হিমবাহবিদ ম্যাথিউ মরলিগেম দাবি করেছেন, পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় দিন-রাতের দৈর্ঘ্য বাড়ছে। এবং এভাবে চলতে থাকলে দিন-রাতের দৈর্ঘ্য হয়তো ২৪ ঘণ্টা ছাড়িয়ে যাবে। কারণ মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ায় পৃথিবীর অক্ষরেখায় সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ছে। যার ফলে নিজ অক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিও কমে আসছে।

বিজ্ঞান ওয়েবসাইট ইনভার্স  এপ্রিলের ১৯ তারিখে এ বিষয়ে ইন্টারভিউ প্রকাশ করেছে বিজ্ঞানী ম্যাথিউ মরলিগেমের। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামনের ১০০ বছরে পৃথিবীর যে ক্ষয়ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে কথা বলেন মরলিগেম।

খারাপ খবর হল, সারা দুনিয়ার যে ৪০ ভাগ মানুষ উপকূলীয় এলাকায় বসবাস করে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মরলিগেম জানান, পৃথিবীর মানচিত্র থেকে পুরো একটা জাতি উধাও হয়ে যাবে। কারণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ হারিয়ে যাবে সমুদ্রের গর্ভে। তার প্রশ্ন, নিজ দেশ হারানো এই লোকগুলির দায়িত্ব নিবে কে? তাদের তো বসবাস করার জন্য একটা জায়গা লাগবে, যেখানে তারা নিজেদের সাংস্কৃতিক চর্চাও অব্যাহত রাখতে পারবে।

 

ইউরোপ আরো ঠাণ্ডা হতে থাকবে

সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ত পানি উপকূলীয় এলাকা ছাড়িয়ে লোকালয়ের আরো ভেতরে ঢুকে পড়বে। যার ফলে নদীনালা সহ মিঠা পানির আধারগুলিও দূষিত হয়ে পড়বে। এবং উপকূলীয় এলাকা থেকে সরে আসা মানুষের দুর্দশা আরো বাড়বে।

ম্যাথিউ মরলিগেম  (Mathieu Morlighem)

বিশেষজ্ঞরা গালফ স্ট্রিম বা উপসাগরীয় পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। উপসাগরীয় পানি প্রবাহ হল সমুদ্রে পানি চলাচলের এক বিশাল প্রবাহ যার মধ্য দিয়ে ক্যারিবিয়ান সাগরের গরম পানি আটলান্টিক মহাসাগর হয়ে আর্কটিক সাগরে গিয়ে পড়ে এবং ঠাণ্ডা হয়ে আবার দক্ষিণে ফিরে আসে।

অধ্যাপক মরলিগেম বলেন, আর্কটিকে যদি খুব বেশি বরফ গলা স্বাদু পানি ঢুকে পড়ে তাহলে মহাসগরীয় পানি প্রবাহের গতি কমে যেতে পারে। যার পরিণতিতে উপসাগরীয় পানি প্রবাহ বন্ধও হয়ে যেতে পারে। যা ইউরোপের জন্য একেবারেই ভালো খবর নয়।

ইউরোপের আবহাওয়া তখন কানাডার মন্ট্রিলের মতো ঠাণ্ডা হয়ে আসবে। এবং তাপমাত্রা কমে সেখানে প্রায় বরফ যুগ শুরু হয়ে যাবে। যার ফলে দিনের বেলাও প্রচুর ঠাণ্ডা পড়বে। এমনকি ঠাণ্ডার তীব্রতা আরো বাড়তেও পারে।

 

দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে পারে ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড

মরলিগেম বলেন, মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার আরেকটি কুফল হল পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণনের গতি কমে আসা। যার ফলে দিন-রাতের দৈর্ঘ্যও বেড়ে ২৪ ঘণ্টার বেশি হবে।

মেরু অঞ্চলের বরফগুলি পৃথিবীর অক্ষ রেখার কাছে অবস্থিত। বিশেষ করে দুই মেরুকে ঘিরে রয়েছে। সেই বরফ গলা পানি যদি পৃথিবীর অক্ষরেখা ছাড়িয়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতিও কমে আসবে। মরলিগেম বলেন, পৃথিবীর ঘূর্ণনের গতি কতটা কমবে তা পরিমাপ করা কঠিন। তবে সম্ভবত প্রতি দিনের দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ২০ সেকেন্ড বেড়ে যাবে।

ইউরোপের তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়া, দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়া এবং পুরো একটি দ্বীপপুঞ্জের সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে যেন এক মহা দুর্যোগ ধেয়ে আসছে।

 

ভালো খবর

মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার কুফল নিয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলেছেন তা বেশ বড় বিপর্যয় নিয়েই আসছে বলে মনে হচ্ছে। তবে সুখবর হল, মেরু অঞ্চলের সব বরফ গলতে কয়েক হাজার বছর লেগে যাবে। ২১২১ সালের মধ্যেই পুরো পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসছে না।

ইনভার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক মরলিগেন বলেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ বর্তমান গতিতে গলতে থাকলে আগামি ১০০ বছরের মধ্যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে ৭.৪ মিটার (২৪ ফুটের বেশি)। আর অ্যান্টার্কটিকার বরফও গলতে থাকলে যোগ হবে আরো ৫৮ মিটার (প্রায় ১৯১ ফুট)।

তবে মহাকর্ষীয় আকর্ষণের বলে পুরো পৃথিবী জুড়েই সমুদ্রের উচ্চতা সমান ভাবে বাড়বে না। অ্যান্টার্কটিকা এবং গ্রিনল্যাণ্ডের চারদিকে বরং সমুদ্রের উচ্চতা কিছুটা কমে আসবে।