আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ও সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মতে বাজার থেকে আনা জিনিসপত্র থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা কম। কভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ মানুষ থেকে মানুষের মাধ্যমেই বেশি ঘটে। সে তুলনায় খাবারের আইটেম থেকে ভাইরাস ছড়ানোর ঘটনা খুব একটা জানা যায় না।

তার মানে বাজারসদাই থেকে করোনার যতটা না ঝুঁকি থাকে বাজারের মানুষ থেকে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি আরো বেশি। তবে যাদের ঘরে বয়স্ক ব্যক্তি বা দুর্বল ইম্যুনিটির মানুষ আছে তাদের উচিত সব কিছুতেই এক্সট্রা সতর্কতা মেনে চলা। তাই বাজার থেকে জিনিসপত্র কিনে এনে ব্যবহারের আগে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

বাজারসদাই থেকে করোনা আক্রান্ত হওয়ার রিস্ক কীভাবে কমাতে পারেন তারই একটা গাইডলাইন দেয়া হলো:

 

বাজারে যাওয়ার আগের প্রিপারেশন

১. সবকিছু আগে থেকে প্ল্যান করে রাখুন। বাজারের লিস্ট এমনভাবে করুন যাতে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্যে আর যাওয়া না লাগে। কোনদিন বাসায় কী রান্না হবে তার রুটিন করে রাখুন, তাহলে সুবিধা হবে। ফ্রিজের জায়গা খালি করুন। যেসব খাবার অনেক দিন রেখে খাওয়া যাবে সেগুলি রান্না করে রাখুন।

২. জিনিসপত্র স্যানিটাইজ বা জীবাণুমুক্ত করার জন্যে ঘরে একটা জায়গা রেডি করে রাখুন। সেটা গ্যারেজ হতে পারে, দরজার বাইরের স্পেস হতে পারে, বাড়ির উঠান হতে পারে বা ঘরের ভেতরের কোনো জায়গাও হতে পারে। জায়গা ব্যবহার করবেন দুই কাজে। এক, বাইরের জিনিস যেগুলি এখনো জীবাণুমুক্ত করা হয়নি সেগুলি রাখার জন্যে এবং জীবাণুমুক্ত করার পর পরিষ্কার আইটেমগুলি রাখার জন্যে। এবার একটা টেপ দিয়ে দুইটা জায়গা মার্ক করে রাখুন যাতে কনফিউশন না হয়। আর নিয়মিত জায়গাটা পরিষ্কার করুন সোপ পাউডার, ব্লিচিং পাউডার বা অন্য কোনো ক্লিনজিং আইটেম বাসায় যেটা ব্যবহার করেন তা দিয়ে। যদি আপনার বাসায় এরকম জায়গা না থাকে তাহলে বাসায় ঢোকার আগে বাজার সদাই মেইন দরজার বাইরে রাখুন। এবার প্যাকেটগুলি একটার পর একটা স্যানিটাইজ করে তারপর ঘরে ঢোকান। আপনার ঘরে জিনিসপত্র কেবল স্যানিটাইজ করার পরেই ঢোকাবেন, তার আগে না। জিনিসপত্র মাটিতে না রেখে একটা ছোট টেবিলে রাখতে পারেন। এজন্য দরজার কাছে একটা টেবিল রাখুন, যেখানে জিনিসপত্র স্যানিটাইজ করতে পারবেন।

৩. স্যানিটাইজ করার জায়গায় কয়েকটা পরিষ্কার কাপড়, পেপার টাওয়েল বা বড় টিস্যু পেপার রাখুন। স্প্রে ক্লিনার রাখতে পারেন, যেমন লাইসল।

৪. বাজারে যদি বাসা থেকে ব্যাগ নিয়ে যান তাহলে প্রতিবার এসে গরম পানি ও সাবান দিয়ে সেটা ধুয়ে রাখুন। আর নয়তো প্লাস্টিক বা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করুন, যেটা ব্যবহার শেষে ফেলে দিতে পারবেন।

৫. মাস্ক যদি থাকে তাহলে অবশ্যই মাস্ক পরবেন। মাস্ক পরাতে কোনো ক্ষতি নেই, বরং লাভই। মাস্ক প্রতিদিন নতুন পরতে পারলে ভালো আর নয়তো প্রতিবার ব্যবহার শেষে মাস্ক ধুয়ে ফেলবেন বা স্যানিটাইজ করবেন। সার্জিকাল মাস্ক বা প্রফেশনাল মাস্ক না ব্যবহার করাই ভালো। কারণ সাধারণ জনগণের চেয়ে হসপিটালে ওগুলির দরকার বেশি।

 

বাজার করার সময়ের সতর্কতা
৬. সোশ্যাল ডিসটেন্সিং মেনে চলুন। অন্তত ৬ থেকে ১০ ফিট দূরে থাকুন অন্যজনের থেকে। যদি দেখেন বেশি ভিড় জটলা, অপেক্ষা করুন। আর নয়তো নিজে থেকে অন্যদের রিকুয়েস্ট করুন যেন ফাঁকা হয়ে দাঁড়ায়।

৭. ভুল করেও হাত দিয়ে নাক-মুখ-চোখ ধরবেন না। এভাবে আপনি যেমন নিজে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়াবেন তেমনি আপনার থেকে অন্যদের ভাইরাস সংক্রমণেরও ঝুঁকি বাড়ে।

৮. গাড়িতে ওঠার আগে বা বাসায় ঢোকার আগে অবশ্যই মনে করে হাতের তালু কবজি পর্যন্ত জীবাণুমুক্ত করুন সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে।

 

বাজার করে বাসায় ফেরার পর
৯. বাজার রাখুন আগে থেকে ঠিক করা স্যানিটাইজিং করার জায়গায়। এবার জুতা খুলে জায়গা মতো রাখুন। সতর্ক থাকুন যাতে জুতা দিয়ে পরিষ্কার জায়গা না মাড়িয়ে ফেলেন।

১০. যারা জিনিসপত্র মেঝেতে রেখে স্যানিটাইজ করবেন তাদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে জুতা পরে মেঝে না পাড়ান।

১১. এরপর কমপক্ষে বিশ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করুন। তারপর আপনি প্যাকেটগুলি স্যানিটাইজ করার জন্যে রেডি।

১২. প্রথমে বড় প্যাকেট থেকে ছোট প্যাকেটগুলি বের করে রাখুন। এবার একটা একটা করে প্যাকেট স্যানিটাইজ করুন মনোযোগ দিয়ে। খেয়াল করবেন, পরিষ্কার হাত দিয়ে যাতে পরিষ্কার জিনিসগুলিই ধরেন। স্যানিটাইজ করা হয়নি এমন জিনিস ধরলে মনে করে হাত আবার স্যানিটাইজ করুন। এসময় ওয়ান টাইম গ্লাভস ব্যবহার করলে বেশি সুবিধা হবে, বার বার স্যানিটাইজ করার চেয়ে। প্লাস্টিকের জিনিসগুলি সাবান-পানি ভেজানো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতে পারেন। যাদের বাসায় ক্লিন করার স্প্রে আছে তারা সেটা ব্যবহার করতে পারেন। তবে কার্ডবোর্ড এর বক্স পরিষ্কার করার জন্যে সাবান-পানি ভেজানো কাপড় বেশি ভালো।

 

খাবার দাবার ধোয়ার ক্ষেত্রে
১১. সবজি বা ফলের থেঁতলে যাওয়া অংশ ফেলে দিবেন প্রথমেই। ফ্রেশ সবজি কখনো সাবান দিয়ে ধুবেন না। কারণ সাবান পেটে গেলে হজমের সমস্যা হতে পারে এমনকি ডায়রিয়া হওয়ার চান্স থাকে। এর চেয়ে আইটেমগুলি ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভালো মত ধুবেন। রানিং পানি অর্থাৎ কলের নিচে ধুতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। সবজি ধোয়ার জন্যে ব্রাশ ব্যবহার শুরু করতে পারেন, তবে সেটা নিয়মিত পরিষ্কার রাখবেন। এবার সব কিছু ভালোমতো শুকান। কারণ ভাইরাস বা অন্যান্য অণুজীব ভেজা জায়গায় বেশিক্ষণ টিকে থাকে। শুকানোর জন্য পেপার টাওয়েল বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ভেজা সবজি মুছে ফেলতে পারেন। এটা মনে রাখবেন, ফলের গায়ে লেগে থাকা ভাইরাস এর চেয়ে, আপনার ময়লা হাতে লেগে থাকা ভাইরাস ফল খাওয়ার সময় আপনার শরীরে ঢোকার আশঙ্কা অনেক বেশি। কারণ ফল বা সবজির গায়ে ভাইরাস কয়েক ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারে না। তাই করোনা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করতে বার বার হাত ধোয়ার বিকল্প নেই।

১২. সব কিছু ধোয়া ও মোছার পরে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন।

সূত্র. popsci
অনুবাদ. আমিন আল রাজী