জলহস্তীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে কলম্বিয়ার বিলিয়নিয়ার ড্রাগলর্ড পাবলো এসকোবারের হাসিয়েনদা নাপোলেসের পরিত্যক্ত চিড়িয়াখানায়। এই সংখ্যাবৃদ্ধি আশঙ্কাজনক, জানিয়েছেন গবেষকরা।

পাবলো এসকোবারকে (১৯৪৯-১৯৯৩) বলা হয় পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী অপরাধী। মাদক পাচারকারী এবং সন্ত্রাসী এই মানুষটি বহু বছর ধরেই কর্তৃপক্ষের চোখে ধূলা দিয়ে কলোম্বিয়ায় নিজের রাজত্ব গড়ে তুলেছিলেন। ১৯৯৩ সালে এসকোবারের মৃত্যুর আগে করা হিসাব অনুসারে, তার জমানো সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান হিসেবে এর পরিমাণ প্রায় ৫৯ বিলিয়ন ডলার।

১৯৭৬ সালের একটি মাগশটে পাবলো এসকোবার

বিপুল পরিমাণ এই অর্থের কিছুটা তিনি নিজের খামখেয়ালী শখ পূরণ করার জন্যেও খরচ করেছিলেন। তার অন্যতম একটা শখ ছিল দেশটির ‘পুয়ের্তো ত্রিউনফো’ শহরে নিজের জন্যে এস্টেট তৈরি করা।

প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে তৈরি এই এস্টেটে অনেক কিছুর পাশাপাশি একটা ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানাও ছিল। অবৈধভাবে পাচার করা দেশবিদেশের বিচিত্র সব প্রাণী দিয়ে তিনি নিজের চিড়িয়াখানা ভরে তুলেছিলেন।

পরিত্যক্ত আইনে মৃত্যুর পরে যখন তার এস্টেট সরকারের পক্ষ থেকে থিম পার্কে রূপান্তরিত করা হয়, তখন চিড়িয়াখানা থেকে অনেক প্রাণীই পুনরায় তাদের মূল বাসস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে সেখানকার জলহস্তীগুলি শেষপর্যন্ত কলম্বিয়াতেই থেকে যায়। মূলত স্থানান্তরের ঝামেলার কারণেই বিশাল আকৃতির হিংস্র এই প্রাণীগুলিকে পরবর্তীতে আর নিজেদের আদি বাসস্থানে সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

জলহস্তীকে মূলত আফ্রিকার একটি স্থানীয় পশু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে কলম্বিয়ার আবহাওয়া এবং জলবায়ু জলহস্তীর শারীরিক বিকাশ এবং বংশবৃদ্ধিতে সহায়ক । ফলে ‘হাসিয়েনদা নাপোলেস’-এ জলহস্তীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আশির দশকে যখন এসকোবারের প্রতিপত্তি বেড়ে চলছিল, তখন তিনি অবৈধভাবে ৪টি জলহস্তী কলম্বিয়ায় নিয়ে আসেন। আর গত বছরের শেষদিকে করা এক হিসাব অনুসারে, বর্তমানে এসকোবারের চিড়িয়াখানায় থাকা জলহস্তীর সংখ্যা আনুমানিক ৯০ থেকে ১২০।

এদিকে বহু বছর ধরেই গবেষক, বিজ্ঞানী এবং প্রাণী বিশেষজ্ঞরা দাবি করে আসছেন, এই জলহস্তী কলম্বিয়ার স্থানীয় পরিবেশের জন্যে হুমকি হিসেবে কাজ করছে। চলতি মাসেও ‘বায়োলজিকাল কনজার্ভেশন’ জার্নালে এ নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণা অনুসারে, অতিসত্বর জলহস্তীগুলির বংশবিস্তার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। গবেষকদের মতে, এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে কলম্বিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও জলহস্তীর বসতি ছড়িয়ে পড়তে পারে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, আক্রমণাত্বক প্রাণীদের মধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাণী হলো জলহস্তী। ফলে দেশজুড়ে জলহস্তীর বসতি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় মানুষের জন্যে ঝুঁকির পাশাপাশি কলম্বিয়ার পরিবেশের উপরেও ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে পারে।

লা ফিনচা মানুয়েলা, পাবলো এসকোবারের পরিত্যক্ত বাড়ির একটি।  Photo. Lukas Kovarik / Shutterstock

জলহস্তীগুলি যেসব জলাশয়ে বাস করছে, সেখানকার পানির অবস্থা নিয়েও গত বছর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুসারে, জলহস্তীর ত্যাগ করা মলের কারণে সেখানকার পানিতে সায়ানো ব্যাকটিরিয়ার পরিমাণ বাড়ছে। ফলে আশেপাশের জলাশয়ের পানিও দূষিত হয়ে পড়ছে।

তবে কলম্বিয়ার স্থানীয় জনগণের অধিকাংশই মনে করেন, সংখ্যায় বাড়তে থাকা এই জলহস্তীগুলি তেমন কোনো সমস্যাই না। বরং দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটকই জলহস্তী দেখার জন্যে পুয়ের্তো ত্রিউনফো’তে ছুটে আসেন। ফলে স্থানীয়রাই লাভবান হন। তাছাড়া কলম্বিয়ার পরিবেশ আইন অনুসারেও এসব জলহস্তীর সুরক্ষা দেয়া সরকারের দায়িত্ব।

উল্লেখ্য, এসকোবারের মৃত্যুর পরে সরকারের পক্ষ থেকে হাসিয়েনদা নাপোলেসে অবস্থিত খামার, চিড়িয়াখানা ও দুর্গের মালিকানা স্থানীয় নিম্ন-আয়ের পরিবারগুলিকে দিয়ে দেয়া হয়। কলম্বিয়ার সংবিধানের ‘এক্সটিনসিওন ডে ডোমিনিও’ বা ‘সম্পত্তির মালিকানা বিলুপ্তি’ নামের একটি আইনের অধীনে এই পদক্ষেপটি নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে হাসিয়েনদা নাপোলেস-এর পুরো জায়গাটাই থিম পার্কে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এবং চিড়িয়াখানার পাশেই নির্মাণ করা হয়েছে ৪টি বিলাসবহুল হোটেল।