খাবার ও পানি ছাড়া একজন লোক পানির নিচে কীভাবে বেঁচে ছিল? বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বাতাসের বাবল তাকে সাহায্য করেছে।


তানিয়া বসু
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ৫ ডিসেম্বর ২০১৩


গভীর সাগর আটকে পড়া এক ব্যক্তি কীভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফিরলেন?

দেখা গেল হ্যারিসন ওকেনের ত্রাণকর্তা ছিল বাতাসের একটা বিশাল বাবল বা বুদবুদ।

নাইজেরিয়ান নাগরিক ওকেনের টাগবোট, এ এইচ টি জ্যাকসন-৪ গভীর সমুদ্রে হঠাৎ উল্টে ১০০ ফুট নিচে ডুবে যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন। পেশায় বাবুর্চি ওকেন একটা চার ফুট বাথরুমে তিনদিন আটকা পড়েছিলেন। যেখান থেকে সাহায্য চেয়ে সিগনাল পাঠানোরও কোনো উপায় ছিল না, ছিল না কোনো খাবার, কোনো পানি।

ছয় মাস আগে উদ্ধারকারী ডুবুরিরা মৃতদেহ উদ্ধার করতে গিয়ে সাহায্যের জন্য মরিয়া ওকেনের প্রসারিত হাত দেখতে পান এবং ওকেনের এই অলৌকিক বেঁচে যাওয়ার ঘটনাটি তারা ক্যামেরাবন্দি করেন। এই সপ্তাহে সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয় এবং একটা বাতাসের বুদবুদের শক্তি বিশ্ববাসীর নজর কেড়ে নেয়।

তো এই বুদবুদটি এত দীর্ঘসময় ধরে টিকে ছিল কীভাবে?

ডিউক সেন্টার ফর হাইপারবেরিক মেডিসিন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ফিজিওলজির নার্স ও ডাইভিং মেডিসিনের ক্লিনিকাল পরিচালক এরিক হেক্সডাল হিসাব করেন, ১৩.৫ ঘনমিটার আয়তনের একটা বুদবুদে―যেটা ওকেনের আটকে পড়া বুদবুদের প্রায় সমান―একজন মানুষ কার্বন বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রায় ৫৬ ঘণ্টার মতো বেঁচে থাকতে পারে।

হেক্সডালের মতে, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ার আগে ওকেনের প্রথম সমস্যা হতো কার্বন ডাই অক্সাইড। তিনি বলেন, এরকম জায়গায় আটকে পড়লে অক্সিজেন শেষ হওয়ার আগে কার্বন ডাই অক্সাইড লেভেল বিষাক্ত হয়ে উঠবে।

ওকেনের শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপাদনের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় হচ্ছে সমুদ্রের তলদেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ সমতল ভূমির চেয়ে বেশি।

হেক্সডাল বলেন গভীর সমুদ্রে কার্বন ডাই অক্সাইডের বিষক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ রয়েছে।

কার্বন কণার ৫০,০০০ পার্টস পার মিলিয়নে বিষক্রিয়ার ভয়াবহ লক্ষণ হিসেবে একজন ব্যক্তির চলাচল, কথাবার্তায় অস্পষ্টতা দেখা যায়। ৭০,০০০ পার্টস পার মিলিয়নে একজন ব্যক্তি জ্ঞান হারায়।

হেক্সডাল অনুমান করেন, প্রায় ৫৬ ঘণ্টা পর ওকেন কার্বন বিষক্রিয়া অনুভব করতে থাকেন।

হেক্সডালের মতে, ওকেন সম্পূর্ণরূপে বিষক্রিয়া অনুভব করেননি। কার্বন বিষক্রিয়ার ফলে তার অজ্ঞান হতে প্রায় ৭৯ ঘণ্টা লাগত।

আটকে পড়ার ৬০ ঘণ্টা পর ওকেনকে উদ্ধার করা হয়।

হ্যারিসন ওকেনের উদ্ধারের ভিডিও:

ওকেন গভীর সমুদ্রে মারণঘাতী উচ্চ বায়ুচাপের হুমকিও এড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। অতিরিক্ত বায়ুচাপের ফলে মানুষের রক্ত নাইট্রোজেন দ্বারা স্যাচুরেটেড হয়ে যায়। এই কঠিন সময়ে ওকেনের নাইট্রোজেন লেভেল ভূপৃষ্ঠে আমাদের নাইট্রোজেন লেভেলের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।

গভীর সমুদ্রে ডুব দেয়া বা ডাইভিংয়ের ফলে নাইট্রোজেন নারকোসিস তৈরি হয়―৮০ ফুটের বেশি গভীরতায় একজন সাঁতারু অচেতন হয়ে পড়তে পারেন।

উদ্ধারের পর ভূপৃষ্ঠের বায়ুচাপে ডিকম্প্রেস করাও বেশ অসুবিধাজনক।

ডাইভার্স অ্যালার্ট নেটওয়ার্ক এর রিসার্চ বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার ডিনোবেল জানান ওকেন উদ্ধার হওয়ার পরপরই ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসলে বেঁচে থাকতে পারতেন না।

ওকেন এবং তাকে উদ্ধারকারী ডুবুরিদের স্বাভাবিক বায়ুচাপে ফিরিয়ে আনতে দলটির ট্রান্সফার ক্যাপসুল হিসেবে পরিচিত ডাইভিং বেল এর সাহায্য নিতে হয়েছে।

ডিনোবেল এর মতে এই ভেসেল বা জলযানটির বায়ুচাপ সমুদ্রের তলদেশের মতোই থাকে যার ফলে উদ্ধারকারী দলটি নিরাপদে সমুদ্রের চাপের সাথে ভারসাম্য রেখে ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসতে পারে।

হেক্সডাল বলেন ডাইভিং বেল থেকে ওকেন এবং তাকে উদ্ধারকারী দলটি ডিকম্প্রেশন চেম্বারে প্রবেশ করার সময় একটা উষ্ণ ও শুষ্ক টানেল বা সুরঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেছেন। এই চেম্বার মানুষকে স্বাভাবিক বায়ুচাপে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সত্ত্বেও হেক্সডাল বলেন যে ওকেন দৈববলেই এই কঠিন পরীক্ষা থেকে বেঁচে ফিরেছেন।

অনুবাদ: জোহানা আফরিন নিশো