নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে, ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ নামের রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে এখন আর পৃথিবীর কোনো স্থানের বৃষ্টির পানিই পান করার উপযুক্ত না। বরং, এই ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ থাকা পানি পান করলে ক্যান্সারের আশঙ্কা বাড়ে।
জোশুয়া হকিনস
বিজিআর, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
অনুবাদ: যাইয়ার আযান
গবেষণাটি ‘এনভায়রনমেন্ট সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ নামের এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণায় নির্দিষ্ট কিছু পদার্থের বিপদ সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে ‘পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল’ (সংক্ষেপে ‘পিএফএএস’ / PFAS) নামের রাসায়নিকের ব্যাপারে দেয়া হয়েছে সতর্কবার্তা।
মানুষের রক্তেও পাওয়া গেছে এই যৌগের কিছু কণা
‘পিএফএএস’ হল মানুষের তৈরি রাসায়নিক পদার্থের একটি গ্রুপ, যার মধ্যে বেশ অনেক ধরনের রাসায়নিক থাকতে পারে। এই সময়ে এসে মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ‘পিএফএএস’ এর উপস্থিতি অনেক বেশি দেখা যায়। যেমন কার্পেট, ফার্নিচার, শ্যাম্পু অথবা প্রসাধনীতে থাকে ‘পিএফএএস’।
এই পদার্থ অনেক সহজেই বায়ুমণ্ডলে ছড়াতে পারে। যেহেতু আমরা বহুদিন যাবত এসব ব্যবহার করছি, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তেই তাই এখন এই কেমিক্যাল পাওয়া যেতে পারে। এমনকি বৃষ্টির পানিতেও।
গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, মানুষের রক্তেও এই যৌগের কিছু কণা পাওয়া গেছে!
‘ক্লিন ওয়াটার’ নামে আমেরিকান পরিবেশ সংস্থার মতে, ‘পিএফএএস’কে ‘ফরেভার কেমিক্যাল’ বলার কারণ হল, হাজার বছর পার হওয়ার আগে এটি ক্ষয় হবে না।
আরো পড়ুন: মাইক্রোগ্র্যাভিটি কাজে লাগিয়ে মহাশূন্যে তৈরি করা হবে নতুন ধরনের ওষুধ
কেমিক্যালটি অ্যান্টার্কটিকা থেকে শুরু করে আর্কটিক সমুদ্রের বরফেও পাওয়া গেছে। আর এই যৌগ এখন এতটাই বেশি দেখা যাচ্ছে যে, সকল জীবিত প্রাণীর জন্য তা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পরিণত হয়েছে। ক্যান্সার, প্রজনন সমস্যা কিংবা বাচ্চাদের শারীরিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটানোর মত বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতার পেছনেও এটি দায়ী।
এই পরিস্থিতি অনেকটা ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’ এর সমস্যার মতই
আমরা এখনো আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর ‘পিএফএএস’ এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব জানি না। তবে এতটুকু বলা যায়, ‘পিএফএএস’ এর কারণে গ্রহের প্রায় প্রতিটি জীবনই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পিএফএএস রাসায়নিক গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ দুটি পদার্থ হল ‘পারফ্লুরোঅকটানোয়িক অ্যাসিড’ (‘পিএফওএ’ / PFOA) ও ‘পারফ্লুরোঅকটেনসালফোনিক অ্যাসিড’ (‘পিএফওএস’ / PFOS)।
২০২২ সালের জুনে পরিচালিত নতুন এই গবেষণা অনুসারে, স্বাস্থ্যের ওপর এসব যৌগের প্রভাব অনেক বেশি। আর এই গবেষণার ফলাফল থেকেই খাবার পানিতে ‘পিএফওএ’ এবং ‘পিএফওএস’ এর পরিমাণ কতটুকু থাকলে তা মানুষের জন্য নিরাপদ, সেই মাত্রা নতুন করে নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি’ (ইপিএ)।
আরো পড়ুন: বাতাসকে বিদ্যুৎ-এ রূপান্তর করবে নতুন আবিষ্কৃত এনজাইম
এর আগ পর্যন্ত পানিতে এই দুই কেমিক্যালের নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭০ পার্টস পার ট্রিলিয়ন। কিন্তু ইপিএ এখন নির্ধারণ করে দিয়েছে, ‘পিএফওএ’ এর পরিমাণ ০.০০৪ পার্টস পার ট্রিলিয়ন এবং ‘পিএফওএস’ এর পরিমাণ ০.০২ পার্টস পার ট্রিলিয়ন পর্যন্ত হলেই তা নিরাপদ।
স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ নিয়ে আরেকটি গবেষণা হয়েছে। সেখানকার গবেষকরা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি ও বৃষ্টির পানিতে পাওয়া ‘পিএফএএস’ পরিমাপ করে দেখেছেন। তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, ইপিএ নির্ধারিত নিরাপদ পরিমাণের চেয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের মাটি ও বৃষ্টির পানিতে অনেক বেশি মাত্রায় ‘পিএফএএস’ আছে।
এই গবেষণার উপসংহার টানা হয়েছে এভাবে যে, সারা বিশ্বের মাটিই পিএফএএস এর কারণে দূষিত হয়েছে। আর এসব পদার্থ ক্ষয় হয় অনেক দীর্ঘ সময় ধরে। তাই দীর্ঘ সময় ধরেই এসব পদার্থ বায়ুমণ্ডল, মহাসাগর ও মাটিতে চক্রাকারে ঘুরতে থাকে।