এই লেখায় আমি ৩০টি এক লাইনের গল্প শেয়ার করব। এই গল্পগুলি অভ্যাস পরিবর্তনের গল্প। কীভাবে নিজের বাজে অভ্যাস পরিবর্তন করে সুন্দর অভ্যাস তৈরি করতে পেরেছিল, তারই বাস্তব গল্প এগুলি । (যদিও ঠিক এক লাইনের গল্প না, তবে গল্পগুলি আসলেই অনেক ছোট।)

গল্পগুলির কোনোটিই আমার লেখা না। অ্যাটমিক হ্যাবিট (Atomic Habit) বইয়ের পাঠকেরা আমাকে এই গল্পগুলি পাঠায়। আশা করি বই থেকে পাওয়া পরামর্শগুলি যে মানুষের সত্যি কাজে লেগেছে এই গল্পগুলি থেকে আপনারা তা বুঝতে পারবেন।


জেমস ক্লিয়ার


কীভাবে তারা খারাপ অভ্যাস ছেড়ে ভালো অভ্যাস তৈরি করতে পেরেছিল, সেই টেকনিকগুলি এই গল্পে আছে। হয়ত এগুলি থেকে আইডিয়া নিয়ে আপনার মাথায়ও অভ্যাস বদলানোর কোনো নতুন টেকনিক চলে আসতে পারে।
বইতে যেমন বিভিন্ন টেকনিক দেয়া ছিল, গল্পগুলিকেও আমি সেই টেকনিক অনুসারে বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করেছি।

আত্মপরিচয়ের উপর ভিত্তি করে গড়া অভ্যাস

বইটার একটা প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কেউ একজন যাতে তার আইডেন্টিটি অর্থাৎ আত্মপরিচয়কে ফোকাসে রেখে অভ্যাস গড়তে পারে। নিজেকে আপনি ভবিষ্যতে কেমন মানুষ হিসেবে দেখতে চান এবং তার জন্য আপনার যা যা অভ্যাস তৈরি করা দরকার, সেই অনুযায়ী কাজ করা। আমরা প্রায়ই ফলাফলের আশায় অভ্যাস গড়ে তুলি। তার চেয়ে এই টেকনিক বেশি কাজে দেয়।

অভ্যাস বদলাতে সক্ষম হয়েছেন এমন মানুষদের ৩০টি এক লাইনের গল্প
অনেক সময় আপনার বাজে অভ্যাস একেবারে ছাড়ার চেয়ে সেটার বদলে নতুন আরেকটা অভ্যাস গড়ে তোলা বেশি কাজে দেয়।

রোলান্ড নামের একজন পাঠক কীভাবে তার খাদ্যাভ্যাস বদলাতে পেরেছিলেন সেটা নিয়ে বলেন:
“আমি জাংক ফুড খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে পেরেছিলাম আইডেন্টিটি টেকনিক ব্যবহার করে। এর আগে আমি অনেকবার চেষ্টা করেছি, কিন্ত এইবার আমি সফল হই। আমি একটা সচেতন সিদ্ধান্ত নেই যে নিজেকে এমন মানুষ হিসেবে তৈরি করব, যে সবসময় পুষ্টিকর খাবার খায়। আর যেখানে আমি চেষ্টা করতাম জাংক ফুড খাওয়া কমানোর। কিন্ত এখন আমার ফোকাস জাংক ফুড খাওয়া বাদ দেয়া না বরং এমন একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা যে পুষ্টিকর খাবার খায় এবং হেলদি লাইফস্টাইল মেনে চলে। এই মাইন্ডসেট পরিবর্তন করার পরে আমার আগের অভ্যাস ছাড়া অনেক সহজ হয়ে যায়।

রবার্ট নামের আরও একজন পাঠকও মাইন্ডসেটের পরিবর্তন করে ধূমপান ছাড়তে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “আগে সিগারেট ছাড়ার জন্য আমি ভাবতাম কোনো মতেই সিগারেট খাওয়া যাবে না। আর এখন আমি ভাবি, আমি কখনো সিগারেট খাই না। এই যে আমি সিগারেট খেতে পারি না আর আমি সিগারেট খাই না, এই দুইটার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। এখন আমার ব্রেইনকে বোঝাতে পারি যে আমি কোনো কিছু ছেড়ে দেই নাই। আমি সিগারেট খাওয়ার মজা ছেড়ে দেই নাই। বরং আমি আমার ভবিষ্যতের ভালো থাকা আর সুস্বাস্থ্যর জন্য কেবল একটা বিনিয়োগ করছি।

আত্মপরিচয় বিষয়ক টেকনিকগুলির সাথে অভ্যাস পরিবর্তনের অন্য টেকনিকগুলি মিলিয়েও প্র্যাকটিস করা যায়। যেমন একজন পাঠক নিজেকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ১০ ডলারের পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। “আমি নিজেকে বলি তুমি আর মদ খাবে না। তারপর যেদিন আমি মদ খাই না সে দিন আমি ১০ ডলার দিয়ে সুন্দর কিছু একটা কিনি হয়তো জামাকাপড় বা ঘরের কোনো দরকারি জিনিস। এখন আমি গত ৬ বছর ধরে মদ থেকে দূরে আছি, আর এখন আমার এই পুরস্কার সিস্টেমের প্রয়োজন হয় না।”

চেঞ্জিং দা কিউ

আপনার বদ অভ্যাসগুলি ধরতে পারার এবং বদলাতে পারার একটা উপায় হচ্ছে যে সব বিষয় আপনার ওই অভ্যাসকে ট্রিগার করে, সেগুলা সামলানো। এই টেকনিক অনেক পাঠকের জন্যে কাজ করেছে।

লিসা নামের একজন তার বই পড়ার অভ্যাস বাড়াতে পেরেছেন তার আশেপাশে বেশি বই রাখার মাধ্যমে। “আমি লাইব্রেরি থেকে ২০-৩০টা বই সব সময় নিয়ে রাখি। এতে আমি সব সময় হাতের কাছে পড়ার মতো বই পাই। সব সব আমার কাছে পড়ার জন্য নতুন বই থাকে।”

হিদার নামের আর একজন এইভাবে তার পানি খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে পেরেছিলেন। “নিজেকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য আর অনুপ্রেরণা পাওয়ার জন্য আমি রঙ আর স্থান কাজে লাগাই। আমি আমার প্রিয় রঙ উজ্জ্বল অ্যাকুয়া রঙের একটা বোতলে করে পানি খাই। সেটা আমার বিছানার পাশে রাখি যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমার পানি খাওয়া মিস না হয়।”

কেউ কেউ আছে যারা এর উল্টাটা করে। যেসব কাজ তাদের মধ্যে খারাপ অভ্যাসটা ট্রিগার করতে পারে, সেগুলি থেকে দূরে থাকে। ম্যাক্স নামের একজন পাঠক তার ই-সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে পেরেছিলেন কীভাবে তার মুখে শুনা যাক। “আমি ই-সিগারেট এবং কফি খাওয়া দুইটাই বাদ দিতে পেরেছিলাম। এই দুইটা একসাথে বাদ দেয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ সকালে আমি যখন কফি খেতাম, তখন আমার সিগারেট ধরানোর নেশা উঠত।”

এক অভ্যাসের সাথে আরেকটা জোড়া দেয়া

আমার বইয়ের আরেকটা জনপ্রিয় টেকনিক ছিল, “হ্যাবিট স্ট্যাকিং”। এই নামটা সর্বপ্রথম আসে স্ট্যানফোর্ডের প্রফেসর বি জে ফগ-এর কাছ থেকে। তিনি বলতেন, আমরা একটা নতুন অভ্যাসকে পুরাতন অভ্যাসের সাথে জোড়া লাগাই, অনেকটা নোঙরের মতন।

এক পাঠক নতুন ভাষা শেখার জন্য হ্যাবিট স্ট্যাকিংয়ের একটা সহজ নিয়ম অনুসরণ করেছিলেন। “আমরা যখন প্রথম চীনে যাই এবং ম্যান্ডারিন শেখা শুরু করি, আমি ট্যাক্সি ক্যাবে উঠলে ইচ্ছা করে ক্যাবের ড্রাইভারের সাথে কথা বলা শুরু করতাম। আর আমার প্রতিদিন অনেকগুলা ক্যাবে চড়া লাগত, প্রতিদিন অন্তত পাঁচটা ক্যাবে চড়তাম আর ওই পাঁচজনের সাথেই আমার আলাপ হত। এভাবে আমি দুই বছর চালিয়ে যাই। আর এখন আমি অনর্গল ম্যান্ডারিন বলতে পারি।”

অভ্যাস
ডেভিড নামের আর একজন পাঠক বলেন, আমি সকালে দাঁত ব্রাশ করার পর ২০ মিনিট মেডিটেশন করি।

ডেভিড নামের আর একজন পাঠক বলেন, “আমি সকালে দাঁত ব্রাশ করার পর ২০ মিনিট মেডিটেশন করি। পুরনো অভ্যাসের সাথে নতুন অভ্যাস জুড়ে দেয়াটা বেশ কাজে দিয়েছে আমার জন্য।”

এ ধরনের হ্যাবিট স্ট্যাকিংয়ের আরও উদাহরণ পাবেন অ্যাটমিক হ্যাবিট বইয়ের অধ্যায় ৫-এ।

পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পার্ট ১
আমি আগেও অভ্যাস গঠনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির গুরুত্বের কথা বলেছি। সোজা কথায় আমরা কোন পরিবেশে আছি তার ওপর আমাদের আচরণ পরিবর্তন হয়। আমার বইয়ে বলা আছে কীভাবে আপনি ভালো অভ্যাস তৈরির উপযোগী পরিবেশ গড়ে তুলবেন। অনেক পাঠক সেই মতো কাজ করে উপকার পেয়েছেন।

আপনার খারাপ অভ্যাস বাদ দেয়ার জন্য প্রথমে আপনার চারপাশে বাধা তৈরি করতে পারেন। সিড নামের একজন তার অতিরিক্ত স্ন্যাংকস খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন এভাবে কাজ করে। তিনি বলেন, “আমার হাজব্যান্ড এখনও প্রিংগলস (এক ধরনের চিপস) খেতে পছন্দ করেন, আমিও করি। তবে আমরা এখন প্রিংগলস কিনে গাড়ির ভেতরে লক করে রেখে দিই, বাসায় আনি না। আর এই টেকনিক ভালোমতো কাজ করে।”

সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্যেও অনেকে এই রকম কিছু করেন।

ক্রিস তার হ্যাবিট স্ট্যাকিং এবং পরিপার্শ্বের পরিবর্তন দুইটিই কাজে লাগিয়ে ঘুমের অভ্যাস বদলাতে পেরেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি ঘুম থেকে ওঠার সময় অ্যালার্মে বার বার স্নুজ বাটন দিতাম। এরপর আমি ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন বাথরুমে রেখে আসা শুরু করলাম। এখন আমি ঘুম থেকে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করার জন্য বাথরুমে যাই। তারপর আমি দাঁত ব্রাশ করে দিন শুরু করি।”

আমার অন্যতম পছন্দের একটা টেকনিক ছিল জে. মনি’র কাছ থেকে শোনা। তিনি পার্সোনাল ফিন্যান্স বিষয়ের একজন ব্লগার। তিনি বলেন, “রাত ৮ টায় আমার বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর পর আমি দাঁত ব্রাশ করার অভ্যাস করি। এতে আমার রাতে আর অতিরিক্ত কিছু খাওয়া বা অ্যালকোহল ড্রিংকস পান করার অভ্যাস চলে যায়। কারণ কিছু খেলে আমাকে আবার ব্রাশ করতে হবে, যেটা আমি চাই না।”

এই উদাহরণটা বোঝাচ্ছে আপনি যদি নিজে আপনার অভ্যাসের পথে বাধা তৈরি করেন, তবে আপনার পক্ষেও অভ্যাস ভাঙা সহজ হয়ে যায়।

পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পার্ট ২

আমরা স্থান বা জায়গা বললে বাস্তব জীবনের স্থানের কথা বোঝাই। তবে এখন ডিজিটাল জগতের স্থানের কথাও ভাবতে হবে। যেমন ম্যাথিউ নামের একজন বলেন, “আমি ইন্সটাগ্রামে অনর্থক পড়ে থাকতাম আর সময় নষ্ট করতাম। একটা উপায় ফলো করার পর আমার ইন্সটাগ্রাম ব্রাউজিং অনেক কমে গেছে, সেটা হল এখন আমি প্রতিবার ব্রাউজিং শেষে লগ আউট হই।”

ভিইট নামের আরেকজন পাঠক আরো এগিয়েছেন এই বিষয়ে। তিনি বলেন, “আমার আলসেমিকে আমি কাজে লাগাই ফেসবুকের অভ্যাস দূর করার জন্য। মোবাইল থেকে ফেসবুক অ্যাপ ডিলিট করার ফলে এখন ব্রাউজারে এক্সট্রা কয়েকটা ধাপ পার করে ফেসবুকে যেতে হয় যেটা আমার মতো অলসের জন্য খুবই সমস্যাজনক। তাই আমার আর ফেসবুক চালানো হয় না।’’

রাহুল নামের একজন ভিডিও গেমস-এর অভ্যাস বাদ দিয়েছেন এভাবে: “আমি আমার গ্র্যাফিকস কার্ড সরিয়ে ফেলি গেইমস এডিকশন বাদ দেয়ার জন্য। মোবাইল ব্রাউজিং কমানোর জন্য আমি অ্যাপ আনইন্সটল করি এবং ক্রোম ব্রাউজার সরিয়ে ফেলি।”

পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পার্ট ৩

আবার অন্যদিক ভালো অভ্যাস তৈরি করার জন্য আপনি আপনার চারপাশ থেকে বাধা কমিয়ে দিতে পারেন। নাটালি তার ময়লা কাপড় লন্ড্রিতে সময়মত নিয়ে যেতে পারত না। তাই সে দরজার কাছেই ময়লা কাপড়ের ঝুড়ি রেখে দেয় যাতে মেঝেতে কাপড় ছড়িয়ে না রেখে সে ঝুড়িতে রাখতে পারে।

ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ার জন্যেও এই টেকনিক কাজে লাগানো যায়।

জাস্টিন নামের একজন পাঠক আমাকে মেসেজে পাঠিয়েছেন: “আমি এমন একটা জিমে যাওয়া শুরু করি যেটা আমার বাসা থেকে এক মাইলেরও কম দূরে। তাই আমার সময় বেঁচে যায় আর অনেক দিক দিয়ে সুবিধা হয়। আগে আমি কখনো ব্যায়াম করা নিয়ে রেগুলার ছিলাম না। এখন আমি আগের চেয়ে ৮-১০ গুণ বেশি এক্সারসাইজ করি। ক্রস্ফিট, রানিং, সাইক্লিং করি। গত আড়াই বছর ধরে আমি খুব ফিট জীবন যাপন করছি।”

আরেকজন লিখেছেন, “আমি গত ২ বছর ধরে ভোর ৬টায় উঠে দৌড়াতে যাই। আমার দৌড়ানোর পোশাকগুলি (জারমিন, কম্প্রেশন স্লিভস, জুতা) এগুলি সব একত্র করে আগের রাতেই গুছিয়ে রাখি। সকালে উঠে এগুলি পরেই আমি বাসার বাইরে দৌড়াতে চলে যাই।”

এমনকি অনেকে আছে দৌড়ানোর পোশাক পড়ে ঘুমাতেও যায়। সকালে উঠে কোনোমতে দরজা খুলতে পারলেই হয়ে যাবে তাদের। এই টেকনিকগুলির আরো উদাহরণ দেখতে চাইলে অ্যাটমিক হ্যাবিট বইয়ের ৬ এবং ১২ নাম্বার অধ্যায় দেখতে পারেন।

এক অভ্যাস বাদ দিয়ে অন্য অভ্যাস গড়া

অনেক সময় আপনার বাজে অভ্যাস একেবারে ছাড়ার চেয়ে সেটার বদলে নতুন আরেকটা অভ্যাস গড়ে তোলা বেশি কাজে দেয়।

এই টেকনিকের সবচেয়ে ভাল দিক হচ্ছে আপনি কেবল একটা খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করছেন না, আপনি একই সাথে একটা নতুন ভাল অভ্যাসও তৈরি করছেন। একজন পাঠক বলেন, “আমি সিগারেট খাওয়ার জন্য ঘরের পেছনের দিকটায় যেতাম। তো আমি এখন সেখানে একটা ডাম্বেল রেখে দিয়েছি। ফলে যখনই আমার সিগারেট খেতে ইচ্ছে হচ্ছে তখন সেখানে গিয়ে বরং কয়েক রাউন্ড ডাম্বেল মারি। আর এতে আমার সিগারেটের তেষ্টা চলে যায়।”

আরেকটা আইডিয়া আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। একজন পাঠকের অভ্যাস ছিল দাঁত দিয়ে নখ কাটার। তিনি তখন হাতের কাছে সব সময় নেইলকাটার রাখতেন, এমনকি অফিসেও নিয়ে যেতেন। ফলে নখ কাটার ইচ্ছা হলে তিনি তখন নেইলকাটার ব্যবহার করতেন আর এভাবে তার অভ্যাস বদলে যায়।

অনেক পাঠক আছে যারা নতুন অভ্যাস সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে পরিবর্তন করতে পেরেছেন। আর এতে তারা একটা পুরনো বাজে অভ্যাসের জায়গায় একটা ভাল অভ্যাস রপ্ত করতে পারেন।

আরো পড়ুন: উদ্ভাবনী আইডিয়া তৈরি হয় কীভাবে

যেমন মার্ক নামের একজন বলেন, “আমার বিয়ার খাওয়ার অভ্যাস আমি অনেকাংশে কমাতে পেরেছিলাম ফ্লেভারড স্পার্কলিং পানি খাওয়ার অভ্যাস করে। আর আমার স্ত্রীকেও বলেছিলাম ফ্রিজে যেন কিছুদিনের জন্য বিয়ার না রাখে। আমি মূলত ড্রিংকস করতাম যখন স্ট্রেসে থাকতাম। বিশেষ করে কাজ থেকে বাসায় ফেরার পর। যখন আমার প্রতিদিনের অভ্যাস ছাড়তে পেরেছিলাম, তখন আবার অল্প করে খাওয়া শুরু করি।”

মার্ক নামের আরও একজন পাঠক তার ড্রিংকিং অভ্যাস দূর করেছিলেন একই পদ্ধতিতে । “প্রতিদিন বিয়ার খাওয়ার অভ্যাস দূর করতে আমি অনেকগুলি অন্য অপশন রেখে দিয়েছিলাম। প্রথমে ফলের রস, তারপর বরফ চা, তারপর সেল্টজার পানি। এভাবে আমি ৯ মাস করতে থাকি। তখন আমি সপ্তাহে একবারের বেশি খেতাম না। তারপর একবার আমি দুই সপ্তাহ বিয়ার না খেয়েছিলাম, তখন অবশেষে আমি ছাড়তে পারি। গত দুই বছর আমি আর বিয়ার ছুঁয়েও দেখি না।”

শন’ এর টেকনিকও অনেকটা এরকম। “সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমি একটা ছোট স্নিকার ক্যান্ডি বার পকেটে রাখি। যখনই সিগারেটের নেশা ওঠে, এটা খেয়ে ফেলি। এটা ভাল কাজে দিচ্ছে, গত একবছর ধরে সিগারেট খাওয়া লাগে না আমার।”

এমনকি বড় ধরনের চিন্তা বা পরিকল্পনাও এভাবে সম্ভব। সুরাজ যেমন বলেছিলেন: “আমি মাদক আর মদে আসক্ত ছিলাম। তারপর আমি ব্যায়াম করা শুরু করি যাতে নেশার টান থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারি। এখন আমার ইচ্ছা পাওয়ারলিফটিং টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার।”

এক অভ্যাসের জায়গায় আরেক অভ্যাস তৈরি করলে অনেক সময় আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হয়। কেউ আছেন মদ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে চান। কেউ ব্যায়ামের অভ্যাস গড়তে চান। এই দুইটা জিনিসই অতিরিক্ত করা শরীরের জন্য খারাপ। তবে কয়েক ঘণ্টা বসে মদ খাওয়ার চেয়ে ওই সময় জিমে গিয়ে ব্যায়াম করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

মাইন্ডসেট ট্রিক

আমি নিজের সাথে কিছু মেন্টাল ট্রিক ব্যবহার করি। এগুলির সাহায্যে আমি ভাল অভ্যাস রপ্ত করতে পারি।

সিলিয়ান নামের একজন পাঠক বলেছেন, “আমি সিগারেট ছাড়ার জন্য আমার চিট ডে গুলি ব্যবহার করি আর প্রতিবার একদিন করে চিট ডে পেছাতে থাকি।” যারা জানেন না–চিট ডে হল এমন দিন যে দিন আপনি অভ্যাসে একটা বিরতি দেন। ধরেন এক সপ্তাহ ডায়েট করার পর একদিন আপনি ফাস্ট ফুড খান। ওই দিনটাই হচ্ছে চিট ডে। সিলিয়ান আরও বলেন, “আমি নিজেকে বোঝাই যে আমি চিরকালের জন্য সিগারেট ছাড়িনি। বরং আমি কেবল নেক্সট চিট ডে পর্যন্ত সিগারেট থেকে দূরে থাকব। এমন চিন্তা আমাকে সিগারেটের নেশা কাটাতে সাহায্য করে।”

কেইন নামের এক পাঠক তার ফাস্টফুড খাওয়ার বদ অভ্যাস দূর করার জন্য একই ধরনের স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিলেন। “আমি প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডস আর সফট ড্রিংক্স খাওয়া বাদ দেই। আর নিজেকে বুঝ দেই যে মাত্র এক সপ্তাহ পরে আবার খাব। তারপর নিজেকে বলি, না এটাকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত নিয়ে যাব। তারপর এভাবে চলতে থাকে, মাসের পর মাস হয়ে যায়। এভাবে আমি গত ৪ বছর ম্যাকডোনাল্ডস থেকে দূরে ছিলাম আর ১৫ মাস আগে আমার শেষ সফট ড্রিংক্স খেয়েছি।”
আরেকজন ব্যক্তি পয়েন্টিং অ্যান্ড কলিং স্ট্র্যাটেজি নিয়েছিল যেটা আমি চ্যাপ্টার ৪-এ বলেছি। ওই ব্যক্তি বলেন, “যখন সিগারেট খেতে ইচ্ছে করত আমি তখন আমি একটা কথা বা মন্ত্র নিজেকে জোরে জোরে শোনাতাম (“আমার মাথা আমাকে বোকা বানাচ্ছে!”)। এভাবে আমি সিগারেট ছাড়তে পারি। এভাবে আমার চিন্তাকে অবচেতন মন থেকে যুক্তিবাদী মনে ট্রান্সফার করি আর আমার সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা চলে যায়।

আরো পড়ুন: নতুন অভ্যাস রপ্ত করতে চাইলে আগে এই ৫টি কাজ সারতে হবে

কিয়ানা নামের একজন একটি ছোট অংক আর ভিজুয়াল ট্রিক ব্যবহার করে তার সফট ড্রিংকস খাওয়ার বদঅভ্যাস দূর করতে পেরেছিলেন। তিনি বলেন, “আমি সোডা খাওয়া বন্ধ করার জন্য যেটা করতাম সেটা হল, সারা সপ্তাহ জুড়ে যত সোডা খেয়েছি সেগুলির বোতল একত্র করতাম। তারপর হিসাব করতাম এর মধ্যে কী পরিমাণ চিনি আছে। তারপর সেই পরিমাণ চিনি একটি বাটিতে নিয়ে নিজের চোখে দেখতাম গত এক সপ্তাহে কত চিনি আমি খেয়েছি সফট ড্রিংক্সের সাথে। এটা দেখার পর আমার পক্ষে সফট ড্রিংক্সের অভ্যাস ছাড়া সম্ভব হয়।”

অভ্যাস ট্র্যাক করা

সবশেষে আমার নিজের পছন্দের একটা কৌশল নিয়ে বলতে চাই। আর সেটা হচ্ছে হ্যাবিট ট্র্যাকিং। এখানে কয়েকটা উদাহরণ দেয়া হলো কীভাবে আমার পাঠকেরা তা ব্যবহার করেন…।

সিন্ডি নামের একজন পাঠক আমাকে একটি ইমেইল পাঠান। তিনি লেখেন, “আমি একটা বড় ওয়াল ক্যালেন্ডার কিনি এবং সেখানে আমার অভ্যাসের ট্র্যাক করে রাখি। এই টেকনিক বেশ ভাল কাজে দেয়। যে দিন আমি ভাল অভ্যাসের কিছু করতে পারি সেই দিন ক্যালেন্ডারে মার্ক করে রাখি। আমি চাই কোনো দিনে যাতে গ্যাপ না হয়। এখন আমার ক্যালেন্ডারে ৬ মাস ধরে টানা মার্ক করা আছে। এই ৬ মাসে আমার ভাল অভ্যাসগুলি আমি চালিয়ে গিয়েছি। এখন আমার ওজন ৩০ পাউন্ড কমেছে, আমি আগের চেয়ে অনেক ফিট, আগের চেয়ে বেশি এক্সারসাইজ করি, আমার বাগানের পরিচর্যা করি, বই পড়ি, আমার ছোট একটা ব্যবসা আছে সেটা চালাই এবং আবার ফ্রেঞ্চ ভাষা প্র্যাকটিস করি।”

আপনার অভ্যাস ট্র্যাক করার সরলতম উপায় হচ্ছে হ্যাবিট জার্নালে যে টেমপ্লেট দিয়েছি  [টেমপ্লেটের পিডিএফ কপি] সেটা কাজে লাগানো। যেটি পুরো প্রক্রিয়াটিকে সহজ করে তুলবে।

আমার প্রিয় পদ্ধতি হল আমার অভ্যাসের একটি খুব ছোট সংস্করণ বাছাই করা এবং সেটি ট্র্যাক করা। উদাহরণস্বরূপ, আমি গত মাস ধরে “১ পৃষ্ঠা পড়ার” অভ্যাসটি ট্র্যাক করছি।

আরো পড়ুন: ভুল করা বিষয়ে ৫টি শিক্ষা

গুন্টার নামের একজন পাঠকও একই কাজ করেন। তিনি বলেন, “আমি খুব সহজ একটা ব্যায়াম প্রতিদিন করার অভ্যাস তৈরি করেছি গত ৬ মাস ধরে। অভ্যাসটা যাতে আমি ধরে রাখতে পারি সেই জন্য আমার একটা কৌশল আছে। ধরেন কোনো দিন আমার হাতে সময় নেই অথবা ইচ্ছা নেই পুরো সেট ব্যায়াম করার। তখন আমি একটা দিন গ্যাপ দেয়ার চেয়ে, ব্যায়ামের শর্ট একটা ভার্সন আছে সেটা প্র্যাকটিস করি। আর ক্যালেন্ডারেও সেটা দাগ দিয়ে রাখি।”

অনুবাদ. আমিন আল রাজী