এভাবে ভেবে দেখুন, আপনি যা খাবেন তার পুরোটাই আপনার বাগানে চাষ করা ফসলের থেকে আসবে। এমন বাগান কি বানাতে পারবেন?

সার্ভাইভাল গার্ডেনকে বারান্দায় লাগানো কিছু ফুল ও মরিচের গাছ ভেবে ভুল করবেন না। বেঁচে থাকার জন্যে আপনার ও আপনার পরিবারের খাদ্যের ঘাটতি যাতে পূরণ হয়, সেজন্যেই এই বাগান। মূলত প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেই খুব যত্ন আর সতর্কতার সাথে গড়ে তোলা হয় সার্ভাইভাল গার্ডেন।


শেরিল মেগিয়া
অনুবাদ: ফারহান মাসউদ


আবার যে শুধু কোনোমতে বেঁচে থাকার জন্যে সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করবেন, তা না। বরং বাগানে উৎপাদিত ফসল থেকেই যাতে আপনার পরিবারের ক্যালোরির ঘাটতি পূরণ হয়, সেই ব্যবস্থা করাটাও আপনার উদ্দেশ্য হবে। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখতে হবে, যাতে বাগান থেকেই প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, চর্বি, কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও ভেষজ ওষুধ পাওয়া যায়।

যদি মনে করেন বাগান করার ক্ষেত্রে দক্ষ হওয়াটা জটিল একটা কাজ, তাহলে এবার বেঁচে থাকার জন্য বাগান করার কথা চিন্তা করুন!

এভাবে ভেবে দেখুন, আপনি যা খাবেন তার পুরোটাই আপনার বাগানে চাষ করা ফসলের থেকে আসবে। এমন বাগান কি বানাতে পারবেন? অথবা একবার অন্তত চেষ্টা করে দেখতে চান?

এমনভাবে বাগান করতে হবে, যেন আপনার আশেপাশে কোনো দোকান নেই, কোনো খামার নেই। মোটকথা এভাবে চিন্তা করতে হবে যে, নিজের ওপর নির্ভর করা ছাড়া আপনার সামনে কোনো উপায়ই খোলা নেই। তাহলেই আপনি সার্ভাইভাল গার্ডেন করার ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন।

সার্ভাইভাল গার্ডেন কেন বানাবেন?

একবার ভাবুন, খাবার আর অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কেনার জন্য আপনি কত ঘন ঘন বাইরে যান? সপ্তাহে একবার? দুই সপ্তাহে একবার? মাসে একবার? নাকি আরো কম?

যদি কোনো পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে ঘরে থাকতে হয় (যেমন কোভিডকালীন সময়), তাহলে বাগানের তাজা শাক সবজি আপনার জীবন বাঁচাতে পারে। এমনকি পরিবারের সবার চাহিদা মেটানোর পরে আপনি ভবিষ্যতের জন্যেও জমা করে রাখতে পারেন। এভাবে বাসা থেকে বের না হয়েই আপনি বেশ কয়েক মাস ধরে তাজা খাবার খেতে পারবেন।

আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বাজার থেকে সাধারণ যেসব ফলমূল কিংবা সবজি কেনা হয়, সেগুলির তুলনায় বাগানে উৎপাদিত সবজির মান ভালো হয়। অনেক সময় বাজারের সবজি তাজা রাখার জন্য বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এইসব কেমিক্যাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সেই তুলনায় কেমিক্যালের ভয় ছাড়াই বাগানে চাষ করা সবজি বা অন্যান্য ফসল খেতে পারেন।

এছাড়াও বাগানে নিজের ইচ্ছামতো ফলমূল কিংবা শাকসবজি চাষ করতে পারবেন। সচরাচর সারা বাজার খুঁজেও যেসব সবজি বা ফল পাওয়া যায় না, সেগুলিও ফলাতে পারবেন।

ঘরের বাইরে, ছাদে অথবা বারান্দায় সময় কাটানোর একটা চমৎকার উপায় হলো বাগান করা। এতে করে একদিকে যেমন আপনার মানসিক চাপ কমে, তেমনভাবে শরীর ঠিক রাখার মতো পর্যাপ্ত ব্যায়ামও হয়।

সার্ভাইভাল গার্ডেনিং শুরু করার সময়

প্রাথমিকভাবে ছোট পরিসরে বাগান করা শুরু করুন। এরপরে আস্তে আস্তে শখের বাগান থেকে ফসল উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিন।

কয়েকদিন বাগান করেই আপনি সার্ভাইভাল গার্ডেনিংয়ের ক্ষেত্রে সফল আর অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে পারবেন না। এজন্যে বেশ কয়েক বছরের বাগান করার অভিজ্ঞতার দরকার হবে। মাটি তৈরি করা থেকে শুরু করে ফসল তোলা পর্যন্ত বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে বাগানে ফসলের উৎপাদন কেমন হবে।

যেমন, বীজ সংরক্ষণ ও রোপণ করার সময়, চাষ করতে থাকা উদ্ভিদ সম্পর্কে জানাশোনা।

কিন্তু প্রথমেই এতকিছু নিয়ে ভেবে হতাশ হবেন না। কোনো একটা জায়গা থেকে তো শুরু করতেই হবে আপনাকে।

আরো পড়ুন: মাইকেল পোলান এর ‘ইন ডিফেন্স অফ ফুড’ থেকে

কোথা থেকে শুরু করবেন? উত্তরটা হলো বাগানে। ছোট কিংবা বড় হোক, যেকোনো ধরনের বাগানে। দক্ষতা বাড়ার সাথে সাথে আপনি নিজের বাগানের পরিসর বাড়াতে পারবেন। এভাবে আপনার বাগান বড় হতে হতেই একটা সময় সেখানে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।

বাসার আশেপাশে যদি খোলামেলা জায়গা থাকে, তাহলে বাগান করাটা আপনার জন্য সহজ হবে। যদি শহরের কোনো ফ্ল্যাটেও থাকেন, তাহলেও চিন্তা নেই। বাসার বারান্দা বা ছাদেই শুরু করতে পারেন আপনার নিজের বাগান। শুধু নিয়মিত বাগান করার জন্যে কাজ করে যেতে হবে। যেসব বিষয়ে আপনার জানাশোনা বাড়াতে হবে, তার কয়েকটা হলো:

  • বীজ চিনতে শেখা
  • বীজ বপণ
  • বীজ সংরক্ষণ
  • লতা জাতীয় সবজি বা উদ্ভিদের ব্যাপারে ধারণা
  • বাগান যেভাবে সাজাবেন, তার পরিকল্পনা
  • সঠিক সময়ে বাগানের ফসল তোলা
  • দীর্ঘ সময় ধরে ফসল সংরক্ষণ করা
  • পশু-পাখি পালন করা
  • জৈবসার তৈরি করা
  • ভার্মিকম্পোস্টিং বা সার তৈরিতে কেঁচো ব্যবহার করা

বাগান তৈরি করার জন্য যেই পরিমাণ জ্ঞান বা পরিশ্রমের দরকার হবে, তার কথা চিন্তা করে কখনোই হতাশ হবেন না।

এমন বাগান করার ক্ষেত্রে আপনি সফল হতে পারলে অনেক বিষয়েই আপনার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। আপনি নিজে কী খেয়ে বেঁচে থাকতে চান, সারাবিশ্বে কীভাবে খাদ্যের উৎপাদন হচ্ছে অথবা পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়, তা নিয়ে আপনি নতুন করে ভাবতে পারবেন।

সার্ভাইভাল গার্ডেনের পরিকল্পনা করা

বাগানে যেসব গাছ লাগাবেন, সেগুলির জন্য প্রয়োজনীয় বীজ কেনার মতোই বাগানের জন্য পরিকল্পনাও করা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বাগানের জন্য বীজ বাছাই করার ক্ষেত্রে সবসময় ওপেন পলিনেটেড বা উন্মুক্ত পরাগায়ন ঘটেছে এমন বীজ রোপণ করবেন। এতে করে নিজের ফলানো ফসল থেকেই আপনি বীজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এর মানে হলো পরের মৌসুমের বীজের জন্যে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। পর্যাপ্ত বীজ থাকলে, সেইসব বীজ থেকে ভালো ফসল হলে আপনার পরিবারের সবার খাওয়ার পরে সেইসব ফসল এমনকি বাইরেও বিক্রি করতে পারবেন।

মনে রাখুন, একটা সার্ভাইভাল গার্ডেন আর আটদশটা বাগানের মতো না। পৃথিবীর সবার সাথে আপনার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সার্ভাইভাল গার্ডেনই হবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। তাই আপনি যতটা খেতে পারবেন বলে চিন্তা করেন, তার চাইতেও বড় পরিসরে পরিকল্পনা করতে হবে। অতিরিক্ত ফসল ফলাতে পারলে যেকোনো সময়ই আপনি এর সুবিধা পাবেন।

সাধারণত খরা কিংবা গাছের রোগ হওয়ার কারণে যেকোনো মৌসুমেই ফলন খারাপ হতে পারে। এছাড়া নষ্ট বীজ, মাটিতে পুষ্টির অভাব বা কীটপতঙ্গের আক্রমণের মতো বহু কারণেই ফসলের পরিমাণ কমে আসতে পারে। এসব ব্যাপার মাথায় রেখে আপনাকে অনেক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বহুবর্ষজীবী এবং বর্ষজীবী, দুই ধরনের ফসলই রোপণ করুন। ফলের কথা মাথায় রেখে বাগানে গাছ, বাঁশ জাতীয় উদ্ভিদ আর ঝোপঝাড় রাখুন। ঔষধি আর শাঁক জাতীয় কিছু গাছ লাগান।

রোদ আর ছায়ার কথা চিন্তা করে বাগানের গাছগুলি সাজান। যেসব গাছের বেশি রোদের প্রয়োজন হয়, সেগুলি রোদেলা জায়গায় রাখুন।

অল্প অল্প করে হলেও সব ধরনের ফসল ফলানোর চেষ্টা করুন। এতে করে মজাদার সব ফল আর সবজির মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার দেহের পুষ্টির মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ হবে।

সার্ভাইভাল গার্ডেন কত বড় হওয়া উচিৎ?

সার্ভাইভাল গার্ডেন কত বড় হবে, সেটা বেশ কয়েকটা বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। যেমন:

১. শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সহ কতজনের খাবারের জন্য আপনি বাগানটা তৈরি করছেন।
আপনি কোন ধরনের ফসল ফলাতে চাচ্ছেন। কারণ, কিছু উদ্ভিদের জন্য বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়।
২. আপনি যেখানে বাস করেন, সেই জায়গার মাটি কেমন। এছাড়া, আপনার বাসার আশেপাশের আবহাওয়া কেমন।
৩. বাগান করার ব্যাপারে আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা।
৪. নিজের আর পরিবারের খাওয়ার জন্য বাগানের পেছনে কতটা সময় আপনি ব্যয় করতে প্রস্তুত আছেন।

এ বিষয়গুলি বিবেচনা করার পর আপনার ঠিক কতটুকু জায়গা লাগবে, তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। আপনার পরিবারে কতজন মানুষ আছে আর কোন ধরনের সবজি আপনি খেতে চান, তার ওপরে নির্ভর করে চাইলে কেউ ২ একর পর্যন্ত জায়গা জুড়েও বাগান করতে পারবে।

তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে ঘাবড়াবেন না। এমনকি বারান্দার মতো ছোট জায়গাতেও অনেক ধরনের সবজি ফলানো সম্ভব।

যেই বাগান আপনার পরিবারের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণ করতে পারে, সেটাই সবচেয়ে ভালো সার্ভাইভাল গার্ডেন।

ছোট পরিসরেই বাগান শুরু করুন। এরপর প্রতি বছর সার্ভাইভাল গার্ডেনের আয়তন বাড়াতে থাকুন, যতক্ষণ না বাগানের জমি আর বিভিন্ন ধরনের গাছ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট হচ্ছেন। এমনকি ছোট বাগানেও অনেক সময় ভালো ফলন হতে পারে। তাই বাগানের আয়তন নিয়ে হতাশ হয়ে পড়বেন না। বরং যতটুকু জমি আছে, ততটুকুই কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

আরো পড়ুন: ভার্টিকাল ফার্মিং: যে ১৩ উদ্ভাবন বদলে দেবে কৃষির ভবিষ্যৎ

মাটি থেকে কিছুটা উঁচুতে তৈরি করা বেড কিংবা পাত্রে লাগানো গাছ থেকে ফসলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা সহজ। এছাড়াও সেগুলির পেছনে কম সময় ব্যয় করার কারণে বাগানের অন্যান্য জিনিস পরিচর্যা করার সুযোগ পাবেন।

বাগান করার ক্ষেত্রে দক্ষ হওয়ার মানে হলো, সম্পূর্ণ জমি কৌশলের সাথে ব্যবহার করা।

সার্ভাইভাল গার্ডেনে কী রোপণ করবেন

সবজির চাহিদা যদি নিজেদের বাগান থেকেই পূরণ করতে চান, আপনাকে অবশ্যই ভালো কিছু খেতে হবে।

লাউ বা কুমড়া জাতীয় সবজিতে প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, আয়রন আর ম্যাঙ্গানিজ থাকে। তবে আপনি যদি এই ধরনের সবজি না খান, তাহলে অবশ্যই বাগানে এগুলি চাষ করার মানে হয় না।

একই কথা অন্য যেকোনো সবজির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মুলা বা করলার ক্ষেত্রেই ধরা যাক। কিছু মানুষ এই সবজিগুলি খেতে অনেক পছন্দ করেন। আবার অনেকেই আছেন, যারা একবেলার খাবারেও এই সবজিগুলি খেতে চান না। তাদের কারো বাগানে অবশ্যই আপনি এই সবজিগুলি চাষ হতে দেখবেন না।

যদি নিজের খাবার উৎপাদন করার পেছনে সময় খরচ করতে চান, তাহলে অবশ্যই খাবারগুলি খেতেও মজার হতে হবে।

খাবারের পুষ্টিগুণ নিয়েও এ লেখায় আলোচনা করা হবে। তবে নিজের বাগানে কোন গাছগুলি লাগাবেন, সেই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো নিজের খাদ্যাভ্যাসের দিকে তাকানো। সাধারণত বাজার থেকে যেসব সবজি কেনেন, সেগুলি চাষ করাই সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি।

এরপরে আস্তে আস্তে আপনার বাগান করার দক্ষতা বাড়তে থাকলে একটা সময় এমন সব সবজির চাষ শুরু করতে পারবেন, যেগুলির ব্যাপারে কখনো ভাবেননি। ঢেঁড়স, শতমূলী বা পটল হতে পারে এমনই কিছু সবজির নাম।

পরিবার খেতে পছন্দ করে, এমন শাকসবজি চাষ করুন

এর গুরুত্বের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। কোনো সবজি যদি নাই খাওয়া হয়, তাহলে সেটা চাষ করে কী লাভ?

কারণ বিকল্প হিসেবে এমন অনেক সবজি বা ফল রয়েছে, যেগুলি আপনার পরিবারের সবাই খেতে পছন্দ করে। না চাইলেও কিছুটা খাবার সবসময়ই নষ্ট হয়। আপনি বা আপনার পরিবার যা খায় না, সেগুলি চাষ করলে নষ্ট হওয়া খাবারের পরিমাণ বাড়তে পারে।

অবশ্য যেসব সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলি দিয়ে যেকোনো সময়ই সার তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু খাওয়ার জন্যই যেহেতু চাষ করছেন, সবাই যেন খেতে পারে সে চেষ্টা করাই ভালো। আবার এই সুযোগে পরিবারের যারা ছোট আছে, তাদেরকেও বাগান করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে পারেন। এভাবে তারা নিজেরাই শিখতে পারবে, তারা যেই সবজিগুলি খেতে পছন্দ করে, সেগুলি কীভাবে চাষ করতে হয়।

আপনার সার্ভাইভাল গার্ডেনের পরিকল্পনা করা বা বীজ রোপণ করার আগেই পরিবারের কথা চিন্তা করুন। সাধারণত আপনার বাসার সবাই যেসব সবজি খায় বা পছন্দ করে, সেগুলির একটা তালিকা তৈরি করুন। এরপরে সেই তালিকায় বহুবর্ষজীবী আরো কিছু ফসল যোগ করতে থাকুন। এছাড়াও এমন কিছু ফসল যোগ করুন, যেগুলি চাষ করা সহজ।

যেসব ফসল চাষ করা সহজ

খাবারের ব্যাপারে চিন্তা করে যদি এবারই প্রথমবারের মতো বাগান তৈরি করার কথা ভাবেন, তাহলে পছন্দের সবজি ছাড়াও আপনার অন্য কিছু ফসল চাষ করা উচিৎ। সেক্ষেত্রে এমন সব ফসল ফলানোই ভালো, যেগুলি চাষ করাটা সহজ।

মাঝেমধ্যে দেখা যেতে পারে, আপনার পছন্দের কিছু ফলমূল বা শাকসবজি চাষ করাটাই সহজ। আপনার ক্ষেত্রেও এমনটা হলে ভাগ্য ভালোই বলতে হবে।

সহজেই চাষ করা যায় এমন শাকসবজি দিয়ে বাগান করা শুরু করলে প্রথম থেকেই নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে। একইসাথে আপনার অভিজ্ঞতাও বাড়বে। ফলে যেসব ফসল চাষ করা কঠিন, ভবিষ্যতে সেগুলি চাষ করার ব্যাপারেও আগ্রহ তৈরি হবে।

প্রাথমিকভাবে চাষ করার জন্য সহজ কিছু ফসলের তালিকা দেয়া হলো। একে একে এই ফসলগুলি কীভাবে রান্না করতে হয়, সংরক্ষণ করতে হয় বা এগুলি দিয়ে কীভাবে আচার বানাতে হয়, সেগুলি নিয়ে জানাশোনা বাড়ান। এমনকি সরাসরি গাছ থেকে নিয়ে খেলেও কীভাবে খেতে হবে, তা জানতে থাকুন।

  • বাদাম
  • গাজর
  • লেটুস
  • মটরশুটি
  • আলু
  • সূর্যমুখী
  • ধুন্দুল

যেসব ফসল সংরক্ষণ করা সহজ

ফসল নির্বাচনের ক্ষেত্রে খাওয়া বা চাষ করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করার পরেই যেই বিষয়টা নিয়ে ভাববেন, সেটা হলো সংরক্ষণ করা। যেসব ফসল সহজে সংরক্ষণ করা যায়, সেগুলি চাষ করার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দিন।

মৌসুম চলে গেলে সাধারণত প্রতিদিন আপনি সবুজ শাকসবজি খেতে পারবেন না। বিশেষ করে যখন আপনার কাছে আগের মৌসুমে সংরক্ষণ করা প্রচুর ফসল রয়ে যাবে।

ফসল সংরক্ষণ করা বলতে প্রথমেই শুকিয়ে কিংবা টিনের কৌটায় রেখে দেয়ার ব্যাপারটা মাথায় আসে। তবে মৌসুম চলে যাওয়ার পরেও অনেক ফসল শুকনা, ঠাণ্ডা আর বায়ু চলাচল করে এমন জায়গায় রেখে দেয়ার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা যায়।

কমলালেবু, কাঁঠাল, আঙুর, আপেল, আনারস, আম, খেজুরসহ অনেক ধরনের ফলই টাটকা অবস্থায় সংরক্ষণ করা যায়। এছাড়া ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়ার মাধ্যমেও আপনি অনেক ফল বা ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন। সংরক্ষণ করতে পারবেন, এমন কিছু সবজির তালিকা নিচে দেয়া হলো।

  • বাঁধাকপি
  • রসুন
  • পেঁয়াজ পাতা
  • পেঁয়াজ
  • কচু
  • শালগম
  • ওলকপি
  • লাউ

আপনার ফসল কতদিন ধরে সংরক্ষণ করতে পারবেন, তা বেশ কয়েকটা বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। ফসলগুলি কী, কোথায় সংরক্ষণ করছেন আর আপনার সংরক্ষণ করা ফসল কতদিন ধরে খাচ্ছেন, সেগুলির ওপর ভিত্তি করেই সংরক্ষণের অবস্থা বোঝা যাবে।

বহুবর্ষজীবী ফসল

বছরের পর বছর ধরে নির্ভর করার জন্য বহুবর্ষজীবী ফসলের কিছু গাছ ছাড়া যেন কোনো বাগানই পরিপূর্ণ হয় না। এধরনের ফসল উৎপাদনের জন্য বীজ সংরক্ষণ করার ঝামেলা নেই। এছাড়া রোদ বা ছায়া নিয়েও চিন্তা করতে হয় না।

বহুবর্ষজীবী ফসলের চাষ করলে সময়ের সাথে সাথে কিছু বিষয় লক্ষ্য করবেন। যেমন,  রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেসব গাছের পেছনে যাতে খুব বেশি সময় দিতে না হয়। আবার অনেক পানি দিতে হয় এমন গাছও যেন না হয়।

আর্র পড়ুন: মাইকেল পোলানের মত করে রান্না করবেন যেভাবে

বহুবর্ষজীবী ফসল চাষ করলে আপনার সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে। তাছাড়া এধরনের গাছ থাকার ফলে বছরের আরো বেশি সময় ধরে আপনার বাগানে ফসল জন্মাবে।

আপনি যদি সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করার কথা ভেবে থাকেন, তাহলে বাগানে চাষ করার মতো এ ধরনের বহুবর্ষজীবী ফসল উৎপাদন করতে পারেন:

  • সফেদা
  • লিচু
  • কাঁঠাল
  • বাতাবীলেবু
  • পারসিমন
  • প্যাশন

এছাড়াও বহুবর্ষজীবী বিভিন্ন ফল অথবা বাদামের গাছ লাগিয়ে নিজের বাগানকে সাজিয়ে তুলতে পারেন।

এবার ভেষজ উদ্ভিদ নিয়ে আলোচনা থাকছে। মসলা বা ওষুধ, দুই ধরনের কাজেই আপনি এই উদ্ভিদগুলি ব্যবহার করতে পারেন।

ভেষজ উদ্ভিদ

আপনি যেমন বাগানে মৌসুমি আর বহুবর্ষজীবী ফসলের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে চান, তেমনি ভেষজ উদ্ভিদ থাকাটাও বাগানের জন্য প্রয়োজনীয়।

ভেষজ উদ্ভিদ অল্প জায়গার মধ্যেই রোপণ করা যায়। চাইলে এই উদ্ভিদগুলি কোনো পাত্রে বড় করতে পারেন। অথবা বাগানের অন্যান্য গাছের মাঝখানেও এধরনের উদ্ভিদ রোপণ করতে পারেন।

প্রথমে রান্নায় নিয়মিত ব্যবহার করবেন এমন ভেষজগুলি চাষ করুন। এরপর স্বাদ আর মসলার কথা চিন্তা করে আস্তে আস্তে অন্যান্য উদ্ভিদের চারা লাগাতে শুরু করুন।

যেসব ভেষজ উদ্ভিদ বাগানে লাগাতে পারেন:

  • তুলসি
  • পুদিনা
  • ধনেপাতা
  • ল্যাভেন্ডার
  • অরিগানো
  • রোজমেরি
  • লেমন গ্রাস
  • থাইম

ভেষজ উদ্ভিদ তোলার মতো বড় হলে সেগুলি শুকিয়ে গুড়া করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। কিছু উদ্ভিদ তাজা অবস্থাতেই রান্নায় ব্যবহার করা যায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য এসব উদ্ভিদ পেস্ট বানিয়ে কিংবা চায়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।

সার্ভাইভাল গার্ডেনের যেসব ফুল ‘খেতে’ পারবেন

বাগানে হয়তো খাওয়ার জন্য ফুল চাষ করার কথা আপনি আগে কখনো ভাবেননি। তবে বাগান করেন, এমন অনেকের কাছেই খাওয়ার জন্য ফুল চাষ করাটা অনেক কমন ব্যাপার। ভেষজ বিভিন্ন উদ্ভিদের মতো সেগুলিও একইসাথে খাবার আর ওষুধের কাজ করবে।

খাওয়ার উপযোগী ফুলের মধ্যে কয়েকটা হতে পারে:

গাঁদা ফুল: গাঁদা ফুল খাওয়ার ফলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে। এছাড়া রান্না করা বিভিন্ন খাবারে রঙ নিয়ে আসতেও এই ফুল ব্যবহার করা যায়।
জবা ফুল: জবা ফুলের প্রচুর ঔষধি গুণ রয়েছে। জবা ফুল চুল পড়া কমায়, মূত্রনালির ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করে আর খুশকির ওষুধ হিসেবেও ভালো কাজে দেয়। জ্বর, ঠাণ্ডার ওষুধ হিসেবেও চাইলে জবা ফুল ব্যবহার করা যায়।
গোলাপ: গোলাপ ফুল দিয়ে গোলাপ জল বানানো ছাড়াও এই ফুল বদহজম, বমি ভাব কিংবা গা ব্যথা সারাতে ব্যবহার করা যায়।
কুমড়া ফুল: বাগানে কুমড়া চাষ করলে এর সাথে আপনি কুমড়া ফুলও পাবেন। এই ফুল দিয়ে বানানো বড়া কিংবা তরকারি অনেক অঞ্চলেই খাওয়া হয়। তবে একইসাথে কুমড়া ফুলে ভিটামিন ‘এ’ থাকায় তা চোখের জন্য অনেক উপকারী। আবার এই ফুলে ভিটামিন সি থাকায় শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে।

তবে ভেষজ উদ্ভিদের তুলনায় ফুলের আরো কিছু উপকার রয়েছে। সৌন্দর্য ছাড়াও ফুল মৌমাছি ও অন্যান্য পতঙ্গকে আকর্ষণ করে। সেগুলি আপনার ফল ও সবজি গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য করবে।

বেঁচে থাকার জন্য যদি বাগান করে থাকেন, খাওয়ার পাশাপাশি সুস্থ থাকার কথাও আপনাকে ভাবতে হবে। উপকারী এইসব উদ্ভিদ খাওয়ার পাশাপাশি নিজের ভালোর জন্যই আপনাকে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানিও পান করতে হবে।

সার্ভাইভাল গার্ডেনিং এবং পুষ্টি

সার্ভাইভাল গার্ডেনের পরিকল্পনা করার আগে শরীরের জন্য কতটা পুষ্টির প্রয়োজন, সেটা হিসাব করে নেয়া অনেক দরকার। হিসাবটা অবশ্যই পুরাপুরি সঠিক হবে না। বরং আপনার অনুমানের ওপরে নির্ভর করেই ঠিক করতে হবে কতটা পুষ্টির প্রয়োজন আপনার। পুষ্টির হিসাব করতে গিয়ে আপনাকে জমানো টিনজাত খাবার বা সংরক্ষণ করা বিভিন্ন ফসল আর মাংসের ব্যাপারটাও ধরতে হবে।

আরো পড়ুন: উদ্ভিজ্জ আমিষ: মাছ-মাংস বাদে প্রোটিন পেতে পারেন অন্য যেসব খাবার থেকে

সার্ভাইভাল গার্ডেনে যেসব সবজি উৎপন্ন হচ্ছে, সেগুলি যেকোনো সময়ই আপনার বাসায় থাকা খাবারের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। অনেক ওয়েবসাইট, ম্যাগাজিন কিংবা পত্রিকাতেই হয়তো আপনি পড়েছেন যে খারাপ সময়ের জন্য কতটা খাবার জমা করে রাখা উচিৎ। সেই সময়গুলিতে আপনার সার্ভাইভাল গার্ডেনই আপনার খাবারের সংকট কাটাতে সাহায্য করবে।

যেভাবেই হোক, আপনি সবসময়ই চাইবেন যেন আপনার পরিবারের সবার পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে যেসব পুষ্টি উপাদানের দিকে খেয়াল রাখবেন:

ফ্যাট বা চর্বি
বাড়িতে যদি গৃহপালিত প্রাণী (যেমন গরু, ছাগল, হাঁস, বনমোরগ বা মুরগি) না থাকে বা ফ্রিজেও যদি মাংস না থাকে, তাহলে উদ্ভিদ থেকেই আপনাকে দেহের জন্যে দরকারি ফ্যাট সংগ্রহ করতে হবে। সেজন্য বাগানে কিছু গাছ লাগাতে পারেন।

চীনাবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোটসহ বেশকিছু প্রজাতির বাদামে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় ফ্যাট বা চর্বি থাকে। বাদামের মাধ্যমে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার জন্যে কয়েক বছর আগ থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে রাখতে হবে।

ততদিনে দেহের ফ্যাটের চাহিদা পূরণ করার জন্য কয়েক ধরনের উদ্ভিদের চাষ করতে পারেন, যেগুলির বীজ আপনি খেতে পারবেন। যেমন:

  • কুমড়া বীজ
  • পেঁপে বীজ
  • সূর্যমুখী বীজ

এই বীজগুলির জন্য বিভিন্ন উদ্ভিদের চাষ করা অনেক সহজ আর তা হাত দিয়েই করা যায়। আর বীজ সংরক্ষণ করার জন্যও বিশেষ ধরনের কোনো পদ্ধতির দরকার হয় না।

শর্করা

গোল আলু, মিষ্টি আলু, কচু, ভুট্টা, কলাইয়ের ডালসহ বিভিন্ন শস্যদানা থেকে আমরা দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি পাই। অতিরিক্ত শর্করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে যখন আপনি সার্ভাইভাল পরিস্থিতিতে থাকবেন, এই ধরনের সবজি বেশি বেশি উৎপাদন করাটাই ভালো। এই ফসলগুলি সাধারণত অনেক উর্বর হয়ে থাকে।

কোনো জিনিসের পরিমাণ না দেখে তার গুণাগুণের দিকে লক্ষ্য করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। জীবন বাঁচানোর জন্য অনেক সময় পরিমাণই বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, এটা ঠিক। সেক্ষেত্রে শর্করা অনেক সাহায্য করবে।

পরিমাণের দিকে লক্ষ্য রেখে আপনার বাগানে মসূর, মটরশুটি, শিম কিংবা লাউজাতীয় তরকারির চারা লাগাতে ভুলবেন না।

প্রোটিন

চর্বি আর শর্করার পাশাপাশি দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে আপনার পেশী ঠিক থাকার পাশাপাশি প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তির ভারসাম্যও বজায় থাকবে।

শিম হলো দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অন্যতম একটা উৎস। এছাড়াও আপনি জেনে অবাক হতে পারেন, ব্রকোলি, ফুলকপি, পালং শাক, বাদাম এবং বিভিন্ন বীজ জাতীয় খাবারে অনেক প্রোটিন থাকে। সেজন্য বাগানে এই ধরনের ফসলের জন্য আলাদা জায়গা রাখুন।

প্রোটিনের অন্যান্য উৎস

বাগানের জন্য প্রয়োজনীয় না হলেও পুষ্টির কথা বিবেচনা করে কয়েকটা মুরগিও পালতে পারেন সুবিধা থাকলে। এতে করে মুরগির ডিম আর মাংস থেকে নিজের আর আপনার পরিবারের সবার দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হবে।

সার্ভাইভাল গার্ডেনের ফসল সংরক্ষণ

মৌসুম ছাড়া অন্যান্য সময়ের জন্য আপনাকে ফসল সংরক্ষণ করতে হবে। ফসল সংরক্ষণ আর খাওয়ার উপযোগী রাখার জন্য বেশ কয়েকটা পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন।

বাগান করার ফলে নানান ধরনের শাকসবজির প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হবে। তবে এই আগ্রহের সাথে সাথেই সেই সবজিগুলি কীভাবে সংরক্ষণ করবেন, রান্না করবেন বা খাবেন, সেই ব্যাপারেও আপনার অভিজ্ঞতা বাড়াতে হবে। আর অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য প্রচুর সময় আর শ্রমেরও দরকার হবে।

ফ্রিজিং করা, শুকানো ও টিনজাত করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা

সার্ভাইভাল গার্ডেনিং মানে শুধু বীজ বা চারা রোপণ করা আর ফসল তোলাটাই না। আপনি বাগানের ফসল কীভাবে সংরক্ষণ করছেন, সেটাও সার্ভাইভাল গার্ডেনিংয়ের মধ্যে পড়ে।

শাকসবজি ফ্রিজিং কিংবা জমানোর মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্যে সংরক্ষণ করাটা খুবই প্রচলিত আর সাধারণ একটা উপায়। কিন্তু আপনি এমন পরিস্থিতেও পড়তে পারেন, যখন বাসায় বিদ্যুতের সংযোগ থাকবে না। আবার বিদ্যুৎ ছাড়াই প্রাচীন কাল থেকে মানুষ শত শত বছর ধরে তাদের ফসল সংরক্ষণ করে এসেছে। তাই চাইলে তেমন কিছু পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার বাসায় যদি যথেষ্ট সূর্যের আলো এসে থাকে, রোদে শুকিয়ে রাখার মাধ্যমেও আপনি ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন। আবার বাজারে এখন খাবার শুকানোর জন্য বেশ কিছু ডিহাইড্রেটর পাওয়া যায়। খাবার শুকানোর জন্য ওভেনও ব্যবহার করতে পারবেন।

টিনের পাত্র বা ক্যানে রাখার মাধ্যমেও ফসল সংরক্ষণ করতে পারবেন। আবার ফল বা সবজি দিয়ে সুস্বাদু সব আচার, চাটনি, জ্যাম বা জেলিও বানিয়ে রাখতে পারেন।

শীতের জন্য ফসল সংরক্ষণ করা

প্রতিবার ফসল তোলার পরেই সেই ফসল আপনি কোথায় আর কীভাবে সংরক্ষণ করবেন, সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার। সেজন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়ারও দরকার রয়েছে।

প্রথমত খাবার সংরক্ষণ করার জন্য যদি আপনার বাসায় ভাঁড়ার ঘর থাকে, তাহলে সেখানে রাখতে পারেন। আপনার নিবাস মফস্বলের দিকে হয়ে থাকলে, বেশ কিছু সুবিধা পাবেন। মূল জাতীয় যেসব সবজি মাটির নিচে জন্মায়, সেসব সবজি আপনি মাটিতে বিছিয়ে তার ওপরে খড়, পাতা ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন।

যদি যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা থাকে, তাহলে গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে মৌসুম ছাড়াও অন্য সময়ে ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।

এছাড়াও সংরক্ষণ করার জন্য অন্যান্য অনেক বিষয়েই আপনাকে ভাবতে হবে। টিন, স্টেইনলেস স্টিল, গ্লাস, সিরামিক কিংবা অন্যান্য পদার্থ দিয়ে তৈরি বায়ুনিরোধক পাত্র জোগাড় করতে হবে। আপনার ফসল কোথায়, কীভাবে রাখবেন, তা নিয়ে ফসল তোলার আগেই পরিকল্পনা করে রাখুন।

খাবারের তালিকায় নতুন ধরনের লতাপাতা সংযুক্ত করা

বছর জুড়ে খাবারের জোগান ঠিক রাখার জন্য নতুন ধরনের সব উদ্ভিদ বা শাঁক খাওয়ার চেষ্টা করে যেতে পারেন। এতে যেমন নতুন অনেক কিছু জানতে পারবেন, একই সাথে নানান ঔষধি গুণ সম্পন্ন লতাপাতার সন্ধানও পাবেন।

যদি সার্ভাইভ করার মতো অবস্থায় চলে যান, তখনই আপনাকে বেছে বেছে খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য তখন আপনার আগাছা ধরনের লতাপাতা খাওয়া লাগতে পারে।

কচু শাঁক, কালা কচু, হেলেনচা, বন তুলসী, কানাই লতা, পাথরকুচি, দধি লতা, কলমী লতা, বাশক সহ প্রচুর পুষ্টিকর উপকারী উদ্ভিদ বাগানেই জন্মাবে। আপনাকে সেসব লতাপাতা চিনতে হবে। এরপর কীভাবে সেসব খাওয়া যায়, তা বের করতে হবে।

যদি এই লতাপাতা খাওয়ার ওপর আপনার জীবন নির্ভর নাও করে, এগুলি পুষ্টি আর ঔষধি গুণের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পরিবারের ছোটদেরকে এইসব গাছগাছড়ার ব্যাপারে শেখাতে পারেন। আবার চাইলে এসব গাছের ঔষধি গুণসহ এগুলি চাষ করে বাজারে বিক্রিও করতে পারেন।

মনে রাখুন, আগাছা বলতে কিছুই নেই। সব আগাছাই কোনো না কোনোভাবে বনজ ওষুধ অথবা পুষ্টির উৎস।

সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ আর সীমাবদ্ধতা

সুন্দরভাবে পরিকল্পনা করে গড়ে তোলা একটি সার্ভাইভাল গার্ডেন আপনার আর আপনার পরিবারের জন্য এক বছরের শাকসবজির ঘাটতি পূরণ করবে। তবে শুধুমাত্র অনুকূল পরিস্থিতিতেই এমনটা হবে। আর যেহেতু আপনার বাগানটা সার্ভাইভ করার জন্য, সেই সময়টাতে পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকার আশঙ্কাই বেশি।

বেশকিছু কারণে আপনি একটা সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করার কথা ভাবতে পারেন। এর মধ্যে কয়েকটা কারণ হতে পারে:

  • বেকারত্ব কিংবা ভবিষ্যতে আপনার আয়-ইনকাম নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকা
  • খাদ্যের ঘাটতি তৈরি হওয়া
  • খাদ্যের মান সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়া
  • সারাদেশে মৌসুমি ফসলের ফলন ভালো না হওয়া
  • প্রাকৃতিক বিপর্যয়

এছাড়াও অনেক কারণেই আপনি সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করার কথা ভাবতে পারেন।

যখন বিপদের মধ্যে থাকবেন, আপনার উদ্দেশ্যই থাকবে নিজের আর পরিবারের জন্যে মাথা গোঁজার ঠাই, পর্যাপ্ত খাবার আর পানির সরবরাহ ঠিক রাখা। সেই সময়ে নিজের বাগান থেকেই আপনি পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারবেন।

সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরির জন্য আপনাকে যেসব বাধা অতিক্রম করতে হবে

সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করাটা সবসময় আনন্দের নাও হতে পারে। এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত আর নিজের মধ্যে সংগ্রাম করার মানসিকতা থাকা দরকার।

শিশুরা সহ পরিবারের সবাই যদি বাগানের কাজে হাত লাগায়, তাহলে বাগান রক্ষণাবেক্ষণ করাটা সহজ হবে। অনেক ধরনের কাজ করে দিয়ে বাচ্চারা বাগানের কাজে সাহায্য করতে পারে। একবারে চারা বা বীজ রোপণ করা থেকে শুরু করে চাষ করা বা রান্না করার মধ্য দিয়েও তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।

এর মধ্য দিয়েই আপনাকে নিজের ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। একইসাথে বাগান আর বাগানের কাজ করার যন্ত্রপাতি সহ সবকিছুই যাতে ঠিকঠাক থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যেসব বাধা আপনাকে অতিক্রম করতে হবে, সেগুলির মধ্যে কয়েকটা হতে পারে:

ব্যর্থতা
যেহেতু বেঁচে থাকার তাগিদে সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করছেন, এখানে ব্যর্থতার কোনো জায়গা নেই। সব কাজের জন্যেই ক্রমাগত অভ্যাস আর চর্চা করে যেতে হবে। একইসাথে প্রতি মৌসুমেই বাগানে নতুন জাতের ফসল চাষ করার চেষ্টা করতে থাকতে হবে।

বাগান করা সম্পর্কে যতকিছু জানা যায়, জানতে থাকুন। প্রতি বছরে বাগান থেকে কী পরিমাণ ফসল উৎপাদন করবেন, তার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করুন।

সম্পদের অভাব
মনে রাখুন, বাগান করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো সময় আর পানি। দক্ষতার সাথে ফসল ফলানোর চেষ্টা করে যান আর খুঁজে বের করতে থাকুন কোন কাজগুলি করা উচিৎ আর কোনগুলি না। পানির অভাব থাকলে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়াও পানির সমস্যা থাকলে আপনি বেশি করে বহুবর্ষজীবী গাছ লাগাতে পারেন। আবার খরার সময় স্যাঁতসেঁতে খড় আর গাছের পাতা বিছিয়ে দিয়ে মাটির আর্দ্রতা ঠিক রাখতে পারেন।

সীমিত জায়গা
নগরায়নের কারণে খালি জমির পরিমাণ কমে গেছে। যতটুকু জমি আপনি কাজে লাগাতে পারেন, ততটুকুই আপনার লাভ। যদি তেমন কোনো জমিই আপনার না থাকে, তাহলে অন্যভাবে চিন্তা করুন। চাইলে বারান্দাতেও আপনি সার্ভাইভাল গার্ডেনিং শুরু করতে পারেন। সেজন্য পাত্র, টব বা কন্টেইনারে গাছ লাগানোর কথা ভাবুন। লতা জাতীয় গাছ লম্বালম্বি বড় করার চেষ্টা করুন। হাতের কাছেই যতটুকু সুযোগ আছে, তার পুরাটাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।

সার্ভাইভাল গার্ডেন রক্ষা করা

ফসল যখন পরিপক্ক হয়ে ওঠে, মানুষ বা পশুপাখি, সবাই সেই ফসল খেতে চায়। তাই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি লাগান। এতে করে বুঝতে পারবেন কোন সবজি কোন প্রাণী, পাখি বা পোকা খায়। ফলে পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

বিভিন্ন গাছের রোগ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন। আর কোনো ফসল নষ্ট হলে কী করবেন, তা আগের থেকেই ভেবে রাখুন। মোরগ বা কবুতরের মতো কিছু পাখি বাগানের পোকামাকড় খেয়ে ফসল রক্ষায় সাহায্য করতে পারে। চাইলে এই ধরনের পাখি পুষতে পারেন।

একটা সার্ভাইভাল গার্ডেন তৈরি করার জন্য সবচাইতে বেশি দরকার মনোবল। ছাদ, বারান্দা কিংবা বাসার আশেপাশে খানিকটা জায়গা থাকলেই আপনি বাগান করা শুরু করতে পারেন। আর সময়ের সাথে নতুন নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনার বাগানে বিভিন্ন ধরনের ফসল আরো বেশি পরিমাণে উৎপাদন করতে পারেন।

সূত্র: রুরাল স্প্রাউট, এপ্রিল ১৬, ২০২০

লেখক পরিচিতি

শেরিল মেগিয়া

শেরিল মেগিয়া একজন অর্গানিক বাগান বিশেষজ্ঞ, ফরেজার (যিনি খাবারের সন্ধানে যান) মালী, কবি ও ফ্রিল্যান্স লেখক। যার বিশ বছরেরও বেশি সময় প্রকৃতির কাছাকাছি সাধারণ জীবনযাপনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। শিকাগোর শহরতলীতে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, তিনি কখনও শহরের মেয়ে হননি। তার বদলে সবসময় এমন জায়গা বেছে নিয়েছেন যেখানে শান্ততা আছে। ওরেগন থেকে হাঙ্গেরি বা স্কটল্যান্ড, তিনি সবসময় আত্মনির্ভরশীলতা এবং বেঁচে থাকার দক্ষতাকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি রোমানিয়ার ব্রেবে একটি দুই ঘরের ঐতিহ্যবাহী কাঠের বাড়িতে, মনোমুগ্ধকর খড়ের স্তূপের মধ্যে স্বামী ও হোমস্কুল করা মেয়েকে নিয়ে থাকেন৷