এমন একটি রুম এয়ার কন্ডিশনার যে ডিজাইন করতে পারবে, যার দাম বর্তমান বাজারের এয়ার কন্ডিশনারগুলির দ্বিগুণের চাইতে বেশি নয় এবং যা পাঁচগুণ কম গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন করে, তার জন্যে রয়েছে ১ মিলিয়ন বা দশ লক্ষ ডলার পুরস্কার।   

জলবায়ু পরিবর্তনের একটি মজার ব্যাপার হলো, মানুষ ঠাণ্ডা হওয়ার জন্যে যেসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেসব প্রযুক্তিই আবার জলবায়ুকে উষ্ণ করে তোলে।

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে রুম এয়ার কন্ডিশনার-এর সংখ্যা ৪ গুণ বেড়ে ৪.৫ বিলিয়ন বা সাড়ে ৪০০ কোটি হবে। অর্থাৎ, এয়ার কন্ডিশনার এখনকার সেলফোনের মতোই সাধারণ হয়ে উঠবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম-এর হিসাব অনুযায়ী, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ শুধুমাত্র শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি থেকে নির্গত গ্রিনহাউস গ্যাসই পৃথিবীর তাপমাত্রাকে প্রায় ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িয়ে তুলবে।


এমিলি আন্ডারউড
অ্যানথ্রপোসিন ম্যাগাজিন, জুলাই, ২০২০


অর্থাৎ, সোজা কথায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা এসি সিস্টেমের প্রচলিত পদ্ধতিতে জরুরি ভিত্তিতে পরিবর্তন আনতে হবে আমাদের। ১৯০২ সালে উইলিস ক্যারিয়ার নামক এক তরুণ আমেরিকান প্রকৌশলী নিউ ইয়র্ক সিটির একটি প্রিন্টিং কোম্পানির আর্দ্রতা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করার জন্যে প্রথম এয়ার কন্ডিশনার উদ্ভাবন করেন। এরপর থেকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ঘর ঠাণ্ডা রাখার পদ্ধতি এবং রেফ্রিজারেটর এর প্রযুক্তিতে তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাই আমাদের আধুনিক বিশ্বকে রূপ দিয়েছে। আর এই প্রক্রিয়া ভবিষ্যতেও চলমান থাকবে, যেই ভবিষ্যতের জলবায়ু কেমন হবে, তা নিয়ে আমরা এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রাজিলের মতো দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে তাপ ও আর্দ্রতা ইতিমধ্যে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। এসব দেশের কয়েকশো কোটি মানুষ অদূর ভবিষ্যতে তাদের প্রথম হোম এয়ার কন্ডিশনার কিনবে। তারা কি পরিবেশবান্ধব এয়ার কন্ডিশনার কিনবে? নাকি যে দূষণ সৃষ্টিকারী মডেলগুলি দীর্ঘদিন ধরে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে, সেগুলি কিনবে? এই বিষয়টি এখনো নিশ্চিত না।

গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ’ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো, নতুন ক্রেতারা যেন আরো উন্নত মানের এয়ার কন্ডিশনার কিনতে পারে, তা নিশ্চিত করা। কৌশলগতভাবে, এই প্রতিযোগিতায় লক্ষ্য রাখা হয়েছে ভারতের অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলিতে যেসব সিঙ্গল-রুম এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়, সেগুলির ওপরে। যুক্তরাষ্ট্রে বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সেন্ট্রাল এয়ার সিস্টেম বা উইন্ডো ইউনিটের মতো সিস্টেমগুলির দিকে লক্ষ্য রাখা হয় নি। প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হবে ভারতে। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ৮ জন চূড়ান্ত প্রতিযোগীকে বাছাই করা হয়। এই প্রতিযোগীদেরকে এমন একটি এয়ার কন্ডিশনার তৈরি করতে হবে, যা একটি স্ট্যান্ডার্ড রুম ইউনিটের চাইতে ৫ গুণ কম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে।

প্রতিযোগিতাটি শুরু হয় ২০১৮ সালে। এটিকে যৌথভাবে স্পন্সর করছে ইন্ডিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, যা ইন্ডিয়ান মিনিস্ট্রি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির একটি অংশ, দ্যা রকি মাউন্টেন ইন্সটিটিউট (আরএমআই), ২৪টি দেশের জোট, এবং ভার্জিন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও রিচার্ড ব্র্যানসন। প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হলো এমন একটি এয়ার কন্ডিশনার নির্মাণের কাজ এগিয়ে নেয়া, যা হবে একইসাথে পরিবেশবান্ধব এবং অনেক কম শক্তি ব্যবহার করবে। আরএমআই-এর ধারণা, যদি এমন প্রযুক্তি দ্রুত স্থাপন করা যায়, তাহলে এটি ২০৫০ সালের মধ্যে ১০০ গিগাটন-এর সমান কার্বনডাইঅক্সাইড নিঃসরণ ঠেকাতে পারবে।

প্রতিযোগিতায় যারা জিতবে, তাদের ডিজাইন করা এসি ইউনিটের দাম কোনোভাবেই স্ট্যান্ডার্ড রুম এয়ার কন্ডিশনার-এর দ্বিগুণের বেশি হতে পারবে না। আর এটিকে অবশ্যই প্রচণ্ড গরমে দিল্লীর যেকোনো অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে বসবাস করা মানুষকে ঠাণ্ডা রাখতে পারতে হবে। ভারতের দিল্লীতে হিট ইনডেক্স (কতটুকু তাপ অনুভূত হচ্ছে, তার পরিমাপ) ১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ৮টি দলকে তাদের প্রাথমিক নকশা বা ডিজাইন সংশোধন করার জন্যে ২,০০,০০০ ডলার প্রদান করা হয়েছে। এখন দলগুলি প্রোটোটাইপ তৈরিতে ব্যস্ত, যা ২০২০ সালে পরীক্ষা করার জন্যে ভারতে নিয়ে আসার কথা।

এয়ার কন্ডিশনার
উইলিস ক্যারিয়ারের এয়ার কন্ডিশনিং যন্ত্র।

চ্যালেঞ্জটিকে বুঝতে হলে আগে উইলিস ক্যারিয়ারের উদ্ভাবিত এয়ার কন্ডিশনের মূল পদ্ধতিটা দেখতে হবে, যার প্রচলন এখনো রয়েছে। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ক্লার্ক বুলার্ড-এর মতে, এসি’র মূল কাজকে বলা হয় ‘ভেপর-কমপ্রেশন সাইকল’ বা ‘বাষ্প-সংকোচন চক্র’। মূলত, এতে দুটি ধাতব কয়েল থাকে। একটি থাকে যে জায়গা শীতল করতে হবে, তার ভেতরে আর অন্যটি এর বাইরে। কয়েলগুলির মধ্য দিয়ে এক ধরনের তরল রেফ্রিজারেন্ট চলাচল করে, যা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন চাপে বাষ্পীভূত এবং ঘনীভূত হয়। যখন রেফ্রিজারেন্টটি বাষ্পীভূত হয়, তখন এটি শীতল হয় এবং রুমের ভেতরের ধাতব কয়েলকে ঠাণ্ডা করে। আর যখন এটি বাইরে অবস্থিত কয়েলে পৌঁছায়, রেফ্রিজারেন্টটি তখন ঘনীভূত হয় এবং পরবর্তী চক্র শুরু করার আগে বাতাসে তাপ ছেড়ে দেয়। একই সময়ে, ঠাণ্ডা ধাতব কয়েলের ওপর একটি ফ্যান ঘুরতে থাকে, যা বাতাসকে শীতল করে। এর ফলে কয়েলের ওপর পানির ফোঁটা জমা হতে থাকে এবং আর্দ্রতা দূর হয়।

আজকের দিনের ৬০ বিলিয়ন ডলারের এয়ার-কন্ডিশনিং মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান। এরা বাষ্প সংকোচন নির্ভর এয়ার কন্ডিশনার-এর দাম কমানোর দিকে নজর দিয়েছে। কিন্তু এগুলিকে চালু রাখার জন্যে যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োজন, তা কমানোর দিকে মনোযোগ দেয়নি। এয়ার কন্ডিশনারকে আরো উন্নত করতে হলে হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (এইচ এফ সি) রেফ্রিজারেন্টকে যত দ্রুত সম্ভব পাল্টাতে হবে। যদিও বিশ্বব্যাপী এই কেমিকেলের ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা চলছে, তবুও বেশিরভাগ এয়ার কন্ডিশনারে এখনো এটি ব্যবহৃত হয়। এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড-এর চাইতে ১০০০-৩০০০ গুণ বেশি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস। আর যখন এয়ার কন্ডিশনার নষ্ট হয়ে যায়, এই রেফ্রিজারেন্ট ধীরে ধীরে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।

বুলার্ড বলেন, “কয়েক দশক ধরে অনুসন্ধান করেও মাত্র কয়েকটি রেফ্রিজারেন্ট এইচএফসি-এর কার্যকর বিকল্প হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। বিকল্প হিসেবে আসা রেফ্রিজারেন্ট দাহ্য বা বিষাক্ত হোক, আমরা তা চাই না। আমরা চাই এগুলির একটি নির্দিষ্ট স্ফূটনাংক থাকবে। আমরা চাই না, এগুলি খুব বেশি আঠালো বা চটচটে হবে, কারণ এগুলিকে পাম্প করতে তখন অনেক বেশি শক্তি খরচ হয়। আবার আমরা চাই না এগুলি ওজোন স্তর নষ্ট করুক বা পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি করুক। যখন এই সবগুলি বিষয় মাথায় রাখা হবে, তখন আপনার হাতে অল্প কিছু বিকল্পই বাকি থাকবে।

আর এখানেই উদ্ভাবকদের দ্বিধা কাজ করে। তারা কি পরিবেশের জন্যে সবচেয়ে ভালো রেফ্রিজারেন্ট খোঁজার চেষ্টা করবে নাকি বিদ্যুতশক্তির ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করবে? প্রতিযোগিতার লক্ষ্য হলো, পরিবেশ বা জলবায়ুর ওপর ৫ গুণ কম প্রভাব ফেলা। এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এইচএফসি ব্যবহার করে, এমন একটি এয়ার কন্ডিশনারকে সাধারণ ইউনিটের চাইতে ৬.৪ গুণ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখে না, এমন রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা ইউনিটগুলিকে মাত্র ৪ গুণ কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া চূড়ান্ত প্রার্থীদের বেশিরভাগই দুটি পদ্ধতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখছেন। তারা পরিবেশবান্ধব রেফ্রিজারেন্ট-এর সাথে স্মার্ট কন্ট্রোল বা সোলার প্যানেলের মতো পদ্ধতিকে যুক্ত করছেন। তবে অন্যরা তৃতীয় আরেকটি পথ বেছে নিয়েছেন, আর সেটা হলো, এইচএফসি-কে পুরোপুরি বাদ দেয়া। বারোক্যাল (Barocal) হলো কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের জেভিয়ার মোয়া’র প্রতিষ্ঠিত একটি স্টার্টআপ। এরা রেফ্রিজারেন্ট নির্গমনের সমস্যা সমাধান করতে চাইছে একটি নতুন ও স্থায়ী রেফ্রিজারেন্ট দিয়ে, যা অর্গানিক ক্রিস্টাল বা জৈব স্ফটিক থেকে তৈরি করা হয়েছে।

এই স্ফটিকগুলি সস্তা ও অবিষাক্ত। এসব স্ফটিকে চাপ দেয়া হলে এগুলির আয়তনে পরিবর্তন আসে এবং এরা তাপ নিঃসরণ ও শোষণ করে। একটি সাধারণ এয়ার-কন্ডিশনিং কমপ্রেসার সহজেই প্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার মাত্রা হলো ৭০ বার (bar) বা এটমোস্ফিয়ার। তবে এর চাইতে বেশি চাপেরও প্রয়োজন হতে পারে। এয়ার কন্ডিশনারটির কার্যকারিতা নির্ভর করবে, গবেষকরা কীভাবে স্ফটিকে চাপ প্রয়োগ করবে, তার ওপর।

অন্য দলগুলি নজর দিয়েছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপরে। আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে বসবাসকারী যেকোনো ব্যক্তিই জানেন যে, ভ্যাপসা গরম শুষ্ক গরমের চাইতে বেশি খারাপ। কারণ ভ্যাপসা আবহাওয়ায় বাষ্পীভবনের মাধ্যমে শরীর থেকে তাপ খুব সহজে বের হয়ে যেতে পারে না। বেশিরভাগ বাষ্প-সংকোচন ব্যবস্থা ‘ডিহিউমিডিফিকেশন’-এর ক্ষেত্রে অধিক বল প্রয়োগের পন্থা অবলম্বন করে। ফলে ভেতরের কয়েল এত ঠাণ্ডা হয়ে পড়ে যে, ঠাণ্ডা ধাতুর ওপর দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়ার সময় পানির ফোটা ঘনীভূত হয়ে যায়। বিশেষ করে আর্দ্র জলবায়ুতে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। এর মানে হলো, মানুষ যতটুকু চায়, এয়ার কন্ডিশনারকে তার চাইতেও কম তাপমাত্রায় সেট করা লাগে। আর এভাবেই শক্তির অপচয় হয়।

এই সমস্যা মোকাবেলার জন্য বেশ কয়েকটি দল শীতল হওয়ার আগে বাতাসকে হিউমিডিফাই বা বিশ্রুত করার উপায় খুঁজছে। এদের মধ্যে রয়েছে ‘ট্রানসেরা’ (Transaera) নামে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) এর একটি স্টার্টআপ। প্রতিষ্ঠানটি ‘কিংডাও হায়ার এয়ার কন্ডিশনার জেনারেল কর্পোরেশন লিমিটেড’ (Qingdao Haier Air Conditioner Gen Corp. Ltd)-এর সাথে যৌথভাবে কাজ করছে ধাতব জৈব কাঠামো নামে পরিচিত একটি নতুন, অত্যন্ত ছিদ্রযুক্ত উপাদান ব্যবহার করে বায়ু থেকে পানির অণুগুলি সরিয়ে দেয়, এমন একটি যন্ত্র তৈরি করতে। বস্তুটিতে থাকা ন্যানোস্কেল ছিদ্রগুলি আণবিক স্পঞ্জের মতো কাজ করে, যা বাতাস থেকে পানির ফোঁটাগুলি অন্য কোনো যন্ত্রের তুলনায় আরো কার্যকরভাবে সরিয়ে দেয়। দলটি এয়ার কন্ডিশনার-এর কমপ্রেসর থেকে বর্জ্য তাপ ব্যবহার করে স্পঞ্জ শুকানোর পরিকল্পনা করেছে, ফলে এটিকে বার বার ব্যবহার করা যাবে। যদি এই ‘স্পঞ্জ’ বিদ্যমান ইউনিটগুলির সাথে কাজ করতে পারে এবং ঘন ঘন প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন না হয়, তবে এটি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে।

উদ্ভাবকদের হাতে অবশ্য সময় বেশি নেই। নতুন উদ্ভাবিত এয়ার কন্ডিশনার থেকে বৈশ্বিক নির্গমন কমানোর জন্যে নতুন যে প্রযুক্তিগুলি পুরস্কারের শর্ত পূরণ করতে পারবে, সেসব প্রযুক্তিকে খুব দ্রুত উৎপাদন করতে হবে। আরএমআই-এর হিসাব অনুযায়ী, এগুলিকে ২০২২ সালের মধ্যে বাজারে আসতে হবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে শতভাগ বাৎসরিক বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে দাম কম রাখার প্রতিযোগিতা এতটাই গুরুত্ব পাচ্ছে যে, সস্তা বিকল্পগুলি সরিয়ে ফেলা কঠিন হবে। বিশেষ করে ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশে, যেখানে আয় বৃদ্ধির ফলে বহু মানুষ অল্প দিনের মধ্যেই তাদের প্রথম এয়ার কন্ডিশনার কিনতে সক্ষম হবে। ট্রানসেরা’র প্রতিষ্ঠাতা সোরিন গ্রামা’র মতে, দরিদ্র দেশগুলিতে এয়ার কন্ডিশনার চালানোর খরচ কমানোটা এর দাম কমানোর মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

নয়াদিল্লীতে থাকাকালীন ভারতীয় দুগ্ধচাষীদের জন্যে গ্রামীণ রেফ্রিজারেশন সিস্টেম নিয়ে কাজ করার সময় গ্রামা তার কর্মীদের মধ্যে একজনকে একটি রুম এয়ার কন্ডিশনিং ইউনিট দিয়েছিলেন, যাতে তার মেয়ে আরো স্বচ্ছন্দে পড়াশোনা করতে পারে। পরে যখন তিনি এটি কাজে লেগেছে কিনা তা পরীক্ষা করতে যান, তখন মহিলা তাকে বলেছিলেন যে, তিনি এটি ব্যবহার করছেন না। কারণ এটি চালানোর সামর্থ্য তার নেই।

গ্রামা আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ ভারতের প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। একইসাথে কার্যকারিতা ও খরচের জন্যে নতুন স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করাবে। অন্যান্য অনেক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের মতো ভারতের জনগণকেও শীতল রাখার জরুরি প্রয়োজন রয়েছে। ২০১৭ সালে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চহারে নির্গমনের কারণে ভারতের জনসংখ্যার তিন চতুর্থাংশ ২১০০ সালের মধ্যে প্রাণঘাতী মাত্রায় তাপ ও আর্দ্রতার মুখোমুখি হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মতে, গ্লোবাল কুলিং প্রাইজ থেকে আসা শর্ত পূরণ হলে ভারতের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ খাতের ৩৮০ বিলিয়ন ডলার খরচ বাঁচবে এবং দেশটির নির্গমন-হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার ৪০% পূরণ হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমান, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চরম তাপ প্রবাহ প্রতি বছর ২৫৫,০০০ জনেরও বেশি লোকের মৃত্যুর কারণ হবে। নতুন এয়ার কন্ডিশনারগুলি এই মৃত্যুগুলিকে প্রতিরোধ করার জন্যে পর্যাপ্ত নয়। গ্লাস এবং কংক্রিটের চেয়ে ভালো নিরোধক উপকরণ দিয়ে বিল্ডিং তৈরির মতো অন্যান্য ব্যবস্থাও গ্রহণ করা প্রয়োজন। ইতিহাস থেকে যদি আমরা কোনো শিক্ষা নিয়ে থাকি, তাহলে বুঝতে পারবো যে, আমাদের শীতল থাকার পদ্ধতিকে রূপান্তর করার দ্রুততম পথ হলো উদ্ভাবন, প্রতিযোগিতা এবং নিয়ন্ত্রণের মিশ্রণ। এবং এই প্রক্রিয়ায় গতি আনার গুরুত্বও অনেক, যেহেতু বিশ্বকে ঠাণ্ডা করার প্রতিযোগিতা কেবল আরামের জন্যে নয়, বেঁচে থাকার জন্যেও অপরিহার্য।

লেখক পরিচিতি: এমিলি আন্ডারউড একজন ফ্রিল্যান্স বিজ্ঞান লেখক এবং সায়েন্স ম্যাগাজিনের নিয়মিত প্রতিবেদক। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার কলোমায় বাস করেন।

অনুবাদ. দীপ্র আসিফুল হাই