতিদিন একটা ব্রাজিল নাট খাই। সেরেনার কাছ থেকে জেনেছি, ভেজিটেরিয়ান হওয়ার জন্য বা আমাদের ক্ষেত্রে ভিগান হওয়ার জন্য অনেক কিছু খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে না। আমার তো এখন মনে হচ্ছে আমার জীবন আরো সমৃদ্ধ হয়েছে।
সমাজের সবার সাথে একসাথে খাওয়ার সময় বা রেস্তোঁরায় খেতে গেলে একটু চেষ্টা করতেই হয়। কিন্তু মাঝেমধ্যে আমরা ইচ্ছেমত খাই। যেমন মাঝে মধ্যে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খেতে আমার ভালই লাগে।
আপনি কী ধরনের ব্যায়াম করে থাকেন?
কোভিড মহামারীর আগে আমি জিমে গিয়ে অনেক ব্যায়াম করতাম। ট্রেডমিলে দৌড়ানো বা ওয়েট লিফটিংয়ের ব্যায়াম করতাম। কিন্ত মহামারীর পর এসব কমে গেছে। প্রতিদিন ব্যায়াম করাও হয় না।
আরো পড়ুন: কীভাবে বয়স কমাতে হবে সে গবেষণায় বড় ধরনের সাফল্য অর্জন বিজ্ঞানীদের
আমার বেডরুমে কিছু ওয়েট (ডাম্বেল) রাখা আছে, একটা ছোট জিমও আছে। এগুলিই ব্যবহার করি। চেষ্টা করি সপ্তাহে অন্তত তিন বার কিছু ভারোত্তোলন জাতীয় ব্যায়াম করতে।
আর দৌড়াতে না গেলেও হাঁটতে বের হই। আমি বলব, শরীরকে আরো সক্রিয় করাটাই এখন আমার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
আমি এখন আমার দ্বিতীয় বই লিখছি। এছাড়াও নতুন পডকাস্ট নিয়ে কাজ করছি, একটা টিভি শো’ও আছে। সবকিছু মিলিয়ে অনেক ব্যস্ত এখন এবং আমি চাই আরো ব্যায়াম করতে। কিন্ত এই (ব্যায়ামের) বিষয়ে আমি আদর্শ হতে পারিনি এখনো।
আপনি ভ্রমণের সময়েও কি খাবার এবং পুষ্টিতে বাছবিচার করেন?
আমি আর সেরেনা প্রায়ই একসাথে ভ্রমণে যাই। আমাদের একটা ছোট স্যুটকেসের অর্ধেক জায়গা খালি থাকে খাবার দাবার নেয়ার জন্য। সেখানে মাচা টি, সাপ্লিমেন্ট এগুলি থাকে। এসব আমাদের জীবনেরই অংশ।
আর আমরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের এমন সব খাবার খেতে পছন্দ করি, যেগুলি নিরামিষ ও স্বাস্থ্যকর। আমরা অবশ্য প্রায় সময়ই রাতে বেশ দেরি করে পিকনিক পার্টি করি। এমনিতে চেষ্টা করি দিনে ৬ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের সব খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলতে।
যারা স্বাস্থ্যের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার মূল উপদেশ কী হবে?
এমন না যে, এর জন্য আপনাকে খুব কড়া নিয়মের মধ্যে চলতে হবে। আপনি কেবল ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নিজের অবস্থা বুঝে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবেন। আর একটা বিষয়, আপনার শরীর কিছু চাচ্ছে বা আপনি কিছু করতে চাচ্ছেন, এ ধরনের কোনো অজুহাত খুঁজবেন না।