বাজারের অন্যান্য পণ্যের মতই নানা কোয়ালিটির চায়ের দামও বিভিন্ন। কেজি প্রতি অল্প কয়েক টাকার চা থেকে কেজি প্রতি মিলিয়ন ডলারের চাও রয়েছে। বিভিন্ন দামের চায়ের মধ্য থেকে এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ১০টি চায়ের নাম এসেছে।

 

১০.  তিয়েনচি ফুলের চা

পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর চায়ের একটি হল এই তিয়েনচি চা। প্রতি কেজি ১৭০ ডলার। এর বৈজ্ঞানিক নাম Panaxnotoginseng. Panax এর অর্থ সবকিছুর নিরাময়। দীর্ঘদিন ধরে মাথা ঘোরা, চর্মরোগ ও অনিদ্রার চিকিৎসায় এই চা ব্যবহৃত হচ্ছে। ছোট ছোট ব্রোকোলি ফুলের মত দেখতে তিয়েনচি চীনে জন্মায়। এর স্বাদ অনেকটা পুদিনার মত।

 

৯. সিলভার টিপস ইমপেরিয়াল টি

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি দার্জিলিং চা এটি। দার্জিলিং-চা এর স্বাদ ও রঙ একদম আলাদা। এই চা প্যাটেন্ট করা এবং প্রতি কেজি চায়ের দাম ৪০০ ডলার। এর গাছ পূর্ণ চাঁদের সময় রোপণ করা হয় এবং এই পাতাগুলি রুপালি রঙ খচিত হয়।

 

৮. গিওকুরু চা

পাতা গুড়া না করেই গিওকুরু চা তৈরি করা হয়। চা পাতা গাছ সংগ্রহের দুই সপ্তাহ আগে সেগুলিকে সূর্যের আলো থেকে ঢেকে রাখা হয়। এর ফলে চায়ে অ্যামিনো এসিডের মাত্রা বাড়ে। অ্যামিনো এসিডের কারণে চায়ের স্বাদ মিষ্টি হয় এবং চায়ে বিশেষ ধরনের সুগন্ধ তৈরি হয়। জাপানের উজি জেলায় এই চা উৎপন্ন হয়। এই চায়ের নামের অর্থ ‘জুয়েল ডিউ’ বা রত্ন শিশির। এই চা সবুজ রঙের হয়।

 

৭. পু পু পু-এরে চা

নাম দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। এই চায়ের দাম প্রতি কেজি ১০০০ ডলার। এই অদ্ভুত নামের কারণ এই চা পোকার বিষ্ঠা থেকে তৈরি হয়। এই চায়ের পাতা পোকাদের প্রধান খাদ্য। তাইওয়ানের চা চাষীরা ম্যাগনিফাইং গ্লাস ব্যবহার করে এই চা পাতা খাওয়া পোকাদের বিষ্ঠা সংগ্রহ করে। পরে এই বিষ্ঠা প্রক্রিয়াজাত করে চা তৈরি করা হয়। পু পু পু-এরে চা শক্তি উৎপাদক। এর চায়ের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। কিয়ানলং সম্রাটকে উপহার দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৮ শতকে এই চা প্রথম তৈরি করা হয়।

 

৬. ইয়েলো গোল্ড টি বাডস

এই চায়ের দাম প্রতি কেজি ৩০০০ ডলার। চা পাতায় সত্যিকার অর্থেই ২৪ ক্যারেট সোনার প্রলেপ দেওয়া হয়। স্বর্ণের প্রলেপ স্বত্ত্বেও এই চা খুবই স্বাস্থ্যকর। এই চা আপনি পাবেন শুধুমাত্র সিঙ্গাপুরে। একটি পাহাড় থেকে বছরে মাত্র একদিন এই চা পাতা সংগ্রহ করা হয়। গাছের উপরের ডগা সোনার তৈরি কাঁচি দিয়ে কেটে নেওয়া হয়। চায়ের এই সংগৃহিত মুকুল রোদে শুকানোর পরে একটি বদ্ধ কন্টেইনারে রেখে দেওয়া হয়। এগুলি পলিফেনল নিঃসরণের কারণে হলুদ রঙের হয়ে যায়। এই চা খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। চীনে এটি অভিজাত চা।

 

৫. তিয়েগুয়ানাইন চা

একজন বৌদ্ধ দেবীর নামে এই চায়ের নামকরণ করা হয়েছে। দেবী গুয়ান ইয়িন ক্ষমার দেবী। এটি একটি ওলং টি, মানে এর জারণ অবস্থা গ্রিণ টি এবং ব্ল্যাক টি-এর মাঝামাঝি। স্বাদ নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত একটি পাতা থেকে ৭ বার পর্যন্ত চা তৈরি করা যায়। প্রতি কেজির দাম ৩০০০ ডলার। পাতা পুরু ও উজ্জ্বল এবং এই চা পাতায় সোনালি রঙের আভা রয়েছে। চা পাতা ঢালার সময় এক ধরনের বিশেষ সাঙ্গীতিক শব্দ তৈরি হয়। চা থেকে চেস্টনাটের স্বাদ পাওয়া যায়। এই চা সলিড ও ভারি ধরনের। এবং হাত দিয়ে ধরলে মচ মচ করে ভেঙে যায়।

 

৪. ভিনটেজ নার্সিসাস উউয়ি ওলং টি

এই চায়ের দাম প্রতি কেজি ৬৫০০ ডলার। এটি চাইনিজ চা। এই চা ২০ কেজি ওজনের বাক্সে আসে। বাক্সগুলি ৫০ বছরেরও বেশি পুরানো। ৬০ এর দশকে এই বাক্সগুলি চীন থেকে সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হয়েছিল। অনেক হাত ঘুরে এটি হংকং-এ পৌঁছায়। সেখানে একজন মালয়েশিয়ান-চাইনিজ সংগ্রাহক সেগুলি কিনে নেন। গ্রিক মিথের নার্সিসাসের নামে এই চায়ের নামকরণ করা হয়েছে। এই চা ফুজিয়ান প্রদেশের উউয়ি পাহাড়ে উৎপন্ন হয়।

৩. পান্ডা ডাং টি

আসলেই কি পান্ডার বিষ্ঠা থেকে এই চা তৈরি হয়?—উত্তরটি হলো—হ্যাঁ। পান্ডার বিষ্ঠা প্রতি কেজির দাম ৭০ হাজার ডলার, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তারও বেশি। এর কারণ হলো পান্ডা শুধুমাত্র বন্য বাঁশ খায়। এবং এর মাত্র ৩০ শতাংশ পুষ্টিগুণ হজম করে। বাকিটা এদের বিষ্ঠায় পাওয়া যায়। আর এই চা গাছগুলিতে পান্ডার বিষ্ঠা সার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

 

২. পিজি টিপস ডায়মন্ড টি ব্যাগ

টি ব্যাগগুলি ২৮০ পিস হীরা থেকে তৈরি হয়। প্রতি টি ব্যাগের দাম ১৫ হাজার ডলার। দাম আসলে চায়ের সাথে সম্পর্কিত না, বরং এর প্যাকেজিং-এর সাথে। এই টি ব্যাগ প্রথম দেখা গিয়েছিল ২০০৫ সালে। তখন পিজি টিপস-এর ৭৫তম বার্ষিকীর সময় চ্যারিটির জন্য টাকা তোলার উদ্দেশ্যে এটি তৈরি করা হয়েছিল। এই টি ব্যাগের ভিতরে সিলভার টিপস ইমপেরিয়াল চা থাকে। বুডলস (Boodles) জুয়েলার্স এদের ব্যাগ তৈরি করে থাকে।

 

১. দা হং পাও

এই চা আসলে সময়ের স্বাদ দেয়, এবং সেই সময়টি হলো ১৮ শতক। এর নামের অর্থ হলো ‘বিগ রেড রোব’ বা বিশাল লাল গাউন। ১৯৯৮ সালে চীন সরকার নিলামে সর্বোচ্চ দাম ৯ লাখ ডলারে এটি বিক্রি করে দেয়। বলা হয় এই চায়ে বিশেষ এক ধরনের ফুলের স্বাদ রয়েছে এবং চা পানের পরে দীর্ঘ সময় ধরে এই স্বাদ মুখে থাকে। চায়ের প্রতি কেজির দাম ১.২ মিলিয়ন ডলার। বেশি দুর্লভ হওয়ার কারণে এটিকে চাইনিজ গুপ্তধন বিবেচনা করা হয়। এটি চাইনিজ ওলং ধরনের চা। একটি বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে মিং সাম্রাজ্যের আমলে এক মিং সম্রাটের মায়ের কঠিন রোগ মুক্তি ঘটেছিল একটি বিশেষ রহস্যজনক চায়ের মাধ্যমে। সেটি এই দা হং পাও চা। বলা হয়ে থাকে উউয়ি পাহাড়ের উচ্চতম স্থানে চারটি ঝোপে এই চা গাছ ছিল। সেই চারটি ঝোপের তিনটি আজও টিকে আছে। চায়ের অনেক ঔষধি গুণ রয়েছে। এই চা সংগ্রহের কোনো ইচ্ছা যদি আপনার থাকে তাহলে একটা তথ্য আপনার জেনে রাখা ভালো—এই চা কদাচিৎ মূল্যহ্রাসে বিক্রি হয়ে থাকে, তবে তা খুবই কদাচিৎ।