ডাবল টেক্সটিং (Double Texting) হল এমন একটা পরিস্থিতি, যেখানে আপনি কাউকে একটা টেক্সট মেসেজ পাঠানোর পর, সেই ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো উত্তর আসার আগেই দ্বিতীয় একটি মেসেজ পাঠিয়ে দেন। বা একটানা পাঠাতেই থাকেন!
সহজ কথায়, যখন আপনি কোনো রিপ্লাই বা উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষা না করে পর পর একাধিক মেসেজ পাঠান, সেটাই হল ডাবল টেক্সটিং।
ডাবল টেক্সটিং নিয়ে সানজানা গুপ্তের লেখার অনুবাদ এখানে দেওয়া হল।
সানজানা গুপ্ত
ভেরি ওয়েল মাইন্ড, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
ধরুন, আপনি কাউকে একটা টেক্সট পাঠিয়েছেন। কোনো উত্তর নেই। ঠিক আছে, চিন্তার কিছু নেই। টেক্সট করার মাত্র… তিন ঘণ্টা পাঁচ মিনিট হয়েছে। এখন আপনি বিরাট এক সমস্যায় পড়েছেন: আবার মেসেজ পাঠাবেন, নাকি ঠাণ্ডা মাথায় আরো কিছুটা সময় অপেক্ষা করবেন? ডাবল টেক্সট পাঠালে কি আপনাকে অতিরিক্ত আগ্রহী মনে হবে? নাকি মরিয়া মনে হবে?
আমরা সবাই এই অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত, আমরাও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি। তাই এখনই যদি আপনি কাউকে “হা হা! মনে হচ্ছে তুমি আমাকে আর পছন্দ করো না” এমন প্যানিক-টেক্সট করতে চান (অনুগ্রহ করে করবেন না), তাহলে আসুন ডাবল টেক্সটিংয়ের নিয়ম ও বিধিনিষেধগুলি পরিষ্কার করে জেনে নিই।
ডাবল টেক্সটিং কী, আসলে?
ডাবল টেক্সটিং হল যখন প্রথম টেক্সটের উত্তর পাওয়ার আগেই আমরা কাউকে দ্বিতীয় (বা কখনও কখনও তৃতীয়, চতুর্থ, এমনকি পঞ্চম) টেক্সট পাঠাই। এটা অনেকটা মুখে “এই… আছো?” বলার ডিজিটাল সংস্করণ। যখন কেউ আমাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় রাখে, তখনই আমরা এমন করি।
ডাবল টেক্সটিংয়ের উদাহরণ
ডাবল টেক্সটিংয়ের কিছু উদাহরণ দেখে নেওয়া যাক:
ঠাট্টার ছলে খোঁচা দেয়া: “শুধু একটু খোঁজ নিচ্ছি!”
সরাসরি প্রশ্ন: “আমার শেষ মেসেজটা পেয়েছিলে?”
পরিকল্পনা নিশ্চিত করা: “এই, আমাদের আজকের প্ল্যান ঠিকঠাক আছে কিনা তা নিশ্চিত হতে টেক্সট দিলাম!”
আগের ভাবনার সঙ্গে কিছু যোগ করা: “ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, আজ রাতে রেস্টুরেন্টে লাইভ ব্যান্ডও থাকবে।”
সময়-সংবেদনশীল ফলো-আপ: “এই, কনসার্টের টিকিট শেষ হওয়ার আগেই তুমি আমার মেসেজটা দেখেছো কিনা তা শুধু নিশ্চিত হতে চাচ্ছিলাম!”
নতুন কথোপকথন শুরু করা: “আজ আমার দিন খুব বাজে কেটেছে।”
উচ্ছ্বসিত হয়ে কিছু শেয়ার করা: “মাত্রই এমন একটা জিনিস দেখলাম, যা দেখে তোমার কথা মনে পড়ল!”
ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে ফলো-আপ: [একটি মিম পাঠিয়ে ডাবল টেক্সট করা]
প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ খোঁচা: “মনে হচ্ছে তুমি খুব ব্যস্ত।”
ঝগড়ার মেজাজে: “তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ কেন?”
অধৈর্য ও বিরক্তিতে: “???”
আবেগঘন প্রতিক্রিয়া: “তুমি মেসেজের উত্তর না দেওয়ায় আমি সত্যিই খুব কষ্ট পেয়েছি। কী হচ্ছে?”
অনবরত মেসেজ দিতে থাকা: “তুমি কোনো উত্তর দিচ্ছ না কেন? তুমি কি আমাকে অপছন্দ করো? আমি কি তোমার জন্যে যথেষ্ট না? তোমার সাথে আর কথা নাই। মজা করছিলাম, আসলে সেটা বলতে চাইনি।”
আমরা কেন এমন করি?
ডাবল টেক্সটিং এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে অনেক যৌক্তিক কারণ থাকলেও অনেক সময় শুধুমাত্র অ্যাংজাইটির কারণেও আমরা এমনটা করে থাকি। অযৌক্তিক কারণে বা অযথা ডাবল টেক্সটিং করাকে অনেকেই ভালভাবে দেখেন না।
ডাবল টেক্সটিং এর কারণগুলির মধ্যে থাকতে পারে:
জরুরি কোনো বিষয়ে ফলো-আপ করা: কখনও কখনও, বিভিন্ন প্রয়োজনে ফলো-আপ করা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত। যদি আমরা কোনো পরিকল্পনা করি, জরুরি তথ্যের জন্যে অপেক্ষা করি বা সময়-নির্ভর বিষয়ে কাজ করি, তাহলে ডাবল টেক্সট করাটা যৌক্তিক।
দেখেছে কিনা তা যাচাই করা: হয়ত তারা অন্য কিছুতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, তাদের ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেছে, অথবা মেসেজটা অসংখ্য নোটিফিকেশনের ভেতর হারিয়ে গেছে। কিছু সময় পরে “এই, আগের মেসেজটা দেখেছো কিনা যাচাই করছি” টাইপের একটি মেসেজ পাঠানো একেবারে যুক্তিসঙ্গত মনে হতে পারে।
কোনোকিছু স্পষ্ট করা: যদি মনে হয় আমাদের প্রথম মেসেজটি অস্পষ্ট হয়েছে বা ভুল কিছু বোঝানো হয়েছে, তাহলে আমরা বিষয়টি পরিষ্কার করতে দ্বিতীয় একটা টেক্সট পাঠাতে পারি।
ভুলে যাওয়া কোনো তথ্য যোগ করা: আমরা যদি কোনো টেক্সট পাঠানোর পর বুঝতে পারি যে গুরুত্বপূর্ণ কোনো একটা তথ্য বলা হয়নি, তখন সেটা যোগ করার জন্য আরেকটা মেসেজ পাঠানো যেতে পারে। “ও হ্যাঁ, একটা জ্যাকেট আনবে—ভীষণ ঠাণ্ডা পড়েছে!”
উদ্বিগ্ন অনুভব করা: কখনও কখনও মেসেজের রিপ্লাই না পেলে আমরা ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে পড়ি। এটা আমাদের সবার সাথেই কমবেশি হয়েছে। যখন উত্তর আসে না, তখন আমাদের মাথায় নানারকম চিন্তা ঘুরতে থাকে: আমি কি কিছু আজব বলেছি? সে কি রেগে গেছে? সে কি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছে? আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই, আমরা আমাদের মন শান্ত করতে এবং কিছুটা নিশ্চিত হতে দ্বিতীয় একটা মেসেজ টাইপ করা শুরু করি।
উচ্ছ্বাস বা আনন্দ ভাগ করে নেওয়া: কখনও কখনও ডাবল টেক্সট মানে আতঙ্ক নয়—বরং আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। আমরা কোনো ব্যাপারে এতটাই আনন্দিত থাকি যে, আগের মেসেজের উত্তর না আসলেও আর অপেক্ষা করতে পারি না, সঙ্গে সঙ্গে শেয়ার করে ফেলি।
কথোপকথন চালিয়ে যেতে চাওয়া: কখনও কখনও হয়ত কারও সাথে কথোপকথন শেষ হয়ে যাচ্ছিল, আর আমরা চাচ্ছিলাম না আলাপটা শেষ হোক। একটা ফলো-আপ টেক্সট (বিশেষ করে মজার বা হালকা ধাঁচের কিছু) পাঠিয়ে আমরা আলাপটাকে আবার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করা: যদি আমরা কারও সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে আছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগি—হোক সেটা ক্রাশ, বন্ধু, বা এমনকি কোনো কাজের সাথে সম্পর্কিত—তাহলে নিশ্চিত হতে বা স্বীকৃতি পেতে আমরা ডাবল টেক্সট করে থাকি।
কখন ডাবল টেক্সটিং করা উচিত?
কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে ডাবল টেক্সটিং একেবারে ঠিক আছে। এসব কিছু নির্ভর করে প্রেক্ষাপট, সময় এবং টোনের ওপর। কোন পরিস্থিতিতে ডাবল টেক্সটিং যৌক্তিক সেটা দেখে নেও য়া যাক:
ক্ষমা চাওয়ার ক্ষেত্রে: যদি বুঝতে পারেন আপনি ভুল সময়ে মেসেজ পাঠিয়েছেন বা কোনো অসংবেদনশীল বা রূঢ় কথা বলে ফেলেছেন, তখন একটি ফলো-আপ মেসেজ পাঠিয়ে ক্ষমা চাওয়া গ্রহণযোগ্য।
যখন বিষয়টি সময়-নির্ভর: যদি আপনি কারো সাথে কোনো পরিকল্পনা করেন, কারো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেন বা জরুরি কোনো বিষয় নিয়ে কাজ করেন, তাহলে ফলো-আপ করাটা যৌক্তিক।

যখন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যোগ করতে ভুলে যান: যদি আপনার প্রথম মেসেজে গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য বাদ পড়ে যায়, তাহলে আরেকটি মেসেজ পাঠানো একেবারে স্বাভাবিক।
যখন স্বাভাবিক কথোপকথন চালিয়ে যেতে চান: আপনি যাকে মেসেজ করছেন, সে যদি “হা হা” বা “লল” এর মত সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়, তাহলে কথোপকথন চালিয়ে যেতে আরেকটি মেসেজ পাঠাতে পারেন।
যদি আপনার সাথে ওই ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকে: বন্ধু, সঙ্গী বা পরিবারের সদস্যরা সাধারণত একটা সেকেন্ড মেসেজে মনোক্ষুণ্ণ বা বিরক্ত হন না—বিশেষ করে যদি সেটা মজার বা অর্থপূর্ণ হয়।
যদি অনেকটা সময় পার হয়ে যায়: যদি পুরা একদিন (বা তার বেশি) কেটে যায় এবং আপনি তখনও কোনো উত্তর না পান, তাহলে খোঁজ নেওয়া ঠিক আছে—বিশেষ করে যাদের সাথে নিয়মিত কথা হয়।
এই পরিস্থিতিতেও, অন্যের সময়ের প্রতি সম্মান দেখানো এবং অতিরিক্ত চাপ না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকা জরুরি। মূল বিষয় হল, বেশি বাড়াবাড়ি না করা—একবার ফলো-আপ করাই সাধারণত যথেষ্ট। যদি এরপরও তারা উত্তর না দেয়, তবে বিষয়টি নিয়ে আর কিছু না বলাই ভাল।
কখন ডাবল টেক্সটিং এড়িয়ে চলা উচিত?
সব সময় ডাবল টেক্সটিং ভাল ধারণা নয়—কখনও কখনও এটা জোর জবরদস্তি বা অতিরিক্ত আগ্রহ দেখানো বলে মনে হতে পারে। নিচের এই কয়েকটি পরিস্থিতিতে অপেক্ষা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ:
আপনি যখন জানেন তারা ব্যস্ত: সবাই সব সময় সাথে সাথে টেক্সটের উত্তর দিতে পারে না। আপনি যদি জানেন যে ওই ব্যক্তি কাজ করছে বা ব্যস্ত, তাহলে ডাবল টেক্সট করার ইচ্ছা দমন করুন।
শেষ টেক্সটের পর খুব অল্প সময় কেটেছে: যদি আপনার শেষ মেসেজ পাঠানোর পর মাত্র কয়েক মিনিট বা এক ঘণ্টার মত সময় কেটেছে, তাহলে একটু সময় দিন, তারপর ফলো-আপ করার কথা ভাবুন।
যখন কারো সাথে নতুন পরিচয় হয়: কাউকে নতুন করে চেনার প্রাথমিক পর্যায়ে ডাবল টেক্সট করা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে আপনাকে অতিরিক্ত উৎসাহী বা উদ্বিগ্ন মনে হতে পারে। অন্য ব্যক্তিকে উত্তর দেওয়ার জন্যে সময় দিন এবং এত বেশি মেসেজ পাঠাবেন না যাতে তারা বিরক্ত হয়ে যায়।
যখন তারা আগ্রহ দেখাচ্ছে না: যদি কেউ বার বার অনেক দেরিতে উত্তর দেয়, এক শব্দের উত্তর পাঠায়, বা শুধু মেসেজ পড়ে রেখে দেয়, তাহলে তারা হয়ত কথোপকথনে আগ্রহী নয়। আরেকটা মেসেজ পাঠালে সেটা বদলাবে না—বরং পরিস্থিতি আরও বিব্রতকর করে তুলবে।
আপনি যখন উদ্বিগ্ন অনুভব করছেন: যদি আপনি শুধু আশ্বস্ত হওয়ার জন্যে ডাবল টেক্সট করতে চান (কেন উত্তর দেয়নি? আমি কি কিছু ভুল বলেছি?), তাহলে একটু থেমে ভাবুন। খারাপ কিছু ধরে নিয়ে একগাদা মেসেজ পাঠানোর আগে সময় দিন।
যখন কোনো তর্ক বা সিরিয়াস কথা হচ্ছে: যদি কোনো টান টান উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে আপনি উত্তর আশা করেন, তাহলে ডাবল টেক্সটিং জোর জবরদস্তিমূলক বা আগ্রাসী বলে মনে হতে পারে। অন্য ব্যক্তিকে নিজস্ব সময়ে উত্তর দিতে দিন।
যখন তারা ইতোমধ্যেই আপনার মেসেজ দেখেছে: যদি আপনার মেসেজ কেউ সিন করে রাখে ও উত্তর না দেয়, তাহলে হয়ত তারা এখনই উত্তর দিতে চাইছে না। অথবা, যদি তারা কোনো কারণে আপনাকে এড়িয়ে চলে, তাহলে আরেকটি মেসেজ পাঠিয়ে কোনো লাভ হবে না।
যখন কথোপকথন শেষ হয়েছে: যদি আপনি ইতোমধ্যেই বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন বা কথোপকথন স্বাভাবিকভাবে শেষ হয়েছে, তাহলে সাথে সাথে আরেকটি মেসেজ পাঠানোর দরকার নেই। তখন বিষয়টি এমন দেখাতে পারে যে আপনি অপ্রয়োজনীয়ভাবে আলাপ চালিয়ে যেতে চাইছেন।
যখন আপনি ইতোমধ্যেই একাধিক উত্তরহীন মেসেজ পাঠিয়েছেন: একবার ফলো-আপ করা ঠিক আছে। দু’বার করলেও চলে। কিন্তু যখন আপনি তৃতীয় বা চতুর্থ মেসেজ পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাচ্ছেন না, তাহলে থেমে যাওয়ার সময় হয়েছে।
গভীর রাতে: গভীর রাতে কাউকে টেক্সট করা, বিশেষ করে তারা আগের মেসেজের উত্তর না দিলে, দৃষ্টিকটু বা মরিয়া মনে হতে পারে। যদি জরুরি কিছু না হয়, তাহলে পরের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
ডাবল টেক্সটিংয়ের নেতিবাচক পরিণতি
ডাবল টেক্সটিং সবসময় খারাপ নয়, তবে অতিরিক্ত ডাবল টেক্সটিং করা হলে তাতে ভালর চেয়ে বেশি খারাপই হতে পারে। এখানে ডাবল টেক্সটিং এর সম্ভাব্য কিছু নেতিবাচক পরিণতি উল্লেখ করা হল, যা মনে রাখা জরুরি:
মরিয়া মনে হওয়া: ডাবল টেক্সটিং করলে মানুষ আপনাকে নির্ভরশীল, অতি উৎসাহী এবং উদ্বিগ্ন মনে করতে পারে। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তার চারপাশে থাকা মানুষের জন্য আবেগ অনুভব করতে পারে, আর আপনি যদি অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে কাউকে বার বার টেক্সট করেন, তাহলে অপর পক্ষ তা টের পেতে পারে।
মানুষকে দূরে ঠেলে দেওয়া: যদি কেউ একটু সময় বা দূরত্ব চায়, বা কথা বলার মুডে না থাকে, তাহলে ডাবল টেক্সটিং তাকে ভুল ধারণা দিতে পারে, সে আপনাকে জেদি ও অবিবেচক ভাবতে পারে। আপনি যত বেশি চাপ দেবেন, অপর পক্ষ তত বেশি দূরে সরে যাবে, ভারাক্রান্ত অনুভব করবে এবং সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনাও তত কমবে।
অধৈর্য মনে হওয়া: কিছু মানুষ উত্তর দিতে একটু সময় নেয়—হোক তা ব্যস্ততার কারণে, ফোনের প্রতি আসক্তি না থাকার কারণে, কিংবা তারা কিছুটা সময় নিয়ে উত্তর দিতে চায়। যদি আপনি খুব তাড়াতাড়ি ডাবল টেক্সট করেন, তাহলে আপনাকে খুঁতখুঁতে বা জেদি মনে হতে পারে।
প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ মনে হওয়া: কিছু ধরনের ডাবল টেক্সট—যেমন “???” বা “মনে হয় তুমি ব্যস্ত”—প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ শোনাতে পারে, যদিও আপনার উদ্দেশ্য হয়ত তেমন ছিল না।
ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করা: ভাষাগত কারণে বা কথার টোনের কারণে, আপনার মেসেজের ভুল ব্যাখ্যা তৈরি হতে পারে। এতে অপ্রয়োজনীয় দ্বন্দ্ব বা কষ্টের সৃষ্টি হতে পারে।
নিজের মূল্য কমিয়ে ফেলা: যদি আপনি বার বার যোগাযোগ করতে থাকেন, তাহলে তা এমন ইঙ্গিত দিতে পারে যে আপনার জীবনে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু নাই, আর এতে অন্যের কাছে আপনার মূল্য কমে যেতে পারে।
অসমতা প্রকাশ করা: আপনি যদি ডাবল টেক্সট করেন, তাহলে সম্ভবত সম্পর্কের ভারসাম্যও আপনিই বেশি বহন করছেন। এটা একটা একতরফা সম্পর্কের দৃশ্যমান প্রকাশ।
শেষ পর্যন্ত ডাবল টেক্সটিং অনেক ঝামেলার ব্যাপার কারণ এতে আপনি কখনও জানতে পারবেন না অপর পক্ষ আরেকটি টেক্সট না পেলে কীভাবে রিঅ্যাক্ট করত।
যদি আপনি নিজেকে আটকে রাখেন এবং দ্বিতীয় মেসেজ পাঠানো এড়িয়ে যান, তাহলে দুটি সম্ভাবনা থাকবে: প্রথমত, সেই ব্যক্তি আর উত্তর দেবে না, যা স্পষ্ট করে দেবে তিনি আপনার সম্পর্কে কী অনুভব করেন, ফলে আপনিও তার পেছনে আর সময় বা শক্তি নষ্ট করবেন না। দ্বিতীয়ত, তিনি নিজের ইচ্ছায় উত্তর দেবেন, যা আপনাকে জানান দেবে তিনি আপনাকে নিয়ে আসলে কী অনুভব করেন।
কীভাবে ভদ্রভাবে ডাবল টেক্সট করবেন
যদি ভেবেচিন্তে করা হয়, তাহলে ডাবল টেক্সট একেবারে ঠিক আছে। এখানে ডাবল টেক্সট করার কিছু উপায় বলা হল, যাতে আপনাকে জেদি, অধৈর্য বা মরিয়া মনে হবে না:
কিছু সময় দিন: দ্বিতীয় মেসেজ পাঠানোর আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, আপনি কি তাদের উত্তর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিয়েছেন? মানুষ ব্যস্ত থাকে, অন্যদিকে বেশি মনোযোগ দেয়, বা সাথে সাথে উত্তর দেওয়ার মানসিক শক্তি পায় না। জরুরি না হলে কয়েক ঘণ্টা বা একদিন অপেক্ষা করা ধৈর্যের পরিচয় দেয়।
হালকা ও বন্ধুত্বপূর্ণ রাখুন: আপনার ফলো-আপ মেসেজ হালকা টোনের হওয়া উচিত, যেন মনে না হয় আপনি চাপ দিচ্ছেন। শান্ত এবং স্বাভাবিক টোনে পাঠানো মেসেজ বেশি আকর্ষণীয় হয় এবং বাধ্যবাধকতামূলক মনে হয় না। যেমন, “মনে হচ্ছে তুমি খুব ব্যস্ত” বলার বদলে “এই! ভাবলাম দেখি আমার আগের মেসেজটা দেখেছো কিনা। কোনো তাড়া নেই!” বলুন।
সংক্ষিপ্ত রাখুন: সরাসরি মূল কথায় চলে যান। লম্বা ব্যাখ্যা বা এলোমেলো কথা এড়িয়ে চলুন। অবশ্যই একের পর এক কিংবা একাধিক ফলো-আপ টেক্সট পাঠাবেন না।
জরুরি কিছু থাকলে সেটা উল্লেখ করুন: যদি কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, তাহলে সেটা জানান। এতে আপনার ডাবল টেক্সট মরিয়া না হয়ে যুক্তিসঙ্গত ও প্রয়োজনীয় বলে মনে হবে। যেমন বলতে পারেন, “এই! আজ রাতের ডিনার প্ল্যানটা কনফার্ম করছি—আমাকে তাড়াতাড়ি জানাও, যাতে আমি রিজার্ভেশন করতে পারি।”
পরিস্থিতি বুঝে নিন: প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে ভাল বন্ধুকে ডাবল টেক্সট করা? একেবারে স্বাভাবিক। যার সঙ্গে মাত্র কথা বলা শুরু করেছেন? হয়ত একটু অপেক্ষা করা উচিত। যদি দেখেন ওই ব্যক্তি সাধারণত উত্তর দিতে অনেক সময় নেয়, সেটাও আপনার প্রত্যাশা সামঞ্জস্য করার সংকেত।
নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কেমন অনুভব করতেন: মেসেজ পাঠানোর আগে ভাবুন, যদি আপনার জায়গায় অন্যজন থাকত, তাহলে এই মেসেজ পেয়ে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত, নাকি মানসিক চাপে পড়ত? যদি মেসেজটা একটু বেশি কর্কশ মনে হয়, তাহলে সম্ভবত তা পাঠানো ঠিক হবে না।
কখন থামতে হবে তা জানুন: যদি একবার ফলো-আপ করার পরও কোনো উত্তর না আসে, তাহলে থেমে যাওয়াই ভাল। কোনো উত্তর না পাওয়াও একধরনের উত্তর।
ডাবল টেক্সট পাঠানোর আগে অপর পক্ষের ব্যস্ততার কথা মাথায় রাখা ও সম্মানজনক ভাষা ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডাবল টেক্সটিংয়ের বিকল্প উপায়
আপনি যদি ডাবল টেক্সট পাঠাতে ইচ্ছুক হন কিন্তু অধৈর্য্য বা অতি উৎসাহী মনোভাবে না দেখাতে চান, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অনেক বিকল্প আছে। এখানে কিছু বিকল্প বিবেচনার জন্য দেয়া হল:
নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন: কখনও কখনও সবচেয়ে ভাল কাজ হল… কিছুই না করা। যদি উত্তর না পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হন, তাহলে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে ফেলুন—কোনো শো দেখুন, হাঁটতে যান, বা অন্য কাউকে টেক্সট করুন। মানুষ ব্যস্ত থাকে, আর বেশিরভাগ সময়, তারা সুযোগ পেলে উত্তর দেয়।
একটি মিম বা ইনসাইড জোক পাঠান: যদি আপনার প্রথম মেসেজ জরুরি না হয় কিন্তু আপনি কথোপকথন এগিয়ে নিতে চান, তাহলে কিছু মজার জিনিস পাঠান—যেমন একটি মিম, GIF বা আগে বলা কোনো মজার কথা মনে করিয়ে দিন। এতে কথাবার্তা হালকা থাকে এবং অন্য পক্ষের মনে হয় না যে আপনাকে কোনো উত্তর দিতেই হবে।
নতুন আলাপ শুরু করুন: যদি আপনার শেষ মেসেজের উত্তর না আসে, তাহলে হয়ত সেটা সঠিক বিষয় ছিল না। একই বিষয়ে আবার টেক্সট করার বদলে নতুন কোনো কিছু নিয়ে কথা শুরু করুন, যা হয়ত তাদের বেশি আকর্ষণ করবে। চেষ্টা করুন মজার, আকর্ষণীয় বা তাদের আগ্রহের সাথে মিল আছে এমন কিছু নিয়ে আসতে।
গুরুত্বপূর্ণ হলে কল করুন: যদি বিষয়টি আসলেই জরুরি হয়, তাহলে একবার ফোন করে নেওয়া বহু উত্তরহীন টেক্সটের অস্বস্তি থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে। একটা কল, বা এমনকি একটা ভয়েস নোট পাঠিয়ে পরিষ্কার করে বোঝানো যায় যে বিষয়টা নেহাতই আড্ডার নয়।
মূল বক্তব্য
ডাবল টেক্সটিং খারাপ কিছু না—সবকিছু নির্ভর করে আমরা কীভাবে এবং কেন তা করি তার ওপর। যদি সেটা কোনো সাধারণ ফলো-আপ, মজার মেসেজ বা দরকারি রিমাইন্ডার হয়, তাহলে একেবারে ঠিক আছে। কিন্তু যদি সেটা অতিরিক্ত চাপ, অধৈর্য্য, বা উদ্বেগের অনুভূতি থেকে আসে, তাহলে তা ভাল ফল নাও দিতে পারে।
আরো পড়ুন: মানুষের জীবনে বন্ধুহীনতা — এক নীরব মহামারী
মূল ব্যাপার হল পরিস্থিতি বোঝা, অপর পক্ষকে একটু সময় দেওয়া, এবং কথাবার্তা বেছে বলা। যদি আপনার ডাবল টেক্সট উচ্ছ্বাস বা বাস্তবিক প্রয়োজনে হয়, তাহলে নিশ্চিন্তে টেক্সট করুন! কিন্তু যদি সেটা অনিরাপত্তা বা স্বীকৃতি চাওয়ার তাড়না থেকে আসে, তাহলে হয়ত একটু পিছিয়ে যাওয়া ভাল।
যদি কেউ আপনার প্রথম মেসেজের উত্তর দিতে চায়, তাহলে দেবে। আর যদি না দেয়, তাহলেও আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।
অনুবাদ: সাম্প্রতিক ডেস্ক

