আপনার কি জব স্যাটিসফেকশন নেই? আপনি কি প্রতিদিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছেন?

আপনার কি মনে হচ্ছে চাকরির অর্থ টাকা উপার্জন করা ছাড়া আর কিছু না? এই দৃষ্টিভঙ্গী পালটে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হন, কারণ আমরা আপনাকে এমন কিছু তথ্য জানাব যাতে কর্মজীবন নিয়ে আপনার আগের সব ধারণা পালটে যাবে।

এর মধ্যে আছে অবাক করা কিছু পরিসংখ্যান আর গবেষণার এমন ফলাফল যা আপনার চোখ খুলে দেবে। আমরা এমন ৬টি অবিশ্বাস্য আইডিয়া নিয়ে কথা বলব যাতে আপনি সকালে আপনি ঘড়ির অ্যালার্ম থামানোর আগে দুইবার ভাববেন। এমনকি নিজের যে স্বপ্নের রেস্টুরেন্টের কথা আপনি ভাবতেন, হয়ত সে স্বপ্ন দেখাও বাদ দিয়ে দেবেন।

একটা বিষয় মনে রাখবেন যে আপনার সামগ্রিক ভাল থাকার ওপরে আপনার চাকরির সরাসরি প্রভাব আছে। আর আপনি যাদের সাথে কাজ করছেন, তারাই আপনার সাফল্যের অন্যতম সূত্র। আপনি এটা কি জানতেন যে কর্মপরিবেশ আপনার প্রডাক্টিভিটিকে প্রভাবিত করতে পারে?

তাহলে এমন অবাক করা কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত হন। নিজের কাজ নিয়ে আপনি যা ভেবে আসছেন সেসব ধারণা এবার আমরা বদলে দেব। আপনি একজন কর্পোরেট চাকরিজীবী হন অথবা ফ্রিল্যান্সার, এই তথ্যগুলি জানলে নিজের কাজকে আপনি সম্পূর্ণ অন্য আঙ্গিকে ভালবাসতে শুরু করবেন।

জব স্যাটিসফেকশনের গুরুত্ব
নতুন দৃষ্টিভঙ্গি জানার এই সুযোগ এবং চাকরি নিয়ে দুর্দান্ত কিছু তথ্য জানার এই সুযোগ মিস করবেন না। আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই জীবনের অধিকাংশ সময় কাজের পেছনে ব্যয় করি। তাই জব স্যাটিসফেকশন যে এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে আপনি কি জানতেন নিজের ভাল থাকার সাথে কাজের সন্তুষ্টির একটি সরাসরি সম্পর্ক আছে? এমন কি গবেষণায় দেখা গেছে আপনার ভাল থাকার পেছনে জব স্যাটিসফেকশনের ভূমিকা কাজের বেতনের চেয়ে কম নয়।

বিষয়টি কেবল মানসিক প্রশান্তির ব্যাপার নয়, কাজের সন্তুষ্টি আপনার সুস্বাস্থ্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। নিজের কাজ নিয়ে যারা সন্তুষ্ট থাকতে পারে, তাদের স্ট্রেসজনিত শারীরিক সমস্যা ঘটার আশঙ্কা অনেক কম থাকে। এছাড়া তাদের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা যেমন হৃদরোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।

তাই আপনি যদি নিজের চাকরি নিয়ে হতাশ থাকেন তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। ভেবে দেখুন কোন পরিবর্তন আনতে পারলে তা আপনার স্বাস্থ্য ও মানসিক প্রশান্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

১. জীবনে গড়ে ৯০,০০০ ঘণ্টার বেশি সময় ব্যয় হয় চাকরিতে
একবার ভাবুন, আপনার আয়ুর ১১ বছর আপনি চাকরি করে কাটিয়ে দেন! আপনি যখন এভাবে বিষয়টি দেখবেন, তখন বুঝতে পারবেন জব স্যাটিসফেকশন কেন এত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে বিষয়টি কেবল কাজের পেছনে আপনার কতটুকু সময় যাচ্ছে, তা নিয়ে না। আপনার সময় কেমনভাবে ব্যয় হচ্ছে সেটিও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কি এমন কাজ করছেন যা আপনি উপভোগ করেন? আপনার কাজের পরিবেশ কি আপনার সৃজনশীলতা এবং প্রডাক্টিভিটি বাড়াতে সাহায্য করছে? কাজের সন্তুষ্টি নিয়ে চিন্তা করার সময় এই বিষয়গুলিও পর্যালোচনা করতে হবে।

২. বিশ্বে মাত্র ১৫% কর্মী তাদের কাজের প্রতি আগ্রহী
এই কথাগুলি শুনে অবাক হয়ে যেতে হয়, তবে এগুলি কিন্তু সত্য। অধিকাংশ কর্মজীবী তার কাজ নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী থাকে না। অর্থাৎ মন থেকে তারা নিজ কাজের প্রতি ভাললাগা অনুভব করে না। ফলে নিজের সেরাটি দেওয়ার জন্য তাদের কোনো উৎসাহ থাকে না।

চাকরির প্রতি আগ্রহ থাকা অনেক জরুরী কেননা এর ফলে প্রডাক্টিভিটি বৃদ্ধি পায়, প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সন্তষ্টি বাড়ে এবং চাকরি ছাড়ার হার কমে। তাই আপনি নিজের কাজে আগ্রহ না পেয়ে থাকলে আপনার খেয়াল করা উচিত কোন বিষয়ে পরিবর্তন আনলে কাজের প্রতি আপনার আরও আগ্রহ আসবে।

৩. কাজের ভাল না লাগাটা স্বাস্থ্যের জন্যে ক্ষতিকর
আমরা যেমনটা আগেও বলেছি, জব স্যাটিসফেকশন আপনার স্বাস্থ্যের ওপরে সরাসরি প্রভাব ফেলে। আবার এর বিপরীত বিষয়টিও সত্য। অর্থাৎ অফিসে অসন্তোষ থেকে আপনার শরীরে নানা ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়, যেমন স্ট্রেস বেড়ে যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, বিভিন্ন দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হওয়া। আপনি যদি কাজ নিয়ে অসুখী থাকেন, তবে জরুরী হচ্ছে এর কারণ খুঁজে বের করা। এর জন্য আপনাকে নিজের দুঃশ্চিন্তার কথা ম্যানেজারকে জানানো, কোম্পানির ভেতরে অন্যান্য সুযোগ খোঁজা, এমন কি প্রয়োজনে অন্য সেক্টরে ক্যারিয়ার শিফটও করতে হতে পারে।

৪.  চাকরিতে পরিতৃপ্তি কর্মক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা বাড়ায়
আপনি যখন নিজের চাকরি উপভোগ করবেন এবং পরিতৃপ্তি পাবেন তখন আপনার আরও প্রডাক্টিভ ও সৃজনশীল হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ তখন নিজের সেরা কাজ করার জন্য আপনার মধ্যে উৎসাহ কাজ করে এবং সমস্যার সমাধানে আপনার উদ্ভাবনী সব চিন্তা আসে।

তাই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এমন কাজ খুঁজে বের করা যা আপনার মূল্যবোধ এবং আগ্রহের সাথে মিলে যায়। আপনি যখন আপনার পছন্দের কাজ করতে পারবেন তখন আপনার মনেই হবে না যে কাজ করছেন।

৫. সহকর্মীদের সাথে সম্পর্ক কাজে উৎসাহ বাড়ায়
এছাড়া সহকর্মীদের সাথে যখন ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হবে তখনও আপনি কাজে আগ্রহ পাবেন এবং আপনার উৎসাহ বেড়ে যাবে।

অন্যদিকে নেতিবাচক সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্বের অনুভূতি আসতে পারে। সহকর্মীদের সাথে যদি আপনার দ্বন্দ্ব বা বৈরী অবস্থার তৈরি হয়, তবে উচিত হচ্ছে দ্রুত এর সমাধান করে ফেলা।

৬. কর্মচারীদের সন্তুষ্টি কোম্পানির মুনাফায় প্রভাব ফেলে
জব স্যাটিসফেকশন কেবল কর্মীদের জন্য উপকারি তা নয়, কোম্পানির জন্যও এর গুরুত্ব অনেক। গবেষণায় দেখা গেছে যে সব কোম্পানির কর্মীদের কাজের সন্তুষ্টির মাত্রা বেশি থাকে সেই কোম্পানি বেশি মুনাফা করে এবং সর্বোপরি সফল কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

এর কারণ হচ্ছে কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকলে তাদের উৎপাদনশীলতা বা প্রডাক্টিভিটি বেড়ে যায়, কর্মীদের চাকরি ছাড়ার হার কমে যায় এবং গ্রাহকরা তাদের কাছ থেকে উন্নত সেবা পায়। তাই আপনার যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে তবে অবশ্যই আপনাকে কর্মীদের সন্তষ্টি এবং আনন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে।

জব স্যাটিসফেকশন ও কর্ম অভিজ্ঞতা উন্নত করার টিপস
এখন যেহেতু বুঝতে পেরেছেন কাজের সন্তষ্টি কত গুরুত্বপূর্ণ, আপনার মনে হতে পারে কীভাবে তা আরও ভাল করা যায়। এখানে কিছু পরামর্শ দেয়া হল:

  • নিজের মূল্যবোধ এবং আগ্রহ বোঝার চেষ্টা করুন। এমন কাজ করুন যা আপনার মূল্যবোধ ও আগ্রহের সাথে যায়।
  • সহকর্মীদের সাথে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলুন।
  • কোম্পানিতে নিজের উন্নতি এবং প্রবৃদ্ধির সুযোগ খুঁজুন।
  • নিজের বিষয়ে ইতিবাচক প্রচারণা করুন, প্রয়োজনের কথা ম্যানেজারের কাছে বলুন।
  • বার্নআউট থেকে নিজেকে রক্ষা করতে কাজে বিরতি নিন, নিজের প্রতি যত্নশীল হন।

একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, আপনি যে কাজ করছেন তা আপনার জীবনের একটা বড় অংশ। তাই এমন কাজই করা উচিত তা আপনি উপভোগ করবেন এবং যা আপনাকে পরিতৃপ্তি দেবে।

উপসংহার
আশা করি কাজ এবং অফিস জীবন নিয়ে আমাদের এই তথ্যগুলি আপনাকে নিজের চাকরি এবং চাকরির সন্তষ্টির গুরুত্ব নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেবে। আপনি নিজের চাকরি নিয়ে যদি সন্তুষ্ট থাকেন অথবা এর যদি কোনো পরিবর্তন চান, তবে আপনাকে অবশ্যই নিজের ভাল থাকা এবংক পরিতৃপ্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

জীবনের একটা বড় অংশ কাজের পেছনে ব্যয় হয়। তাই কোন চাকরি আপনি উপভোগ করবেঅক্নযার এবং আপনার মূল্যবোধ ও আগ্রহের সাথে কোন চাকরি মিলে যায়, এই বিষয়টি সময় নিয়ে খুঁজে বের করুন। এতে আপনার কেবল মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বৃদ্ধি পাবে না, প্রতিষ্ঠানের সাফল্যে আপনি অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

সূত্র. দ্য ইন্ডাস্ট্রি লিডার্স, অনুবাদ. আমিন আল রাজী