মাথাব্যথার বিভিন্ন ধরন আছে। যেমন মাইগ্রেনের মত কিছু তীব্র মাথাব্যথা আছে যা একজন ব্যক্তিকে বেশ অবশ করে দিতে পারে।  তাই আপনি এগুলি থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় জানতে চাইতে পারেন। বিজ্ঞান এমন পরিস্থিতিতে কী করতে বলে? এই ব্যাপারটি বিশ্লেষণ করা যাক।

মাথাব্যথার কারণে অনেক সময় যন্ত্রণা, মাথা ঘোরা কিংবা প্রচণ্ড অস্বস্তি তৈরি হয়। তখন মনে হয় কেউ যেন হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। এমন তীব্র মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? ঔষধ গ্রহণ ছাড়া অন্য কোনো সমাধান কি আছে? অনেক ঔষধের প্রতিক্রিয়া মাথাব্যথার ফলে যে শারীরিক অসুবিধা তৈরি হয় তার থেকে কোনো অংশেই কম নয়। ফলে অনেক চিকিৎসক ও নিউরোলজিস্ট-এর মতে মাথাব্যথার জন্যে এটি অন্যতম প্রধান কারণ।

বহুল প্রচলিত একটা ধারণা আছে যে খাওয়া-দাওয়া করলে মাথাব্যথা কমে যায়। এটা সত্যি যে খিদে মাথাব্যথার ট্রিগার হিসেবে কাজ করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় মাথাব্যথার সাধারণ কারণ হল খাদ্যস্বল্পতা, প্রতিদিনের স্ট্রেস, ক্লান্তি, অথবা ধরা পড়ে নি এমন কোনো রোগ।

তবে, প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রফেন গ্রহণের আগে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাথাব্যথার হাত থেকে বাঁচার জন্যে নিউরোসায়েন্টিস্টরা কী বলেন তা জানতে চাইলে পড়তে থাকুন।

 

মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পরামর্শ

মাথাব্যথা যে কারো হতে পারে। এমনকি ধারণা করা হয় যে ১৫ বছর হওয়ার আগেই প্রতি তিনটি শিশুর মধ্যে দুইজন মাথাব্যথায় আক্রান্ত হবে। স্পষ্টতই, প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যক্তি জীবনে একবার হলেও মাথাব্যথা অনুভব করবে। এটি অতি সাধারণ একটি সমস্যা। অথচ, এখনো এটি নিয়ে অজ্ঞতা ও ভুল ধারণার কোনো শেষ নেই।

মাথাব্যথার সবচেয়ে কমন টাইপ হল প্রাইমারি বা প্রাথমিক অবস্থার মাথাব্যথা। এটি কোনো নির্দিষ্ট রোগের কারণে হয় না। মাইগ্রেন এবং মাথাব্যথা হল সবচেয়ে কমন বা সাধারণ। অথচ ল্যানসেট-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, অসংখ্য মানুষ এখনও মাথাব্যথায় আক্রান্ত হওয়া সম্বন্ধে ভুল ধারণা পোষণ করে।

এছাড়াও, মাথাব্যথা শুরু হলে অনেকেই আর কাজ করার মত অবস্থায় থাকেন না। এমন হলে কাজের উৎসাহ কমে যায় ও ক্লান্ত লাগে এবং নিরিবিলি স্থানে একা থাকতে ইচ্ছে হয়। অনেকের কাছেই আক্রান্ত ব্যক্তির এই আচরণটিকে অহমিকা মনে হতে পারে। যাহোক, বিজ্ঞান আজকাল মাথাব্যথাকে আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারছে। ফলে বর্তমানে আরো বেশি কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি পাওয়া যাচ্ছে।

মাথাব্যথা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন সে সম্পর্কে নিউরোসায়েন্স কী বলে তা এখানে তুলে ধরা হল।

 

১. সমস্যা আসলে কোন জায়গায়, তা খুঁজে বের করুন

মাথাব্যথা শুরু হলে আপনার কিছু জিনিস করতে হবে। প্রথমেই ঔষধ না খুঁজে বোঝার চেষ্টা করুন কেন আপনার মাথাব্যথা করছে। তারপর সম্ভাব্য কারণগুলিকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন।

মাথাব্যথার সময় একাধিক শারীরিক প্রক্রিয়া একই সাথে কার্যকর হয়ে ওঠে। যেমন, রক্তনালী ও স্নায়ু মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত প্রেরণ করতে থাকে। নিউরোট্রনাসমিটারগুলি স্নায়ুকোষের ক্রিয়াকলাপে পরিবর্তন নিয়ে আসতে শুরু করে।

আপনি যদি আসল কারণ খুঁজে বের না করে ব্যথা কমানোর জন্যে ব্যথানাশক নিতে থাকেন তাহলে অসুখটি নিয়মিত হয়ে উঠতে পারে।

মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই মাথাব্যথার কারণ সম্বন্ধে জানতে হবে। আপনি যদি আসল কারণ খুঁজে বের না করে ব্যথা কমানোর জন্যে ব্যথানাশক নিতে থাকেন তাহলে অসুখটি নিয়মিত হয়ে উঠতে পারে।

নিজেকে জিজ্ঞেস করুন যে কেমন লাগছে। গত কয়েকদিন আপনার জীবনে কী কী ঘটেছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করুন। আপনি কি অতিরিক্ত পরিশ্রম করেছেন? একাধিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন? না কি আপনি কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন? স্ট্রেসের কারণে বেশির ভাগ মাথাব্যথার উৎপত্তি হয়।

আপনার খাদ্যাভ্যাসকে বিশ্লেষণ করুন। এর কারণ হল অনেক খাবারেই ইনফ্লেমেটরি কেমিক্যাল থাকতে পারে যা ট্রাইজেমিনাল নার্ভকে সরাসরি সক্রিয় করে তুলতে পারে। এর ফলে অনেক সময় মাইগ্রেন হতে পারে।

আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন। কারণ খনিজ বা পুষ্টির ঘাটতি থাকলে অনেক ক্ষেত্রে ক্লান্তি এবং মাথাব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।   নিয়মিত মেডিকেল চেক-আপ করানো সব সময়ই উপকারী।

 

২. আমাদের মস্তিষ্কে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক রয়েছে

মাথাব্যথায় আক্রান্ত হলে অনেক সময় ফার্মালজিক্যাল চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তবে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কিংবা এর তীব্রতা কমিয়ে আনার অন্য আরেকটি উপায় হল আমাদের প্রাকৃতিক পেইনকিলার বা ব্যথানাশকগুলিকে সক্রিয় করে তোলা।

অক্সিটোসিন, ডোপামিন বা সেরোটোনিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারগুলি আপনার নাগালের মধ্যে রয়েছে। কখনও কখনও এই অস্বস্তি নিরাময় করার একটি চাঞ্চল্যকর উপায় হল এগুলি নিঃসরণ করা। কীভাবে এটি করা যায়? একাধিক উপায়ে এটি করা যায়:

  • হাঁটতে বের হোন। পরিষ্কার বাতাস আপনাকে শান্ত হতে এবং স্বস্তিবোধ করতে সাহায্য করবে
  • ভালো মানুষদের সান্নিধ্যে সময় কাটান, যাদের সংস্পর্শে আসলে আপনার মন ভালো হয়ে যায়
  • বিশ্রাম নিন; নিজের পছন্দমতো কাজ করার জন্য নিজেকে কিছুটা সময় দিন; ধীরেসুস্থে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করুন

 

৩. যে ৫টি অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন

আমেরিকান চিকিৎসক ডা. সিমুর ডায়মন্ড ন্যাশনাল হেডেক ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মাথাব্যথা বিষয়ে অন্যতম বিশেষজ্ঞ ছিলেন। তিনি “মোর দেন টু অ্যাসপিরিন: হোপ ফর ইউর হেডেক প্রবলেম’ নামক গ্রন্থের রচয়িতা। তার পরামর্শটি বেশ কার্যকর। তাই এগুলি মাথায় রাখতে পারেন।

  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার এবং ঘুম থেকে উঠবার চেষ্টা করুন, নিজের সময়সূচি মেনে চলুন
  • প্রতি রাতে গড়ে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান
  • প্রতিদিনের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন
  • নন-ইনফ্লেমেটরি বা অ-প্রদাহজনক খাবার খান (যেমন ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ)
  • কড়া গন্ধ এবং আলো থেকে সতর্ক থাকুন
  • দিনে কমপক্ষে আধা ঘন্টা ব্যায়াম করুন
  • দীর্ঘ সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার অভ্যাস দূর করুন। বিশেষ করে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্ক্রিনের দিকে বেশি তাকাবেন না।

পরিশেষে বলা যায়, পরের বার আপনি যখন মাথাব্যথা অনুভব করবেন তখন নিজেকে বিশ্লেষণ করুন। এর কারণ কী হতে পারে তা নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন এবং চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না আর অবশ্যই বেশি করে পানি পান করুন এবং হাইড্রেটেড থাকুন, কারণ এটি অনেক সহায়তা করে।