ইন্টারনেটের বদৌলতে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি মানুষ টেলিওয়ার্কিং করছেন বা ঘরে বসেই অফিসের কাজ করছেন। এর মানে আগের তুলনায় কাজ এখন আপনার অনেক বেশি সময়ও নিয়ে নিতে পারছে। যা আপনি ফেইয়েরাবেন্ড (Feierabend) নামে পরিচিত জার্মান একটি কৌশল অবলম্বন করে ঠেকাতে পারেন।

ফেইয়েরাবেন্ড হল জার্মানদের তৈরি একটি কৌশল যার মাধ্যমে লোকে কাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে। কারণ, যেমনটি আমরা সবাই জানি, কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমারেখা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অস্পষ্ট হয়ে এসেছে। বাস্তবে, কিছু ক্ষেত্রে, আপনি হয়ত সারাদিনে কম বা বেশি কাজ করছেন।

বিশেষ করে আপনি যদি দূর থেকে তথা বাড়িতে বসে কাজ করেন তাহলে এটি সত্য। আপনার কাছে অনবরত ইমেইল এবং মেসেজ আসছে। এর অর্থ হল সত্যিকার অর্থে আপনার কোনো বিরতি নেই। ফেইয়েরাবেন্ড এই সমস্যার একটি সমাধান দেয়।

আপনি যখন নিজের কাজ থেকে নিজেকে আর বিচ্ছিন্ন করতে পারবেন না তখন আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনের ওপরও নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবে। ফেইয়েরাবেন্ড আপনাকে আপনার কাজের চাহিদাগুলি থেকে শারীরিক এবং মানসিক বিরতি নেওয়ার সুযোগ এনে দেবে।

 

টেলিওয়ার্কিংয়ের বৈশিষ্ট্য

টেলিওয়ার্কিং-এর মানে হল আপনাকে এখন আর কর্মস্থলে যেতে হয় না এবং কর্মস্থল থেকে ফিরে আসতে হয় না। তবে আগে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় ট্র্যাফিক জ্যাম এবং জনতার ভিড়ের কারণে হলেও আপনি এমন কিছুটা সময় পেতেন যখন কাজ করতে হতো না।

টেলিওয়ার্কিং-এর ফলে এই অফিস যাত্রা এখন আর নাই। তার পরিবর্তে এখন আপনি যখন খুশি তখন কাজ করতে পারেন। এমনকি আপনি চাইলে এখন অফিস টাইমের অনেক আগেই কাজ শুরু করতে পারেন আর অফিস টাইম শেষ হওয়ার অনেক পর পর্যন্তও কাজ করতে পারেন। আবার কখনো কখনো দরকার হলে আপনি হয়তো মধ্যরাতে জেগে উঠে কাজ করতে পারেন।

আগে আপনি যখন অফিসে যেতেন তখন আপনার দিনটা বৈচিত্র্যময় হত। কারণ তখন ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় ভ্রমণ করতেন, ভিন্ন ভিন্ন লোক দেখতেন এবং চারপাশে ঘুরতেন। কিন্তু টেলিওয়ার্কিং আপনাকে শারীরিক ভাবে অনেক বেশি নিষ্ক্রিয় তুলেছে।

 

ফেইয়েরাবেন্ড কী?

আপনার কর্মদিবস শেষ হওয়ার সাথে সাথে আপনি যখন বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান সেই মুহূর্তের অনুভূতিকে ফেইয়েরাবেন্ড বলে। এটি একটি জার্মান শব্দ। আপনি আপনার করণীয় সব কাজ শেষ করার পর আপনার মধ্যে যে অনুভূতি তৈরি হয় তাকেই বলে ফেইয়েরাবেন্ড। এই মুহূর্তে আসলে আপনার মধ্যে বিশেষ এক সন্তুষ্টির অনুভূতি তৈরি হয়। কারণ আপনি যা করতে চেয়েছিলেন তা আপনি করে ফেলেছেন। এবং আপনি এখন নিজের মতো করে সময় কাটানোর সুযোগ পেয়ে গেছেন।

ফেইয়েরাবেন্ড হল অনেকটা আপনার আগের অফিসে যাওয়া-আসার সময়কার যাত্রাটুকুর মতোই। প্রকৃতপক্ষে, টেলিওয়ার্কিং-এর ক্ষেত্রে কোনো অফিস যাত্রা নেই দেখেই জার্মানরা এই কৌশলটির উদ্ভাবন করেছেন। আর তা হল, কাজ শেষ করার পর বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে আসা।

এর পেছনের ধারণাটি হল, কাজ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সুতরাং আপনি যদি সন্ধ্যা ৬টায় কাজ শেষ করেন এরপর বাইরে গিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করে আসুন। আপনার রিল্যাক্স করার টাইম শুরু হল। এখন আপনার কাজ এবং বিশ্রামের মধ্যে পরিষ্কার একটি ছেদবিন্দু তৈরি হয়েছে।

 

ফেইয়েরাবেন্ড-এর সুবিধা

আপনি যখন টেলিওয়ার্কিং বা বাড়িতে বসে কাজ করবেন তখন আপনি সবসময়ই একটু বেশি সময় ধরেই কাজ করতে চাইবেন। উদাহরণত, আপনি বিরতি ছাড়াই একটানা কোনো কাজ সম্পন্ন করতে চাইবেন। এরপর আপনি শারীরিকভাবে কাজ করা বন্ধ করতে পারলেও মানসিকভাবে কাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারবেন না। কারণ কাজের পরিবেশ থেকে বের হতে না পারলে কাজ থেকে মানসিক ভাবে বিচ্ছিন্ন হওয়া যায় না।

মুখোমুখি অফিসে বসে কাজ করা এবং অবসরের মধ্যে একটা সীমারেখা থাকে, একটা শুরু এবং একটা শেষ সময় থাকে। কিন্তু টেলিওয়ার্কিং করলে এই সীমারেখাটি অস্পষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করে থাকেন। এবং আপনার কর্মজীবন আর ব্যক্তিগত জীবন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এটা খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। সুতরাং সব সময়ই কাজ এবং ব্যক্তিগত জীবনকে আলাদা করার জন্যে মাঝখানে একটা সীমারেখা রাখতে হবে।

এই কারণেই ফেইয়েরাবেন্ড কৌশলটি এতটা ইতিবাচক, যা কাজের আগের এবং পরের সময়ের মধ্যে একটি সীমারেখা এঁকে দেয়। আপনি প্রতিদিন একই সময়ে হাঁটাহাঁটি করে আপনার কাজ এবং বিশ্রামের সময়ের মধ্যকার সীমারেখাটি স্পষ্ট করে তোলেন। এটা শুধু আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যই নয় বরং আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্যও জরুরি।

“ফেইয়েরাবেন্ড” শব্দটির একেবারে সঠিক কোনো অনুবাদ আছে বলে মনে হয় না। অনেকে বলছেন, এর মানে হল “সুখের সময়”। অনেক আবার বলছেন এটি “আপনার মূলের সাথে পুনরায় সংযোগ স্থাপন” করার মতোই। এর অর্থ যাই হোক না কেন, সত্য হল এটি দিনের সেই মুহূর্তের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যখন আপনার কাজের দায়িত্ব শেষ হয়। যে কোনো মূল্যে এটা সংরক্ষণ করা উচিত।