আপনি কি নেগেটিভ চিন্তার চক্রে আটকা পড়েছেন? এ থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজছেন?

নেতিবাচক চিন্তা বাদ দিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাইলে মেনে চলতে পারেন দুটি সহজ নিয়ম বা রুল:

  • ব্লু ডলফিন রুল
  • মিল্ক কার্টন রুল

তার আগে আলাপ করা যাক কেন আপনি নেগেটিভ চিন্তা থেকে বের হবেন?

ধরেন, অনেক দিন ধরে আপনার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে অনেক অ্যাপয়েন্টমেন্ট ও সুযোগ আসতে শুরু করল। আপনি যতটুকু সামলাতে সক্ষম, নতুন সুযোগের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি।

অথচ কয়েক মাস ধরে চলা মন্দায় আপনি নেগেটিভ চিন্তার চক্রে আটকে গেছেন। নতুন সুযোগগুলি দেখে আনন্দিত না হয়ে বিহ্বল হয়ে পড়েছেন। এর কারণ নেতিবাচক চিন্তা আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে, আপনি তখন নানান ছোটখাটো বিষয়ে অভিযোগ শুরু করেছেন।

শেষে দেখা গেল, অভিযোগ করে যাওয়া আপনার ব্যবসার কোনো উপকারে আসেনি। আপনার উচিৎ ছিল সামনে আসা সুযোগটি ভালভাবে কাজে লাগানো। তা না করে আপনি নিজেকে নেতিবাচক চিন্তার চক্রে আটকে রেখেছিলেন।

আর এর ফলে আপনি যেসব সুযোগ কাজে লাগাতে পারতেন, সেগুলিও হারিয়েছেন।

এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে যে কেউ’ই পড়তে পারে।

অনেক সময় আমরা নিজেদের নেতিবাচক চিন্তা বা অনুভূতি দিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে নির্দিষ্ট একটা জায়গায় আটকে যাই, কিছুতেই সে অবস্থা থেকে বের হতে পারি না।

আরো পড়ুন: হতাশা, বিষণ্নতা বা দুঃখ-বেদনা থেকে বের হয়ে আসার উপায় খুঁজছেন?—জোর করে হাসুন!

এসব পরিস্থিতিতে আমাদের সাহায্য করতে পারে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা।

নিজের অনুভূতি বোঝা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারার সক্ষমতাই আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা বা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স চর্চার জন্য কিছু নিয়ম বা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে হতবিহ্বল হয়ে পড়ার মুহূর্তে সহজেই চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

নেতিবাচক চিন্তার চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সংক্রান্ত দুটি নিয়ম জেনে নেওয়া যাক।

১.  “ব্লু ডলফিন” রুল

মনোবিজ্ঞানের ভাষায়, “সাদা ভালুক” বা “হোয়াইট বেয়ার” কথাটি ব্যবহার করে বোঝানো হয় সেই সমস্যাকে, যখন আপনি কোনো চিন্তাকে দমন করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে সেই চিন্তা আরো বেশি করে মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকছে। একে ‘আইরনিক প্রসেস থিওরি’ও বলা হয়।

তবে এই থিওরি “সাদা ভালুক” বা “হোয়াইট বেয়ার” হিসেবে পরিচিতি কেন পেল?

নামটি রাশিয়ান লেখক ফিওদর দস্তইয়েফ্স্কি‌র এক শতাব্দী পুরোনো একটি রচনা থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, আপনি যদি একটা সাদা ভালুকের কথা চিন্তা না করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটাই বার বার আপনার মাথায় আসবে। অর্থাৎ, ভুলে যাওয়ার চেষ্টা আমাদেরকে আরো বেশি ওই বিষয় বা বস্তুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

তাহলে, মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকা সাদা ভালুকটাকে কীভাবে পরাজিত করবেন? এক্ষেত্রে আপনার দরকার হবে “নীল ডলফিন” বা ব্লু ডলফিন রুল এর।

নীল ডলফিন হল মূলত প্রতিস্থাপিত চিন্তা। যখনই আপনার মাথায় সাদা ভালুকের চিন্তা আসবে, আপনি একটা নীল ডলফিনের কথা ভাববেন।

এতে অবিলম্বেই মনোযোগ সাদা ভালুক থেকে সরিয়ে নিতে পারেন।

হঠাৎ করে ব্যবসায় প্রচুর কাজের চাপ তৈরি হলে আপনি ভাবতে পারেন, “এখনই কেন? কোনোভাবেই আমার পক্ষে এত কিছু করা সম্ভব না!”

এ ধরনের নেগেটিভ চিন্তাকে আপনি ব্লু ডলফিনের কথা ভেবে, অর্থাৎ ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে বদলে ফেলতে পারেন। ভাবতে পারেন, “বরং জমে যাওয়া কাজগুলি গুরুত্ব অনুসারে ভাগ করে ফেলি। তারপর প্রতিবার একটা করে কাজ শেষ করি!”

তো আপনার মাথায়ও কি এমন কোনো সাদা ভালুক আছে, যেটাকে সরিয়ে রাখতে পারছেন না? তাহলে চেষ্টা করুন সেসব চিন্তার বদলে কোনো নীল ডলফিন নিয়ে ভাবতে।

“আরেকটা ব্যর্থ আইডিয়া” এর পরিবর্তে ভাবতে পারেন “এই ব্যর্থতা থেকে কীভাবে শিখতে পারি?”

“কাজটা করতে পারব না” এর পরিবর্তে ভাবুন “কাজটা না করলে চলবেই না—আমাকে চেষ্টা করতেই হবে!”

সাদা ভালুককে নীল ডলফিন দিয়ে প্রতিস্থাপন করার মাধ্যমে আপনি নেগেটিভ চিন্তাকে জয় করতে পারবেন।

২. “মিল্ক কার্টন” রুল

নিয়ন্ত্রণের বাইরের বিষয় নিয়ে চিন্তা করা বাদ দিন। পরিবর্তে যা নিয়ন্ত্রণে আছে, সেখানে মনোযোগ দিন।

মনোযোগের এই কাজে সাহায্য করে মিল্ক কার্টন রুল। নিয়মের নামটি মূলত মনোবিজ্ঞানের পাঠ্যপুস্তকের একটি সমস্যার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।

ইউরোপ বা আমেরিকার মানুষেরা সকালে ঠাণ্ডা দুধ দিয়ে ব্রেকফাস্ট বা নাস্তা করতে পছন্দ করেন। মনোবিজ্ঞানের সেই সমস্যায় দুধের কার্টন ফ্রিজে তুলে না রাখায় বার বার স্ত্রীর ওপর বিরক্ত হন এক স্বামী। কারণ, ফ্রিজে তুলে না রাখার কারণে সকালের খাবারের সময় দুধ পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা থাকে না।

এ সমস্যার সমাধান দেন লোকটির থেরাপিস্ট। থেরাপিস্ট স্বামীকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করেন যে, তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার মূল উপায় হল স্ত্রীর আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা না করা। বরং, সমস্যাটির অন্য সমাধান খোঁজা। যেমন, বাজার থেকে দুই কার্টন দুধ কিনতে শুরু করা। তাহলে একটা কার্টন সবসময় ফ্রিজে থাকবে, যেটা থেকে আপনি ঠাণ্ডা দুধ খেতে পারবেন।

আরো পড়ুন: কাউকে দোষারোপ করা কেন অর্থহীন

মিল্ক কার্টনের নিয়ম প্রয়োগ করে আপনি প্রত্যাশা ও বাস্তবতার মধ্যে থাকা ব্যবধান মুছে ফেলতে পারবেন। যা আপনাকে অপ্রয়োজনীয় হতাশা থেকে রক্ষা করবে।

আমরা সকলেই প্রয়োজন অনুযায়ী আমাদের মনোযোগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখি। নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না এমন জিনিসগুলিকে বরং ছেড়ে দিন এবং যে জিনিসগুলি করতে পারবেন কেবল সেগুলিতেই ফোকাস করুন৷

আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন? আপনাকে কি এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে, যা আপনাকে হতাশ বা অসহায় করে তুলছে?

তাহলে নিজেকে এই দুটি প্রশ্ন করতে পারেন:

  • কীসের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ নেই?
  • কীসের ওপর আমার নিয়ন্ত্রণ আছে?

প্রশ্নের উত্তর হিসেবে যা চিন্তা করে বের করবেন, সেই জ্ঞানকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করুন। ভাবুন যে, সমস্যাটি সমাধান করার জন্য আপনি কী কী করতে পারেন, অথবা অন্তত নিজের হতাশা কমাতে কী করতে পারেন।

দুধের কার্টন নিয়মটি আপনাকে প্রডাক্টিভ বা ফলপ্রসূ চিন্তা করতে ও কাজে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে। এর ফলে আপনি একটি চিন্তার চক্রে আটকে না থেকে সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।

সুতরাং, আপনি যদি মানসিকভাবে দোটানা বা চাপের মধ্যে থাকেন, এই দুটি নিয়ম মনে রাখুন। আশা করা যায়, এগুলির সাহায্যে আপনার মাথা থেকে সকল চিন্তার ঝঞ্ঝাট দূর করা সম্ভব হবে এবং এর ফলে সকল অভিযোগের কথা ভুলে আপনি সামনে এগিয়ে যেতে পারবেন।

সূত্র: ইনক ডটকম, অনুবাদ: জুবায়েদ দ্বীপ