সফলতার জন্য কি শুধু ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা এবং নিয়ম মেনে কাজ করে যাওয়াই যথেষ্ট? উত্তরটা হলো, না। আমাদের মনে সহজাতভাবেই নানা রকম ভয়, দ্বিধা ও পরাজয়ের আশঙ্কা দানা বাধতে পারে। যা আমাদের সাফল্যকে প্রভাবিত করা ক্ষমতা রাখে। এগুলো হচ্ছে সাফল্যের পথে আমাদের মানসিক বাধা।

“নিজেকে নিয়ে সন্দেহ, ভয় ও অমনোযোগ’কে কখনো প্রশ্রয় দেবেন না। এই তিনটি জিনিস আপনার জীবনকে জটিল করে তোলে এবং ব্যবসায়িক সফলতায় বাধা দেয়।”
পল ইভান্স, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৬

মন আমাদেরকে আশা ও স্বপ্নের দিকে নিয়ে যায়। আবার আমাদের মন’ই আমাদেরকে বাধায় ফেলে মানসিক চাপ তৈরি করে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা হতাশায় পিছু হঠে আসি।


পল ইভান্স
অনুবাদ: মাহতাবুল আলম


উদ্যোক্তারা যে সমস্ত মানসিক চাপের মুখোমুখি হয় এখানে তার কিছু নমুনা দেওয়া হলো। একই সাথে এই চাপ মুক্তির জন্য কিছু টিপস থাকছে।

১. ছোট চিন্তা

“আপনি হয়তো বড় চিন্তা করতে পারেন না। আমি প্রায় ২০টা বই লেখার চিন্তা করি এবং অনেক বেশি কাজ করার কথা ভাবি। কিন্তু আপনি সামান্য একটা ব্লগ পোষ্ট করতেও গড়িমসি করেন।”
—অ্যালান উইজ

আমরা যদি প্রতি পদক্ষেপেই থেমে যাই তাহলে কখনোই মাইলফলক ছুঁতে পারব না। ছোট জিনিস নিয়ে বেশি চিন্তা করলে আমরা চিন্তার ফাঁদে আটকে যাই। আর এতে আমরা বড় কিছু অর্জন করতে বাধা প্রাপ্ত হই।

দীর্ঘসূত্রিতার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো “এখন” বা “এই মুহূর্ত”। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু সিদ্ধান্ত যেন অবশ্যই দৃঢ় হয়। তারপর সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সামনে এগিয়ে চলুন।

২. সন্দেহের আগুন

“বেশি চিন্তা করলে ভয়কে জয় করা যায় না। ভয় জয় করা যায় কাজ দিয়ে।”
—ডব্লিও ক্লিমেন্ট স্টোন

সন্দেহ যখন মনকে আচ্ছন্ন করে, ভয় তখন আমাদের চিন্তাকে দখল করে ফেলে। কাজ শুরু করলেই বোঝা যায় যে, সমস্ত ভয় ছিল কাল্পনিক। নিজেই নিজের ওপর ভয় চাপিয়ে দেয়ার মানে হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ ফলাফল ডেকে নিয়ে আসা।

আরো পড়ুন: ১০ মিনিটের যে রুটিন আপনার স্বচ্ছতা ও সৃজনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে

আপনি যত বেশি উৎসাহিত হন, তত বড় কাজ হয়ত করতে পারেন না। তবে আপনি যা করতে পারেন তা হচ্ছে ধাপে ধাপে এগিয়ে চলা। এভাবেই আপনি আপনার লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।

৩. ভবিষ্যৎ ব্যর্থতা

“ব্যর্থতা ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব। খুব বেশি সতর্ক থাকলে হয়তো ব্যর্থতা এড়ানো যায়। তবে এত বেশি সতর্ক থাকাকে বেঁচে থাকা বলা যায় না, এরকম হলে, আপনি এমনিতেও হেরে গেছেন।” 
—জে. কে. রাউলিং

কোনো কিছু লাভ করতে গিয়ে ব্যর্থ হলে আমরা অনেকেই সাধু হয়ে যাই। কাজ শুরু করার আগেই অনেক সময় ব্যর্থতাকে আগাম দেখতে পাই। আমরা যে কাজটি করতে চাই সেখানে হয়তো ব্যর্থতার কোন আশঙ্কাই নেই। তারপরও আমাদের মন যখন আগাম ভয় পেতে থাকে, আমাদের চিন্তা তখন অসাড় হয়ে যায়।

অতীত সফলতার কথা স্মরণ করে ভবিষ্যৎ ব্যর্থতাকে প্রতিরোধ করুন। অতীত থেকে তথ্য নিয়ে ভবিষ্যৎ নির্মাণ করুন।

যে ৭টি মানসিক বাধা আপনাকে সফল হতে দেয় না

ছোট জিনিস নিয়ে বেশি চিন্তা করলে আমরা চিন্তার ফাঁদে আটকে যাই। আর এতে আমরা বড় কিছু অর্জন করতে বাধা প্রাপ্ত হই।

৪. তথ্যহীন সিদ্ধান্ত

“সবখানেই ছড়িয়ে আছে অর্থনীতি। অর্থনীতি বুঝলে আপনি ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, এবং সুখী জীবন যাপন করতে পারবেন।”
—টেইলর কাওয়েল

আবেগ তাড়িত যেকোনো সিদ্ধান্তই বিপদজনক। কিন্তু তথ্যহীন বা কোন কিছু না জেনে সিদ্ধান্ত নেয়াটা আরও বেশি মারাত্মক। স্বভাবগতভাবেই বেশিরভাগ উদ্যোক্তা ঝুঁকি নিয়ে থাকেন। আমাদের প্রত্যেকের ভিতরেই থাকে একজন করে জুয়াড়ি। আর তাই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও আমরা সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারি।

আবেগ তাড়িত হয়ে জুয়া না খেলে হিসাবের খাতায় পরীক্ষা করে দেখুন। তাছাড়া বিচক্ষণ কারো কাছ থেকেও পরামর্শ নিতে পারেন। উত্তেজিত অবস্থায় সিদ্ধান্ত না নিয়ে সঠিকভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিন।

৫. অস্পষ্ট বা ঝাপসা দৃষ্টি

“কল্পনাশক্তি কাজ না করলে শুধুমাত্র চোখ দিয়ে দেখে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।”
—মার্ক টোয়েন

আপনি যেখানে যেতে চান তা সম্পূর্ণভাবেই নির্ভর করে আপনার কল্পনা শক্তির ওপর। অর্থাৎ কল্পনা শক্তির সহায়তায় আপনি সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে পারেন। আর এর ওপর নির্ভর করে আপনার সফলতা। তারপরও মাঝে মাঝে আপনার কল্পনা শক্তি গোলমাল করে ফেলতে পারে। এতে আপনি দিশেহারা হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আরো পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যে মনোযোগী হওয়ার ৭টি সহজ উপায়

চিন্তাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলুন। তাহলে সেগুলি আরো বেশি সুস্পষ্ট হবে। মনের মধ্যে কিছু ছোট ছোট জায়গা তৈরি করুন। তারপর ব্যবসার বিভিন্ন দিককে সেখানে আলাদা করে রাখুন। বিক্রি, বাজারজাতকরণ, এবং ব্যয়—এই বিষয়গুলি নিয়ে আলাদাভাবে ভাবুন। তা না হলে সবকিছু একসাথে মিলে আপনার চিন্তায় গোলমাল পাকিয়ে দেবে।

৬. জটিল হিসাব

“স্বচ্ছতা আসে সরলতার সাথে।”
—ব্রেন্ডন বারকার্ড

সমস্ত মানসিক বাধাই শেষে এসে ঠিক হয়ে যায়। দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার চেয়ে আস্তে ধীরে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া ভাল। এমন কিছু সময় থাকে যখন আমরা বন্ধুদের কাছে কোনো ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত চাই। কিন্তু সম্মিলিতভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবসময় দেরি হয়। খুব বেশি হিসাব নিকাশ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে।

নিজেকে প্রশ্ন করুন, “এক্স ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে দ্রুত ও নিরাপদ পথ কোনটি?” তারপর কাজে নেমে পড়ুন।

৭. উপদেশ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা

“মানুষের মনে যা থাকে এবং যা তারা বিশ্বাস করে, তাই তারা অর্জন করতে পারে।”
নেপোলিয়ন হিল

মানসিক বাধা যে সবসময় খারাপ ব্যাপারটা আসলে তেমন নয়। এটা অনেক ক্ষেত্রে ভালো কিছুও নিয়ে আসতে পারে। আমরা মাঝে মাঝে খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যাই। ধরেই নেই কোনো ব্যাপারে আমরা অবশ্যই সফল হব। আর এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে আমরা পুরো টিমকেও উৎসাহী করে তুলি। কাউকে উৎসাহিত করে কাজ করে নেয়াটা একটা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু এমন কিছু তথ্য আছে যেগুল থেকে আমরা জানতে পারি, মোটিভেশন দিয়ে সবসময় সফল হওয়া যায় না। এটা অনেক সময় আমাদেরকে হতাশার দিকেও ঠেলে দিতে পারে।

কাউকে নিয়ন্ত্রণ করার চেয়ে অনুপ্রাণিত করা ভাল। তবে যে কৌশল ব্যবহার করে আপনি কিছু অর্জন করেছেন অথবা হারিয়েছেন, সেই ব্যাপারে সৎ থাকতে হবে। “বাস্তবতা” শব্দটা কোন অভিশপ্ত শব্দ নয়। এই শব্দটা বরং আমারা যে দুনিয়ায় বাস করি সেটা তৈরি করে।

মনকে সম্পূর্ণরূপে বশে আনা যায় না। কাজেই মনের ভয় দূর করার জন্য ধৈর্য ও সাহসিকতার সাথে লড়ে যেতে হয়।

সূত্র. এন্টারপ্রেনার