চায়নার বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইন্টারনেট কনফারেন্স উপলক্ষে ৭ নভেম্বর, ২০১৮ সালে প্রথম সংবাদ পাঠ করে বিশ্বের প্রথম এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) সংবাদপাঠক। তাদের রাষ্ট্র চালিত নিউজ এজেন্সি শিনহুয়া এবং সার্চ এনজিন সোগোউ সম্মিলিতভাবে ডেভেলপ করে এটি।

রিয়েল এক সংবাদপাঠকের আদলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সটির মুখাবয়ব ও কথা বলার ধরন তৈরি করা হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে চায়না নিজেদেরকে এআইয়ের ওয়ার্ল্ড লিডারের ভূমিকায় দেখতে চায়। তাদের নিজস্ব এ.আই. ইন্ডাস্ট্রিতে ২০১৮ সালেই প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৬৭%।

প্রথমে ইংলিশ ও চাইনিজ ভাষায় আলাদা ভাবে দুটি এআইয়ের প্রদর্শনী হয়। পরে ২০১৯ সালের মার্চে নারীর আদলে বানানো আরেকটা ভার্শনও ছাড়া হয়েছে। শিনহুয়া জানায়, এআই সংবাদপাঠক ব্যবহারে প্রডাকশন খরচ যেমন কমবে, তেমনি ব্রেকিং নিউজ সরবরাহের কোয়ালিটি এবং গতিও বাড়বে।

“আমি যে কেবল সারা বছর জুড়ে প্রতিদিন টানা ২৪ ঘণ্টা আপনাদের সাথে থাকতে পারব তা-ই নয়, আমার অসংখ্য কপি একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় উপস্থিত থেকে নিউজ নিয়ে আসতে পারবে আপনাদের জন্য।” নিজের দক্ষতা সম্পর্কে জানাতে কথাগুলি বলেছিল প্রথম আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সটি।

“বাস্তবের একজন নিউজ হোস্টকে সম্পূর্ণরূপে কপি করে আমাকে বানানো হয়েছে। আমি তার সমান দক্ষতার সাথেই ব্রডকাস্টিং করতে পারি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার কাছে টেক্সট আছে, ততক্ষণ একজন নিউজ হোস্ট হিসাবে কথা বলতে পারব আমি।”

যদিও স্থির অবস্থায় এদেরকে দেখতে পুরা মানুষের মতো লাগে, একবার কথা বলা শুরু করলে এদের ভঙ্গিগুলি একটু উদ্ভট মনে হয়। দর্শকদের কেউ কেউ এগুলিকে ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘অদ্ভুতুড়ে’ বলেছেন৷

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক মাইকেল উলরিজ প্রথম সংবাদপাঠকটির ব্যাপারে বিবিসি’কে বলেন, “কয়েক মিনিটের বেশি এটার দিকে তাকিয়ে থাকা বেশ কঠিন।”

“একদম ফ্ল্যাট লাগে দেখতে। একতালে কথা বলতে থাকে। কোনো গতি, ছন্দ বা জোর নাই।”

যদিও সময়ের সাথে সাথে টেকনোলজির উন্নয়নে এসব ইস্যু কমে আসতে পারে; সোনোউ কোম্পানির প্রধান মনে করেন, ভবিষ্যতে সংবাদ পাঠ ছাড়াও আরো অনেক ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তির ব্যবহার দেখা যাবে, “হতে পারে এটা আপনার বাবা-মা হিসাবে পুরা তাদের মতো করে গল্পও শোনাতে পারবে আপনাদের।”

২০১৯ সালের জুন মাসের মধ্যে সোগোউ কোম্পানির সাথে যৌথ প্রযোজনায় সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং রাশিয়ার মিডিয়াতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে সংবাদ পাঠ শুরু করা হয়।

তবে যেসব এআই সিমুলেশন একেবারেই মানুষের মতো, তাদের মুখভঙ্গি ও কথার ধরন খেয়াল করার সময় দর্শকদের সাইকোলজিতে একধরনের অস্বস্তিকর অনুভূতি কাজ করে। এ ঘটনাকে ‘আনক্যানি ভ্যালি’ বলা হয়। রোবোটিকস ও থ্রিডি কম্পিউটার অ্যানিমেশন এ সমস্যা থেকে এখনো বের হতে পারে নাই। আর্টিফিশিয়ালি ইন্টেলিজেন্ট সংবাদপাঠকরাও খুব দ্রুতই যে দর্শকদের এ ধরনের অনুভূতি দূর করতে পারবে তা মনে করছেন না বিশেষজ্ঞরা। কারণ শব্দের উচ্চারণ ও মুখভঙ্গির ক্ষেত্রে মানুষের নকল করা সম্ভব হলেও, কোনো একটি সংবাদের অর্থ অনুযায়ী মুখের এক্সপ্রেশনে পরিবর্তন আনা অনেক কঠিন।

ধরুন, একটা বাক্সের কথা বলা হচ্ছে। বাক্সের ভেতর বোমাও যেমন থাকতে পারে, তেমনি চকোলেটও থাকতে পারে। একজন মানুষ যখন আমাদের কাছে ঘটনা বর্ণনা করবেন, তখন একই শব্দের উচ্চারণও পরিস্থিতি অনুযায়ী একেক রকম হবে।

এআই সংবাদ পাঠকের প্রসেসরকে পরিস্থিতি বিচার করে বুঝে নিতে হয় যে একটা শব্দ ভালো নাকি খারাপ অর্থ বহন করছে। তারপর সেই কনফিগারেশন অনুযায়ী এইআইয়ের ইলেক্ট্রিক মটর সেটার মুখের এক্সপ্রেশনে পরিবর্তন আনবে।

কিন্তু এই প্রযুক্তি এখনো এত পরিণত অবস্থায় পৌঁছায় নাই যে ওদের এক্সপ্রেশনে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন চলে আসবে। তাছাড়া ওদের পক্ষে একটা ঘটনার প্রেক্ষিতে একেবারে সংবাদ পড়ার মুহূর্তে কোনো ব্যক্তিগত মতামত দেওয়াও এখনো সম্ভব না।

সূত্র. চায়না ডেইলি