অল্প ব্যায়াম যদি ভালো হয়, তাহলে ক্যালরি খরচ ও ওজন কমানোর জন্য বেশি ব্যায়াম করা নিশ্চয়ই ভাল, তাই না?
আমরা বেশিরভাগই তাই ভাবি।
কিন্তু একটা গবেষণা দল বলছে এটা যে সত্য নাও হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রচুর ব্যায়াম করে, একটি নির্দিষ্ট সীমার পরে তাদের আর ক্যালরি খরচ হয় না।
কারেন্ট বায়োলজিতে নতুন এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের নৃবিজ্ঞানের প্রফেসর হারমান পন্টজার ও ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোর আনশুটজ মেডিকেল ক্যাম্পাস, অরোরার অ্যান্ডোক্রাইনোলজি, মেটাবলিজম ও ডায়াবেটিস বিভাগের সহযোগী প্রফেসর অ্যাডওয়ার্ড এল. মেলানসন।
তারা দুইজনই বলেছেন নতুন এই গবেষণাটি ব্যায়াম করতে নিরুৎসাহিত করে না, ব্যায়াম শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এই গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে, ওজন কমানোর মূল চাবিকাঠি ব্যায়াম নয়—ডায়েট বা খাবার খাওয়ার ধরন।
গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?
পন্টজার ও তার দলের লোকেরা এক সপ্তাহ ধরে ৩০০ পুরুষ ও নারীর প্রতিদিনের কাজকর্ম ও তারা কী পরিমাণ ক্যালরি খরচ করেন তা পরিমাপ করেন। গবেষণায় অংশ নেয়া এই ৩০০ জন ছিলেন আফ্রিকার ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র ও জামাইকার অধিবাসী। এর মধ্যে অনেক দেশের লোকেরাই শারীরিকভাবে আমেরিকানের চেয়ে বেশি কর্মক্ষম।
গবেষকরা অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বা উচ্চতা অনুযায়ী তাদের ওজন কত তা জানতেন। তারা এক সপ্তাহ ধরে অংশগ্রহণকারীদের কাজকর্ম ও ক্যালরি ঝরানোর পরিমাপ করেন, কিন্তু তাদের ওজন বাড়ল না কমল গবেষকরা তা পর্যবেক্ষণের আওতায় রাখেননি।
তবে ‘মডারেট’ বলতে কত ঘণ্টার অ্যাক্টিভিটি বোঝানো হয়েছে তা গবেষণায় বলা হয়নি। পন্টজার বলেছেন, মডারেট বলতে যারা সক্রিয় কিন্তু সিরিয়াস অ্যাথলেট নয়—যারা প্রতিদিন কয়েক মাইল হাঁটে বা সাইকেল চালানোর মত পরিশ্রম করে তাদের মডারেট বলা যায়।
পন্টজারের গবেষণা টিম আরো দেখেছে, যাদের শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে তারা ব্যায়াম করে বেশি ক্যালরি ঝরায় কারণ সেক্ষেত্রে তাদের শরীরের ফ্যাট ঝরতে থাকে।
ওজন কমানোর জন্য ব্যয়ামের ভূমিকা বিষয়ে এই গবেষণা কী বলে?
গবেষণাটি নির্দিষ্টভাবে এই বিষয়টির দিকে ফোকাস করেনি। পন্টজার বলেছেন, ব্যায়াম ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে আসতে পারে। এক্সারসাইজ ও ডায়েটকে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের দুটি আলাদা আলাদা টুল বা যন্ত্র হিসাবে চিন্তা করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক কিছুর জন্য ব্যায়াম খুব উপকারি, যেমন হার্ট সুস্থ রাখতে। আর ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়েট তুলনামূলক ভাল উপায়। মেলানসন বলেন, পাবলিক হেলথের কর্মকর্তারা যেমন মনে করেন যে, আমেরিকায় ওবিসিটি বা স্থূলতার মহামারির জন্য আমেরিকানদের অলস বা শারীরিক পরিশ্রমবিহীন লাইফস্টাইলই দায়ী, এই গবেষণা থেকে দেখা যায় তা অতটা দায়ী নয়।
তিনি আরো জানান, গবেষণা থেকে তা প্রমাণ না হলেও, অতিরিক্ত ওজনের জন্য দায়ী কী সে ব্যাপারে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। মেলানসনের মতে, অবেসিটি বা স্থূলতার জন্য কম এক্সারসাইজ দায়ী নয়, অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ দায়ী।
বেশি ব্যায়াম কেন ভালো নয়?
পন্টজার বলেন, আপনি বেশি সক্রিয় থাকলে বা কাজকর্ম বেশি করলে আপনার শরীর তার সাথে মানিয়ে নেয়। আপনার শরীর আপনার ব্যায়াম করার রুটিনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়। সেই কারণে হয়ত অনেকের পক্ষে ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, ব্যায়ামের ক্ষেত্রে ‘সুইট স্পট’ ধরনের কোনো ব্যাপার নিশ্চয়ই আছে, যে নির্দিষ্ট পয়েন্ট বা সময় পর্যন্ত ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে, সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্যালরি খরচ হবে। তবে প্রত্যেকের জন্য এই পয়েন্ট আলাদা আলাদা।
আপনি নিজের ‘সুইট স্পট’ খুঁজে পাবেন কীভাবে?
পন্টজার বলেন, শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন। যখন দেখবেন খুব ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন এবং ব্যায়ামের পর রিকভার করতে বা ক্লান্তি থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নিচ্ছেন তখন বুঝবেন আপনি আপনার সুইট স্পট অতিক্রম করে ফেলেছেন, আপনি অতিরিক্ত ব্যায়াম করছেন। এই পয়েন্টে এসে আপনার কম ব্যায়াম করা উচিৎ।
এই গবেষণা থেকে গ্রহণ করার মত সবচেয়ে ভাল উপদেশ কোনটি?
মেলানসন বলেছেন, যদিও গবেষণায় দেখা গেছে ওজন নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের চেয়ে ডায়েট বেশি ভূমিকা পালন করে, তবে এতে পাবলিক হেলথ বিষয়ক ম্যাসেজটি একটুও পরিবর্তিত হচ্ছে না। আপনি ওজন কমান বা না কমান, আপনার সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়ামের স্বাস্থ্যগত উপকারিতা অনেক। যেমন, এটা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ধকল কমায়, ডিপ্রেশন দূর করে মন ভাল রাখে। বিশেষজ্ঞরা বলেন ব্যায়াম মস্তিষ্কের ক্ষমতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
পন্টজার বলেন, ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথম কাজ হলো ডায়েট এবং পাশাপাশি ব্যায়াম করা।