খ্রীষ্টের জন্মের ৩৪৭ বছরেরও আগে প্রাচীন গ্রিসে প্লেটো নামের এক দার্শনিক ছিলেন। তিনি ‘একাডেমি’ নামের একটি ট্রেনিং স্কুল গড়ে তোলেন। যেখানে বেশির ভাগ সময়ে আলাপের মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিতেন তিনি।

কোনো একদিন সকালবেলায় প্লেটো এবং তার কয়েকজন ছাত্র ঈজিয়ান সাগরের তীরে পাথরের ওপর বসে ছিলেন। তারা ওইদিন রাজধানী এথেন্স থেকে বাইরে এসেছেন। সে দিন তাদের আলাপের বিষয় ছিল দাঁত। আরো নির্দিষ্ট করে বললে ঘোড়ার দাঁত নিয়ে কথা বলছিলেন তারা।

প্লেটো ছাত্রদের জিজ্ঞেস করলেন, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ঘোড়ার মুখে কয়টা দাঁত আছে বলে তারা মনে করে।

প্লেটোর ছাত্র গ্লাওকন বললেন, ঘোড়ার মুখ যেহেতু খুব ছোট, অতএব ঘোড়ার মুখে ১৫ টার বেশি দাঁত নাই।

অন্য ছাত্র থ্রাসাইমাকাস সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে উঠলেন, ননসেন্স। একজন বোকাও ঘোড়ার অতবড় লম্বা চোয়াল দেখে বুঝতে পারবে ঘোড়ার মুখে অবশ্যই ৪২টা দাঁত আছে।

আলোচনা বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। প্লেটো দেখলেন ঘোড়ার দাঁত বিষয়ক আলোচনা নিয়ন্ত্রণ করার সময় এসেছে। তিনি বললেন, গ্লাওকন বলেছে যে একটা ঘোড়ার মুখ ছোট তাই ঘোড়ার দাঁত ১৫টা, আর থ্রাসাইমাকাস বলেছে যে একটি ঘোড়ার চোয়াল যেহেতু বড় সুতরাং ঘোড়ার দাঁত ৪২ টা। প্লেটো এই ভাবে আলোচনার একটা সারসংক্ষেপ দাঁড় করালেন ঠিকই, কিন্তু নিজের মত দিলেন না।

প্লেটোর এই সার সংক্ষেপের পরে আরিস্তোফানিস তার পোষা ব্যাঙটি পাশে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, একটা ঘোড়ার ২৩টা দাঁত থাকে, কারণ দেখা গেছে এক ব্যাগ খড় খেতে ঘোড়াদের ২৩ মিনিটের মতো সময় লাগে।

এরপরও টানা দুইদিন দুইরাত এই আলোচনা চলল, কিন্তু কোনো দাঁতের সংখ্যার কোনো নিষ্পত্তি মিললো না।

পরদিন প্লেটো এবং তার দল রাজধানী এথেন্সে ফিরে এসেছেন। সক্রেটিসও যোগ দিলেন তাদের আলোচনায়।  কিন্তু পুরা আলোচনায় সক্রেটিস কোনো কথা বললেন না। তিনি সমুদ্র সৈকতে মানুষ বহন করতে থাকা একটা ঘোড়া থামালেন। এরপর ঘোড়ার মুখ খুলে দাঁত গুণে দেখার পরামর্শ দিলেন তাদের।

সক্রেটিসের এই পরামর্শ শুনে সবাই এত আশ্চর্য হলো যে তিনদিনে এই প্রথম দলটির মুখ বন্ধ হতে দেখা গেল।