অনেক দিন হয়ে গেছে, আলিস শার্তোঁ শেষবারের মত কোনো মানুষের মুখ ভাল করে দেখেছেন। তার চারপাশে অবশ্য মানুষের সংখ্যা কম নয়। স্বামী, বন্ধু, ডাক্তার, আশপাশের প্রতিবেশী সবাই আছে। কিন্তু তিনি যদি চোখের দেখা বিশ্বাস করতে চান, তবে তাকে ভাবতে হবে সামনে যে ছায়া নড়ছে সেটাই যেন একটা সত্যিকারের মানুষ। প্যারিসের উপকণ্ঠে থাকা ৮৭ বছরের এই অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষিকা পাঁচ বছর আগে প্রথম টের পান তার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হতে শুরু করেছে। ঠিক মাঝখানে, দৃষ্টিক্ষেত্রের কেন্দ্রে, একটি ছোট্ট বিন্দু ধীরে ধীরে ধোঁয়াটে হতে হতে এক সময় কাদামাটির মত ঘোলাটে আর ম্লান হয়ে আসছিল। খুব তাড়াতাড়ি সেই বিন্দু বড় হয়ে দাগ হয়ে গেল। আর দাগটা ধীরে ধীরে এক গাঢ় ছোপে পরিণত হল। শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থা হল যে তিনি আর মানুষের মুখ চিনতে পারতেন না। তিনি বইও পড়তে পারতেন না, এমনকি রাস্তার নতুন-নতুন জায়গায় চলাফেরা করাও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।


জেফ্রি ক্লুগার
টাইম, ১১ নভেম্বর ২০২৫


এই সমস্যার মূল কারণ ছিল “এজ-রিলেটেড ম্যাকুলার ডিজেনারেশন” বা এএমডি (AMD) নামের এক রোগ। সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০ কোটি মানুষের চোখে এই রোগ দেখা যায়। এই রোগে চোখের ভেতরের রেটিনা বা পর্দার কিছু কোষ নষ্ট হতে থাকে। বিশেষ করে যে অংশটিকে ম্যাকুলা বলা হয়। ম্যাকুলা আমাদের ঠিক সামনের জিনিসগুলি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় দৃষ্টির দায়িত্বে থাকে। এএমডি রোগীরা সাধারণত পুরোপুরি অন্ধ হয় না, কিন্তু তাদের দৃষ্টিশক্তি ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এএমডি পুরোপুরি সারিয়ে তোলার কোনো সুনিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত জানা নেই।

“আমি সব সময় বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি তাদের পড়াতে শেখাতাম,” বলেন শার্তোঁ। “তাই আমার জন্য সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল আমি নিজেই আর পড়তে পারছি না।”

কিন্তু তিন বছর আগে সবকিছু বদলে যেতে শুরু করল। টানা দুই বছর কমে যাওয়া দৃষ্টিশক্তির সঙ্গে যুদ্ধ করার পর শার্তোঁ তার হারানো দুনিয়ার সামান্য একটা অংশ হলেও ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। এখনও তিনি স্পষ্ট মুখ দেখতে পারেন না, একা হেঁটে রাস্তা পার হতে পারেন না। তবে তিনি পড়তে পারেন। খুব বেশি নয়; সকালে এক ঘণ্টা আর বিকেলে এক ঘণ্টা বই পড়েন তিনি। হারানো দৃষ্টিশক্তির এই ছোট্ট অংশ ফিরে পাওয়াও তার জন্য ছিল এক বড় ধরনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত। “এটা আমার মধ্যে আশা ফিরিয়ে দিয়েছে,” তিনি বলেন। “আক্ষরিক অর্থেই আমার জীবন বদলে গেছে।”

এই অসাধারণ পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে প্রায় ২০ বছরের গবেষণা, বর্তমানে যার নেতৃত্বে আছে সায়েন্স কর্প (Science Corp.)। এটি সান ফ্রান্সিসকোতে অবস্থিত মাত্র চার বছরের পুরোনো এক নিউরোসায়েন্স কোম্পানি, যার প্রধান বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ম্যাক্স হোদাক। কোম্পানিটি যে পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, তার নাম প্রিমা (Prima)। এখন পর্যন্ত কয়েক ডজন মানুষের ওপর এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে সার্জনরা রেটিনার যে অংশের কোষগুলি এএমডি নষ্ট করে দিয়েছে, সেখানে সরাসরি একটি ক্ষুদ্র কম্পিউটার চিপ বসিয়ে দেন। চিপটির আকার মাত্র ২ মিলিমিটার × ২ মিলিমিটার, আর তাতে থাকে ৪০০টি ছোট ষড়ভুজাকার ইলেকট্রোড।

শার্তোঁ’র মত রোগীরা এরপর মোটা, কালো প্লাস্টিকের একটি বিশেষ চশমা পরেন। এর ভেতরে বসানো থাকে ক্ষুদে ক্যামেরা। ক্যামেরাটি বাইরের দুনিয়াতে যা দেখে সেটা ইনফ্রারেড সিগন্যালের মাধ্যমে সরাসরি রেটিনার ভেতরের সেই চিপে পাঠিয়ে দেয়। এই সিস্টেমে ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করা হয়। এটি খালি চোখে দেখা যায় না। কারণ সাধারণ দৃশ্যমান আলোর বদলে ইনফ্রারেড ব্যবহার করলে, রোগীদের যে সামান্য পার্শ্বদৃষ্টি (peripheral vision) এখনও টিকে আছে, সেটার সঙ্গে এই নতুন সংকেতের কোনো সংঘর্ষ হয় না। চিপে পৌঁছানো এই সিগন্যাল এরপর অপটিক নার্ভ হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এতে রোগীদের “আংশিক স্বাভাবিক” দৃষ্টি ফিরে আসে।

এই জাদুকরী কাজটি যে চিপ করে, সেটিকে চোখে দেখলে তেমন কিছু মনে হয় না। সায়েন্স কর্প ল্যাবে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপে বড় করে দেখলে চিপটা দেখতে অনেকটা ক্ষুদ্র এক সার্কিট বোর্ডের মত লাগে। কিন্তু খালি চোখে দেখলে এটি ‘কিছুই না’ কেবল এক টুকরা ছোট্ট আঁশের মত। তবু সেই ‘কিছুই না’ টুকরা প্রায় অন্ধ মানুষের চোখে আবার আলো ফিরিয়ে আনে। হয়ত নিখুঁত নয়, কিন্তু তবুও সেটা দৃষ্টি। আর তাদের কাছে সেটাই বিশাল ব্যাপার।

“এক ধরনের চোখ পরীক্ষা করার চার্ট আছে, সুস্থ মানুষ ৪ মিটার দূর থেকে সে চার্টের অক্ষর পড়তে পারার কথা। কিন্তু এএমডি রোগীরা ১ মিটার দূর থেকেও চার্টের বড় বড় অক্ষরগুলি কেবল পার্শ্বদৃষ্টি দিয়ে খুব কষ্ট করে পড়তে পারে,” বলেন হোদাক। “‘প্রিমা’র ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, সেই একই রোগীরা এই চিপ বসানোর পর চার্টের পঞ্চম লাইন পর্যন্ত অক্ষর পড়তে পেরেছেন।”

নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে এই ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট ৩৮ জন রোগী অংশ নিয়েছিলেন, যার মধ্যে আলিস শার্তোঁও ছিলেন। সবারই চোখে প্রিমা ইমপ্লান্ট বসানো হয়েছিল। অপারেশনের পর দেখা গেছে, প্রায় ৮০% রোগীর ক্ষেত্রে চোখের চার্টে পড়তে পারা অক্ষরের সংখ্যা গড়ে ২০টি করে বেড়েছে। আর ৮৪% রোগী বাড়িতে বসে আবার অক্ষর, সংখ্যা আর শব্দ পড়তে পেরেছেন।

জার্নালে স্টাডি প্রকাশের সঙ্গে দেওয়া এক বিবৃতিতে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড্যানিয়েল পালাঙ্কার বলেন, “আমাদের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে এএমডি রোগীরা আবার পড়তে ও লিখতে পেরেছেন। শুধু অক্ষর ধরে ধরে নয়, পুরো শব্দ ধরে পড়তে পেরেছেন।” প্রিমা সিস্টেমের মূল ধারণাটি ২০০৪ সালে তিনিই প্রথম দেন। সম্প্রতি তিনি হোদাক ও সায়েন্স কর্প দলের সঙ্গে কাজ করছেন। এছাড়া প্রিমা প্রকল্পে আংশিক পরামর্শক হিসাবে যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, “আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ইমপ্লান্টে পিক্সেলগুলি হবে বর্তমানের চেয়ে পাঁচ গুণ ছোট, আর সংখ্যাও অনেক বেশি। এখন যেখানে ৪০০টা পিক্সেল আছে, সেখানে সেটা বেড়ে হবে প্রায় ১০,০০০। এতে দৃষ্টিশক্তি প্রায় ২০/৮০ মানের হওয়া সম্ভব, আর ক্যামেরার জুম ফাংশনের সাহায্য নিলে ২০/২০, মানে পুরো স্বাভাবিক দৃষ্টির কাছাকাছি হবার সম্ভাবনাও আছে।”

সায়েন্স কর্প শুধু এখানে থেমে নেই। কোম্পানির গবেষকেরা এখন এমন এক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে সরাসরি মস্তিষ্কে একটি চিপ বসানো হবে। এই চিপের সাহায্যে স্ট্রোক, দুর্ঘটনা বা এএলএস (ALS, amyotrophic lateral sclerosis) এর মত রোগে পঙ্গু হওয়া মানুষজন কেবল চিন্তার মাধ্যমে কম্পিউটার, স্মার্টফোন, হুইলচেয়ার, এমনকি ঘরের লাইট ও গৃহস্থালি যন্ত্রপাতি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যাদের রোগের কারণে কথা বলার ক্ষমতাই হারিয়ে গেছে, ভবিষ্যতে তাদের জন্য এই চিপ হয়ত এমন ব্যবস্থা করবে, যেখানে মনের ভাব সরাসরি স্ক্রিনে শব্দ, বাক্য আর অনুচ্ছেদ আকারে ভেসে উঠবে। এমনকি এই প্রযুক্তি দিয়ে সেই ভাবনাকে কম্পিউটারের কণ্ঠে উচ্চারণ করানোও সম্ভব হতে পারে। সেটাও আবার ঠিক ওই ব্যক্তির নিজের গলার স্বরে। যদি অসুস্থ হওয়ার আগে তার কথা বলার কোনো ভিডিও বা অডিও রেকর্ডিং পাওয়া যায়, তাহলে সেই স্বরকে এআই মডেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে কম্পিউটার সেই স্বর নকল করতে পারবে।

এই সিস্টেমে মস্তিষ্কে বসানো কম্পিউটার চিপ শুধু পরার জন্য পরা না, এটাও একটা অংশ হয়ে উঠবে। ম্যাক্স হোদাক একে বলেন বায়োহাইব্রিড মডেল (biohybrid model)। এই মডেলে চিপের ওপর স্টেম সেল বা মূল কোষ রাখা হবে। এগুলি ধীরে ধীরে বেড়ে মস্তিষ্কের টিস্যুর সঙ্গে মিশে যাবে এবং চিন্তা, কথা বলা, সৃজনশীলতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে এমন নিউরনের সঙ্গে নতুন সংযোগ তৈরি করবে।

“ভাবুন তো, ১ লাখ ইলেকট্রোড বিশিষ্ট একটা চিপ বানানো হল, আর যখন এটা মস্তিষ্কের ভেতরে বেড়ে উঠল, তখন সেখানে ১ বিলিয়ন (শত কোটি) সিন্যাপস পর্যন্ত তৈরি হতে পারে,” বলেন হোদাক। “এখন আপনি সহজেই মস্তিষ্কের ভেতরে তথ্য পাঠাতে পারেন, কিন্তু মস্তিষ্ক থেকে তথ্য বের করার বিষয়টি এখনও সীমিত আছে। ভাবুন যদি মস্তিষ্ক থেকে সরাসরি ছবি, শব্দ, কল্পনা, এমনকি স্মৃতি পর্যন্ত বের করে আনতে পারেন, তাহলে কেমন হবে?” তিনি বলেন, বায়োহাইব্রিড ইন্টারফেস কেমন কাজ করতে পারে, তার জন্য জেমস ক্যামেরনের অ্যাভাটার সিনেমা “একটা বেশ ভাল রেফারেন্স।” বাস্তবে প্যারালাইজড মানুষজন অবশ্য সিনেমার মত অন্য কোনো দেহে বাস করবে না। কিন্তু তারা অন্তত নিজের চারপাশের দুনিয়ার ওপর অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে পারে। যেন তারা আবার স্বাভাবিকভাবে উঠে দাঁড়িয়ে চলাফেরা করছে।

কম্পিউটার আর মস্তিষ্কের এই মিলন অর্থাৎ ঠাণ্ডা সিলিকন আর উষ্ণ কার্বনের এই “বিবাহ” ঘটানোর চেষ্টা কিন্তু শুধু সায়েন্স কর্প একা করছে না। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের হিসাব অনুযায়ী, সারা বিশ্বে এমন প্রায় ৬৮০টি কোম্পানি আছে, যারা কোনো না কোনোভাবে ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। ২০২২ সালে এই খাতের বাজারমূল্য ছিল প্রায় ১.৭৪ বিলিয়ন ডলার, আর ২০৩০ সালের মধ্যে সেটা বেড়ে ৬.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনকার বিসিআই অনেকটা সেই অবস্থায় আছে, ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে পার্সোনাল কম্পিউটার যে অবস্থায় ছিল। কিন্তু এর সামনে বিশাল সম্ভাবনা। কিছু কোম্পানি শুধু এএলএস বা পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাতেই নয়—ফায়ারফাইটার, সামরিক বাহিনী আর বিভিন্ন ফার্স্ট-রেসপন্ডারের (যারা দুর্ঘটনা, আগুন, বিপর্যয় ইত্যাদিতে প্রথম সাড়া দেন) জন্যও বিসিআই ব্যবহার নিয়ে ভাবছে, যাতে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় ও যোগাযোগ আরও দ্রুত হয়। বিসিআই ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষও—অন্তত যারা সরাসরি “মাইন্ড-টু-মাইন্ড” উপায়ে এআই সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইবে তারাও—ব্যবহার করতে পারবে।

“যাদের মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট থাকবে, তারা এআই এর সঙ্গে এমনভাবে যোগাযোগ করতে পারবে, যেটা ইমপ্লান্টবিহীন মানুষ কখনও পারবে না,” বলেন টেক্সাসের অস্টিনভিত্তিক বিসিআই কোম্পানি প্যারাড্রমিক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ম্যাট অ্যাঙ্গল। “একভাবে দেখলে এটা এক ধরনের সুপারপাওয়ারই বলা যায়।”

এই নতুন বিজ্ঞান শুধু প্রযুক্তির জগতে আলোড়ন তুলছে না, সংস্কৃতি আর সাধারণ মানুষের চিন্তায় একটা নতুন সূত্র যোগ করেছে। ২০২০ সালে কোভিড ভ্যাকসিন বাজারে আসার পরে গুজব ছড়িয়েছিল যে ভ্যাকসিনের ভেতর ক্ষুদ্র মাইক্রোচিপ আছে, যা শরীরে ঢুকিয়ে দিলে সরকার মানুষের চিন্তা পড়তে পারবে! আবার যখন খবর বের হল যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দূরপাল্লার ট্রাকচালকদের ক্লান্তি ধরতে ড্যাশবোর্ড ক্যামেরা আর অন্যান্য সেন্সর বসাচ্ছে, তখনও ইন্টারনেটে গল্প ঘুরতে শুরু করল যে এগুলি নাকি চালকদের মস্তিষ্কে থাকা ভাবনা পড়ে ফেলে। এটা কোনো কাকতালীয় বিষয় নয় যে অ্যাপল টিভির সিরিজ সেভের‍্যান্স (Severance)—যেখানে অফিসকর্মীরা মাইক্রোচিপযুক্ত ব্রেইন সার্জারির মাধ্যমে তাদের “অফিসের মস্তিষ্ক” আর “বাড়ির মস্তিষ্ক” আলাদা করে ফেলে—সেটা ২০২৫ সালের এমি অ্যাওয়ার্ডসে ২৭টা মনোনয়ন পেয়েছিল। বিসিআই নিয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়াও অনেকটা এমনই। একদিকে যেমন যৌক্তিক কৌতূহল আর মুগ্ধতা, অন্যদিকে তেমনি ভ্রান্ত ধারণা ও ভুল তথ্য।

“গত ২০ বছরে যখনই এই প্রযুক্তিতে নতুন কোনো অগ্রগতি হয়েছে, তখনই গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানীরা অদ্ভুত সব ফোন কল পেয়েছেন,” বলেন ইউটা-ভিত্তিক বিসিআই কোম্পানি ব্ল্যাকরক নিউরোটেক-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চিফ সায়েন্স অফিসার ফ্লোরিয়ান জোলৎসবাখার। “কলাররা বলেছে সরকার বা এমনকি তাদের স্ত্রীরা নাকি তাদের মাথায় গোপনে চিপ বসিয়ে দিয়েছে! এটা দেখায় যে, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনা চিন্তা করার প্রশিক্ষণ খুবই কম।” যাই হোক, ভাল হোক বা খারাপ, বিসিআই এখন বাস্তবতার অংশ। বিজ্ঞানীদের কাজ হল এই প্রযুক্তিকে কীভাবে দায়িত্বশীলভাবে ব্যবহার করা যায়, তা বের করা। আর সাধারণ মানুষের কাজ হল এটার অর্থ কী, নিজেদের জন্য এর কী বোঝা উচিত সেগুলি জানা।

বিসিআই কোম্পানিগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত নাম হল নিউরালিঙ্ক (Neuralink), মূলত এর প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের ব্যাপক উপস্থিতি আর বিপুল অর্থবলের কারণে। ক্যালিফোর্নিয়ার ফ্রিমন্ট’-এ অবস্থিত এই কোম্পানি ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন পর্যন্ত তারা মোট ১২ জন মানুষের মস্তিষ্কে নিজেদের ইমপ্লান্ট বসিয়েছে। তাদের লক্ষ্য এই মানুষগুলি যেন কেবল চিন্তা দিয়ে কম্পিউটার বা স্মার্টফোন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নিউরালিঙ্ক এখন প্রাইম নামে একটি ক্লিনিকাল প্রোগ্রাম চালাচ্ছে, যেখানে তারা ২২ বছর বা তার বেশি বয়সী রোগী খুঁজছে, যাদের কোয়াড্রিপ্লিজিয়া (শরীরের চারটি অঙ্গই প্যারালাইজড) আছে এবং যারা গবেষণার অংশ হিসাবে মস্তিষ্কে প্রায় ১,০২৪ ইলেকট্রোডযুক্ত একটি চিপ বসাতে রাজি হবেন। এই চিপের আকার প্রায় এক কোয়ার্টার কয়েনের সমান, আর পুরো স্টাডি চলবে প্রায় ছয় বছর ধরে।

ম্যাক্স হোদাক ছিলেন নিউরালিঙ্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা, সায়েন্স কর্প শুরু করার আগে পর্যন্ত তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নিউরালিঙ্ক প্রথমবারের মত তাদের চিপ মানুষের মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট করে। এই চিপ বসানো হয় নোল্যান্ড আরবাঘ নামের ২৯ বছর বয়সী এক রোগীর মস্তিষ্কে, যিনি অ্যারিজোনার ইউমা শহরের বাসিন্দা। এক ডাইভিং দুর্ঘটনায় তিনি কাঁধের নিচের পুরো অংশ নাড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছিলেন (কোয়াড্রিপ্লিজিয়া)। ইমপ্লান্টটি এখন তাকে শুধু চিন্তার সাহায্যে স্ক্রিনের কার্সর নাড়াতে দেয়। তিনি ভিডিও গেমস খেলতে পারেন, ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে পারেন, বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। ম্যাক্স হোদাক নিজেও এই যুগান্তরকারী কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ম্যাক্স হোদাক ছিলেন নিউরালিঙ্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা, সায়েন্স কর্প শুরু করার আগে পর্যন্ত তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

এছাড়াও আছে সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক একো টেকনোলজিস (Echo Technologies)। এর নেতৃত্বে আছেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকোর নিউরোসার্জন ড. এডওয়ার্ড চ্যাং। ২০২১ সালে চ্যাং ও তার সহকর্মীরা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে একটি গবেষণা প্রবন্ধ ছাপান। তারা এমন এক ধরনের নিউরোপ্রোস্থেসিস (neuroprosthesis) তৈরি করেছেন, যা ব্যবহার করে কথা বলতে অক্ষম প্যারালাইজড ব্যক্তি কেবল চিন্তার সাহায্যে কম্পিউটার স্ক্রিনে শব্দ লিখতে পারেন। এরপর ২০২৩ সালে, নেচার-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, তারা সিস্টেমটিকে আরও উন্নত করেছেন। এবার শুধু স্ক্রিনে টেক্সট দেখানোর পাশাপাশি কম্পিউটার তৈরি কণ্ঠস্বরেও সেই লেখার ভয়েস দেয়া যায়। এমনকি একটি ডিজিটাল মুখের অবতারও (facial avatar) থাকে, যা কথা বলার সময় মুখভঙ্গি, অনুভূতির প্রকাশ দেখাতে পারে, রোগীর নিজের অনুকরণে হয়। ২০২৪ সালে, একটি বৈজ্ঞানিক পত্রিকা নেচার বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, Echo (ইকো) নামক সংস্থাটি তাদের যন্ত্রাংশের উন্নতি করেছে। এই উন্নতির ফলে একজন দ্বিভাষিক রোগী, যিনি ইংরেজি ও স্প্যানিশ দুটো ভাষাই জানেন, তিনি এখন সহজেই দুটি ভাষার মধ্যে একটিকে বাছাই করতে পারেন।

ডাইভিং দুর্ঘটনার কারণে নোল্যান্ড আরবাঘ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছিলেন, কিন্তু মাস্কের নিউরালিঙ্ক ব্রেন ইমপ্ল্যান্ট তাকে তার চিন্তাভাবনা দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দেয়।

“আমাদের সিস্টেম পুরোপুরি ওয়্যারলেস,” বলেন চ্যাং। “স্ক্রিনে যে অবতারটি দেখা যায়, সেটিকে সাধারণত এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে সেটি কথা বলা ব্যক্তির মত দেখতে লাগে। তবে আসলে সেটা যেকোনো কিছুই হতে পারে, ব্যবহারকারী যদি চান, সেটা একটা ইমোজিও হতে পারে।”

তথ্য প্রক্রিয়ার জগতে এআই’এর উত্থানের এখানেও বড় ভূমিকা আছে। কারণ বিসিআই ভিত্তিক কথা বলার সিস্টেমগুলি আসলে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল (LLM) এর ওপর নির্ভর করে চলে। এ মডেলগুলি মানুষের ভাষা বোঝে, আর পরের শব্দ কী হতে পারে, তা অনুমান করে। যেমন, আপনি যদি কোনো ওয়ার্ড প্রসেসরে অরেঞ্জ টাইপ করেন, তাহলে সেটা আপনাকে জুস শব্দটা সাজেস্ট করে। বা ইউনাইটেড লিখলে স্টেটস সাজেস্ট করে, তেমন বিষয়।

“আমরা শুধু শব্দ আলাদা করছি না, বরং নির্দিষ্ট শব্দের সম্ভাবনাও হিসাব করছি,” বলেন চ্যাং। “আমরা বোঝার চেষ্টা করছি মস্তিষ্ক কীভাবে শব্দ প্রক্রিয়া করে, বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ কীভাবে ব্যঞ্জনধ্বনি আর স্বরধ্বনি তৈরি করে, আর সেখান থেকে কীভাবে পুরো শব্দ পরিকল্পনা করা হয়।”

এই সিস্টেম মস্তিষ্কের সেই জায়গাগুলিকেও শনাক্ত করতে পারে, যেগুলি ঠোঁট, চোয়াল, জিহ্বা আর স্বরযন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি যারা শারীরিকভাবে কথা বলতে পারেন না, তারা যখন “মনের ভেতরে” কথা বলার কথা ভাবেন, তখনও মস্তিষ্কের এই অংশগুলি নির্দিষ্টভাবে সক্রিয় হয় যেন তারা শব্দটি উচ্চারণ করতে যাচ্ছে। ধরা যাক, আপনি ‘বল’ শব্দটা উচ্চারণ করার কথা ভাবছেন। তখন মস্তিষ্ক এমন সিগন্যাল পাঠায় যাতে আপনি ‘ব’ উচ্চারণ করতে ঠোঁট দুটো চেপে ধরেন। আর ‘ল’ উচ্চারণ করতে জিহ্বাকে সামনের দাঁতের পেছনে নিয়ে যান। কম্পিউটার এই ধরনের বৈদ্যুতিক সিগন্যাল চিনে নিয়ে সেগুলিকে শব্দে রূপান্তরে সাহায্য করে।

অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্লান্ট করেছে এবং তারা দাবি করছে এতদিনে তারা রোগীদের হাজার হাজার “পেশেন্ট-ডে” লগ করেছে, যেখানে কোনো বড় ধরনের বিরূপ ঘটনা ঘটেনি। বিরূপ ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হচ্ছে ইমপ্লান্ট যেখান দিয়ে ঢোকানো হয়, সেই জায়গার মস্তিষ্ক টিস্যুতে ইনফেকশন হওয়া; ইমপ্লান্ট বিকল হয়ে মস্তিষ্কে ভুল সিগন্যাল পাঠানো, যা মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্তও করতে পারে; অথবা চিপের চারপাশে ফাইব্রাস টিস্যুর স্তর গড়ে ওঠা, যাকে বলা হয় এনক্যাপসুলেশন। এর ফলে মস্তিষ্কে চিপ ঠিকমত কাজ করা বন্ধ করে দেয়। ব্ল্যাকরকের মূল ফোকাস হল এই ঝুঁকিগুলি এড়িয়ে তাদের সিস্টেম ব্যবহার করে রোগীদের কম্পিউটার চালাতে দেওয়া এবং একোর মতই স্ক্রিন অ্যাভাটারের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ করে দেওয়া। জোলৎসবাখার একজন এএলএস রোগীর উদাহরণ দেন, যার রোগ এতটাই জটিল পর্যায়ে ছিল যে তিনি লকডইন সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন। অর্থাৎ তার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ সচেতন হলেও শরীরের কোনো অংশ নাড়াতে না পারায় বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তার যোগাযোগের কোনো উপায় নেই। ওই রোগীর মস্তিষ্কে চিপ বসানো হয় এবং তার জন্য একটি কম্পিউটার ভয়েস তৈরি করা হয়।

“চিপ বসানোর পর তিনি তার তিন বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছিলেন,” জোলৎসবাখার জানান। “ওর মেয়ের জীবনে এটাই ছিল প্রথমবার বাবার ‘কথা’ শোনা। বুঝতে পারছেন, এটা কত বিশেষ একটা মুহূর্ত ছিল।”

এমন একজন লকডইন রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য সম্মতি দেবেন কীভাবে এই প্রশ্নটাও সহজ নয়। জোলৎসবাখার জানান সাধারণত রোগের একেবারে শেষ অবস্থায় যাওয়ার আগেই রোগীরা সম্মতি দিয়ে রাখেন। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের লোকদের কাছে আগে থেকেই লেখা সম্মতিপত্র থাকে, যেখানে রোগী নিজেই জানিয়ে দেন ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এলে তিনি কী ধরনের চিকিৎসা বা সার্জারি নিতে ইচ্ছুক বা অনিচ্ছুক।

ব্ল্যাকরক বেশ কিছুদিন ধরেই এই কাজ করছে। ২০১৪ সালে তারা একটি ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালায়, যেখানে ইয়ান বুরখার্ট নামের একজন অংশ নেন। ইয়ানের বয়স যখন ১৯ বছর, সে সময় তিনি একবার নর্থ ক্যারোলিনার আউটার ব্যাঙ্কসে সাঁতার কাটতে গিয়ে ঢেউয়ের মধ্যে ঝাঁপ দেন। সেই ঢেউ তাকে ধাক্কা মেরে বালুচরে ফেলে দেয় এবং তার কনুইয়ের নিচ থেকে পুরো অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। ব্ল্যাকরকের ট্রায়ালে ইয়ানের মস্তিষ্কে চিপ ইমপ্লান্ট করা হয়। এরপর তার হাত, বাহু এবং শরীরের অন্যান্য অংশের ত্বকের ওপর ইলেকট্রোড লাগানো হয়। তিনি শুধু হাত-পা নাড়ানোর কথা ভাবতেন, আর সেই চিন্তার সিগন্যালেই ইলেকট্রোডগুলি সক্রিয় হয়ে হাত বা বাহু নড়াতে পারত, ঠিক যেভাবে তিনি মনে মনে “কমান্ড” দিতেন। ফলে তিনি জিনিসপত্র ধরতে, তুলতে, এমনকি গিটার হিরো গেম খেলতে সক্ষম হন। বুরখার্টের নিজের কাছে এই ফলাফল ছিল এক অসাধারণ বিজয়ের অনুভূতি। এটা যেন আগে ডাক্তারদের দিয়ে দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীর জবাব।

“অনেক বছর ধরে আমি ডাক্তাদের মুখে শুনেছি, ‘তুমি আর কোনোদিন শরীরের এই অংশ নড়াতে পারবে না, ওটা করতে পারবে না, এটা করা তোমার পক্ষে অসম্ভব,’” তিনি বলেন। “আর এখন আমি সেসব কিছু করতে পারছি।”

কখনও কখনও ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তির প্রয়োগে বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কে সরাসরি হাতই দিতে হয় না। কারণ যত “হালকা ক্ষতিকর” বলা হোক, ব্রেইন সার্জারি আসলে ব্রেইন সার্জারিই। নিউ ইয়র্কভিত্তিক কোম্পানি সিংক্রন ইনক (Synchron Inc.) কিন্তু এই সার্জারি পুরোপুরি এড়িয়ে যেতে পেরেছে। কীভাবে? তারা হাতে থাকা রেডিয়াল আর্টারি বা উরুতে থাকা ফিমোরাল আর্টারি দিয়ে একটি প্রোব ঢোকায়, যার সঙ্গে চিপ লাগানো থাকে। ধীরে ধীরে সেই প্রোবকে রক্তনালীর মাধ্যমে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপর চিপটিকে মস্তিষ্কের দুই মোটর কর্টেক্সের মাঝখানের মূল শিরায় বসানো হয়। সেখান থেকে সিংক্রন এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার কার্ট হ্যাগস্ট্রমের ভাষায়, “আপনি আসলে মস্তিষ্ককে নিজে স্পর্শ না করেই তাকে ‘শুনতে’ পারেন, ‘বুঝতে’ পারেন।”

প্রথম ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস সার্জারি করা হয় ১৯৯৮ সালে। ওই সময় স্নায়ুবিশেষজ্ঞ ফিলিপ কেনেডি একজন রোগীর মস্তিষ্কে চিপ বসান। রোগীটি ব্রেইনস্টেম স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে লকড ইন সিন্ড্রোমে ভুগছিলেন। মানে তার মস্তিষ্ক সচেতন, কিন্তু শরীর নড়াচড়া করার কোনো ক্ষমতা নেই। দীর্ঘ অনুশীলনের পর তিনি কেবল চিন্তার সাহায্যে স্ক্রিনের কার্সর সরাতে সক্ষম হন। এটা ছিল এক বিশাল সাফল্য, তবে খুবই কষ্টসাধ্য। এই সীমাবদ্ধ ফলাফলের একটি বড় কারণ ছিল ব্যবহার করা চিপ। সেই চিপটি ছিল চার চ্যানেলের, যা দিয়ে খুব অল্প পরিমাণ তথ্যই আদান প্রদান করা যেত।

“ওটা ছিল খুবই আদিম ধরনের একটা ডিভাইস,” বলেন নিউ ইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের রেসিডেন্ট নিউরোলজিস্ট এবং বিসিআই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জেমি ব্র্যানিগ্যান। “কিন্তু এটিই ছিল মানুষের মস্তিষ্কে বসানো প্রথম ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেসের উদাহরণ।”

এরপর থেকে আরও শক্তিশালী এক ধরনের চিপ, ইউটাহ অ্যারে, বিসিআই এর জন্য প্রায় ডিফল্ট ডিভাইস হয়ে উঠেছে। এই চিপের আকার ৪ মিলিমিটার × ৪ মিলিমিটার, আর এতে থাকে ১০০টি সূচের মত পাতলা প্রোব, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ মিলিমিটার। এগুলি মস্তিষ্কের টিস্যুর ভেতরে ঢুকে যায়। ২০০৪ সালে প্রথমবারের মত এই চিপ মানুষের মস্তিষ্কে ইমপ্লান্ট করা হয়। তারপর থেকে বেশিরভাগ বিসিআই গবেষণায় সেটাই “গো-টু” বা সবচেয়ে ব্যবহৃত চিপ হয়ে আছে।

“ইউটাহ অ্যারে এর নিরাপত্তা, নির্ভরযোগ্যতা আর দীর্ঘস্থায়িত্ব প্রমাণিত,” বলেন জোলৎসবাখার।

ব্ল্যাকরকের করা ৫০টিরও বেশি ইমপ্লান্ট সার্জারি থেকে অন্তত এইটুকু বোঝা যায় যে, তারা চিপ দিয়ে যেটা দাবি করছে তার পেছনে কিছু প্রমাণ আছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক কোম্পানি এতটা নিশ্চিত না। ধরুন ৪ মিমি × ৪ মিমি আকার হলেও ইউটাহ অ্যারে সায়েন্স কর্প এর প্রিমার মত চোখে বসানোর জন্য, কিংবা সিঙ্ক্রন এর মত শিরা দিয়ে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্য অনেক বেশি বড় আর এর হার্ডওয়্যারও এই কাজের জন্য দক্ষ নয়। ১০০টা প্রোব সংখ্যা হিসাবে কম না হলেও, তবু এতে ডেটা আদান প্রদানের একটা সীমা থাকে, বেশি তথ্য বহন করা এই কাঠামোয় সম্ভব নয়।

“ইউটাহ অ্যারে’র ব্যাপারটা হল, এটা আসলে নব্বই দশকের প্রযুক্তি,” বলেন ব্র্যানিগ্যান। “আপনি যদি আজকের স্মার্টফোনে নব্বই দশকের চিপ চালাতেন, খুব সহজেই বুঝতে পেতেন যে বড্ড পিছিয়ে আছেন।”

আরেকটি বিষয় হল, ১০০টি প্রোব বা তারযুক্ত এই চিপটি মস্তিষ্কে বসানো মানে মস্তিষ্কের উপরিভাগে ১০০টি ক্ষুদ্র গর্ত তৈরি করা। এটা এক ধরনের “নিয়ন্ত্রিত আঘাত”। প্যারাড্রমিক্স এর গবেষকেরা ইউটাহ অ্যারে’র চেয়ে আরও পাতলা তারওয়ালা চিপ তৈরি করেছেন, যা মস্তিষ্কের টিস্যুকে তুলনামূলক কম ক্ষতি করে। অবশ্য ক্ষতি পুরোপুরি শূন্য করতে পারে না।

“এই ধরনের প্রযুক্তিতে মস্তিষ্কে যথেষ্ট পরিমাণ আঘাত পাওয়ার আর কোষ নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে,” বলেন চ্যাং। “এই ক্ষেত্রটায় একটা টার্ম আছে—বুচার রেশিও। এর মানে হল, আপনি যতগুলি নিউরন থেকে তথ্য রেকর্ড করতে পারছেন, তার বিনিময়ে কতগুলি কোষ মারছেন। আপনি যত বেশি ইলেকট্রোড মস্তিষ্কে বসাবেন, সামগ্রিক আঘাতের পরিমাণ ততই বাড়বে। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি হল রোগীর মস্তিষ্কের আগে যেটুকু কার্যক্ষমতা ছিল, ইমপ্লান্টের কারণে সেটাই হারিয়ে যেতে পারে।”

চ্যাং এর কোম্পানি ইকো সমস্যাটি পাশ কাটাতে চেষ্টা করেছে। তারা প্রোবযুক্ত চিপের বদলে এক ধরনের পাতলা ফিল্ম ব্যবহার করে, যা মস্তিষ্কের ভেতরে ঢোকে না, শুধু ওপরে বিছিয়ে রাখা হয়। “এই ফিল্মটি নিরাপদভাবে মস্তিষ্কের পৃষ্ঠের ওপর শুয়ে থাকে এবং সেখান থেকেই সিগন্যাল মনিটর করে,” বলেন চ্যাং।

চিপ ডিজাইনে আসল বিপ্লব ঘটানোর ক্ষমতা যেটার আছে, সেটাই হল হোদাকের বায়োহাইব্রিড মডেল। তবে এই প্রযুক্তি এখনও মানুষের ওপর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত নয়। সায়েন্স কর্পের ল্যাবের এক অংশে রয়েছে বড় ট্রাকট্রেলারের আকারের এক পরিবর্তিত শিপিং কন্টেইনার, যার ভেতরে রাখা হয়েছে কয়েকটি সাইনোমোলগাস (cynomolgus) বাঁদরের ছোট্ট একটি কলোনি। প্রাণীগুলির সেখানে ওঠা–-নামা, লাফানো-ঝাঁপানো, কয়েকটি ডালের ওপর বসে থাকা এসবের জন্য কিছুটা জায়গা আছে। পুরোনো দিনের খুব ছোট, তারের বাক্সের মধ্যে সারাজীবন আটকে থাকার তুলনায় এটা অবশ্যই অনেক ভাল অবস্থা। তবু তাদের দেখে খুব একটা “খুশি” মনে হয় না।

“ওদের চোখের দিকে তাকাবেন না,” বলেন হোদাক। “ওরা এটাকে হুমকি হিসাবে ধরে নেয়।”

খুশি থাকুক বা না থাকুক, এই বাঁদরগুলি বিজ্ঞানের জন্য নিজেদের অবদান রেখে যাবে। গত গ্রীষ্মে প্রথম একটি বাঁদরের মস্তিষ্কে বায়োহাইব্রিড চিপ বসানো হয়েছে। এখন কোম্পানির গবেষকেরা পর্যবেক্ষণ করছেন স্টেম সেলগুলি মস্তিষ্কের টিস্যুর ভেতরে গজিয়ে উঠছে কিনা, আর এতে কী ধরনের সংযোগ তৈরি হচ্ছে।

হোদাক স্বীকার করেন যে বায়োহাইব্রিড মডেলের সঙ্গে ঝুঁকিও আছে। সবসময়ই আশঙ্কা থাকে স্টেম সেলগুলি যদি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়তে থাকে, তখন তারা মস্তিষ্কের নিজস্ব কোষগুলিকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ক্ষতি করতে পারে। এই ঝুঁকি ঠেকাতে সিস্টেমে রাখা হয়েছে এক ধরনের কিল সুইচ (kill switch)। এটি হচ্ছে গ্যানসিক্লোভির (ganciclovir) নামের একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, যা অন্য কাজে ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও অফ ল্যাবেল প্রয়োজনে নতুন কোষের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বাড়তে দেওয়া বন্ধ করতে পারে।

বিসিআই কোম্পানিগুলি যে হার্ডওয়্যার তৈরি করছে, সেগুলি দেখতে যতই চমৎকার হোক, এখনও অনেকটা “বেটা” পর্যায়ে আছে, বাজারে ছাড়ার মত উপযোগী হয়নি। প্রিমা সিস্টেম আলিস শার্তোঁ-কে আবার পত্রিকা পড়তে দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এর জন্য তাকে যে চশমা পরতে হয়, সেটির তারের সাথে যুক্ত থাকে প্রায় ২ পাউন্ড ওজনের একটি প্লাস্টিকের ইটের মত টুকরা। এই ইটের ভেতরেই থাকে প্রসেসিং কম্পিউটার আর ব্যাটারি। এটা সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করা কঠিন, বিশেষ করে এমন একজন মানুষের জন্য, যিনি নিজে একা পথে হাঁটতে পারেন না। তার উপর এই প্লাস্টিকের বাক্স বেশ গরমও হয়ে যায়। সায়েন্স কর্প এর সদর দপ্তরের ল্যাবের বেঞ্চে এখন গবেষকেরা প্রিমার দ্বিতীয় প্রজন্মের সংস্করণ নিয়ে কাজ করছেন। সেখানে এই ভারি “ইট” এর সব হার্ডওয়্যার এতটাই ছোট করা হবে যে তা চশমার কান ধরার অংশের ভেতরেই বসানো যাবে। কিন্তু প্রিমা টু পয়েন্ট জিরো এখনও বাজারে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত নয়। তাই আপাতত ব্যবহারকারীদের সেই ইটটাই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

বুরখার্ট পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েও তাকে হাত-পা নাড়াতে সাহায্য করেছিল যে ব্ল্যাকরকের ইমপ্লান্ট, সেই ইমপ্লান্ট বসানোর সাত বছর পর খুলে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তার সেই ইমপ্লান্টের সিস্টেমে কী ছিল? ইমপ্লান্ট থেকে একটি তার উঠে এসেছিল মাথার খুলির ওপর ছোট্ট একটি ছিদ্র পর্যন্ত; যখনই তিনি চিপ ব্যবহার করতেন, তখন ওই ছিদ্রের সঙ্গে একটি কেবল স্ক্রু করে লাগাতে হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মাথার চামড়া ওই পোর্টের ওপর দিয়ে বেড়ে ওঠার চেষ্টা করত। এতে বার বার ইনফেকশন হত। আর পুরো ব্যাপারটা এত বিরক্তি আর অস্বস্তি তৈরি করত যে শেষ পর্যন্ত তিনি পুরো সিস্টেমটাই বাদ দিতে বাধ্য হন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি আবারও এ ধরনের ডিভাইস বসাতে রাজি হতে পারেন, কিন্তু শর্ত একটাই: সেটাকে পুরোপুরি ওয়্যারলেস হতে হবে, আর মাথার গায়ে কোনো পোর্ট লাগবে না।

“আমি আবারও নতুন ডিভাইস পাওয়ার অপেক্ষায় আছি,” বলেন বুরখার্ট।

ভবিষ্যতে বুরখার্ট হয়ত লক্ষ লক্ষ মানুষের দলে যোগ দেবেন, যাদের মধ্যে শুধু রোগী নয়, সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষও থাকবে। এরা বিসিআই’কে নিজের স্বাভাবিক ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে নেওয়ার এক “ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার” বা শক্তিবর্ধক হিসাবে দেখবে। জোলৎসবাখারও কল্পনা করেন, যুদ্ধক্ষেত্রে, ফায়ারফাইটারদের মধ্যে এবং অন্যান্য ফার্স্ট রেসপন্ডাররা বিসিআই ব্যবহারের করবে। তখন তারা শুধু চিন্তা দিয়েই নিজেদের ব্যবহার করা যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

“আমাদের অনেক ধরনের কর্মক্ষমতাই আমরা আরও দ্রুত ও ভাল করতে পারি,” বলেন জোলৎসবাখার। অস্ত্র ছোড়া, কিংবা সাহায্য চাইতে সিগন্যাল পাঠানোর মত কাজ করতে সময় লাগে। “একটি সিগন্যালের পথ চিন্তা করুন। প্রথমে ইচ্ছা আর পরিকল্পনা, তারপর প্রিমোটর অংশ, তারপর মোটর এক্সিকিউশন, তারপর সেটা নেমে আসে স্পাইনাল কর্ডে, তারপর পেশিতে, তারপর আপনি হাতে জয়স্টিকের বোতাম চাপেন। এই পুরো প্রক্রিয়াতেই গুরুত্বপূর্ণ সময় হারাচ্ছেন। আপনি যদি ফায়ারফাইটার বা সৈনিক হন, এই কয়েক সেকেন্ডই হয়ত ঠিক করে দেবে, আপনি সুস্থভাবে বাড়ি ফিরবেন, নাকি ফিরবেন না।”

আর এই সব কথার বাইরেও আছে আরেকটি বিশাল দিক, তাদের জন্য যারা বিসিআই চিপ লাগিয়ে এআই সিস্টেমের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে। “ডিভাইসগুলি যত শক্তিশালী হবে,” বলেন ম্যাট অ্যাঙ্গল, “ততই সুস্থ মানুষেরা এই ক্ষমতা চাইবে এবং এগুলি পেতে সার্জারি করতে রাজি হবে। মানুষের স্বাভাবিক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেওয়ার যে টেকনোলজি, আর প্রতিবন্ধী মানুষের হারিয়ে যাওয়া ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার যে টেকনোলজি, এই দুটোকে আলাদা করে দেখা যাবে না; এগুলি একেই প্রযুক্তির দুই দিক।”

তাই এই মুহূর্তে এগুলি নিয়ে ধীরগতিতে কাজ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রে বেশিরভাগ বিসিআই গবেষণা এখন হচ্ছে FDA (Food and Drug Administration) এর ইনভেস্টিগেশনাল ডিভাইস এক্সেম্পশন (Investigational device exemption (IDE) অনুমতিক্রমে। এই অনুমতির মাধ্যমে ডেভেলপাররা কোনো ডিভাইস বাজারে ছাড়ার আগে প্রাণী ও মানুষের ওপর সীমিত পর্যায়ে পরীক্ষা করতে পারে। একটি ডিভাইসের জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পরিকল্পনা করা, ট্রায়াল চালানো, ফলাফল লিখে প্রকাশ করা, তারপর সেটি বাজারজাত করার অনুমতি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা, এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে পাঁচ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তারপরও বিসিআই কোম্পানিগুলির বেশিরভাগ মালিক অন্তত প্রকাশ্যে এফডিএ-র “ধীরে চলার” নীতির সঙ্গে একমত। কারণ এখানে একটু তাড়াহুড়া মানেই বিপদের ঝুঁকি অনেক বেশি।

“এগুলি ক্লাস থ্রি মেডিক্যাল ডিভাইস, মানে স্থায়ী ইমপ্লান্ট,” বলেন হ্যাগস্ট্রম। “এর মানে দীর্ঘ সময় ধরে ডিভাইসটি আপনার শরীরে থাকা অবস্থায় এটা যে নিরাপদ সেটা নিশ্চিত হতে হবে। এরপর এফডিএ সাধারণত আরও ১২ মাসের ফলোআপ স্টাডি চায়।”

শেষ পর্যন্ত আরেকটি অনিবার্য প্রশ্ন সামনে আসে, এত অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দাম কত হবে? কোম্পানিগুলি এখনও এই সদ্যোজাত পণ্যের মার্কেটিং নিয়ে খোলাখুলি কথা বলতে প্রস্তুত না হলেও, হোদাক একটা ধারণা দেন যে প্রিমা ইমপ্লান্টের মোট খরচ পড়তে পারে আনুমানিক ১ লাখ থেকে ২ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে।

“আমরা চাই এটা যতটা সম্ভব কম দামে ছাড়তে,” তিনি বলেন। “কিন্তু বাস্তবতা হল এই প্রযুক্তি তৈরি এবং বাজারজাত করতে কয়েক শ’ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেছে।”

বিসিআই এখন একটি চরম বাকবদলের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে। এটি বিজ্ঞানের এমন একটি নতুন শাখা যা ধীরে ধীরে পরিণত হতে শুরু করেছে। ল্যাবে আর বাস্তব ক্ষেত্রের পরীক্ষায় এখন যে প্রশ্নগুলি নিয়ে লড়াই চলছে, সেগুলি শুধু প্রযুক্তিগত বা চিকিৎসাবিষয়ক নয়। এর সঙ্গে জড়িত আছে আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্নও। গত ১৫০ বছরে মানবসভ্যতা অসংখ্য নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে, উড়োজাহাজ, মোটরগাড়ি, বৈদ্যুতিক আলো, রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন, সিনেমা এবং আরও অনেক কিছু। কিন্তু সবসময়ই আমাদের আর এসব যন্ত্রের মধ্যে একটি স্পষ্ট দেয়াল ছিল। মেশিনগুলি দাঁড়িয়ে থাকত “ওপারে”, আর আমরা “এপারে”। কম্পিউটার সেই দেয়াল ভাঙা শুরু করেছে। এখন কম্পিউটার আমাদের চোখ, হাত, কান, মন সবকিছুর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে গেছে। আর বিসিআই এর মাধ্যমে এই যন্ত্রগুলি এখন আমাদের শারীরিক দেহেরই অংশ হয়ে উঠতে শুরু করেছে। অন্তত কিছু কিছু ক্ষেত্রে, মেশিনগুলি যেন একটু বেশি “মানুষের মত” হয়ে উঠছে। আর মানুষও সংজ্ঞাগতভাবে একটু একটু করে “মেশিনের মত” হয়ে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তির সুফল স্পষ্ট ও বাস্তব। কিন্তু একে নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নগুলিও ঠিক ততটাই বাস্তব, ততটাই গভীর।

সংশোধনী, ১১ নভেম্বর:

এই প্রতিবেদনের প্রথম সংস্করণে প্রিমা প্রযুক্তি উন্নয়নে সায়েন্স কর্পোরেশনের ভূমিকা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রিমা পদ্ধতি পুরোপুরি সায়েন্স কর্পোরেশনের একক উদ্ভাবন নয়; এই প্রযুক্তির উন্নয়ন ২০০৪ সাল থেকেই চলছে এবং আরও গবেষক ও প্রতিষ্ঠান এর সাথে জড়িত।

অনুবাদ. আমিন আল রাজী