ড. কেনেথ কে হান্সরাজ

টেক্সট নেক সিনড্রোম এখন মোবাইল ব্যবহারকারীদের সাধারণ প্রবণতায় রূপ নিয়েছে। নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশ এখন সামনে ঝুঁকে থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে তাকিয়ে কাটিয়ে দেয়।

আমাদের বিনোদনের বেশির ভাগ উপাদানই স্ক্রিনযুক্ত ইলেকট্রনিক্স। সেটা আগে ছিল টিভি কিংবা ডেস্কটপ মনিটর, এখন ট্যাবলেট কিংবা স্মার্টফোন। যেগুলি ব্যবহারকারীরা তাদের হাতেই বহন করতে পারে।

এই হালকা ডিভাইসগুলি ব্যবহারের সময় আমরা সাধারণত সামনে ঝুঁকে থাকি।

যারা মনোযোগ দিয়ে টেক্সট লেখার সময় মাথা সামনে ঝুঁকিয়ে রাখে  তাদের পিঠের বয়স শরীরের বয়সের চাইতে ৭ বছর বেড়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণ-তরুণীরা এখন কলেজে ঢোকার আগেই মোবাইল ফোন বা ওয়েব ব্রাউজিংয়ের পিছনে গড়ে ১০,০০০ ঘণ্টা সময় পার করে দিচ্ছে।

সার্জিকাল টেকনোলজি ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত সমীক্ষায় বলা হয়েছে, স্ক্রীনে লেখার সময় কোনো লোকের মেরুদণ্ডে ৫০ পাউন্ড পর্যন্ত অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে। এই চাপটা নির্ভর করে সেই ব্যক্তি কোন অ্যাঙ্গেল থেকে লিখছেন তার ওপর।

মেরুদণ্ডের চাপের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগুলির কোনো দোষ নেই। কিন্তু আমাদের শরীর এই সব প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুবিধা বিবেচনা করে তৈরি হয় নি।

এই সমীক্ষার লেখক স্পাইনাল এবং অর্থপেডিক সার্জেন ড. কেনেথ কে হান্সরাজ জানান, কার্ভিকাল স্পাইন স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে গেলে স্পাইনের উপর চাপ ক্রমাগত হারে বাড়তে থাকে।

হান্সরাজ আরো জানান, আমাদের মেরুদণ্ড সবচেয়ে কম চাপযুক্ত থাকে যখন আমাদের কান ও কাঁধ একই তলে এবং কাঁধ দুটো শিথিল অবস্থায় থাকে। এর বাইরের যেকোন অবস্থায় আমাদের মেরুদণ্ডে অতিরিক্ত চাপ পড়তে থাকে। এই অতিরিক্ত চাপের ফলে বয়সের আগেই মেরুদণ্ডের ক্ষয়, ক্ষরণ এমনকি অস্ত্রপচারের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।

টেক্সট নেক সিনড্রোম
একেই বলে টেক্সট নেক সিনড্রোম

হান্সরাজ তার সমীক্ষায় দেখিয়েছেন, প্রতি ডিগ্রী কোণের জন্য আমাদের মেরুদণ্ড আসলে কতটা চাপ নেয়। শূন্য ডিগ্রি কোণে আমাদের মেরুদণ্ড কেবল আমাদের মাথার ওজন বহন করে। সাধারণত তা ১৫ থেকে ২০ পাউন্ড। কিন্তু ১৫ ডিগ্রি কোণে সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ পাউন্ড; ৩০ ডিগ্রি কোণে ৪০ পাউন্ড, ৪৫ ডিগ্রী কোণে তা প্রায় ৪৯ পাউন্ড এবং ৬০ ডিগ্রি কোণে তা প্রায় ৬০ পাউন্ড চাপ দিতে থাকে আমাদের মেরুদণ্ডে।

এক পরিসংখ্যানে জানা যায় এইসব ডিভাইস আমরা দৈনিক দুই থেকে চার ঘণ্টা ব্যবহার করি। যার অর্থ দাঁড়ায়, বছরে ৭০০ থেকে ১৪০০ ঘণ্টা আমরা বিভিন্ন ভঙ্গিতে ঝুঁকে থাকি।

হাইস্কুলে পড়া কিশোর/কিশোরীদের ক্ষেত্রে এই সময়টা আরো বেশি, সেক্ষেত্রে হান্সরাজের হিসাব অনুযায়ী তারা হাইস্কুল পাশ করতে করতে ৫০০০ ঘণ্টার মত সময় এমন বাঁকাত্যাড়া অবস্থানে থাকে।

হান্সরাজ এই সমীক্ষার সিদ্ধান্ত হিসেবে টেকনলজির ব্যবহার নিরুৎসাহিত করেন নি। যেহেতু এসব আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তার পরামর্শ এইসব ডিভাইস ব্যবহারের সময় আমরা যেন খেয়াল করি কীভাবে আমরা এসব ব্যবহার করছি। তার মতে ডিভাইসগুলি ব্যবহারের সময় স্পাইনাল সোজা রাখা আর ঘণ্টার ঘণ্টা মেসেজ, টাচ স্ক্রিন টাইপিংয়ের পেছনে ব্যয় না করাই যথেষ্ট এক্ষেত্রে।

আমরা যদি এভাবে ঝুঁকে ঝুঁকে মেসেজিং, চ্যাটিং করি সেক্ষেত্রে কার্ভিকাল সার্জেনদের রোগীর সংখ্যা নিঃসন্দেহে বাড়বে। তিনি এক্ষেত্রে সার্জেনদের পাশাপাশি রোগীদেরও সচেতন হবার পরামর্শ দিয়েছেন।

টেক্সট নেক সিনড্রোম

মানুষের কোলের মধ্যে ফোন কিংবা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে বসে থাকার অভ্যাস দূর করতে বলেছেন তিনি, আবার সার্জেনদের অপারেশন পরবর্তী জটিলতা কমাতে রোগীদের এই অভ্যাসের ব্যাপারে তারা যাতে নজর দেন তাও বলেছেন। যাতে মেরুদণ্ডের চাকতিগুলি জোড়া লেগে লেগে কোমরকে বাঁকা না করে দেয়। এটাকে বলে কিপোসিস।

উল্লেখ্য, হান্সরাজের সমীক্ষাটাই ঝুঁকে থেকে স্ক্রীনে লেখার বায়োক্যামিকেল ফলাফলের ওপর প্রথম তথ্যভিত্তিক কাজ।

আমাদের বসার ভঙ্গি ঠিক করাটা একটা সচেতন অভ্যাসের ব্যাপার। তবে মাথা না ঝুঁকিয়ে ফোন কয়েক ইঞ্চি উপরে তুলে ব্যবহার করাটা তো বেশ সহজই। অনেকটা চাপ কমানোর জন্য এইটুকুই যথেষ্ট।