ক্রিস্টোফার হিচেনস এর লেখা ‘দি মিশনারি পজিশন: মাদার তেরেসা ইন থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস’ বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে।

বইটির মূল বক্তব্য ছিল, গরীবদের সাহায্য করা মাদার তেরেসার উদ্দেশ্য ছিল না। বরং নিজের মৌলবাদী রোমান ক্যাথলিক ধর্মবিশ্বাসের বিস্তৃতি ঘটানোর জন্য দুর্দশার উৎস হিসেবে গরীবদেরকে ব্যবহার করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

বইটির ভূমিকায় হিচেনস হাইতি সরকারের কাছে থেকে মাদার তেরেসার অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ ও ডুভেইলার সরকারের সাথে সম্পর্কের সমালোচনা করেন। সেখানকার সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবারের প্রশংসা করার প্রতি প্রশ্ন তোলেন হিচেনস। ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সাথে মাদার তেরেসার সম্পর্ক ও আচরণ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন হিচেনস। পোপ দ্বিতীয় জন পলের দ্বারা মাদার তেরেসার ক্যানোনাইজেশন ও তার সেইন্ট-ইমেজ নিয়েও হিচেনস বিস্তারিত আলোচনা করেন বইয়ের ভূমিকাতে।

বইয়ের প্রথম সেকশনের নাম ‘দি মিরাকল’। এখানে মাদার তেরেসার জনপ্রিয় ইমেজ বিশ্লেষণ করেছেন হিচেনস। হিচেনস বলেছেন, চরম দারিদ্র্য, নরকের কূপ এই বিশেষণগুলি কলকাতার প্রাপ্য না, বরং এই বিশেষণগুলি কলকাতাকে মাদার তেরেসার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য করুণ পটভূমি হিসাবে দেখায়।

বইটির দ্বিতীয় সেকশনের নাম, গুড ওয়ার্কস অ্যান্ড হিরোয়িক ডিডস। এখানে হিচেনস দেখিয়েছেন মাদার তেরেসা গরীবদের বস্তুগত চাহিদা এবং সমস্যা নির্ধারণ করেন না। মাদার তেরেসার সকল কাজকর্মই তার খ্যাতি এবং ধর্মবিশ্বাসের কাজে লাগে। মাদার তেরেসার আশ্রমে যে সকল চিকিৎসা দেওয়া হয় সে চিকিৎসাপদ্ধতি বিশ্লেষণ করে সমালোচনা করেছেন হিচেনস।

এই সেকশনে হিচেনস গর্ভপাত, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, ডিভোর্স ইত্যাদি বিষয়ে মাদার তেরেসার গোঁড়া অবস্থান দেখিয়েছেন। নোবেল পুরষ্কার গ্রহণের সময় মাদার তেরেসার উদ্ধৃতি তুলে দিয়ে তাকে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।

ক্রিস্টোফার হিচেনস (১৯৪৯-২০১১)

চার্লস কীটিং-এর কাছে থেকে ১.২৫ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার গ্রহণ করেছিলেন মাদার তেরেসা। এরপর কীটিং-এর সেভিংস অ্যান্ড লোনস কেলেঙ্কারি প্রকাশিত হয়। মাদার তেরেসা প্রসিকিউটরের কাছে কীটিং-এর পক্ষ অবলম্বন করে চিঠি লেখেন। উত্তরে প্রসিকিউটর কীটিং-এর সকল কর্মকাণ্ড ও চরিত্র বর্ণনা করে মাদার তেরেসাকে ফিরতি চিঠি লিখেন। সেখানে প্রসিকিউটর তাকে বলেন যিশু আপনার জায়গায় থাকলে যে কাজটি করতেন সেটাই করুন। হিচেনস জানিয়েছেন, এরপর মাদার তেরেসা সে চিঠির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান নি।

বইটির তৃতীয় সেকশনের নাম ‘ইউবিকুইটি’ বা সর্বব্যাপীতা। এখানে দুটি অধ্যায় আছে।

এখানে হিচেনস জানিয়েছেন মাদার তেরেসার আলবেনিয়ান ব্যাকগ্রাউন্ড এবং ১৯৯০ সালে তিরানায় মাদার আলবেনিয়া মনুমেন্ট পরিদর্শনের সময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ক্যাথলিক সেন্টিমেন্ট কীভাবে তিনি উস্কে দিয়েছিলেন।

হিচেনস জানিয়েছেন মাদার তেরেসা ক্ষমতাহীনদের বিপরীতে ক্ষমতাবানদের সমর্থন দিয়ে গেছেন। উদাহরণ হিসেবে হিচেনস উল্লেখ করেছেন, ১৯৮৪ সালের ভুপাল দুর্যোগ, মার্গারেট থ্যাচারের সরকার, রোনাল্ড রিগ্যানের প্রশাসন ইত্যাদির সাথে মাদার তেরেসার সংশ্লিষ্টতা।

সান্দিনিস্টাসদের বিরোধী সিআইএ সমর্থিত গেরিলা গ্রুপের সাথে মাদার তেরেসার নিকারাগুয়া ভ্রমণের প্রসঙ্গটিও উদাহারণ হিসেবে এনেছেন হিচেনস।