নতুনদের সাথে কাজ করতেছি।

নতুনদের সাথেই কাজ করি। নতুনদের কাজ করি বললে আধা বলা হবে, সবার সাথেই কাজ করা হয়। নতুনরা আমার সাথে কাজ করে। নিউকামার, নয়া ডিরেক্টর বা ভাই-বেরাদরের এসিস্টরা আমার সাথে যোগাযোগ করে। তারা কাজ করতে চায়, আমাকে চায়। তাদের অনেক আশা-স্বপ্ন (আমি যাতে ভেঙে টুকরা টুকরা কইরা না দেই)। প্রত্যেকে আমাকে নিয়া গল্প ভেবে রাখছে।

নতুনরা কল দিলে, যোগাযোগ করলে, নেটে নক দিলে সাড়া দেই। তারা আসতে চাইলে দেখা করি, আড্ডা দেই। গল্প/আইডিয়া ভাবে, শেয়ার করে—আমি উৎসাহ দেই। তারা বানাতে চায়, সাজেস্ট করি। তাদের গল্প/আইডিয়া শুনি (আমি খুব ভাল শ্রোতা)। খুব বাজে কিছুর মধ্যেও ভালটা বের করে এনে তাদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়াই।

তখন এমন অবস্থা, কোন সমস্যা হলে, মন খারাপ করলে, বাসায়, প্রেমে, অর্থনৈতিক জটিলতায় বা স্রেফ মিস করলে কেউ আমাকে কল দিত। আমি কাউন্সিলিং করে মলম লাগায়া দেই। মন খারাপ কাকে বলে আমি জানি না। আমার মন উচাটন হইলে, বিক্ষিপ্ত হইলে, উদাস হইলে পৃথিবীতে দুইটা মানুষকে জানাইতাম। তার মধ্যে একজন বস্‌। উনি কখনই হতাশ করতেন না। কী জানি কী কইত আমার মন নাইচা উঠত। যেহেতু এইসব অবস্থার ভিতর দিয়া আমি গেছি, আমিও কাউকে নিরাশ করি না।

এমন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী, সময়ের সঙ্গী প্রতিশ্রুতিশীল বর্তমানে পরিচিত ডিরেক্টরের প্রথম দিককার কাজের অংশীদার আমি। নাটক, সিনেমা, বিজ্ঞাপন, টেলির হয় অভিনয় বা স্ক্রিপ্ট বা এসিস্ট বা এডিটে কাজে (জড়িত) ছিলাম আমি।

একসময় তারা ধনী হয়, বড় হয়। ব্যস্ত হয় কোনো সন্দেহ নাই। ব্যস্ত হলে যা হয়। আগের মত সময় দিতে পারে না, মনে পড়ে না। প্রয়োজন ফুরালে তারপর ব্যাগেজ ডিস্টার্বিং মনে করে। ব্যাপারটা সেটা না, আমি সেভাবে দেখি না। আসলেই টাফ, আমি বুঝি। তখন ফর্মালিটি মেনটেইন করা, যোগাযোগ রাখা আগের মত হয়ে ওঠে না। বললেই ক্লায়েন্ট বাদ দিয়া দুম করে সিনেমা দেখতে যাওয়া, আমার গল্প শোনা হয় না। আর আমারও আগের দিনের কথা মনে করে ব্ল্যাকমেইল করা হাস্যকর, লজ্জাকর, অনুচিত মনে হয়।

সিরিয়ালের মিটিং। ডিওপি নাহিয়ানসহ ডিরেক্টর হাসান মোর্শেদ ও টিম।

২০১৫ জানুয়ারি থেকে দুইজন উদ্যমী আর নতুন ছেলের ডিরেকশানে সিরিয়ালে পারফর্ম করতেছি। একজন হাসান মোর্শেদ আরেকজন জয়ন্ত রোজারিও। দুইজনই ভাই-বেরাদরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ছিল, আমার কাছের অনুজ। দুইজনের সাথেই ঘনিষ্ঠ সময় কাটাইছি।

২.
হাসান মোর্শেদ আগে রেগুলার ফোন করে দেখা করত। মাথায় গল্প আসলে, মেজাজ খারাপ থাকলে, বানানোর ক্যারা উঠলে ফোন করে দেখা করত। আস্তে আস্তে সে বিজি হয়ে গেল। তার মাথায় ক্যারা উঠল, আস্তে আস্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। আমার মোবাইল থেকে নাম্বার ডিলিট হয়ে গেল। একদিন হঠাৎ ফোন: “ভাই, আমার নাম হাসান মোর্শেদ। আমি ছোটখাট ডিরেক্টর।” হাসানের একটা ভঙ্গি আছে, সেই ভঙ্গিতে।

বহুদিন পর দুইজনের সাক্ষাৎ ঘটল। নিকেতনে তার অফিসে নিয়ে গেল। বিশাল অফিস।

হাসান ইনিয়ে-বিনিয়ে গল্পটার জিস্‌টা বলে। শুরু আর উদ্দেশ্য মহৎ। ইকবাল ভাই—ইকবাল হোসাইন চৌধুরীর রচনা ও চিত্রনাট্য। হাসান অনেক কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে। ডিটেইলে গেলাম না, ভূমিকা বড় হয়ে যাবে।

হাসান: সাধু ভাই, এখানে আরেকটা জিনিস দেখানো হবে, আপনার ফ্যান্টাসি! আপনি আপনার চেয়ে লম্বা মেয়ের সাথে প্রেম করেন…।

বললাম, ভাই, এখন আমি টাকার জন্য সব করব। তারপরে মনপ্রাণ ঢেলে সিনেমা বানাব। কারিগরি, ক্রিয়েটিভিটি সেখানে দেখাব।

অভিনয়টাকে সস্তা হিসাবে নিয়া আড়াল থেকে মানুষের সাইকোলজি ধরে লেখতে পারা বড় করে দেখি। মোট কথা লেইখা আরাম পাই। আর আমার কন্ডিশান অনুযায়ী কেউ মার্ক করার আগে চিপা থেকে আন্ডার ডগ থেকে সবাইরে মাপতে সুবিধা।

সেইমতে লেখায় কোনো কোনো সময় কোনো কোনো আর্টিস্ট, ডিরেক্টর অফ ফটোগ্রাফি, লাইট, প্রোডাকশন ও অ্যাক্টিং-এ আগ্রহী নিউকামিং যুবক-যুবতীরাও আসবে।

৩.
প্রথমদিন শুট। ওয়ারির একটা রেস্টুরেন্ট। ওয়ারির মত জায়গায় রেস্টুরেন্টে ওয়াই-ফাই ফ্রি। এখন ঢাকার অনেক জায়গায় তাই।

ডিরেক্টরের কথামত ঢাকা কলেজের সামনে থেকে রঙচঙা কিছু শার্ট নিয়ে শীতের সকালে চলে গেছি জায়গামত। মোর্শেদের অ্যাসিস্ট্যান্ট আরেক অনুজ কাজী রাহাত পাজি আগেই পারমিশান নিয়া রাখছিল। কিন্তু শুটিং ইউনিটে এত ভোরে চলে আসব সেই প্রস্তুতি ওদের ছিল না।

আমরা যখন পৌঁছাই তখন এমপ্লয়িরা ঘুম থেকে জাগে নাই। আমরা ঢুকতেই দেখি স্টাফরা রেস্টুরেন্টের ভিতরেই গণফ্লোরিং করে মশারি টাঙিয়ে চেতায়া শুইয়া আছে। ইউনিট দেখে তাদের হুড়াহুড়ি পড়ে গেল। সবাই উঠে গেল, একজন আর ওঠে না। সে তার লুঙ্গি খুঁজে পাচ্ছে না। লে ঠ্যালা! ডিরেক্টর ঘোষণা দিল, এই এখন কেউ ঢুকবে না, কেউ ঢুকবে না। মালামাল সব বাইরে রাখ।

সিরিয়ালের সেটে

এটা ঘটনার শুরু মাত্র, ওদের স্টাফরা যে মাল তার প্রমাণ পাব পরে। এটা একটা ফানি ধারাবাহিক। আমি দেখি নয়া কিছু পোলাপান ঘুরতেছে, সবাই হাইটে এত লম্বা, ইচ্ছে করেই বেছে বেছে লম্বা আনা হইছে কন্ট্রাস্টের জন্য।

একটা মেয়ে আছে, নাম হাফসা। বাইরে পড়াশোনা করা। ডিরেক্টর তার ড্রেস দেখতে চাইল। মেয়েটা একটার পর একটা বের করে ডিরেক্টর সেগুলা মুখের সামনে মেলে ধরে। কোনো ড্রেস ব্লাউজের চেয়ে খুব বড় না।

ডিরেক্টর: ডার্লিং এগুলা কী আনছ?

হাফসা: তুমিই বলছ রোমান্স করতে হবে, হট ড্রেস আনতে।

ডিরেক্টর: তাই বলে এত হট। চ্যানেল অ্যালাউ করবে?

হাফসা: আমি তো এগুলাই পড়ি ভেআইয়াআ।

ডিরেক্টর: হুম, এটার মধ্যে যেটা তোমার কমফোর্ট লাগে এমন একটা পরো।

এরপর মোটামুটি পোষায় এমন একটা পরল সে।

তার সাথে তখনও পরিচয় হয় নাই। মেকাপম্যান আমার চুল নিয়া পড়ল বিপাকে। হাফসা বলল, ওরে ইমো কাট মেরে দেন। ওয়ান্না বি ইমো। তার কনফিডেন্স দেখে আমি মেকাপম্যানরে কইলাম, কী চাইয়া আছেন? মারেন ইমো কাইট।

আমার সাথে হাফসাকে কী করতে হবে বুঝিয়ে দেয়া হল, পরিচয় করিয়ে দিল। তারপর আমাদের দুজনকে বলল পাশাপাশি বসে পড়তে। হাফসা বলল, ও আচ্ছা, উনি আমার কো-আর্টিস্ট। কুল!

এতক্ষণেও জানত না সে। আমি ভাবছি তাইলে শটে প্যারা দিবে বা পার্ট নিবে। পাশাপাশি বসলেও আমি একটু সাইড করে বসলাম। সে আরো ঘেঁষে আসে। ডিরেক্টর তাকে রোমান্সের কথা বলছে। খবর আছে! আমাকে এত বলে নাই। আমি নার্ভাস। সে আরো কাছে আসে আর এত এক্সাইটেড যে আমার ডায়ালগও দিয়া দিচ্ছে। আমি ফাঁক হয়ে বসি। একসময় সে সরি বলে।

ডিরেক্টর দূরে মনিটর থেকে চিৎকার করে ওঠে, সাধু ভাই কেমিস্ট্রি… কেমিস্ট্রি লাগবে আরো। সিনটা ফিল করেন।

ফিল করলাম, মেয়েটা ফ্লেক্সিবল আছে।

হঠাৎ শুটের মাঝামাঝি সময়ে বিকট শব্দ করে সাথে অনেকগুলা গ্লাস, বোতলের ভাঙচুরের আওয়াজ, হলিউড ছবিতে ব্লাস্ট হলে যেমন আওয়াজ হয়।

শুটিং-এ মনিরা মিঠু

বিশাল রেস্টুরেন্টের দ্বিতীয়াংশে হচ্ছে এ যুদ্ধ। তৎক্ষণাৎ আমরা মনে করছি জঙ্গি হামলা করল বুঝি। রেস্টুরেন্টের সাজানো যত গ্লাস, বোতল আছে সব ধ্বংস আর স্টাফদের মাথা ফাটা, রক্তাক্ত। শুটিং অফ মাস্ট।

প্রথম দিনে এ অবস্থা, ডিরেক্টরসহ আমাদের সবার মাথায় হাত। উৎসমূলের দিকে সবাই দৌড়ে গেলে ডিরেক্টর হাসান মোর্শেদ ছোটখাট দেহ নিয়ে গর্জন করে উঠল, “কেউ যাবে না, আমাদের কেউ যাবে না ওদিকে। শুটিং চলবে।”

কী হইছে কেউ জানি না, আতঙ্কের মধ্যে শুটিং চলছে। সাধারণত মালিক এখানে আসে না, ঘটনার ইমার্জেন্সি হিসাবে মালিক পক্ষ আসল। এবার তো শুট প্যাক করতেই হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তদন্ত-বিচার-সালিশ করে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান করে চলে গেল।

ইউনিটের সবাই খুশি। একটু পরে ঐ স্টাফগুলা মাথায়-মুখে ব্যান্ডেজ পট্টি লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। শুটিং-এর জন্য শুভ লক্ষণ। শুভ সূচনা! ডিরেক্টরের মুখেও সুখী সুখী ভাব।

প্রথম দিনের সিন এত জমছিল আমরা হাসব কী, ইউনিট থেকে মাঝে মাঝে হাসির রোল পড়ছিল। ডিওপি সুদর্শন নাহিয়ান ক্ষেপে গেল, এত হাসলে শট নিব কীভাবে? এরপরে যে হাসবে লাইটের স্ট্যান্ড ঢুকিয়ে দেয়া হবে… মুখে।

এরপরে আরেকটা ডায়ালগে শুনলাম চিপা হাসির আওয়াজ। কী হল?

ডিরেক্টর বলল, ভাই নাহিয়ান, তুমি হাসলে হবে? ফ্রেম কাঁপতেছে রে ভাই। ইউনিটের হাততালিতে সিন শেষ হল।

আরো কটা লম্বা ছেলে-মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। আমি আর্টিস্ট অনেকে জানে না। সো আলাপ হয় নাই। বিপাশা নামে একটা মেয়ে তার যন্ত্রপাতি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। একটু পর হেয়ার ড্রাই করে চুলরে এক বিশেষ ভঙ্গিমায় এনে, চাপা জিন্স, পায়ে বুট আর চোখে লেন্স লাগায়া বের হল।

আরেকজন ফর্সা গুডবয় সরণ (বা স্মরণ বা শরণ)। চ্যানেলে ইংলিশ নিউজ পড়ে। সে শট ছাড়াও হাসতেছে। অভিজ্ঞ না, এগুলার সাথে সে পরিচিত না হয়ত। হাসির জ্বালায় সেও শট দিতে পারে না, আমিও পারি না। সে বলল, ভাই আমরা কিন্তু সেলফি তুলব। আমি আগে কখনও সেলফি-টেলফি তুলতাম না। এই সিরিয়ালে এসে দুয়ার খুলে সব হালাল করে দিচ্ছি। যেই তুলতে চাচ্ছে পোজ দিচ্ছি। তার বান্ধবীর ভূমিকায় থাকা বিপাশাও আবদার তুলল সেলফি তুলবে। দুরুম দারুম সেলফি তুলতে লেগে গেল সবাই। সাথে যোগ দিল রসিক নাহিয়ান। সেলফি তুলেই নগদে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে।

ডিরেক্টর: সরণ ভাই, রাখেন না ভাই, এগুলা পরে করেন না।

একটা শট ছিল, আমি সরন আর তার বান্ধবী ঢুকব। আমি দরজা উল্টা দিকে খুলতে গেলে মেয়ের কপালে বাড়ি খাবে। আমি টেনশানে। কিন্তু যতবার দরজা খুলি মেয়েটার কপালে আর লাগে না। কপাল তো আগে আসে না, বুকের সাথে বাউন্স করে দরজা চলে আসে, শট হয় না। মেয়েটা সাহস ফিরা পাইছে। আমারে বলে, আপনি ডরায়েন না, খেঁইচা মারেন। আমি মারলাম, কপালে জোরে লাগল। কিন্তু শট হয় নাই। সরণ কেলায়া হাসতেছে।

এখানে আরেক ব্যক্তিত্ব ছিল রাসেল ভাই। দেখতে পুরাপুরি কর্পোরেট কিন্তু আদতে ক্রিকেটার। তিনি আমারে ঝাড়ি দিবেন, ঝাড়িটা পারফেক্ট হয় না। এদিকে তার সাপের মত লুক আর ঝাড়ি খেয়ে আমি পোতায়া গেছি। আমার পোতানো এক্সপ্রেশান দেখে ডিরেক্টর সাব্বাস দিল। রাসেল ভাইও বলল, তুমি সেইরকম দিচ্ছ মিয়া, আমার হচ্ছে না।

আমি বললাম, সত্যি কইতাছেন তো, নাকি সামনা-সামনি পাম মারতাছেন?

উনি বলল, তুমি দূরে যাও, পিছন ফিরো বলতেছি। সন্ধ্যার সময় একটা শটে তাকে আধলা ইট তুলে মারব। এখানেও আমি ব্যর্থ।

রাসেল ভাই বলে, সাধু তুমি মারো, পায়ে পড়ুক সমস্যা নাই। (কত ভালরে!)

ইট মেরে দিলাম দৌড়। বহুদিন পর দৌড়ালাম। টায়ার্ড হয়া গেছি। শট শেষে সবাই বসে আছি। লোকেশান শিফট। দেখি রাসেল ভাই, হাফসাসহ আরো কে বসে আছে। আমি বললাম, এমা এ কে? বিপাশা হেসে বলল, চিনেন নাই ভাইয়া? আমি মানুষের ড্রেস আর চুল চেঞ্জ হলে চিনি না। এটা বিপাশা। চাপা জিন্স, লেন্স খুলে শেলোয়ার পরে বসে আছে। বলল, কেমন দেখাচ্ছে, আগে ভাল না এখন ভাল?

৪.
রাতের বেলা হাতিরঝিলে শট। আমি টায়ার্ড। যে যেখানে যাবে যাক আমি গাড়ির সামনের সিটে উঠে গেলাম। শুটিং-এর গাড়িতে মজাই আলাদা। হাফসা এসে বলল, আমি আমার হিরোর সাথে বসব। ঠেলাঠেলি করে সামনেই বসল। পিছন থেকে আকথা-কুকথা শুনতেছি। আমি টায়ার্ড, ঘুমাবো।

হাতিরঝিলে ঠাণ্ডার মধ্যে হাফসা চটপট শর্ট ড্রেস, ৪ ইঞ্চ হাই হিল পরে আমার ডাবল হাইট নিয়া রেডি। আমি কইলাম, আইটেম সং নাকি? ডিরেক্টরকে বললাম, আমি কখনো করি নাই, না নাচাইলে হয় না।

ডিরেক্টর হাসান মোর্শেদ বলল, আপনি হুদাই টেনশান করতেছেন। আপনার মত দেন। শর্টের সময় হাফসা মোহনীয় ভঙ্গিতে আঙুল দিয়া ডাক দেয় আমার পেট ভইরা হাসি আসে।

হাফসা চিৎকার দিয়ে বলে, কই আর্টিস্ট তো রেসপন্স করে না।

ডিরেক্টর: সাধু ভাই, এটা প্রোমোতে লাগাবো, করেন না।

আমি: আমি নাচ পারি না।

হাফসা: আমি পারি, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।

হাফসা নাচ পারে শুধু না, শি’জ আলসো আ কোরিওগ্রাফার।

ডিরেক্টর: হাফসা, তুমি আগায়া নিয়া আইসো। সাধু ভাই, আপনি আপনার মত করেন না।

সিরিয়ালের সেটে

এরপর হাফসা হাতে ধরে শিখিয়ে দিল, আমি তাল মেলাতে পারতেছিলাম না, হাফসা স্টেপ বাই স্টেপ করল, করাইল। একটা সময় ঘুরে সে পড়ে যাবে, আমি ধরে ফেলার কথা। জানতাম না, চট করে ধরে ফেললাম। গুড শট। আবার নিবে। আমি বললাম, ওতো পড়ে যাচ্ছে, আমি ধরতে পারতেছি না।

ডিরেক্টর: ধরতে না পারলে সে পড়ে যাবে, আপনি করেন।

হাফসা: না আমি মাটিতে পড়তে পারব না।

হাফসাকে বললাম, তোমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে তো তোমার ফাটাফাটি লেগে যাবে। আমাদের মারবে তো।

হাফসা: মোটেও না, আমি রিলেশানের ব্যাপারে লয়্যাল। সে জানে এটা আমার প্রফেশান।

বাঁচলাম! আমাদের মারবে না। দুষ্টামি করে বললাম, যাক, পৃথিবীতে একজনকে পাওয়া গেল… লয়্যাল।

৫.
এই সিরিয়ালে আমি অনেক কিছু করতেছি যা আগে করি নাই, কেউ করায় নাই।

এই লেখা লেখার এইটাও একটা উদ্দেশ্য। ডায়ালগে ফিজিক্যালি আমাকে হিউমিলেট করা হইছে, আমি এলাউ করছি। আমার আপনজনেরা, তোমরা কষ্ট পেও না। প্রথমদিন শুটিং এখানে শেষ।

প্রথমদিন হিসাবে শুটিং আসলেই অনেক ভাল হইছে সব মিলায়া। পরের কী হবে জানি না। এসেই ইকবাল ভাইকে জানাইছি।