ভারতীয় দোকান সহকারি এস লক্ষী (আসল নাম নয়) প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করেন। কাজ শেষে বাসায় এসে তাকে নিজের পায়ের ব্যথা ও ফুলে যাওয়া গোড়ালির সেবা করতে হয়।

মিস লক্ষী এবং আরো অনেক কর্মীরা খুব শীঘ্রই এই অবস্থা থেকে স্বস্তি পেতে যাচ্ছেন। গতমাসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, তামিলনাড়ু হচ্ছে দ্বিতীয় রাজ্য যারা সেলসের কর্মীদের ‘বসার অধিকার’ আইনত নিশ্চিত করেছে। এ আদেশ অনুসারে মালিককে কর্মীদের বসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এবং নির্দেশ দেয়া হয়েছে কাজের ফাঁকে সুবিধা অনুযায়ী যেন তাদের বসার সুযোগ দেয়া হয়।

মিস লক্ষ্মী একটা কাপড়ের দোকানে সহকারি হিসেবে আছেন। তিনি বলেন, “এখনো এই দীর্ঘ কাজের শিফটে আমাদের স্বস্তির জায়গাটা হচ্ছে ২০ মিনিটের লাঞ্চ ব্রেক, আর পায়ের ব্যথা কমানোর জন্য শেলফ ঘেঁষে দাঁড়ানো অল্প কিছু সময়।” তিনি আরো বলেন, “এমনকি যখন কাস্টমার নাও থাকে তখনো আমরা ফ্লোরে বসার অনুমতি পাই না।”

দ্রুত বাড়তে থাকা খুচরা খাত ভারতীয় অর্থনীতির বড় একটা স্তম্ভ। জিডিপির ১০ পারসেন্ট আসে এ থেকে। আর খুচরা খাতে কর্মসংস্থান ঘটে ৮ শতাংশ ভারতীয়র।

দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে, বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে বড় পরিবারগুলি বংশপরম্পরায় জুয়েলারি ও কাপড়ের ব্যবসা করে থাকে। সেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীদের নিয়োগ দেয়া হয় নারী ক্লায়েন্টদের সার্ভ করার জন্য।

(সেন্টার অফ দ্য ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নের একটি শাখা) ভারতীয় ট্রেড ইউনিয়নের তামিলনাড়ু রাজ্যের ওয়ার্কিং উইমেন কোঅর্ডিনেশন কমিটির আহবায়ক ধনলক্ষ্মীর মতে, নতুন সংশোধিত আইন অনুযায়ী কর্মীদের স্বাস্থ্যরক্ষার ব্যাপারটি থাকলেও তা সবসময় কাজের না। তিনি বলেন, “এটি একটি দীর্ঘদিনের অনিষ্পত্তিকৃত দাবি।”

“কাজে যাওয়ার জন্য বাসে ওঠার পর থেকে বাড়ি ফেরার আগ পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা তারা বসতেই পারে না।”

“স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু সমস্যা, যেমন, ভেরিকোস ভেইন-এর সাথে তাদের নিয়মিত লড়াই করতে হয়, এবং এর ফলে তারা হতাশায় ভোগে”, তিনি বলেন।

টেক্সটাইল শপের সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভদের নিয়মিত প্রতিবাদের মুখে ২০১৮ সালে কেরালায় এই আইন পাশ করা হয়। তবে যে আইনের প্রয়োগ নেই তা অর্থহীন।

পিভিজি একজন দর্জি, কেরালায় চলমান ‘বসবার অধিকার’ আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করেন। এর আগে তিনি অসংগঠিত শ্রমিক নিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করেন। তিনি বলেন, “প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ুর এই আইনি পরিবর্তন নিয়ে তিনি খুব রোমাঞ্চিত ছিলেন। কিন্তু আসল পরীক্ষা হল আইন বাস্তবায়ন, একটি ইউনিয়ন হিসেবে আমরা নিয়মিত স্টোর চেক করতাম এবং বসার ব্যবস্থা না থাকলে সে ব্যাপারে অভিযোগ করতাম।” তিনি আরো বলেন, “মানতে বাধ্য না করা হলে আইনের কোনো কার্যকারিতা থাকে না।”

তামিলনাড়ুর অবিনাশ শহরে লক্ষ্মীর দোকান। তিনি বলেন, “নতুন আইন তার কর্মজীবনে খুব বেশি পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা এই ব্যাপারে তিনি সন্দিহান ছিলেন। যখন দোকানে কোনো কাস্টমার থাকতো না আমরা ভাঁজ, বাছাই ও শেলফ নতুন করে সাজানোর কাজে ব্যস্ত থাকতাম।” তিনি বলেন, “ম্যানেজার খুব কঠিন মানুষ ছিলেন। আমরা দাঁড়িয়ে কাজ করি এটা তারা নিশ্চিত করত, আর তাই চেয়ার থাকা সত্ত্বেও কাজের ফাঁকে বসতে পারব কিনা আমরা জানতাম না।”

ভালো কাজের পরিবেশ পাওয়ার জন্য লড়াই চলছেই। ইন্ডিয়ান দোকান কর্মীদের দৈনন্দিন কষ্টের মধ্যে একটা হচ্ছে কাজের ফাঁকে বসতে না পারা।

ইউনিয়ন নেতারা ও নারী অধিকার আন্দোলনের প্রচারকরা বলেন, ন্যূনতম মজুরির কম পেয়েও সেলস অ্যাসিসটেন্টরা সপ্তাহের ৭ দিন কাজ করতে বাধ্য হন। অনেকেই অভিযোগ করেন ম্যানেজার তাদের সব সময় কড়া নজরদারিতে রাখে, বাথরুম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তারা বাধার সম্মুখীন হন।

মিস ধনলক্ষ্মী বলেন, “বসার অধিকার অনেকগুলি চাহিদার একটা। যা ইতিমধ্যেই আদায় করা গেছে, কিন্তু আরো অনেক দূর যেতে হবে। ন্যায্য মজুরি, সঠিক রেস্টরুম বিরতি এবং কম নজরদারির জন্য যুদ্ধ অব্যাহত আছে।”

সিসিটিভি ক্যামেরা রাখার ব্যাপারে দোকান মালিকরা বলেন, “এটা কাস্টমারদের চুরি করা থেকে বিরত রাখে। এমনকি কর্মীদের ওপর স্পাইয়িং করার কাজেও ব্যবহৃত হয়।” এসব দোকানে কাজের পরিবেশ দমবন্ধকর। কর্মীদের ওপর সিসিটিভি দিয়ে মনিটরিং বন্ধের দাবি জানিয়েছে কেরালার ইউনিয়নগুলি।

মিস ভিজি বলেন, “কর্মীরা সহকর্মীর সাথে কথা বললে এবং কিছু সময়ের জন্য কাজের থেকে দূরে থাকলে তাদের শাস্তি দেয়ার জন্য এটা ব্যবহৃত হয়। যখন-তখন বেতন কেটে নেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। আমরা শ্রম বিভাগকে মনিটরিং নিয়ন্ত্রণ করতে, ক্যামেরা সংখ্যা কমাতে এবং একজন কর্মীকে নজরদারিতে রাখার সময় কমাতে বলেছি।”

সূত্র. এবিসি নিউজ, অস্ট্রেলিয়া, ১২ অক্টোবর ২০২১

অনুবাদ: মাহতাবুল আলম