বলা হয়ে থাকে, মানুষ অভ্যাসের দাস। কিন্তু যেই অভ্যাসের দাস আপনি হবেন, চাইলে সেই অভ্যাস নিয়ন্ত্রণও করা সম্ভব নিজের ইচ্ছামতো।

মিনিমালিস্ট জীবনযাপন সংক্রান্ত জনপ্রিয় ব্লগ ‘জেনহেবিটস’ এর লেখক লিও বাবাউটা মতে যে কোনো নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার ৫টি উপায় রয়েছে।

তার মতে, নতুন কোনো অভ্যাস গড়ে তোলা ও তা ধরে রাখার কাজটি সহজ নয়। ভালো কোনো অভ্যাস শুরু করা, সেই অভ্যাস ধরে রাখা, মোটিভেশন খুঁজে নেয়া, আলসেমিকে জয় করা—এগুলি যে কারো জন্য সবসময়ই কঠিন।

তবু এই কঠিন কাজটি করা জরুরি। কারণ জীবন যাপনের মান পরিবর্তন করতে হলে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবেই। যদি আমরা অভ্যাস পরিবর্তন করতে না পারি, তাহলে আমরা এখন যেমন আছি ঠিক তেমনই থেকে যাব সারা জীবন। এবং সেটা কেউই চায় না।

যদি ওজন কমাতে চান, দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে চান, বই লিখতে চান, ফিট থাকতে চান তাহলে পুরনো অভ্যাস পাল্টে আপনাকে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

তবে এই নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার কাজটি শুনতে যত কঠিন মনে হয়, আসলে তত কঠিন নয়। কাজটা সহজ নয় বটে, কিন্তু কাজটা সিম্পল। আপনাকে জাস্ট মন থেকে সত্যি সত্যি এই পরিবর্তন চাইতে হবে। নয়ত, যদি এই কমিটমেন্ট না থাকে, একটু কঠিন চ্যালেঞ্জ আসা শুরু করলেই আপনি হাল ছেড়ে দিবেন।

নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার একদম প্রথম শর্ত: একবারে কেবল একটি নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা শুরু করুন। জীবন যাপন উন্নত করার জন্য আপনি নিশ্চয় একসাথে অনেকগুলি ভালো নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে চান। কিন্তু লিও বাবাউটার পরামর্শ, ধীরে ধীরে আরো নতুন অভ্যাস গড়ে তোলা যাবে, কিন্তু এই মুহূর্তে জাস্ট একটা অভ্যাস শুরু করুন।

এই প্রথম শর্ত মেনে নিয়ে অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:

১.
খুব ছোট আকারে শুরু করুন। কোনো অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য এই ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একবারে কেবল একটি অভ্যাস শুরু করুন। এবং তা খুব ছোট আকারে শুরু করুন।

কিন্তু কত ছোট? মেডিটেশন করতে চান? মাত্র ২ মিনিট করুন। লেখক হতে চান? প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট লিখুন। পুশআপ শুরুতে প্রতিদিন মাত্র ৫টা করে দিন। প্রতিদিন মাত্র ১ ধরনের সবজি খাওয়া শুরু করুন।

যদি খুব ছোট আকারে শুরু করেন, তাহলে শুরু করার জড়তা কেটে যাবে সহজে। শুরু করার এই জড়তা বা আলস্য কাটানোটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। লিও বাবাউটা বলেন, “আমি নিজেকে বলতাম, জাস্ট জুতাটা পড়ে নাও আর দরজা খুলে বের হও, আর এভাবেই দৌড়ানোর অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। এভাবে খুব ছোট আকারে শুরু করেছিলাম বলেই আমি শেষমেশ অনেকগুলি ম্যারাথন আর একটি আলট্রাম্যারাথন দৌড়ে শেষ করতে পেরেছিলাম। মেডিটেশনের জন্য আমি নিজেকে বলতাম, জাস্ট কুশনের উপর বসে পড়ো। ছবি আঁকতে চাইলে জাস্ট প্রয়োজনীয় জিনিসপাতিগুলি আগে বের করুন।”

২.
ভাবনার সুযোগ রাখবেন না। অনেক আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখুন যে পরের অন্তত এক মাস আপনি এই কাজটি প্রতিদিন একই সময়ে করবেন। এরপর আর এ নিয়ে ভাববেন না। প্রতিদিন ওই নির্দিষ্ট সময়ে কাজটা কোনো রকম ভাবনা বা দ্বিধা ছাড়া জাস্ট করা শুরু করুন। এর সাথে একটি ‘যখন/তখন সিদ্ধান্ত’ ঠিক করুন। যেমন, যখন আমি ঘুম থেকে উঠব, তখন আমি ২ মিনিট মেডিটেশন করব। ঘুম থেকে ওঠা, গোসল করা, দাঁত ব্রাশ করা, কফি বানানো, লাঞ্চ করা ইত্যাদি দৈনন্দিন কাজগুলিকে এই যখন/তখন সিদ্ধান্তে ট্রিগার হিসেবে রাখুন। এই ট্রিগার ঘটনাগুলি যেখানে ঘটে তার কাছাকাছি কোথাও লিখিত রিমাইন্ডার রাখুন। মূল কথা হলো, সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি কাজটি প্রতিদিন করবেন, এবং কোনোকিছু না ভেবে কাজটি করা শুরু করুন।

৩.
জবাবদিহিতা তৈরি করুন। জবাবদিহিতার জন্য একজন পার্টনার খুঁজে নিন। সেটা কোনো বন্ধুদের গ্রুপ হতে পারে। কিংবা হাঁটার বা দৌড়ানোর পার্টনারও হতে পারে। জবাবদিহি দিতে বাধ্য থাকলে আপনি অনেক সহজেই কাজটি করবেন। আলসেমি বা অন্যান্য জড়তা কাটাতেও সাহায্য করবে এমন পার্টনার।

৪.
যা করছেন তা উপভোগ করুন। বাধ্য হয়ে করছেন এমন যেন মনে না হয়। কাজটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি কোনো কাজ উপভোগ করেন এবং কাজটি করার প্রত্যেকটি মুহূর্ত একধরনের ভালো লাগা বোধ করেন তবে তা অভ্যাসে পরিণত হবে সহজে। কেবল টু-ডু লিস্টে রয়েছে বলে যদি আপনি কাজটা করেন, তবে সেই কাজে মোটিভেশন ফুরিয়ে যাবে সহজে।

৫.
বড় কোনো কমিটমেন্ট ঠিক করুন। কেন এই নতুন অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন আপনি? প্রথম সপ্তাহে এই জিনিসটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। আপনি কি অন্যদের সাহায্য করার জন্য এই অভ্যাস গড়ে তুলছেন? নাকি নিজের উন্নতির জন্য কিছু করছেন যাতে আপনি আরো সুস্বাস্থ্যবান বা সুখী হতে পারেন? প্রাথমিক ইচ্ছার গভীরে এমন কোনো বড় কমিটমেন্ট থাকাটা জরুরি। সেটা যদি না থাকে, কাজটা যদি আপনি জাস্ট করার জন্য করে থাকেন কারণ আপনার মনে হয়েছে এটি করা উচিত কিংবা এটি নতুন কোনো ট্রেন্ড বা ‘কুল’ জিনিস, তাহলে আপনি আলসেমি কাটিয়ে নতুন অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারবেন না। চাইলে আপনি কেবল প্রথম আইটেম দিয়ে শুরু করতে পারেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বাকি ৪টাও যোগ করুন প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই।

আরো পড়ুন: অভ্যাস বদলাতে চান?—যারা সক্ষম হয়েছেন এমন ৩০ জনের ১ লাইনের গল্প

পুরনো কোনো অভ্যাস অবশ্যই পাল্টানো সম্ভব যদি আপনি সচেতনভাবে নতুন কোনো কাজ বার বার করতে থাকেন যতক্ষণ না তা নতুন অভ্যাসে পরিবর্তিত হয়। শুরুতে ছোট একটি স্টেপ নিন। শুরু করব কি করব না এমন ভাবনার কোনো সুযোগ রাখবেন না। জবাবদিহিতার পার্টনার খুঁজে নিন। আপনার মোটিভেশন সম্পর্কে নিশ্চিত হবেন যাতে আলসেমির প্রতিরোধ ভাঙতে পারেন সহজে। এবং আপনি যা করছেন তা পুরোপুরি উপভোগ করুন। ব্যাস।