ইউরোপ, আমেরিকাসহ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির নানা দিক উঠে এসেছে আরটি ডটকমের আগস্ট ২০১৫-তে প্রচারিত  মিখাইল গর্বাচেভ এর এ সাক্ষাৎকারটিতে।

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে উত্তর জার্মানিতে, একটি প্রেস কনফারেন্সের আগে।

“আমেরিকা পৃথিবী শাসন করতে চেয়েছিল, কিন্তু পথ হারিয়েছে।”

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: সোফি শেভারনাদজে

অনুবাদ: আশরাফুল আলম শাওন


 

সোফি শেভারনাদজে

মি. গর্বাচেভ, আমাদের সাথে কথা বলার সময় বের করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

মিখাইল গর্বাচেভ

আমি গত ১৮ মাস কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে যাই নি।

সোফি

আপনি সাম্প্রতিক সময়ে বলেছেন, পরিস্থিতি এখন এতই উত্তেজনাপূর্ণ যাচ্ছে তাতে যে কারো স্নায়ু চড়ে যেতে পারে। উভয়ের সম্মতিতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের হুমকি এখন কেন আর যথেষ্ট বাধা নয়?

গর্বাচেভ
সোফি ও গর্বাচেভ

গর্বাচেভ

যারা বলে পারমাণবিক ধ্বংসযজ্ঞের ঝুঁকি এখন আর যথেষ্ট বাধা নয়, আমি তাদের সাথে একমত না। এখন আমাদের ভালোই ধারণা আছে পারমাণবিক অস্ত্র কী আর তা কী করতে পারে। আপনাকে একটা উদাহরণ দেই। শুধু একটা আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, ন্যাটো ক্লাসিফিকেশনে যার নাম সাটান (আমাদের খুব শক্তিশালী একটি মিসাইল)… এই এক মিসাইলই ১০০ ‘কার্নোবাইলস’ বহনে সক্ষম, এবং এ কারণে মনে করি সবাই বোঝে এর ধ্বংসক্ষমতা কত মারাত্মক, এটা বোঝার যথেষ্ট সময় আমাদের ছিল। এবং এখন আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনোভাবেই এটা চরমপন্থীদের হাতে না যায়।

সোফি

আপনি লিখেছেন, ইউরোপের নিজস্ব নিরাপত্তা কাউন্সিল দরকার। ইউরোপের ইতিমধ্যে OSCE [Organization for Security and Co-operation in Europe] আছে। আপনার কথার অর্থ কি এই যে OSCE এর কার্যকারিতা হারিয়েছে?

গর্বাচেভ

আমি আমার উত্তর দেব। এখনকার বিবেচনায়, OSCE হলো—(কাশি দেয়ার ভান করে)—এই হলো আমার উত্তর। যদিও আমি বলব না এটি কার্যকারিতা হারিয়েছে। এটা বলার অর্থ হবে যে তারা একেবারেই অকার্যকর। যাই হোক, OSCE কিছু একটা করার চেষ্টা করছে। তারা ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছে, তাদের পর্যবেক্ষক সেখানে আছে, এবং আরো অনেক কিছু।

এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমরা যখন পারমাণবিক অস্ত্রাগারের ব্যাপারে কথা বলি, তখন নিয়ন্ত্রণ এবং দায়িত্বের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। আমাদের এটা ফিরে পাওয়া দরকার। আমাদের একটা ইউনাইটেড ইউরোপ গঠন করা দরকার, যে ইউরোপ সবার ঘর হবে। এখনকার ইউরোপিয়ান ঘরে আমরা অশান্তি আর বিবাদ ছাড়া কিছু পাই না।

সোফি

যখন জার্মানি পুনরায় একত্রিত করার সিদ্ধান্ত হলো তখন যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ন্যাটো জার্মানির পুবে এক ইন্চিও অতিক্রম করবে না। সেই কথাগুলি কখনোই অবধারিত চুক্তিতে রূপান্তরিত হয় নি। এখন, যখন আবেগ বেড়ে যাচ্ছে, ইউক্রেনের মত বিষয়ে সমঝোতা করার সম্ভাবনা আরো কম মনে হচ্ছে। রাশিয়ার সীমান্তে পৌঁছানোর আগে কি ন্যাটো আর থামবে?

গর্বাচেভ

সবকিছুর কারণ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড চেষ্টা করছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা দেখে রাশিয়াও কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রতিক্রিয়া হিসেবে, কখনো কখনো এই পদক্ষেপগুলি অপ্রয়োজনীয়। এভাবেই সবকিছু হিসাবের বাইরে চলে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমি টাইম ম্যাগাজিনে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছি। তাদের আমি বলেছি, আমি আপনাদের আসলে বুঝি না, অনেকদিন আগে আইজেনআওয়ার আপনাদের সতর্ক হতে বলেছিলেন—বলেছিলেন সামরিক-শিল্প জটিলতা নিয়ে সতর্ক হতে।

গর্বাচেভ
মিখায়েল গর্বাচেভ

ন্যাটো সব জায়গায় সবকিছুতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ খোঁজে, এটা এর নির্ধারিত সীমানার বাইরে যেতে চায়। আইজেনআওয়ার খুব সিরিয়াস লোক ছিলেন, একজন যোদ্ধা ছিলেন। আমাদের দেশ যা কিছুর ভিতর দিয়ে গেছে, তিনিও তার ভিতর দিয়ে গেছেন। আমি তাদেরকে বলেছি, তিনি এমন মানুষ ছিলেন যার বিচার বা মতামতে আপনি আস্থা রাখতে পারেন।

আর আপনারা কী করছেন? এটা না করে কি আপনারা থাকতে পারেন না? এটা এরকম যে আমেরিকা তার সামরিক-শিল্প জটিলতাকে বাড়তে না দিয়ে থাকতে পারে না। অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে আর যুদ্ধব্যয় তার থেকেও বেশি বাড়ছে—আপনারা কি এটা না করে থাকতে পারেন না?

আর তারা উত্তর দিয়েছে, হ্যাঁ, বিষয়টা এরকমই মনে হচ্ছে।

সোফি

আপনি কি মনে করেন, ন্যাটো কেন পূর্বদিকে এগিয়ে যাবে? কেন?

গর্বাচেভ

এটা এর রাজনৈতিক সংস্কৃতি, সামরিক সংস্কৃতি। যেমন, ১৯৯০-এ, ইউরোপীয় দেশগুলির একটা সম্মেলন হয়েছিল—আসলেই অনেক বড় একটা সম্মেলন। ফলে তারা ইউরোপের উন্নয়নের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। এবং মনে হচ্ছে, ইউরোপ পৃথিবীর নতুন নিয়ন্ত্রণশক্তি হতে যাচ্ছে, এটা নতুন গতি সঞ্চার করছে।

ফলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ একটা বক্তৃতা দিলেন, তারপর আরেকটা, তারপরে আরো একটা। বক্তৃতার বিষয় ছিল ইউরোপে যা চলছে তার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের নতুন বিন্যাস ব্যবস্থা। এবং তার বক্তৃতা অনুসারে গর্বাচেভ কিছু বললেন।

পোপ জন পলও বলেন, হ্যাঁ, আমাদের একটা নতুন বিশ্ব শৃঙ্খলা দরকার, যেটা আরো বেশি সংহত, আরো বেশি সুন্দর, আরো সবকিছু, এবং অন্যান্য কিছু এবং আরো অগ্রসর।

ফলে সবাই বুঝতে পেরেছিল যে আমরা এমন একটা মুহূর্তে পৌঁছেছি যেখানে শান্তিপূর্ণ একটা দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে। পৃথিবীর সব দেশের সেরা সেরা লোকগুলি যার স্বপ্ন দেখেছে। এবং এদের মধ্যে জন কেনেডি নামের একজন আমেরিকান ছিলেন। তিনি ক্যারিবিয়ান সংকটের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন: আপনারা যদি মনে করেন ভবিষ্যৎ শান্তি শুধু আমেরিকানদের ওপরই আসবে তাহলে আপনি ভুল করছেন, হয় সবার জন্য শান্তি আসবে নয়ত কারো জন্যই নয়। এটা আসলেই সত্য। এটা কঠিন, এটা নিষ্ঠুর, কিন্তু বিষয়টা এরকমই।

পারমাণবিক শক্তির আবিষ্কারকও এ রকমই বলেছেন। তাদের একজন বলেছিল, পারমাণবিক অস্ত্র আসার সাথে সাথে পৃথিবী তার অমরত্ব হারালো।

হঠাৎ করে আমেরিকানদের তাদেরকে প্রতিহত করার মধ্য দিয়ে এটা শুরু হলো। তারা এরকম কেন করলো?

ঠাণ্ডা যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে, আমরা একসাথে এটা শেষ করেছি, এটা সব জাতির একটা সম্মিলিত বিজয়। এবং তারপরও আমেরিকানরা বলে, আমরা এটাতে জিতেছি। আমরা ঠাণ্ডা যুদ্ধে জিতেছি। আমরা এটা করেছি। আমরা।

গর্বাচেভ
১৯৯২ সালে রোনাল্ড রিগানের র‍্যাঞ্চে ন্যান্সি রিগান, রোনাল্ড রিগান, মিখাইল গর্বাচেভ ও রাইসা গর্বাচেভ

এটা বলা ঠিক মনে হয় যে, বেশ, যাই হোক, তোমরা যদি এটা বলতে পছন্দ করো—তাহলে এগিয়ে যাও। কিন্তু এটা অন্য একটা জায়গায় নিয়ে যায়। যদি আসলেই আমেরিকানরা জিতে থাকে, তারা একটি উপসংহার তৈরি করতে পারে—এবং তারা এই উপসংহার তৈরি করতে গিয়েছিল এবং পাবলিকলি বলতে শুরু করেছিল, আমাদের কোনো কিছু বদলানোর দরকার নেই। আমরা জিতেছি, পৃথিবী আমাদের পায়ের নিচে। আমাদের কেন কিছু বদলাতে হবে? আমাদের কোনো কিছু বদলানোর দরকার নাই। আমাদের নীতি ঠিক আছে। এবং যে চরম জিনিসটি তারা করলো—তারা নতুন একটা সুপার পাওয়ার তৈরি করতে শুরু করলো, একটা সুপার সাম্রাজ্য। আমেরিকা পৃথিবী শাসন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তার পথ হারিয়েছে। একপক্ষ বিশিষ্ট, এক মেরুর একটা বিশ্ব পুরোপুরিভাবে বাজে একটা ব্যাপার।

সোফি

আপনি একটা রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্মেলনের কথা বলেছিলেন কারণ এই দেশগুলির…

গর্বাচেভ

হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম।

সোফি

… আলাদা আলাদা দায়িত্ব আছে।

গর্বাচেভ

রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই সাড়া দেয় নি।

সোফি

কিন্তু তারা যদি সমস্যা সমাধান করতে চাইত তাহলে অবশ্যই তারা অনেক আগেই এই সম্মেলন করত।

গর্বাচেভ

তারা শুধু তখনই এটা সমাধান করতে চাইবে যখন তারা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং সব জায়গার সিভিল সোসাইটি থেকে চাপ অনুভব করবে। সিভিল সোসাইটি এবং এর সংজ্ঞায়িত ও সংহত ধরন ছাড়া সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন, এ ব্যাপারটা পরিষ্কার।

সোফি

আমরা এখন বারাক ওবামাকে নিয়ে কথা বলি। আপনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, এবং তিনিও তাই। এইভাবে দেখলে তিনি আপনার কলিগ, বলতে গেলে আপনারা দুজনই একই ক্লাবের মেম্বার, এই ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন?

গর্বাচেভ

তার ক্ষেত্রে এটা এক ধরনের সুবিধা। রাজনীতিতেও এরকম ঘটনা ঘটে। একবার আমি সেন্ট লুইসে বক্তৃতা দিচ্ছিলাম, আমি শেষ করার পরে এক তরুণ দাঁড়ালো এবং জিজ্ঞেস করলো, মি., আপনি আমাদের মানে আমেরিকানদের কী করার উপদেশ দিবেন? আমি জানতে চাইলাম তার প্রশ্নের অর্থ কী। সে বলল, আপনি দেখেন এখানে কত কত খারাপ কিছু ঘটছে, এবং সেগুলির অবস্থা দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। আমি বললাম, বেশ, এটা নতুন। সবসময় আমেরিকাই সবার জন্য উপদেশ বের করেছে, এমনকি কেউ উপদেশ না চাইলেও। না, আমি আপনাদের কোনো উপদেশ দিব না। আপনাদের সমস্যার মধ্যেই সমাধান বের করার সবকিছু রয়েছে।

গর্বাচেভ
১৯৮৮ সালে স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভের সঙ্গে

দ্বিতীয় তরুণ উঠে দাঁড়িয়ে বললো, আমি আমার সহকর্মীকে সমর্থন করি। দয়া করে উত্তর দিন। আপনি এসবের মধ্য দিয়ে গেছেন। আমাদের এই পরিস্থিতিতে আমাদেরও কিছু করা উচিৎ। আমি বললাম, খুব ভালো, আমি আপনাদের কোনো পরিকল্পনা বা কোনো রেসিপি দিব না, আমি শুধু মনে করি যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব পেরোস্ত্রোইকা দরকার। এরপর দশ অথবা পনের হাজার দর্শক দাঁড়িয়ে আমাকে সম্মান জানালো। দুই বছর আগে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। অধিকাংশ অংশেই লোকজন বদলাচ্ছে। প্রধান ব্যাপারটি হলো, আমেরিকানরা মরতে চায় না। স্থল বাহিনীকে সম্প্রসারিত না করে যুক্তরাষ্ট্র কেন বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, মিসাইল ব্যবহার বেছে নিচ্ছে? কারণ সমাজ তাদেরকে তা আর করতে দিবে না, সমাজ খুব দ্রুতই তাদেরকে চাপ দেওয়া শুরু করবে।

সোফি

আপনি আরও বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এমন আচরণ করে যেন তারা বিশ্বের পুলিশ এবং তারা একাই বিশ্বকে রক্ষা করতে পারবে। কিন্তু আমেরিকার শত্রু কে? কার বিরুদ্ধে তারা রক্ষা করছে?

গর্বাচেভ

আমি মনে করি না রক্ষা করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কেউ আছে। চাপ প্রয়োগের পুরাতন নীতিতে ফিরে আসার জন্য তাদের শুধু একজন শত্রু দরকার। তারা এটা ছাড়া থাকতে পারবে না। তারা এখনো তাদের পুরাতন নীতির দাসত্ব করছে। এ কারণেই আমেরিকাকে থামতে হবে। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে, পার্টনারের মত হয়ে এর থামা উচিৎ।

বাস্তবসম্মত হোন। আমেরিকা এমন একটা ফেনোমেনন যাকে আমরা ইগনোর করতে পারি না, এবং এর নির্দিষ্ট কিছু অধিকার রয়েছে। এর কথার মূল্য রয়েছে, এবং আমেরিকা এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে যা সারা বিশ্বের জন্য উপকারী হবে। হ্যাঁ, আমেরিকানরা নেতৃত্ব দিতে পারে। তারা কি নেতৃত্ব দিতে চায়? হ্যাঁ, তারা নেতৃত্ব দিতে পারে। কিন্তু অন্যান্য দেশের সাথে মিলে তাদের এটা করা উচিৎ, কারণ এখনকার দিনে একমাত্র পার্টনারশিপের মধ্য দিয়েই নেতৃত্ব সম্ভব।

সোফি

আমি যদি ঠিক বলে থাকি, আমেরিকা চায় ইউরোপে সমস্যা চলতে থাকুক। ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে মতানৈক্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সুবিধা পায়?

গর্বাচেভ

যেখানে টেনশন বেশি থাকে, যেখানে কোনো দেশে বা অঞ্চলে অস্থিরতা থাকে, তাদের জন্য হস্তক্ষেপ করার এটা একটা সুযোগ। আপনার প্রশ্নের এটা আমার সরাসরি জবাব। আমি আমার অভিজ্ঞতায় এই নীতির সাথে পরিচিত। প্রথমত এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খারাপ। আমার বক্তৃতায়, আমি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করি—আপনারা কি আসলেই মনে করেন বিশ্বের পুলিশম্যানের ভূমিকায় আপনারা খুশি হবেন? এবং আমি বলি, আমি ভালোই নিশ্চিত যে আপনারা তা হবেন না। শ্রোতারা হাততালি দিতে থাকেন। আমার সব ধরনের পাবলিক উপস্থিতিতেই আমি লোকজনের মতামত দেখার জন্য এই প্রশ্নগুলি করে থাকি। না, আমেরিকানরা যুদ্ধ চায় না। তবে তাদের যে সমাজ, সে অনুযায়ী এটা সহজ নয়। এটা কিছু নির্দিষ্ট পাওয়ার মেকানিজম তৈরি করেছে… আমি বলব তাদের একটা পেরেস্ত্রোইকা দরকার। আমি এটা মনে করি। তারা চাইলে এটাকে আমেরিকান পদ্ধতিতে যেকোনো নামে ডাকতে পারে।

সোফি

ইউরোপের অস্থিরতা থেকে আমেরিকা সুবিধা পায় কারণ এটা তাদেরকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেয়—তাই যদি হয় তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব পুরাপুরি রাশিয়ার ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে? তারা কেন দাবি করছে যে রাশিয়া…

গর্বাচেভ

কিন্তু অবশ্যই তারা তা করছে!

সোফি

কিন্তু কেন তারা দায়িত্বের ভাগ নিচ্ছে না?

গর্বাচেভ

কিন্তু এটা হলো আমেরিকান পদ্ধতি—দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া। তাদের গণমাধ্যম এতে সর্বাত্মক সমর্থন দিবে, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী যে কোনো কিছু প্রমাণ করে দিবে, সেটা যত অসম্ভব হোক তবুও। যদি তাদের প্রমাণ করা দরকার হয় যে একটা দেহধারী শয়তান বের হয়েছে, তারা করবে, যে কোনো ভাবেই তারা তা প্রমাণ করবে।

সোফি

আমি নিষেধাজ্ঞা এবং সাম্প্রতিক অন্যান্য কিছু ঘটনার দিকে নজর দিতে চাই। সাউথ স্ট্রিম (গ্যাস পাইপ লাইন প্রজেক্ট) বন্ধ করতে হয়েছে। মিস্ট্রাল জাহাজের বিক্রি স্থগিত হয়েছে। কোম্পানিগুলির এতে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, ইউরোপিয়ান কোম্পানিগুলি সহ। রাশিয়ার সাথে সম্পর্কে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন কেন নিজেদের ক্ষতি করছে?

গর্বাচেভ

বেশ, এই সেদিনই জার্মানিতে সাবেক কয়েকজন প্রেসিডেন্ট, মি. গেনশ্চার, মি. স্ক্রোডার এবং মি. ম্যানগোল্ডসহ ৬০ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বক্তৃতা দিয়েছেন—তাদের বেশিরভাগকেই আমি চিনি। সেলিব্রিটিরাও কথা বলেছেন। তারা পরোক্ষভাবে বলেছেন যে রাশিয়ার সাথে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমনভাবে আমাদের বাণিজ্য করা ঠিক নয়।

এইসব ঘটছে কারণ জার্মানি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে চ্যান্সেলর মার্কেল খুব সমস্যায় পড়েছেন; সাথে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিও, জার্মানি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একটা পয়েন্টে, আমেরিকা তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছে, তেলের দাম হঠাৎ করে খুব নেমে গেছে, এবং সৌদি আরবের সাথে আমেরিকার চুক্তি অনুসারে নেওয়া পদক্ষেপগুলির কারণে আমরা ডলার হারাচ্ছি। তো, এটা হচ্ছে চাপ প্রয়োগের আরেকটা কৌশল।

কিছুদিন আগে আমি পশ্চিম জার্মানির পাসাউতে একটা কনফারেন্সে বক্তৃতা দিয়েছি, মি. কোহল যখন সুস্থ ছিলেন তখন আমরা তার সাথে মিলে সেখানে আয়োজন করেছিলাম। সেই কনফারেন্সের থিম ছিল ইউনাইটেড ইউরোপে স্বাতন্ত্র্য। সেখানে দেখা গেল, আমরা উভয়েই বিশ্বাস করি যে যেখানে সব দেশের আগ্রহ ও অধিকার থাকবে এমন একটি বিশ্ব শৃঙ্খলা রাশিয়াকে ছাড়া হতে পারে না। তখন এক লোক দাঁড়িয়ে বলল, আপনাদের মতামত যদি তাই হয় তাহলে আপনাদের উচিৎ রাশিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রহণ করা। আমরা কেউই এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না, বিশেষ করে আমার চ্যান্সেলর বন্ধু। তিনি তখন কিছুটা উত্তেজিত হয়ে, প্রায় টেবিল চাপড়ে, চীৎকার করছিলেন, আপনি কী বলছেন বলে মনে করছেন? এটা হতে পারে না, কোনো ভাবেই না। কেন তিনি বললেন ‘কোনো ভাবেই না’? কারণ রাশিয়াকে ছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির অনেক ওজন রয়েছে, জার্মানি অনেক শক্ত অবস্থান পেয়েছে। যখন রাশিয়া দেখা দিবে তখন তাকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। সার্বভৌমত্ব ও শক্ত অবস্থান রক্ষা করার মত যথেষ্ট যুক্তি থাকবে রাশিয়ার।

সোফি

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেছেন এবং আপনিও তা নিশ্চিত করেছেন যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে স্যাংশন জারি করার জন্য ইউক্রেন আর ক্রিমিয়া ইস্যু একটা অজুহাত মাত্র ছিল, এবং পশ্চিম যে কোনো অজুহাত তৈরি করে হলেও তা করত।

গর্বাচেভ

আমি এই মত শেয়ার করি।

সোফি

আমি ক্রিমিয়ার বিষয়টা আলাদা করে একটু আলোচনা করব। এখন, আপনি যদি এই মতামত শেয়ার করে থাকেন তার মানে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিম চায় রাশিয়ার শত্রু হতে, এবং তারা যে কোনো ভাবেই স্যাংশন জারি করত?

গর্বাচেভ

তারাই আমাদের শত্রু ঘোষণা করেছে। ফলে তারা এটা চেয়েছে কি চায় নি তা নয়, তারা এটা করেছে। যদিও তাদের সবাই তা করে নি। আমি অনেকের কথাই শুনেছি যে তারা আমাদের সমর্থন দিয়ে বলেছে রাশিয়া ঠিক আছে। রাশিয়ার দীর্ঘ ইতিহাসে, রাশিয়ার প্রতি যা যা করা হয়েছে, কিন্তু কেউই রাশিয়াকে হাঁটু গেড়ে বসাতে পারে নি—নেপোলিয়নের কথা মনে করি, অথবা হিটলারের—কেউ পারবেও না। কিন্তু কী হতে পারে জানেন? যদি যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, এখন যে ধরনের অস্ত্র আছে তা বিবেচনায় রাখলে, তাহলে…

সোফি

এ ধরনের যুদ্ধের ঝুঁকি রয়েছে কি?

গর্বাচেভ

আমি মনে করি এখন আর যুদ্ধের কোনো ঝুঁকি নাই। কিন্তু আমরা দেখি যে টানাপোড়েন বাড়ছে; আমরা মূলত বলতে পারি ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হয়েছে, অথবা আবার চালু হয়েছে। এখন আসলে এ রকমই ঘটছে। ফলে আমাদের সাবধান থাকতে হবে।

সোফি

এখন চলুন ক্রিমিয়ার প্রসঙ্গে ফিরে যাই। আপনার উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “আগে সোভিয়েত আইনের অধীনে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের সাথে সংযুক্ত ছিল, আরো নির্দিষ্ট করে বললে কম্যুনিস্ট পার্টির আইন অনুযায়ী, লোকজনে জিজ্ঞেস না করেই এ অবস্থা ছিল, আর এখন লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ভুল সংশোধন করার।” তাই যদি সত্য হয়, তাহলে পশ্চিম এটা কেন বুঝতে পারছে না বা মেনে নিচ্ছে না?

গর্বাচেভ

কারণ এতে পশ্চিমের সুবিধা হয় না। ঐতিহাসিকভাবে, এই অবস্থা পশ্চিমের জন্য সুবিধার ছিল না। আমি সবসময়, আমার সব আর্টিকেলে, বক্তৃতায় এবং সাক্ষাৎকারে আমি যা জানি সেই সত্য বলার চেষ্টা করি। রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সময়ে, বলশেভিক বিপ্লবের আগে, ইউক্রেন বলে কোনো রাষ্ট্র ছিল না। সেখানে ছিল মালোরোশিয়া (ছোট রাশিয়া)। আপনি তা জানেন, ঠিক? ক্যাথেরিন দ্য গ্রেট লাভারস একজনের পর আরেকজন একে শাসন করেছে। ওহ, মহিলারা খুব ধূর্ত!

গর্বাচেভ
পুতিনের অভিষেক অনুষ্ঠানে, ৭ মে ২০০০

লেনিনের অধীনে, ইউক্রেন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। কোনো কিছু না ভেবেই বলা যায় ইউক্রেন সে সময়ে শুরু হয়েছে, এবং সে সময় রাষ্ট্র হিসেবে ইউক্রেনের উত্থান ঘটেছে। এর শক্তিশালী শিল্প (ইন্ড্রাস্টি) এবং সংস্কৃতি ছিল। এর নেতারা পলিটব্যুরোতে মূল ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন। জেনারেল সেক্রেটারি, দলের নেতা সহ আরো অনেক কিছু ইউক্রেন জন্ম দিয়েছে। কিন্তু উচ্চাভিলাষ বাড়তে শুরু করেছিল; আর যখন উচ্চাভিলাষ নারীকে কেন্দ্র করে অথবা ক্ষমতা পাওয়াকে কেন্দ্র করে ঘোরে তখন সবকিছু ঠিক থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

সোফি

কিন্তু, মি. গর্বাচেভ, আপনি যখন জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন, অথবা USSR এর প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন, আপনি কেন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ফেরত আনেন নি? আপনি এটা করতে পারতেন।

গর্বাচেভ

যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন টিকেই আছে, তখন কেন আমি তা করব? আর সোভিয়েত ইউনিয়নের ভিতরে সীমানাগুলি ছিল পাশাপাশি দুইটা বাগানের মধ্যের বেড়ার মত প্রতীকী। যখন আপনার হাঁস আপনার প্রতিবেশীর বাগানে ঢুকে পড়ে তখন বিরাট ঝগড়া হয়, কিন্তু রাষ্ট্রের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, এটি ভাগ করা ছিল না, অথবা প্রহরা দেওয়া ছিল না। যেমন বললাম ঠিক এরকম ছিল এটা।

জেনারেল সেক্রেটারি খ্রুশ্চেভ মনে করেছিলেন তিনি ইউক্রেনকে শান্ত রাখতে পারবেন। তিনি ইউক্রেনের প্রথম সেক্রেটারি ছিলেন। ফলে তিনি তাদেরকে শান্ত রেখেছিলেন, বলতে গেলে ক্রিমিয়াকে তাদের হাতে অর্পণ করে। কিন্তু অনেক পরে, ১৯৯১ সালে, আমরা যখন USSR এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সমঝোতা করছিলাম, তখন বেলাভেযহা চুক্তি এসে ইউনিয়নকে আলাদা করে দিচ্ছিল, এবং তখন এইসব মিটিং হচ্ছিল, এবং সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তাহলে প্রশ্ন হলো, তারা সম্ভাব্য এই অবস্থায় কী করে অনুমোদন করেছিল? রাশিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করা কোনো একজন বলতে চেষ্টা করেছে, এই বিষয়গুলিতে—আমাদের লোকদের সম্পর্কে, তারা একটা ইউনিয়নে বসবাস করে, তাদের কী হয় ইত্যাদি। এরপর মহাকাশচারী সেভাসতিয়ানভ, তিনি একজন সহকারী ছিলেন, ফলে সেই মহাকাশচারী দাঁড়াত এবং বলত, শুনুন, আপনারা কী বলছেন? গর্বাচেভ ক্রেমলিন থেকে কাল চলে যাবে—এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

সোফি

মি. গর্বাচেভ, আপনার এত বড় একটি রাজনৈতিক ক্যারিয়ার রয়েছে, আপনি কি মনে করেন, সবকিছুর মধ্যে আপনার সবচেয়ে বড় অর্জন কী?

গর্বাচেভ

পেরোস্ত্রোইকা এবং এটা সম্পর্কে সবকিছু, যদিও এতে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে এবং এটা সম্পূর্ণ হয় নি। আমাকে হিসাব করতে দিন, স্বাধীনতা, গ্লাসনস্ত (বাক-স্বাধীনতা), বিদেশে যাওয়ার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এবং আরো অনেক কিছু, আমি সব কিছু তালিকায় আনব না। এবং সবশেষে, নিরস্ত্রকরণ: এটি লোকজনকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে। সারা দুনিয়া জুড়ে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলিতে, পারামণবিক যুদ্ধ যেকোনো মুহূর্তে শুরু হয়ে যেতে পারে এই ভয়ে মাটির নিচে আশ্রয় খুঁড়ছিল। এটা করা হয়েছে, এবং আমরা তা সম্পূর্ণ করেছি। মানুষজন মধ্য এবং পূর্ব ইউরোপে পছন্দ করার স্বাধীনতা পাচ্ছিল। জার্মানি একত্রিত হয়েছিল। চায়নার সাথে সম্পর্ক আবার জোড়া লেগেছিল। এটা দারুণ ছিল। ভালো ফলাফলের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমি এখনো অনুতাপ করি যে আমি এই প্রজেক্টটাকে সম্পূর্ণ করা পর্যন্ত নেতৃত্ব দিতে পারি নি। আমাদের এখন উচিৎ একটু পিছন দিকে গুটিয়ে ওইসব অবস্থান থেকে আবার চালু করা। আমাদের ঐক্যমতে পৌঁছানো এবং এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। কিন্তু সব প্লেয়ারদেরই এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আমি আর্টিকেলে যেমন লিখেছি, আমি পরামর্শ দেই কাঠামো এবং ইনস্টিটিউশন তৈরি করতে হবে যেগুলি মানুষের হাতে থাকবে। এই তো।

সোফি

অনেক ধন্যবাদ।

গর্বাচেভ

আপনি কতগুলি প্রশ্ন লিখেছিলেন?

সোফি

অনেকগুলি।

গর্বাচেভ

উউহ!

পেরেস্ত্রোইকা—সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সিস্টেম পুনর্গঠিত করার ও নতুন রূপ দেওয়ার মূল নীতি। ১৯৭৯ সালে লিওনেড ব্রেজনেভ এটা প্রস্তাব করেন এবং মিখাইল গর্বাচেভ এটাকে কার্যকরীভাবে বাস্তবায়ন করেন।

মিখাইল গর্বাচেভ—পুরো নাম মিখাইল সার্গেইভিচ গর্বাচেভ। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের অষ্টম এবং সর্বশেষ নেতা ছিলেন। ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯১ সালে ভেঙে যাওয়া পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কম্যুনিস্ট পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য মিখাইল গর্বাচেভ ১৯৯০ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

সোফি শেভারনাদজে—সোফি শেভারনাদজে সংবাদমাধ্যম আরটি নেটওয়ার্কের টেলিভিশন প্রতিনিধি। তিনি সাবেক জর্জিয়ান রাষ্ট্রপতি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী এদুয়ার্দ শেভারনাদজের নাতনি। ২০১০ সালের ড্যান্সিং উইদ দ্য স্টারসের রাশিয়ান ভার্সনে তিনি একজন ড্যান্সারও ছিলেন। তিনি একজন সোসিয়ালিট হিসেবেও পরিচিত। তাকে প্রায়ই ইউরোপ এবং রাশিয়ার হাই-ফ্যাশন অনুষ্ঠানগুলিতে দেখা যায়।