নেটফ্লিক্স শুরু হয়েছিল সাধারণ একটি ডিভিডি-বাই-মেইল সার্ভিস হিসেবে। সময়ের সাথে সাথে এটি এখন পরিণত হয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসে। বিশ্বের যে কয়টি কোম্পানি ভিডিও স্ট্রিমিং প্রযুক্তির সম্ভাবনা অনুধাবণ করতে পেরেছিল তার মধ্যে নেটফ্লিক্স অন্যতম। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভিডিও-অন-ডিমান্ড মডেলে সাবস্ক্রিপশনের সুযোগ চালু করে ২০০৭ সালে।

পরিষেবার পরিসরে এই রূপান্তর নিয়ে আসার পর নেটফ্লিক্সের আয় ১.৩৬ বিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৫.৮ বিলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০ বছরে। নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যাও একই অনুপাতে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১১ সালে নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার ছিল ২২ মিলিয়ন। আর ২০১৯ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫০ মিলিয়ন।

 

নেটফ্লিক্স সাবস্ক্রাইবারস

বিশ্বজুড়ে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েই চলেছে। তবে এখনও প্রতিষ্ঠানটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নেটফ্লিক্সের পেইড সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৭০ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের ৫০ শতাংশেরও বেশির বর্তমানে নেটফ্লিক্সে অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

 

নেটফ্লিক্স ব্যবহারকারী

নেটফ্লিক্স গ্রাহকদের বেশির ভাগই বেশ নিয়মিত এটি ব্যবহার করে থাকেন। তরুণ ব্যবহাকারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ এটিকে নিজেদের সবচেয়ে অপরিহার্য টিভি নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করেন। এই বিস্ময়কর পরিসংখ্যান দেখে মনে হতে পারে যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সাবস্ক্রিপশন ভিডিও-অন-ডিমান্ড মার্কেটে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হবে।

কিন্তু, নেটফ্লিক্সের প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান-সমূহ যেমন হুলু, অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও এবং ডিজনিপ্লাস এই এসভিওডি বাজারের বেশ বড় একটি অংশ দখল করে নিতে পেরেছে। তবুও, তুলনামূলকভাবে অনেক অল্প সংখ্যক মানুষই এই ৩টি ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসকে নেটফ্লিক্সের বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করেন।

 

মার্কেট পজিশন

প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠান-সমূহের সঙ্গে নেটফ্লিক্সের প্রধান পার্থক্য এর বিপুল পরিমাণ অরিজিনাল কনটেন্টে। ২০১৯ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৩৫০-টিরও বেশি নেটফ্লিক্স অরিজিনাল তৈরি হয়েছে। এই সংখ্যা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রতিষ্ঠানটির ধারাবাহিক সাফল্যের পিছনে অন্যতম কারণ হল ‘হাউজ অব কার্ডস’, ‘স্ট্রেনজার থিংস’ এবং ‘অরেঞ্জ ইজ দ্য নিউ ব্ল্যাক’ এর মত অরিজিনালগুলি। এক তৃতীয়াংশ ব্যবহারকারীদের মতে অরিজিনালই নেটফ্লিক্সে তাদের সবচেয়ে প্রিয়। আর ৬০ শতাংশের বেশি সাবস্ক্রাইবারের মত অনুযায়ী এই সার্ভিস গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত মূলত নির্ভর করে নেটফ্লিক্স অরিজিনালগুলির ওপর।

শুরু থেকেই নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও গ্রাহকদের চাহিদার সাথে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতাই নেটফ্লিক্সের সাফল্যের কারণ। এই সক্ষমতা চলতি বছরগুলিতেও অব্যহত রয়েছে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে নেটফ্লিক্সের অরিজিনালের বিষয়বস্তু ও বিশ্বজুড়ে এগুলি প্রচারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির প্রচেষ্টা। ক্রমাগত নিজেদের নতুনত্ব ধরে রাখার এই প্রবণতা যতদিন থাকবে, ততদিন নেটফ্লিক্স এসভিওডি বাজার ও বিনোদন জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখবে।