আগের পর্ব পর্ব ১

সিজন ১, এপিসোড ৬

দ্য এডভারসারি

কথা ছিল ওয়েস্টওয়ার্ল্ড দর্শকদেরকে একটা এক্সট্রা-অর্ডিনারি কাহিনীতে নিয়ে যাবে। ওয়েস্টওয়ার্ল্ড সেই এক্সট্রা অর্ডিনারি অংশে প্রবেশ করেছে।

যারা ওয়েস্টওয়ার্ল্ড দেখতেছে নিয়মিত, এখন তারা আর এই সিজন শেষ না করে থামতে পারবে না। পঞ্চম পর্বেও এই ব্যাপারটা এত কঠিন ছিল না, ৬ নাম্বার পর্বের পর ওয়েস্টওয়ার্ল্ড থেকে বের হয়ে আসা কঠিন।

আমি যখন ৬ নাম্বার পর্ব নিয়ে এই লেখা লেখতেছি, তখন ৭ নাম্বার পর্ব অলরেডি চলে আসছে। এবং ৭ নাম্বার পর্বে এমন কিছু আছে, যেটা নিয়ে ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর নিয়মিত দর্শকদের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে গেছে।

আমি জাস্ট এই লেখাটা লেখার জন্য এখনও ৭ নাম্বার পর্ব দেখি নাই, লেখা শেষ হওয়া মাত্র আমি ৭ নাম্বার এপিসোড দেখা শুরু করব।


আশরাফুল আলম শাওন


আই অ্যাম অ্যাট দ্য টপ অব মাই টাওয়ার অব টেম্পটেশন।

এই লেখা শুরু করার কয়েক ঘণ্টা আগে দেখলাম এইচবিও থেকে ঘোষণা দিছে ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর সেকেন্ড সিজন তৈরি করার। সেকেন্ড সিজন আসবে ২০১৮-তে। আরেকটা সিজনের জন্য দুই বছরের গ্যাপ অনেক বেশি লম্বা সময়।

৬ নাম্বার পর্বের নাম দ্য এডভারসারি। মানে প্রতিপক্ষ।

ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর প্রোগ্রামার এলসি ও প্রধান প্রোগ্রামার বার্নাড বের করার চেষ্টা করে হোস্টদের ব্যবহার করে, কে তাদের ডাটা বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছে। এটা ইনভেস্টিগেট করার জন্য ওয়েস্টওয়ার্ল্ডে আগে যে সিস্টেম ব্যবহার করা হত বার্নাড সেটার কাছে যায়। এই সিস্টেমটা এখন আর ব্যবহার করা হয় না, নতুন সিস্টেম চালু করা হয়েছে।

তিন নাম্বার পর্বে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হোস্ট যেখানে গিয়েছিল সেই জায়গায় কোনো সমস্যা আছে কিনা জানতে চায় বার্নাড।

সিস্টেম অ্যানসার দেয়। কিন্তু বার্নাডের জানতে চাওয়ার বাইরে, সিস্টেম নিজে থেকেই অতিরিক্ত একটা ইনফরমেশন দেয়। বার্নাডকে ম্যাপে দেখায় দেয় পার্কের ভিতরে আর কোন জায়গায় ঝামেলা আছে। বার্নাড বুঝতে পারে ওয়েস্টওয়ার্ল্ডে কিছু হোস্ট আছে যাদের রেকর্ড নিউ সিস্টেমে রেজিস্টার করা নাই।

বার্নাড পার্কের সেই জায়গায় যায়। একা একাই। সেখানে গিয়ে দেখে সুন্দর একটা একতলা বাড়ি। সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে একটা পরিবার তাদের দৈনন্দিন কাজ করছে। একজন লোক, তার স্ত্রী, এবং তাদের দুই ছেলে। তাদের একটা পোষা কুকুর আছে। ছেলে দুটির বয়স অল্প, টিনেজ।

এই ছেলে দুটার একটাকেই এর আগে আরো দুইটা পর্বে দেখা গেছে।

বার্নাড ওই ভদ্রলোককে প্রশ্ন করে, আর ইউ আরনল্ড?

দ্য এডভারসারি
বার্নাড বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে একটা পরিবার তাদের দৈনন্দিন কাজ করছে। একজন লোক, তার স্ত্রী, এবং তাদের দুই ছেলে। তাদের একটা পোষা কুকুর আছে।

সেই ভদ্রলোক বার্নাডকে মারার জন্য আগায়া আসে। ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর রোবট, মানে হোস্টদের থামানোর জন্য প্রোগ্রামাররা যে ইনস্ট্রাকশন ব্যবহার করে, বার্নাড সেই ইনস্ট্রাকশন দেয়। সেটা কাজ করে না। সেই হোস্ট ভদ্রলোক বার্নাডকে দরজার সাথে চেপে ধরে।

তখন রবার্ট ফোর্ড আসে। বার্নাডকে দেখে সে কিছুটা অবাক।

রবার্ট ফোর্ডের ইনস্ট্রাকশন কাজ করে, হোস্ট ভদ্রলোক বার্নাডকে ছেড়ে দেয়।

বার্নাডের জিজ্ঞাসার উত্তরে ফোর্ড জানায়, এরা ওয়েস্টওয়ার্ল্ডের প্রথম জেনারেশনের হোস্ট। এদের তৈরি করেছিল আরনল্ড। এটা ছিল আসলে ফোর্ডের জন্য আরনল্ডের গিফট।

ওই ছেলেটা আসলে রবার্ট ফোর্ডের ছোটবেলার ভার্সন। এবং বাকিরা হচ্ছে ফোর্ডের বাবা, মা ও ভাই এর  মত করে বানানো হোস্ট। এমনকি কুকুরটাও হোস্ট-কুকুর। এই কুকুরের অরিজিনাল ভার্সনের গল্পই ফোর্ড গতপর্বে ওল্ড বিলকে বলছিল।

এই হোস্টগুলি ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর এখনকার হোস্টদের মত না। এখনকার হোস্টদের শরীরের ভিতরে যেমন রক্ত, মাংস, অরগান আছে এই হোস্টদের তা নাই। এরা ফার্স্ট জেনারেশনের হোস্ট, এই কারণে এদের ভিতরে মেকানিকাল ইন্সট্রুমেন্ট।

ওয়েস্টওয়ার্ল্ডে যে রকম দেখানো হইছে, বাস্তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যদি কোনোদিন ওই পর্যায়ে যায় (হয়ত যাবে), তাহলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে এইভাবে ব্যবহার করার আইডিয়াটা অসাধারণ। কারণ এটা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সকে কোনো ইন্ডিভিজুয়ালের জন্য সর্বোচ্চভাবে সামাজিক ও সাইকোলজিক্যাল পারপাসে ব্যবহার করা।

রবার্ট ফোর্ডের ক্ষেত্রে এখানে সেই জিনিসটাই হচ্ছে। তার ফ্যামিলি বাস্তবে আর নাই। কিন্তু সে তার ফ্যামিলির একটা পছন্দমত টাইমকে বেছে নিয়েছে, বন্ধু আরনল্ড সেই ফ্যামিলি মেম্বারদের মত করে হোস্ট তৈরি করেছে। এত বছর পরে, ফোর্ড তার ফ্যামিলিকে সরাসরি দেখছে, তার ছোটবেলার নিজেকে দেখতে পারতেছে। তাদের সাথে সে ইন্টার‍্যাক্ট করতে পারতেছে। এখন আর সে ওই ফ্যামিলির অংশ না, ওই ফ্যামিলিতে ঢোকারও কোনো সুযোগ নাই। তবে টাইমের একটা ক্ষুদ্র অংশের নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব সে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে।

ফোর্ড যেহেতু অনেক চালাক, সে বার্নাডকে বোঝায় যে এরা জাস্ট হোস্ট। এমনভাবে বোঝায় যেন সে বার্নাডকে পোষ মানানোর চেষ্টা করছে। বার্নাডকে তার মৃত ছেলের কথা মনে করায় দেয়, এবং তারও যে একটা হোস্ট তৈরি করা সম্ভব সেই দিকে ইঙ্গিত করে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এইরকম দিন আসলে মানবজাতি নিশ্চয়ই ইচ্ছার সাপ্রেশন থেকে মুক্তি পাবে, আশা করি।

টেডিকে নিয়ে এড হ্যারিস—দ্য ম্যান ইন ব্ল্যাক আগাচ্ছে পারায়াহ’র দিকে। কিন্তু পারায়াহতে ঝামেলার কারণে মূল রাস্তা বন্ধ। টেডি বিকল্প রাস্তার কথা বলে এড হ্যারিসকে। টেডি হোস্ট, অথচ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার রিঅ্যাকশন মানুষের মত। এড হ্যারিস—দ্য ম্যান ইন ব্ল্যাক এখনও মেজ-এর সন্ধানে ব্যস্ত।

দ্য এডভারসারি
বাচ্চা হোস্ট জানায় একটা ভয়েস তারে কুকুরটারে মেরে ফেলতে বলছে। কার ভয়েস?—আরনল্ডের।

রবার্ট ফোর্ডের সাথে তার ছোটবেলার ভার্সনের, মানে সেই বাচ্চা হোস্টের দেখা হয়। সে কুকুরটাকে মেরে ফেলছে। ফোর্ড প্রশ্ন করলে সে মিথ্যা কথা বলে। ফোর্ড তারে অ্যানালিসিস মোডে নিয়ে যায়। বাচ্চা হোস্ট জানায় একটা ভয়েস তারে কুকুরটারে মেরে ফেলতে বলছে। কার ভয়েস?—আরনল্ডের।

এর আগে বলা হইছে—আরনল্ড মারা গেছে। যদি সেইটা সত্য ধরে নিই, তাহলে আরনল্ডের ভয়েস শুনতে পারার পিছনের কারণ একটাই। কারণটা হল, আরনল্ড ওল্ড জেনারেশনের হোস্টদের প্রোগ্রাম এমনভাবে করছে যাতে এইগুলির মধ্যে এক সময় কনসাশনেস তৈরি হয়, এবং আরনল্ডের ভয়েস সেই কনসাশনেস হিসেবে কাজ করে। যাতে এই পুরাতন হোস্টগুলির কোড অটো-মোডিফাই হইতে থাকে।

যাই হোক, এই পর্বের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হল মেইভের নিজের সম্পর্কে জ্ঞান লাভ। গত পর্ব থেকেই এই জিনিস শুরু হয়েছিল। যেখানে আহত ড্যামেজ হোস্টদের বডি ঠিকঠাক করা হয়, সেখানকার এক কর্মচারীর প্রোগ্রামিং এর শখ আছে। সে গোপনে মেইভের ইন্টারফেইস নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে মেইভরে জাগিয়ে তোলে।

ঘটনার এক পর্যায়ে মেইভ জানে সে হোস্ট। মেইভের অনুরোধে তারে সবকিছু বলতে হয়, তারে হোস্টদের তৈরি করার ল্যাবরেটরি ঘুরিয়ে দেখাতে হয়। মেইভ বড় স্ক্রিনে তার আগের ভার্সন দেখে মর্মাহত হয়। এক সময় সে ব্ল্যাকমেইল করে তাকে আপডেট করার। বাধ্য হয়ে সেই কর্মচারী তার আপডেট করে দিতে বাধ্য হয়।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই অবস্থা দেখলে মনে হতে পারে যে বাস্তবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স মনে হয় কনসাশনেসের কাছাকাছি চলে গেছে।—নাহ, তার ধারে কাছেও যায় নাই।

কম্পিউটেশনের গতি যেভাবে বাড়তেছে, তাতে অনেকে বলে, ২০৩০ সালের পরে মেশিন মানুষের ব্রেইনের চেয়ে শক্তিশালী হবে। এইরকম বলাটা আসলে অপ্রাসঙ্গিক। কারণ মানুষের ব্রেইন কীভাবে অর্গানাইজড বা কীভাবে এটা কাজ করে তা কেউ জানে না। অনেক কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট বলে, ইউনিভার্সের মধ্যে সবচেয়ে কমপ্লিকেটেড সিস্টেম হল হিউম্যান ব্রেইন।

টিভি সিরিজ বা সিনেমাতে কেউ যে গতিতে প্রোগ্রামিং বা কোডিং করে, বাস্তবের প্রোগ্রামার বা কোডারদের কাছে সেটা যেমন মনে হওয়ার কথা, এইখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের বাস্তব অবস্থার তুলনায় মেইভের সাডেন ডেভেলপমেন্ট সে রকম।

দ্য এডভারসারি
নতুন একটা মেয়ে আসছে এই পর্বে। বোর্ড এক্সিকিউটিভ। নাম শার্লট হেল।

নতুন একটা মেয়ে আসছে এই পর্বে। বোর্ড এক্সিকিউটিভ। নাম শার্লট হেল। এক ধরনের পাওয়ার গেম খুব সূক্ষ্মভাবে চলতেছে ওয়েস্টওয়ার্ল্ডে। ওয়েস্টওয়ার্ল্ড এর কর্পোরেট গ্রুপ মনে হয় সায়েন্টিস্ট গ্রুপের চেয়ে নিজেদের বেশি ডমিন্যান্স প্রতিষ্ঠা করতে চায়।

এলসি অনুসন্ধান করে জানতে পারে, থেরেসা হোস্টদের প্রোগ্রাম পরিবর্তন করার সাথে জড়িত। তার সাথে আরো একজন আছে। সেটা কে তা এলসি বুঝতে পারছে না। এবং শুধু পুরাতন হোস্টদের ক্ষেত্রেই এই গোপন রিপ্রোগ্রামিং করা সম্ভব ও তাই করা হচ্ছে।

এলসি সন্দেহ করে আরনল্ড। আরনল্ড কি জীবিত আছে? বা আরনল্ডের কোনো হোস্ট ভার্সন?

এলসিকে কেউ একজন পিছন থেকে আক্রমণ করে।

লাস্ট এপিসোডের কথাটা ছিল, আমেরিকান রাইটার ফিলিপ কে. ডিকের সায়েন্স ফিকশন বই— “ডু অ্যান্ড্রয়েড ড্রিমস অব ইলেক্ট্রিক শিপ?” থেকে।

(পর্ব ৭)