এখন পর্যন্ত—বুধবার, ২৫ মার্চ ২০২০—ইতালিতে করোনা আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার, যার মধ্য থেকে মারা গেছে প্রায় ৭ হাজার জন। সেরে উঠেছে প্রায় ৯ হাজার। এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি অফ মেডিসিনের ‘করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টার’ এর ওয়েব সাইট থেকে।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের আশায় সারা ইতালি লক ডাউন করে দেওয়া হয়েছে। হসপিটালগুলি রোগীতে ভর্তি। বিশেষজ্ঞরা উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে চিন্তিত।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু যে দেশ থেকে সেই চায়নায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮১ হাজারের বেশি হলেও মারা গেছেন ৩,২০০ জনের মতো। জার্মানিতে বর্তমানে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ আক্রান্ত, অথচ মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৫০।

সারা বিশ্বে জনসংখ্যার অনুপাতে সবচাইতে বৃদ্ধ নাগরিক সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় ইতালি দুই নম্বরে আছে।

ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টার মতে, এরকম উচ্চ মৃত্যুহারের কারণ ইতালির মোট জনসংখ্যায় বয়স্ক মানুষের হার অনেক বেশি। সারা বিশ্বে জনসংখ্যার অনুপাতে সবচাইতে বৃদ্ধ নাগরিক সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় ইতালি দুই নম্বরে আছে। ইতালিতে হাসপাতালে থাকা রোগীদের গড় বয়স ৬৮, যা চীনে ছিল ৪৬। ইতালিতে মারা যাওয়া রোগীদের শতকরা ৮৭ ভাগেরই বয়স সত্তরের ওপর।

কিন্তু আরেকটি কারণ এটাও হতে পারে যে, ইতালিতে মৃতদের সংখ্যা গণনার ক্ষেত্রে ডাক্তাররা অনেক বেশি উদারনৈতিক ছিলেন। করোনাভাইরাস সাথে নিয়ে যারা হসপিটালে আসছেন, তারা মারা গেলে তাদের সবার মৃত্যুর কারণ হিসাবে কোভিড১৯-কেই ধরা হচ্ছে। অথচ ইতালির জাতীয় স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পুনর্মূল্যায়নে দেখা গেছে, মাত্র ১২ শতাংশের মৃত্যুর সরাসরি কারণ ছিল করোনা ভাইরাস। বাকি ৮৮ ভাগ আগে থেকেই অন্তত একটি, কেউ কেউ একাধিক, অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

তবে এটাও ঠিক যে ইতালির স্বাস্থ্যকর্মীরা উপর্যুপরি আক্রান্তের ঘটনায় সামলে উঠতে পারছেন না। ডাক্তারদেরকে একসাথে ১২০০ পর্যন্ত রোগীর চিকিৎসা করতে হচ্ছে। “বরং তারা যে এতজনের জীবন বাঁচাতে পারছেন, সেটাই তো ছোটখাটো একটা মিরাকল,” বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হেলথ ইমার্জেন্সি প্রোগ্রামের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর।

অবশ্য করোনাভাইরাস যে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুতে একেবারে কোনো ভূমিকা রাখছে না তাও না। বরং করোনাভাইরাস ছাড়াও ইতালির রোগীদের একটা বড় অংশ আগে থেকে নানারকম ব্যাধিতে ভুগছিলেন এতে তাই প্রমাণিত হয়।

ইতালিতে ধূমপান এবং দূষণের মাত্রাও তুলনামূলক বেশি। দেশটির উত্তরে লোম্বারদি অঞ্চলের মানুষ করোনায় সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন—যে জায়গাটি আগে থেকেই বায়ুদূষণের জন্য কুখ্যাত।

একই সাথে ইতালির প্রায় ২০০০ স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইতালি একটি ফেডারেল রাষ্ট্র হওয়ায় সেখানে স্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ন্ত্রণ খাতে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে নজরদারি জারি রাখা কঠিন। কারণ তাদের জনস্বাস্থ্যের বেশিরভাগ অনুষঙ্গই একেবারে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠিত।

তবে বিশেষজ্ঞদের মত, এখনই বিভিন্ন দেশের ড্যাটা সরাসরি তুলনা করা ঠিক হবে না। কারণ কেউই নিখুঁতভাবে জানতে পারছে না যে কতজন মানুষ মাইল্ড ইনফেকশনের শিকার হয়েছেন। সেটা জানা গেলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা যেমন জানা যাবে, সেই সাথে মৃত্যুহারও কমে আসবে।

সূত্র. টেলিগ্রাফ