শক্তি এবং পুষ্টির জন্য শরীরের প্রতিনিয়ত কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা দরকার। এটাকে ভাগ করা যায় দুইটা শ্রেণীতে, হোল কার্বস আর রিফাইন্ড (পরিশোধিত) কার্বস। হোল কার্বসকে বিবেচনা করা হয় ভালো ফ্যাট বা চর্বি হিসেবে, আর রিফাইন্ডগুলিকে খারাপ ফ্যাট হিসেবে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো আমাদের প্রতিদিনকার পুষ্টির অর্ধেকটা নেওয়া উচিত কার্বস থেকে, কিন্তু আবার এটাও বলা হয় এই কার্বসই ওবিসিটির (অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাওয়া) কারণ।

কী কী প্রকারের কার্বস হয়?
ভালো কার্বস ধীর গতির, যা রক্তে মিশতে বেশি সময় নেয়। খারাপ কার্বসকে খারাপ ফ্যাটও বলা হয় কারণ তা অতি দ্রুত রক্তে মিশে গিয়ে ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। যদিও এটা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির খাবারে কার্বস দরকার কিনা তার ওপর। বুঝে শুনে ভারসাম্য রেখে কার্বস খাওয়ায় কোনো ক্ষতি নেই।

হোল কার্বসই ভালো কার্বস
হোল কার্বসের মধ্যে পড়ে শাকসবজি, ফল, কলাই, আলু, শস্য জাতীয় খাবার এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। এই কার্বগুলি সব দিক থেকেই ভালো, কেননা তা রক্তের ব্লাড সুগারে ভারসাম্য ধরে রাখে। শরীর ঠিক রাখতে এবং অনেক ধরনের রোগ এড়াতে প্রতিদিন ভালো কার্বস খাওয়া উচিত। তাজা শাক সবজি এবং ফল যেমন পাতা কপি, আলু, পালং শাক, গাজর, আপেল, কলা, ডাল, মটর, আখরোট, চিনাবাদাম, ওটস, ব্রাউন রাইস, মিষ্টি আলু এবং চিয়া সিডস খাওয়া স্বাস্থ্যকর।

খারাপ কার্বস হলো রিফাইন্ড কার্বস
রিফাইন্ড বা পরিশোধিত কার্বগুলি সব তৈরি করা এবং চিনি জাতীয় খাবার যেমন ধরুন পানীয়, পেস্ট্রি, সাদা পাস্তা, সাদা ভাত, ক্যান্ডি এই জাতীয় খাবারগুলি। এসব দ্রুত ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেয়। আর এই খাবারগুলিতে থাকা বাড়তি চিনি শরীরের জন্য ভালো তো নয়ই, বরং পরবর্তীতে কোনো রোগের কারণও হতে পারে। স্বাস্থ্যকর ডায়েট প্ল্যানের জন্য রিফাইন্ড কার্বস খেতে কখনোই পরামর্শ দেওয়া হয় না, তা রক্তে সুগার লেভেল বাড়িয়ে দিলে পরে ডায়াবেটিস হতে পারে।

তো সঠিক খাবার কীভাবে বাছাই করবেন?
সঠিক চয়েস বলতে বোঝাবে যেসব খাবারে প্রচুর ফাইবার আছে, চিনি এবং স্টার্চের পরিমাণ অতি অল্প। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো খাবার থেকে শক্তি নেওয়া, কিন্তু ফাইবার থেকে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায় না। এগুলি প্রথমে ভালো ব্যাকটেরিয়ায় দ্রবীভূত হয় তারপর ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করে।

লো কার্ব ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য জীবনরক্ষাকারী কেননা তাদের ব্লাগ সুগার সবসময়ই অনেক বেশি থাকে। যখনই কেউ ওজন কমাতে চায়, তাকে বলা হয় কার্বসের পরিমাণ কমাতে। তবে আবার এটাও দাবি করা যায় না যে কার্বোহাইড্রেট খাওয়ার কারণেই ওবিসিটি হয়।

ফলে ফাইবারসমৃদ্ধ রুটি খাওয়াই ভালো, রেগুলার সাদা রুটির থেকে। প্রতিদিন সকালের পুষ্টিচাহিদা পূরণ করতে নরমাল সাদা রুটি যথেষ্ট না।

রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট খাওয়ায় যা ক্ষতি হতে পারে আপনার
রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটে স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে, এটা আপনার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকর। ফলে, বিষয়টা এভাবে বলতে হবে যে যখন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন কেবল তখনই খাবেন।

এখনকার দিনে এসে নিজেকে সংযত রাখতে পারা আপনাকে অনেক প্রকারের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে বাঁচাবে, কারণ আমাদের লাইফস্টাইল এমন যে স্বাস্থ্যকর খাওয়ার রুটিন মেনে চলা কঠিন। এই অস্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইলে আছে এমন সব খাবার যা আমাদের হার্ট, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিসের জন্য খারাপ।

আমাদের পছন্দের চকলেট, আইসক্রিম, ক্যান্ডি, ফাস্ট ফুড এবং অন্যান্য সব ধরনের বাজে খাবার স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্রত্যেকের উচিত খাবারের পুষ্টি সম্পর্কে জানা এবং নিজেকে অপুষ্টি থেকে রক্ষা করা।

সূত্র. টপ হেলথ জার্নাল